লাভেলোর ‘অস্বাভাবিক’ দরবৃদ্ধি, উঠছে কারসাজির প্রশ্ন

লাভেলো আইসক্রিম লিমিটেডের শেয়ারদরে অস্বাভাবিক উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম লিমিটেডের শেয়ারদরে অস্বাভাবিক উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দর প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় বাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৯ মে তৌফিকা ফুডসের শেয়ার দর ছিল ৭৮.১০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ১৯ জুন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১.৭০ টাকা। অর্থাৎ এক মাসে ২৩ টাকা ৬০ পয়সা বা প্রায় ৩০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি তৌফিকা ফুডসের শেয়ার দর ছিল ৩০ টাকা। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ১৪ জুলাই তা বেড়ে ১০৪ টাকায় দাঁড়ায়। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানির এক পরিচালক ২২ ফেব্রুয়ারি ৩০ লাখ শেয়ার বিক্রি করেন, যার মাধ্যমে প্রায় ১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়।

এর আগে সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার দর ৪৮ টাকা থেকে কারসাজির মাধ্যমে মাত্র সাত মাসের মধ্যে ৩২০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ২০২২ সালের ৪ আগস্ট ৪৮ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি ২০২৩ সালের ৯ মার্চ ৩২০ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়। কারসাজিকারীরা শেয়ারদর বাড়িয়ে পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে উচ্চ দামে শেয়ার বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বারবার একই ধরনের শেয়ার কারসাজির ঘটনা পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো কঠিন হবে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের শেয়ার দরও একই ধরনের কারসাজির মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছিল। ফলে তৌফিকা ফুডসও কি সেই পথেই হাঁটছে, এ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। বিশ্লেষকদের মতে, যখন অধিকাংশ মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার দর স্থিতিশীল বা নিম্নমুখী, তখন তৌফিকা ফুডসের এই অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে জানান, তৌফিকা ফুডসের বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থান বা নতুন কোনো উদ্যোগ ছাড়াই শেয়ার দর বাড়ছে। এতে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, কোম্পানির কতিপয় সংশ্লিষ্ট মহল ও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী মিলে দর বাড়ানোর এ কারসাজি করতে পারে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় দ্রুত তদন্ত এবং কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর কাছে দাবি জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। বাজারসংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, এবারও দর বাড়িয়ে আগের মতো টাকা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকতে পারে।

বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ বলেন, “তৌফিকা ফুডসের শেয়ার নিয়ে অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির বিষয়টি কমিশনের নজরে এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.জি.এম সাত্তিক আহমেদ শাহ জানান, “কোনো কোম্পানির শেয়ারদর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলেই সেটি নজরদারির আওতায় আনা হয়। তৌফিকা ফুডসের ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে এবং কোম্পানির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিএসইসির টাস্কফোর্সের সদস্য মো. আল-আমিন বলেন, “ডিএসই এবং বিএসইসির সার্ভিল্যান্স টিম সার্বক্ষণিক বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। কারসাজির প্রমাণ পাওয়া গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী বলেন, “কারসাজিকারকদের কারণেই বাজারে আস্থা ফিরছে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি আরও ঝুঁকির মুখে পড়বে।”

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ার দর ১০০.৬০ টাকায় লেনদেন হচ্ছিল। তৌফিকা ফুডসের শেয়ার কারসাজি নিয়ে অনুসন্ধান চলমান দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম