
স্টাফ রিপোর্টার:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌর এলাকার দরগাপাড়া মখদুমিয়া জামে মসজিদের পশ্চিম পাশে মৃত রফিকুল ইসলাম নারজু নামে যে কাজী ছিলেন জানা যায় তিনি ২১/০৬/২০২০ ইং সালে মৃত্যুবরণ করেন। ওনার ছেলে মনিরুল ইসলাম বাবার পরিচয়ে কাজীর যাবতীয় কার্যক্রম করেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে এমন অভিযোগ এর সূত্র ধরে সরজমিনে গিয়ে জানা যায়,কাজী পরিচয়দানকারী মনিরুল ইসলাম তার কোন কাজীর সনদ নেই তবুও তিনি একাধারে কাজী!
গত ১৩/০৬/২০২৫ ইং তারিখে শাহজাদপুর পৌর এলাকার রামবাড়ীর আখি খাতুন নামের এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ তিনি
২০১৬ সালে মৃত কাজী রফিকুল ইসলাম নারজুর কাছে কাবিন করে বিবাহ করেন তবে দীর্ঘ ৯ বছর পরে কাবিননামার কপি তুলতে মৃত কাজী রফিকুল ইসলাম নারজুর বাসায় গেলে তার অবর্তমানে তার ছেলে মনিরুল ইসলাম নিজেকে কাজী দাবি করেন এবং ভুক্তভোগী আখি খাতুন কে বলেন,কাবিননামার কপি নিতে হলে ৫ হাজার টাকা লাগবে।
ভুক্তভোগী আখি খাতুন ৫ হাজার টাকা দিলে প্রতারক মনিরুল ইসলাম স্বামী/স্ত্রীর ও কাজীর স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কাবিননামা লিখে দেন। কাবিননামা নিতে ৫ হাজার টাকা আদায় করার কারণে ভুক্তভোগী আখি খাতুন সবুজ বাংলাদেশের প্রতিবেদক কে অভিযোগ করেন,এ বিষয়ে সবুজ বাংলাদেশের প্রতিবেদক সরাসরি কথিত কাজী প্রতারক মনিরুলের সাথে কথা বলে জানতে চান,বাবার পরিবর্তে ছেলে কাবিন লিখতে পারেন কিনা? এছাড়াও কাবিনের পুরো টাকা বিবাহের সময় পরিশোধ করার পরও টাকা নেওয়ার সরকারি কোন নিয়ম বা ফি আছে কি? এমন প্রশ্নে কথিত কাজী প্রতারক মনিরুল বলেন, সরকারি কোন নিয়ম নেই , তবে,এমনটাই যুগযুগ ধরে চলছে এবং এখন টাকা লাগে।
কথিত কাজী প্রতারক মনিরুলের কথাই স্পষ্ট বোঝা যায়,তিনি তার বাবার সুযোগ কাজে লাগিয়েই দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে একাধিক বিবাহ ও তালাক এবং কাবিননামা লেখা থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যক্রম কথিত কাজী প্রতারক মনিরুল করেন,
সবুজ বাংলাদেশের প্রতিবেদকের কাছে তিনি এই দীর্ঘদিন যাবত জালিয়াতি করছেন এ কথা তার নিজ মুখেই শিকার করেন।
এবিষয়ে,স্থানীয় সুশীল সমাজের একাধিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কথিত কাজী প্রতারক মনিরুলের দাদা ছিলেন কাজী সেই সূত্র ধরে তার বাবা ও কাজী, দাদা ও বাবার পরিচয় তিনিও এখন কাজী পরিচয়দানকারী এবং কাজীর সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি সনদ প্রাপ্ত কাজী না হয়েও একাধিক বিয়ে ও তালাক ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন করেছেন এছাড়াও তিনি বেশ দক্ষতার সঙ্গে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে একাধিক বাল্য বিবাহ ও ভুয়া রেজিষ্ট্রেশন করেছেন।
এবিষয়ে, স্থানীয় সনদ প্রাপ্ত কাজী হাফেজ মাওলানা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে, তিনি সবুজ বাংলাদেশ কে বলেন, শাহজাদপুর পৌরসভার ৩/৪ নং ওয়ার্ডের দীর্ঘদিন কাজী মৃত রফিকুল ইসলাম নারজু ছিলেন ওনার মৃত্যুর পরে ৩/৪ নং ওয়ার্ডের কাজীর সনদ প্রাপ্ত এক মাত্র কাজী আমি নিজে,এছাড়াও তিনি বলেন, আমি একাধিক বার মনিরুলের কাছে থাকা অবশিষ্ট সকল নিকাহ রেজিস্ট্রার খাতা চাইলে তিনি আমাকে দিতে অস্বীকার করেন।তিনি আরো বলেন, মনিরুল তার বাসায় বসে কাজীর সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ও কাবিনের কপি তুলতে আসা ব্যক্তিদের নিকট থেকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ৪/৫ হাজার টাকা আদায় করে যাচ্ছে।
হাফেজ মাওলানা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন আরো বলেন, মনিরুল বিভিন্ন মুরুব্বিদের নিকটে বলছে আমি তাকে নিকাহ রেজিস্ট্রার বহি দিয়েছি ও আমার অনুমতি নিয়েই কার্যক্রম করছে। তবে আমি তাকে কোন রকম নিকাহ রেজিস্ট্রার বহি বা নিকাহ রেজিস্ট্রার করার অনুমতি প্রধান করিনি। আমার কাছে মনিরুলের এমন জালিয়াতির একাধিক ভুক্তভোগী দের অভিযোগ আশায় আমি তার প্রতারণার সকল কিছু প্রমাণ করতে ভূয়া কাবিননামা ও তালাকনামার একাধিক নকল সংগ্রহ করেছি এবং এবিষয়ে আমি সঠিক সমাধান চাই ও তার এমন প্রতারণা জালিয়াতির বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে চাই।
ভুয়া কাজীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বলেন,অবৈধ ও ভুয়া বিয়ে এবং তালাক নিবন্ধনের দায়ে ওই কাজীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ দণ্ডবিধিতে আছে। দণ্ডবিধির ৪১৭ ধারা অনুযায়ী কাজির এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে। নিবন্ধিত না হয়েও বৈধ কাজীর রূপ ধারণ করে কাজ করা প্রতারণার সামিল। অপরদিকে মুসলিম বিয়ে ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন-১৯৭৪ অনুযায়ী অনূর্ধ্ব দুই বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে। তবে বিভিন্ন সময় ভুয়া কাজী ধরা পড়ার খবর গণমাধ্যমে আসে, কিন্তু তাদের শাস্তি হয়েছে এমন নজির নেই। ভুয়া কাজীদের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এমন অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে।
কাজীর তালিকা ও ভুয়া কাজীর শাস্তি না হওয়ার বিষয় উল্লেখ করে এ আইনজীবী বলেন,এটা মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতা ও ব্যর্থতা। অবিলম্বে মন্ত্রণালয়কে বিয়ে নিবন্ধক (কাজীদের) তালিকা, এরিয়ার তালিকা তৈরি করে অনলাইনে দিয়ে দেয়া দরকার। সদিচ্ছা থাকলে এই কাজটি এক মাসেই সম্ভব এবং তালিকার কপি, উপজেলা প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যান এবং থানায়ও দিয়ে দেয়া যায়। খুব সাধারণ কাজ। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতায় এমন জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ উপেক্ষিত হয়ে আছে,এটা দুঃখজনক।
বাংলাদেশ মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার সমিতির মহাসচিব কাজী মাওলানা মোঃ খলিলুর রহমান সরদার বলেন,বিদ্যমান ব্যবস্থায় বর-কনের অনেক তথ্যই নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। রেজিস্ট্রি পদ্ধতি এখনো এনালগ রয়ে গেছে। ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা গেলে ভুয়া কাজী সনাক্ত করা সহজ হতো। বৈবাহিক তথ্যের ডাটাবেজ থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যেত। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রান্তিক জনপদের অধিক্ষেত্রগুলোতে অনেক বয়স্ক নিকাহ রেজিস্ট্রার রয়েছে। তাদের অনেকেরই তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞান নেই। ল্যাপটপ তো দূরে থাক, টাচ মোবাইলই ব্যবহার করতে পারেন না তারা।