
স্টাফ রিপোর্টার:
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও বর্বরোচিত গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আজ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে।
‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে কর্মসূচিতে অংশ নেবেন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, ক্রীড়াবিদ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ।
এ কর্মসূচিতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অংশ নেবে দলটির একটি প্রতিনিধি দল।
জামায়াতে ইসলামীও দলটির তরফ থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে, মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য সকাল ১০টায় বাংলামোটর এলাকায় জমায়েত হতে। মার্চ ফর গাজা কর্মসূচির সঙ্গে ইতোমধ্যেই একাত্মতা ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম। কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও।
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ইমানের তাগিদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম। এতে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মুহাম্মদ আবদুল মালেক।
আয়োজকরা বলছেন, গাজায় চলমান ইসরায়েলি বর্বরতা ও গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে দেশের খ্যাতনামা আলেম, দাঈ, ইসলামি স্কলার, ওয়ায়েজ এবং বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করবেন। দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে গাজার নিপীড়িত মুসলিম জনগণের প্রতি সংহতি জানানো হবে এ কর্মসূচি থেকে।
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান বলেন, শনিবার ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে বিশাল জনতার পদযাত্রার মাধ্যমে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচি পালিত হতে যাচ্ছে। এ কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি ও তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আমরা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি এ কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সফল করতে ৫ নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, অনুষ্ঠানটা আমার, একে সফল করার দায়িত্বও আমিই পালন করব, এই সংকল্প নিয়েই আমরা সবাই ঘর থেকে বের হব। যে কোনো পরিস্থিতিতে উত্তেজনা পরিহার করব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট হব, অনাকাক্সিক্ষত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এমন কোনো প্রদর্শনী করব না যা দেশের ভাবমূর্তি নষ্টের কারণ হতে পারে। কোনো দল বা গোষ্ঠীর প্রতীক এড়িয়ে সৃজনশীল ব্যানার, প্ল্যাকার্ড এবং কেবল বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করার মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করব।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, সকল শ্রেণি-পেশা ও দল-মতের মানুষের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের ইতিহাসে আক্ষরিক অর্থেই অভূতপূর্ব এক গণজমায়েতের দ্বারপ্রান্তে আমরা। এই উদ্যোগকে সাফল্যম-িত করতে উল্লিখিত নির্দেশনা আমরা সবাই অনুসরণের চেষ্টা করব বলে অঙ্গীকার করি।
জাতীয় খতিব মুফতি মুহাম্মদ আবদুল মালেক বলেন, জায়নবাদী ইসরায়েল ফিলিস্তিনের নিরপরাধ মানুষের ওপর, বিশেষ করে নারী শিশুর ওপর যে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে একে গণহত্যা বললেও কম বলা হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর দ্বারা তারা গোটা মানবতার শত্রুতে পরিণত হয়েছে। এমন অমানবিক পরিস্থিতিতে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করার লক্ষ্যে এবং বর্বরোচিত গণহত্যা ও জাতিগত নিধন বন্ধের দাবিতে শনিবার (আজ) প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্চ ফর গাজার ডাক দেওয়া হয়েছে। আসুন, দল-মত নির্বিশেষে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ তায়ালা এই প্রচেষ্টা সফল করুন এবং কবুল করুন।
মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, কারও অপচেষ্টা যেন এ কর্মসূচিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমাদের প্রত্যেককেই সচেষ্ট থাকতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় ইতিহাসের নিকৃষ্টতম গণহত্যা চালাচ্ছে। তার প্রতিবাদে ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে যে আয়োজন করা হয়েছে সেখানে আমি থাকব, ইনশা আল্লাহ। আপনারাও আপনাদের সাধ্যমতো সকলকে নিয়ে সেই আয়োজনে শামিল হোন।
দেশের জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম এমন একটি গণজমায়েত হতে যাচ্ছে, যেখানে সকল রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলমতের মানুষের সম্মিলিত স্রোত আগামী ১২ এপ্রিল রোজ শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মোহনায় মিলিত হবে ইনশা আল্লাহ। মানবতার জন্য এদিন আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
উল্লেখ্য, শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিনিয়োগ সম্মেলনের কথা বিবেচনা করে স্থান পরিবর্তন করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখে এ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।