তারিখ লোড হচ্ছে...

রপ্তানি খাতের জন্য অশনিসংকেত

ডেস্ক রিপোর্ট:

বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে দেশের রপ্তানি খাত। বিশেষ করে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত পোশাকশিল্পের জন্য এটি একটি অশনিসংকেত।

এ শুল্কহার কার্যকর হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এই শিল্প। যেখানে ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ এবং ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন, সেখানে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় স্বভাবতই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অনেকটা কমে যাবে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুধু রপ্তানিকারকদের ওপর নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরই এর অভিঘাত হবে মারাত্মক। সামাজিক ক্ষেত্রেও এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব উপেক্ষণীয় নয়। কারণ পোশাকশিল্প দেশের নারীদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে তথা বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে এই নারীদের অনেকেই কর্মসংস্থান হারাবেন। কাজেই শুল্কহার বৃদ্ধির বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার ন্যূনতম সুযোগ নেই। এ সংকট সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।

উল্লেখ্য. গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপ করে। এর আগে দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর বাংলাদেশ এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিন মাস আলোচনার পর মাত্র ২ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে বাংলাদেশের জন্য এখন ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নির্ধারণ করায় মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। অর্থাৎ সময় আছে আর মাত্র ২১ দিন। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে ভালোভাবে দরকষাকষি করতে পারলে শুল্কহার কমতে পারে। কাজেই এখনো সময় চলে যায়নি। ট্রাম্প প্রশাসন আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে। যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা শুরু করা দরকার।

দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন, শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ককে হালকাভাবে নিয়েছিল সরকার। দরকষাকষিতেও হয়তো দুর্বলতা ছিল। সেসব দুর্বলতা এখন কাটিয়ে উঠতে হবে। প্রয়োজনে লবিস্ট নিয়োগ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের আলাপ-আলোচনা করে নেওয়া উচিত। কারণ ব্যবসায়ীরা অর্থনীতি ও রপ্তানি খাতের প্রকৃত অবস্থা তাদের বোঝাতে পারবেন। কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে শুল্ক কমাতে হলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া উচিত, যাতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসে। কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে এই বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব। মোদ্দাকথা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ও দরকষাকষিতে সাফল্য পাওয়ার জন্য সব ধরনের কার্যকর পদক্ষেপই গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র হলো বাংলাদেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার। অনেক পোশাক কারখানা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভর করে ব্যবসা করছে। কাজেই এ সংকট সমাধানে যথাযথ গুরুত্ব আরোপের বিকল্প নেই।

ফিরে এলো জুলাই, শুধু স্মৃতি ধরে রাখাই যথেষ্ট নয়

ডেস্ক রিপোর্ট:

আজ জুলাই মাসের শুরু। গত বছরের এ মাসে জাতি প্রত্যক্ষ করেছিল নারকীয় সব কাণ্ড, স্বৈরাচারের আসুরিক শক্তি একে একে নিয়েছিল ছাত্র ও সাধারণ মানুষের প্রাণ। এই জুলাই মাসেই হত্যা করা হয়েছিল আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক আবু সাঈদকে। সেখান থেকেই প্রজ্বলিত হয়েছিল বিদ্রোহের আগুনের সর্বদিকবিস্তৃত শিখা। একটা সরকার কতটা নিপীড়ক হলে অল্প সময়ের ব্যবধানে সরকারি গেজেট অনুযায়ী ছাত্র-জনতার ৮৩৪ জনকে হত্যা, হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু করা সম্ভব?

এই নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। হ্যাঁ, আন্দোলনের একটা পর্যায়ে গত রেজিমের পতন ঘটানোর জন্য মানুষ মরিয়া হয়ে উঠেছিল। অসীম সাহসিকতায় গুলির সামনে পেতে দিয়েছিল বুক। গুলি করতে করতে হয়রান সরকারি বাহিনী এক পর্যায়ে রণেভঙ্গ দিতে বাধ্য হয়। পরের মাস অর্থাৎ আগস্টের প্রথম সপ্তাহের ৫ম দিনেই সরকারের পতন ঘটে এবং স্বৈরাচারের শিরোমণি শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

জুলাই আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের ঐক্য পারে না, এমন কিছুই নেই, এটাই জুলাইয়ের প্রথম শিক্ষা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার প্রেরণাও আমরা পাই জুলাই মাসের বিদ্রোহ থেকে। শুধু দেশে নয়, জুলাইয়ের মহিমা ও মাহাত্ম্য বিশ্বেবাসীকেও বিস্মিত করেছে যেমন, তেমন তাদেরকেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস জুগিয়েছে। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, জুলাইয়ের স্মৃতি থাকবে ততদিন অমলিন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পার হতে চলেছে। যে আকাঙ্ক্ষা ও আদর্শকে সামনে রেখে এই অভ্যুত্থান হয়েছিল, এক বছর পর সেই অভ্যুত্থানের স্পিরিট কি আমরা ধরে রাখতে পেরেছি? আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল স্বৈরাচারমুক্ত এমন এক গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করব, যেখানে থাকবে না গত রেজিমের মতো আর্থিক লুটপাট, যেসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল, বিনির্মাণ হবে সেগুলো, বাংলাদেশ নির্বিঘ্নে এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, ছাত্রসমাজ-জনতা ও যেসব রাজনৈতিক দল এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল, অভ্যুত্থান শেষে অনেক ক্ষেত্রে তাদের ঐক্যে ফাটল ধরেছে। এ কারণে বিজয়ের পর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল, সেই সরকারকে নিরবচ্ছিন্ন স্থিতিশীল পরিবেশে কাজ করতে বাধা পেতে হয়েছে। রাষ্ট্রের যেসব বিষয়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, সেসব বিষয়ে এখনও পূর্ণ ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। তবে আশার কথা, এ সংস্কারের প্রশ্নে ঐকমত্যের প্রক্রিয়া চালু রয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই অনেকে পুরোনো অবস্থান থেকে সরে এসে ঐকতানে সুর মেলাচ্ছেন। আমরা আশা করতে চাই, সংস্কার প্রক্রিয়া শেষে প্রতিশ্রুত সময় ফেব্রুয়ারিতেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াও এগিয়ে যাবে সমান তালে। জুলাই চেতনা আমাদের যেন ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে, এটাই প্রত্যাশা। একটা জাতির জন্য সবসময় সমান সুযোগ আসে না। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর, হয়তো যুগের পর যুগ। জুলাই-আগস্ট ছিল তেমনই এক সময়। ক্যালেন্ডারের এ সময়গুলোর ওপর লাল কালির অক্ষরে দাগ দিয়ে সেগুলো চিরস্মরণীয় করে রাখতে হবে। একইসঙ্গে পালন করতে হবে নির্ধারিত কর্তব্য।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম