যেসব ভুলে বিস্ফোরণ হতে পারে ফ্রিজ!

লাইফস্টাইল ডেস্ক:

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে যে যন্ত্রগুলো, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্রিজ। বাসায় ফ্রিজ থাকা মানে অনেক ধরনের উপকার পাওয়া। বিশেষ করে সবজি, ফলমূল ও খাবার অপচয় রোধ করতে ফ্রিজের কোনো বিকল্প নেই। তাই এখন প্রায় প্রতিটা বাসাতেই ফ্রিজ রয়েছে।

কিন্তু আপনি কি জানেন, এসির পাশাপাশি রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজও বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরতে পারে। বর্তমানে এসি, শর্ট সার্কিটসহ ফ্রিজ বিস্ফোরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। যা সংবাদ শিরোনামও হয়। রেফ্রিজারেটর বিস্ফোরণের পেছনে অনেক কারণ রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হল কম্প্রেসার। ফ্রিজের কম্প্রেসার ঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে হঠাৎ আগুন ধরে যেতে পারে ফ্রিজে।

কম্প্রেসার ছাড়াও যেসব ভুলে ফ্রিজে বিস্ফোরণ হতে পারে চলুন সেগুলো জেনে নিই….

১. ভুলভাবে ব্যবহার

ফ্রিজ যদি নতুন হয় তাহলে খুব বেশি ঝুঁকি থাকে না, কিন্তু আপনি যদি ১০-১৫ বছরের পুরোনো ফ্রিজ ব্যবহার করেন তাহলে এ ধরনের বিস্ফোরণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কখনও কখনও যদি রেফ্রিজারেটরটি ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়, তাতে আগুন লাগতে পারতে বা বিস্ফোরণ হতে পারে। ফ্রিজ ব্যবহারের সময় কিছু ভুল এড়িয়ে চলা উচিত, এতে বিস্ফোরণ এড়ানো যায়।

২. পুরোনো ফ্রিজ

ফ্রিজে অগ্নিকাণ্ড ও ফেটে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। আবার কেউ কেউ অসাবধানতাবশত ফ্রিজ ব্যবহার করেন। ফ্রিজটি প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকার কারণে অনেক সময় প্রচণ্ড গরমও হয়ে যায়। ফলে ফ্রিজ পুরনো হলে কম্প্রেসারের ওপর চাপ পড়ে এবং তা পুড়ে বা ফেটে যেতে পারে এবং বিস্ফোরণ হতে পারে।

৩. অতিরিক্ত খাবার রাখা

কেউ কেউ ফ্রিজে অতিরিক্ত জিনিসপত্র রাখে, ফলে বাতাস সর্বত্র সঞ্চালিত না হয়। এর ফলে ফ্রিজও গরম হয় এবং জিনিসপত্র নষ্ট করতে পারে। ফ্রিজে বেশি জিনিস থাকলে বিস্ফোরণ হতে পারে। কারণ তখন তাকে ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করতে হয়। লোডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ বিলও বেশি হয়। বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে গেলে শর্ট সার্কিটও হতে পারে।

৪. নিম্নমানের সকেট, প্লাগ ব্যবহার

ফ্রিজে নিম্নমানের সকেট, প্লাগ ব্যবহারের কারণে শর্ট সার্কিটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে ঘরে না থাকলে ঘরে থাকা ফ্রিজে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। কিছু কিছু এলাকায় ভোল্টেজের ওঠানামা খুব বেশি থাকে। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই স্টেবিলাইজার ব্যবহার করতে হবে অন্যথায় ফ্রিজের কম্প্রেসার অতিরিক্ত গরম হয়ে ফেটে যেতে পারে।

৫. কয়েলের যত্ন না নেওয়া

ফ্রিজে ব্যবহৃত কুলিং গ্যাস (রেফ্রিজারেন্ট) লিক হয়ে গেলে তা খুবই বিপদজনক, কারণ গ্যাস যদি স্পার্ক বা আগুনের শিখা স্পর্শ করে তাহলে ফ্রিজ বিস্ফোরিত হতে বাধ্য। কিছু মানুষ ফ্রিজের ভেতরে ভিজিয়ে দেয়। এতে অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষতি হতে পারে, যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

৬. অপরিষ্কার ফ্রিজ

ফ্রিজে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখুন। ফ্রিজ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতি ছয় মাস অন্তর সার্ভিসিং করান। সঠিক বায়ু চলাচলের জন্য ফ্রিজের পেছনে পর্যাপ্ত জায়গা থাকা উচিত। অপরিষ্কার ফ্রিজে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৭. ভোল্টেজের ওঠানামা

মানের প্লাগ এবং তার কিনুন। ফ্রিজ অনেক পুরাতন হয়ে গেলে, যদি ভোল্টেজের ওঠানামা বেশি হয় তবে স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করুন।

৮. ফ্রিজে স্পার্ক-গন্ধ

আপনার ফ্রিজ থেকে কোনো স্পার্ক, গন্ধ, ধোঁয়া বা অদ্ভুত শব্দ বের হয়। তাহলে অবিলম্বে একজন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রিকে কল করুন এবং এটি পরীক্ষা করুন। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে, আপনি যে কোনো বড় দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারেন।

যেসব খাবার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়

লাইফস্টাইল ডেস্ক:

বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বাহ্যিক কারণে হয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো আমাদের খাদ্যাভ্যাস। এমন অনেক খাবার আছে, যেগুলো শরীরের কোষে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান (কার্সিনোজেন) তৈরি করতে পারে, কিংবা ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে ক্যানসারের সম্ভাবনা তৈরি করে।

হেলথলাইনের প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা এমন ৬টি খাবারের উল্লেখকরেছেন, যেগুলো নিয়মিত গ্রহণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

যে খাবারগুলো ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে-

১. প্রসেসড মাংস: যেসব মাংস ধূমায়িত, লবণাক্ত, সংরক্ষিত বা ক্যানজাত করা হয়, সেগুলোকে প্রসেসড মাংস বলা হয়। যেমন: সসেজ, সালামি, হটডগ, কর্নড বিফ, বিফ জার্কি ইত্যাদি। এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাংসে এন-নাইট্রোসো যৌগ ও পিএএইচ নামক কার্সিনোজেন তৈরি হয়, যা কোলন, পাকস্থলী ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

২. ভাজাপোড়া: অনেকেই বিভিন্ন ভাজাপোড়া পছন্দ করেন। এই তালিকায় আছে আলু ভাজা, চিপস, পাকোড়া, চপ—এসব স্টার্চ জাতীয় খাবার বেশি তাপে ভাজার সময় অ্যাক্রিলামাইড নামক ক্ষতিকর উপাদান তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাক্রিলামাইড ডিএনএ ক্ষতি করে এবং কোষ ধ্বংসের মাধ্যমে ক্যান্সার সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. অতিরিক্ত সেদ্ধ বা পোড়া খাবার: চিকিৎসকদের মতে খাদ্য তারিকায় অতিরিক্ত সেদ্ধ এবং পোড় আখাবার না রাখাই ভালো। বিশেষ করে মাংস অতিরিক্ত আগুনে গ্রিল, বারবিকিউ বা প্যান ফ্রাই করলে পিএএইসএ ও এইচসিএ নামের ক্যানসার জনিত যৌগ তৈরি হয়, যা কোষের ডিএনএ পরিবর্তন করে ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই এই জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো বলছেন চিকিৎসকরা।

৪. দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, দই, চিজ এই পরিচিত দুগ্ধজাত খাবারগুলো অনেকের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় স্থান পায় পুষ্টির উৎস হিসেবে। তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এসব খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ২০২০ সালের একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণের ফলে দেহে ইনসুলিন-জাতীয় গ্রোথ ফ্যাক্টর ১ (আইগিএফ-ওয়ান) নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই আইগিএফ-ওয়ান হরমোন প্রোস্টেট ক্যান্সারের কোষ বিভাজন বা বিস্তারকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

৫. চিনি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট: চিনি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার যেমন কোমল পানীয়, সাদা পাউরুটি, পেস্ট্রি, সাদা ভাত বা মিষ্টি সিরিয়াল—এসব নিয়মিত খেলে শরীরে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও স্থূলতা দেখা দিতে পারে। ২০২০ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই দুটি শারীরিক অবস্থা দেহে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায়, যা ক্যানসার সৃষ্টির অন্যতম কারণ হতে পারে। এমনকি, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সঙ্গে ডিম্বাশয়, স্তন ও জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকি যুক্ত বলেও দেখা গেছে। পাশাপাশি, রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ কোলন ক্যানসারের সম্ভাবনাও বাড়াতে পারে।

৬. অ্যালকোহল: অ্যালকোহল পান করলে তা শরীরে ভেঙে গিয়ে অ্যাসিট্যালডিহাইড নামক একটি রাসায়নিক যৌগে পরিণত হয়, যা কার্সিনোজেনিক বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালের একটি পর্যালোচনা গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাসিট্যালডিহাইড ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দেহে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করে। এ ছাড়া এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও দুর্বল করে দেয়, ফলে প্রিক্যান্সারাস বা ক্যানসার কোষ শনাক্ত করে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। একই সঙ্গে অ্যালকোহল পানের ফলে নারীদেহে ইস্ট্রোজেন হরমোন বেড়ে যায় যা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি করে।

যেসব খাবার ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে: বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, কিছু নির্দিষ্ট খাবারে এমন উপকারী উপাদান থাকে যা শরীরকে ক্যানসারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে যেসব খাবারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, আঁশ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, সেগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই খাবারগুলো হলো:

ফল ও সবজি: ফলমূল ও শাকসবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ডিএনএ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

বাদাম: বাদাম প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।

ডাল ও শিমজাতীয় খাবার: শিমজাতীয় খাবার আঁশে সমৃদ্ধ, যা কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখে।

হোল গ্রেইন বা পূর্ণ শস্য: হোল গ্রেইন খাবার যেমন ব্রাউন রাইস ও কুইনোয়া শরীরে আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। যা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

মাছ: মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ হ্রাস করে স্তন ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছুটা কমাতে পারে।

প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসই হতে পারে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি। প্রসেসড মাংস, অতিরিক্ত ভাজা বা পোড়া খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও অ্যালকোহল পরিহার করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। পাশাপাশি বেশি করে ফল, সবজি, হোল গ্রেইন ও স্বাস্থ্যকর প্রোটিন গ্রহণ করুন, শরীরচর্চা করুন এবং মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম