একদিনে রেকর্ড ডেঙ্গু সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা

একদিনে রেকর্ড ডেঙ্গু সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা

ডেস্ক রিপোর্টঃ চলতি বছরে একদিনে রেকর্ড ৪২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সোমবার (৩০ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল রোববার (২৯ জুন) সকাল ৮টা থেকে সোমবার (৩০ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪২৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে একদিনে এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে সর্বাধিক ১৪৯ জন বরিশাল বিভাগের বাসিন্দা। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

এতে বলা হয়, নতুন ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৪৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৭ জন, ঢাকা বিভাগের সিটি করপোরেশনের বাইরে ৬১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৪২ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪৫ জন। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ২১ জন এবং রাজশাহী বিভাগে ৫৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮৭ জন রোগী চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে মোট ১০ হাজার ২৯৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২ জন।

ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে, অবস্থা দ্রুত জটিল হচ্ছে রোগীর

ডেস্ক রিপোর্ট:

ডেঙ্গুর বর্তমান ধরনকে ‘পরিবর্তিত’ উল্লেখ করে বিশেষ চিকিৎসা সহায়তার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর।

তিনি বলেছেন, ডেঙ্গু এখন আর আগের মতো সহজভাবে মোকাবিলা করার মতো নেই—রোগের ধরন বদলেছে, অনেক রোগীর অবস্থাই দ্রুত জটিল হয়ে উঠছে। তাই বাড়ছে নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন।

বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ শাখার পক্ষ থেকে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় সহায়ক বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী হস্তান্তর করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে।

স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। এখন রোগীদের মধ্যে জটিল উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। এজন্য পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাম ও বেডসাইড হেমাটোক্রিট মেশিনের প্রয়োজনীয়তা এখন অনেক বেশি।

তিনি বলেন, এই যন্ত্রপাতি থাকলে দ্রুত রোগ নির্ণয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়, যা চিকিৎসা কার্যক্রমকে গতিশীল করে এবং জটিলতা কমাতে সাহায্য করে।

এ সময় দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি তুলে ধরে অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর জানান, বরগুনায় কিছুদিন আগে ডেঙ্গুর একটি আউটব্রেক দেখা দিলেও বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সারাদেশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে জনসচেতনতা বাড়ানো এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, জ্বর হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

সভা শেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় সহায়ক বিভিন্ন চিকিৎসা বিভিন্ন সামগ্রী হস্তান্তর করা হয়। এসবের মধ্যে ছিলো- ৮টি পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, ২১টি বেডসাইড হেমাটোক্রিট মেশিন, ১,৬০০ পিস ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী।

ডব্লিউএইচও’র প্রতিনিধিরা জানান, ডেঙ্গু মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ৫৬ জন। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টি পরবর্তী জমে থাকা পানি এবং বাড়তি তাপমাত্রা মশার বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে, যা ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়িয়ে তুলছে। তাই শুধু সরকারি ব্যবস্থার ওপর না ভরসা করে, ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম