অনুমতি মিলল তল্লার সেই মসজিদ খোলার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
জমে থাকা গ্যাস বিস্ফোরণে ৩৪ জন প্রাণহানির ঘটনার প্রায় এক বছরের মাথায় খুলে দেয়া হচ্ছে ফতুল্লার তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদটি। রোববার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল গফুরের কাছে মসজিদটি ব্যবহারের অনুমতিপত্র তুলে দেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।

তবে মসজিদটি ব্যবহারের জন্যে কমিটিকে অনুমতিপত্রে লিখিতভাবে ছয়টি শর্ত দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এসব শর্ত পূরণ হলেই কেবল ওই মসজিদে নিয়মিত নামাজের আয়োজন করা যাবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

তিনি জানিয়েছেন, যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো- মসজিদে একাধিক দরজা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে এবং আপাতত মসজিদটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্রের ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিদ্যুতের প্যানেল বোর্ড মসজিদ ভবনের বাইরে অথবা বারান্দায় বসাতে হবে। প্রতি ৩ মাস পর পর অনুমোদিত প্রকৌশলী, এবিসি লাইসেন্সপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান দ্বারা পরীক্ষা করে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক মসজিদের বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সব কার্যক্রমের সঠিকতা নিশ্চিত করতে হবে। মসজিদের নিচে বা পাশে গ্যাস লাইন নেই অথবা গ্যাস লাইন সঠিক আছে মর্মে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিশ্চিত করতে হবে। মসজিদের প্রতিটি তলায় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদি রাখতে হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথভাবে মনিটরিং করাসহ এসব শর্তাবলি পালন নিশ্চিত করতে হবে।

জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ আরও বলেন, মসজিদ খোলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের চিঠি চাওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এই বিষয়ে ইতিবাচক সুপারিশ করেছেন। পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মসজিদ সংস্কার করে যেকোনো সময় মুসুল্লিরা নামাজের আয়োজন করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজ চলাকালে উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকায় অবস্থিত বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটে। এই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ ৩৪ জন মারা যান। আহত হন আরও কয়েকজন।

এই ঘটনায় জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, ডিপিডিসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে মসজিদের অবকাঠামো নির্মাণে ত্রুটি, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, তিতাসের গ্যাস লাইনে লিকেজের বিষয়টি উঠে আসে। মসজিদের অভ্যন্তরে জমে থাকা গ্যাস ও বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গ থেকেই এই ধরনের ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এই ঘটনায় দায়ের করা পুলিশের মামলায় মসজিদ কমিটির সভাপতি, তিতাস ও ডিপিডিসির সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হন। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এই মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

অভিযোগপত্রে মসজিদ কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল গফুরকে প্রধান করে ২৯ জনকে আসামি করা হয়। তবে সরকারি সংস্থার আসামিদের আসামি করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি না পাওয়ায় এই মামলায় গ্রেফতার তিতাসের ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় সংযুক্ত করা হয়নি।

 

চাঁদমারীতে নাসিম উসমান মসজিদ নিয়ে ডিসির বিতর্কিত ভূমিকায় এলাকায় ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে ফতুল্লার পশ্চিম চাঁনমারী এলাকার পতিত সরকারি জমিতে নামাজ আদায়ের অনুমতি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের বিতর্কিত ভুমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তা বন্ধের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তাদের ভাষ্য এই এলাকার জেলা প্রশাসকের নিজস্ব ২টি মসজিদ সহ মোট ছয়টি মসজিদ রয়েছে। এতো মসজিত থাকার পর সরকার যেখানে এই মসজিদটি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে সেখানে এমন নির্দেশের তোয়াক্কা না করে জেলা প্রশাসক সেখানে পুনারায় নামাজ আদায়ের কোনো অনুমতি দিলেন তা রহস্যজনক।

এখানেই শেষ নয়, ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, এ বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি নাসিম ওসমানের পক্ষ নিয়ে ভুক্তভোগিদের ধমক দিয়ে বলেন, ‘এতো জেনেসাইড’ জেনোসাইড করেন কেন? ভিন্ন মতাবলম্বী কি থাকবে না নাকী? তার এমন মন্তব্যে পর এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

এ নিয়ে ইতোমধ্যে জন প্রশাসন মন্ত্রনালয় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এলাকা বাসীর পক্ষে নাহিদ ইসলাম নামক ব্যক্তির করা অভিযোগে বলা হয়, ‘আমাদের এলাকাটি চানমাড়ি টেক্সি স্ট্যান্ডের পার্শ্বে অবস্থিত। এখানে চানমাড়ি টেক্সি স্ট্যান্ডে পূর্বেই মহাসড়কের জায়গা দখল করে জোর পূর্বক নির্মিত “নাসিম উসমান মসজিদটিকে বর্তমান সরকার ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিলে ফকির গার্মেন্টস সড়কের শুরুতে খতিয়ান ১৪৫, সি,এস, এস,এ-৭২, আর,এস-১৩৬ নং দাগের ৩৩ শতাংশ খাস ভূমিতে আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলার বর্তমান জেলা প্রশাসক জুলাই আগস্ট-জেনোসাইডে সরাসরি অংশগ্রহণকারী নাসিম উসমানের দলীয় লোকজনের সাথে বৈঠক করে এবং প্রকাশ্যে নিরীহ লোকজনকে “এতো জেনেসাইড” জেনোসাইড করেন কেন? ভিন্ন মতাবলম্বী কি থাকবে না নাকী? এ ধরনের মন্তব্য করার পর হইতে এলাকার মধ্যে বিশাল বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এলাকার ৩/৪টি গ্রুপ তৈরী হয়ে মারমুখি অবস্থানে সকাল বিকাল মিছিল স্লোগান সহ বর্তমান জেলা প্রশাসকের বিগত সরকার দলীয় লোকজনের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য জনমনে অশান্তির সৃষ্টি করেছে’।

‘এখানে উল্লেখ্য যে, এই এলাকার জেলা প্রশাসকের নিজস্ব ২টি মসজিদ সহ মোট ছয়টি মসজিদ রয়েছে। চানমাড়ী ট্যাক্সী ষ্ট্যান্ডেই উক্ত নাসিম উসমান মসজিদ লাগোয়া একটি মডেল মসজিদ নির্মিত হতে যাচ্ছে’।

‘শুধুমাত্র বিগত সরকারের লোকজনের প্রভাব বিস্তারের জন্য নাম পরিবর্তন পূর্বক নতুন নামে মসজিদ নির্মান করে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাই উদ্দেশ্য’। ‘ফকির পার্মেন্টস সড়কটি রাজউক প্লানে ৬ মিটার ১৮ ফুট প্রস্থে থাকলেও বিগত সরকার দলীয় লোকজন অবৈধভাবে জায়গা দখল করে দোকান নির্মানের কারনে প্রন্থে দশ ফুট অবশিষ্ট রয়েছে’।

‘জায়গাটি মানুষের বাসা বাড়ির মাঝখানে উঠানের মত, যেখানে অগনিত মহিলা ও শিশু যাতায়াত করে। যা পুরুষদের জন্য মসজিদ হওয়ার উপযুক্ত নয়’।

‘বিগত সরকারের দলীয় খাস লোক রহমত উল্লাহ্ বোখারী ও সেলিম উসমানের একান্ত বন্ধু মনির এর নেতৃত্বে তাদের লোকজন কে টুপি পাঞ্জাবী পরিয়ে এলাকার লোকজন বানিয়ে সংকীর্ন প্লেসে উক্ত “নাসিম উসমান মসজিদের পুনঃ স্থাপন চেয়ে সকাল বিকাল স্লোগান, মিটিং মিছিল করে। এলাকার উক্ত মসজিদ নির্মানে বাধাদান কারী নিরীহ লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ নির্যাতন, নিপীড়ন চালাচ্ছে। যাহার ভিডিও ফুটেজ বিদ্যমান আছে’।

‘একজন জেলা প্রশাসক বরাদ্দ ব্যতীত কিভাবে একজন লীজ গ্রহিতা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় আগামী শুক্রবার নিজে উপস্থিত থেকে উক্ত প্লেসে জুম্মার নামাজ আদায় করে ভিত্তি প্রস্থড় স্থাপনের মৌখিক নির্দেশ দিতে পারে, যা কখোনই আইন সংগত নয়’।

‘এই ফকির গার্মেন্টস সড়কে গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরী চলমান আছে। যেখানে এমনেতেই সংকীর্ণ রাস্তার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তার উপর রাস্তাটি মসজিদ নির্মানের কারণে আরও সংকীর্ণ হয়ে গেলে ফ্যাক্টরীর উৎপাদন সহ মহিলা শিশুদের চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে’।

‘এমতাবস্থায় জনাবের নিকট বিনীত অনুরোধ আমরা এলাকার নিরীহ লোকজন কোনভাবেই এই বর্তমান জেলা প্রশাসক সহ এই বিগত সরকারের দলীয় দুস্কৃতিকারীদের সাথে পেরে উঠছিনা। যেখানে এলাকায় আরও ছয়টি মসজিদ রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিদ্যমান, তাই এই ধরনের খাস ভূমি বরাদ্দ ব্যতিত এবং জনৈক ব্যক্তির নামে লীজ থাকাবস্থায় জেলা প্রশাসক নিজে স্ব-শরীরে আগামী শুক্রবার জুম্মার নামাজে উপস্থিত থেকে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মৌখিক নির্দেশ দিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পরিবেশ ভারসাম্যহীন না করার জন্য আসু পদক্ষেপ নিতে জনাবের একান্ত মর্জি হয়’।
এবিষয়ে মন্তব্য জানতে জেলাপ্রশাসককে বার বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননী।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম