চালের বাজারে কারসাজি

ডেস্ক রিপোর্ট:

চাল নিয়ে চালবাজির বিষয়টি বহুল আলোচিত। বর্তমানে সরকারি গুদামে চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে; বাজারেও কোনো সংকট নেই। তবুও মিলার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি দেশের সব শ্রেণির ভোক্তা। তাদের নীলনকশায় বোরোর ভরা মৌসুমেও চালের বাজারে স্বস্তি নেই। কারসাজি করে আগেই কম দামে কৃষকের ধান কিনে অবৈধভাবে মজুত করা হয়েছে। এখন কৌশলে সংকট দেখিয়ে মিল পর্যায়ে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বাড়ানো হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা। এতে পাইকারি বাজারে প্রভাব পড়ায় খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চাল ৫-৭ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে ক্রেতাসাধারণের নাভিশ্বাস উঠছে। খাদ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ (২৪ জুন ২০২৫) তথ্যমতে, সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মজুত রয়েছে ১৭ লাখ ১০ হাজার ৩৩ টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে ১৩ লাখ ১৫ হাজার ৭৭৬ টন; ধান মজুত রয়েছে ২ লাখ ৭ হাজার ৯৮৩ টন; আর গম রয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯ টন।

বুধবার নওগাঁ, দিনাজপুরসহ কয়েকটি স্থানে মিল পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিনিকেট চাল বর্তমানে ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০০ টাকায়, যা ২০ দিন আগেও ৩৫০০-৩৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে; নাজিরশাইল ২৫ কেজির বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২০০০ টাকায়, যা আগে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিআর২৮ জাতের চালের ৫০ কেজির বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৯০০ টাকায়, যা ১৩ দিন আগেও ২৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া মোটা জাতের চালের মধ্যে স্বর্ণা ৫০ কেজির বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ টাকায়, যা ১৩ দিন আগে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর পাইকারি আড়তে বর্তমানে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৩৯০০ টাকায়, যা ২০ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৩৬০০ টাকায়; নাজিরশাইল ২৫ কেজির বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২১৫০ টাকায়, যা আগে ১৯৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে রাজধানীর পাইকারি আড়তে বিআর২৮ জাতের চালের ৫০ কেজির বস্তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৯৫০ টাকায়, যা ১৭ দিন আগেও ২৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৭৫০ টাকায়, যা কয়েকদিন আগে ২৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এ বছর বোরো মৌসুমে সারা দেশের কৃষক মোটামুটি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ফসল পেয়েছেন। এর আগের মৌসুমেও সারা দেশের কৃষক কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ফসল পেয়েছেন। তারপরও বর্তমানে চালের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার বিষয়টিই স্পষ্ট হচ্ছে। অতীতেও ভরা মৌসুমে মিলারদের কারসাজিতে চালের বাজার বারবার অস্থির হয়েছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। উদ্বেগের বিষয় হলো, সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা যেন স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হতে হবে। চালের দাম বাড়লে সব শ্রেণির মানুষের সমস্যা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভোগ বাড়ে নিম্নআয়ের মানুষের। তাই চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে তদারকি জোরদার করতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম চড়া থাকলে গরিব মানুষ বাধ্য হয়ে খাওয়া কমিয়ে দেন। কাজেই যেভাবেই হোক, নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর করতে হবে।

সংকটে ছয় বিশেষায়িত ব্যাংক

ডেস্ক রিপোর্ট:

বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে যে নজিরবিহীন লুটপাট হয়েছে, তা আর নতুন করে বলার নয়। এ সময় দেশ থেকে পাচার হয়েছে বিপুল অঙ্কের অর্থও। এখনও যার জের টানতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে দেশের ছয়টি বিশেষায়িত ব্যাংক।

মূলত অস্বাভাবিকভাবে খেলাপি ঋণ এবং মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটিতে ঘাটতির অঙ্ক ঋণাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধু তাই নয়, ঋণ বিতরণের অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকনির্দেশনাও। তবে অর্থ আদায়ে খেলাপিদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করলেও তা আটকে যাচ্ছে রিটের কারণে। সব মিলিয়ে গভীর উদ্বেগ, হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে স্বয়ং সরকারের সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকগুলো হচ্ছে-বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, বিএইচবিএফসি ব্যাংক ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বিশেষায়িত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) বৈঠকে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বৈঠকে পরিস্থিতি উত্তরণে খেলাপিদের তালিকা প্রস্তুতসহ শ্রেণিকৃত ঋণ কমিয়ে আনতে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনায় খেলাপিদের এবং অবলোপনকৃত খাত থেকে অর্থ আদায়সহ মূলধন ঘাটতি কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রতিবেদন প্রতি তিন মাস অন্তর অর্থ বিভাগে দাখিল করার জন্য ব্যাংক এমডিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিগত সময়ে ব্যাংকগুলো তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করেনি, তা বলাই বাহুল্য। ব্যাংকের ফাংশনগুলো ঠিকমতো কাজ করলে এমন করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে লুটপাটকে চালু রাখতে ব্যাংক খাতের এ বিপর্যয়ের চিত্র গোপন করা হয়েছিল। বিগত সরকারের আশ্রয়ে থাকা প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ কতিপয় ব্যবসায়ী ঋণের নামে লুটপাট, খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, আমানতের টাকা বিদেশে পাচারের মাধ্যমে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রায় শূন্য করে দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ব্যাংক খাতের এ বিপর্যয়ের চিত্র উঠে আসে। পাশাপাশি অর্থ বিভাগের পর্যালোচনায় উঠে আসে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার চিত্রও। আশার কথা, পরিস্থিতি উত্তরণে গঠন করা হয়েছে বিশেষ টাস্কফোর্স। তবে খেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে গতি বৃদ্ধির কথা থাকলেও বাস্তবে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না, যা দুঃখজনক। এছাড়া অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে নগদ আদায়ের পরিমাণও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হচ্ছে না।

আমরা মনে করি, কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। গ্রাহকদের আস্থা ধরে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও কঠোর হতে হবে। খেলাপিদের আর কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে বিদ্যমান আইন আরও কঠোর করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, ব্যাংক হচ্ছে অর্থনীতির প্রাণ। ব্যাংক দুর্বল হলে অর্থনীতিও দুর্বল হয়ে পড়বে। এ সংকট কাটাতে তাই দুর্নীতি রোধেও নজর দিতে হবে। ঋণ আদায় করতে হবে। বিদেশে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তার সঠিক হিসাব বের করে ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে হবে। বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সরকার ব্যাংক খাতকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সফল হবে, এটাই প্রত্যাশা।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম