
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অবশেষে বহুল আলোচিত ‘মেগা টাউন’ প্রকল্পের সকল কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে। এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে অনুমোদনহীন প্লট বিক্রি, ভুয়া জমির মালিকানা ও গ্রাহক প্রতারণার চাঞ্চল্যকর তথ্য—যার প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেয় রাজউক।
রাজউক-এর স্মারক নং-২৫.৩৯.০০০০.০৩১.২৭.০০১.২১-৭৯১, তারিখ ১৫/০৭/২০২৫ ইং, স্বাক্ষরিত নবায়ন খীসা, উপনগর পরিকল্পনাবিদ-২, নগর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শাখা, রাজধানী উন্নয়ন কর্পোরেশন থেকে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
‘বিশ্বাস বিল্ডার্সের জমিতে মেগা টাউনের সাইনবোর্ড’ স্থানীয় দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক শিকদার বলেন—
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এই প্রকল্পের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। উপরন্তু বিশ্বাস বিল্ডার্সের ক্রয়কৃত জমিতে মেগা টাউনের সাইনবোর্ড বসিয়ে মানুষকে প্রতারিত করা হচ্ছে—এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারি এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন—রিহ্যাবের সদস্য হলেই কোনো কোম্পানি দুর্নীতি করবে না—এটা ভুল ধারণা। মেগা বিল্ডার্স লিমিটেডের কোনো ল্যান্ড প্রজেক্ট সম্পর্কে আমরা অবগত নই। রাজউক যখন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে, তার মানেই এখানে প্রতারণার প্রমাণ আছে। সকল গ্রাহককে অনুরোধ করব—ভুলেও অনুমোদনহীন প্রকল্পে বিনিয়োগ করবেন না, বৈধ কাগজপত্র যাচাই করে তবেই টাকা দেবেন।
বিএলডিএ ও ভূমি অফিসের সাফ বক্তব্য বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিএলডিএ)-এর তথ্য অনুযায়ী মেগা বিল্ডার্স লিমিটেড তাদের সদস্য নয়।
নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, খ অঞ্চল) টিএম রাহসিন কবির বলেন—
মেগা বিল্ডার্স কোনো জমি অধিগ্রহণের আবেদন করেনি বা অনুমোদন নেয়নি। অনুমোদন ছাড়া কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া সম্পূর্ণ বেআইনি—এ অভিযোগ পেলে সাথে সাথেই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বন অধিদপ্তরের পদক্ষেপ
নারায়ণগঞ্জের বন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ এইচ এম রাশেদ বলেন—লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। রাজউক যখন প্রকল্প বন্ধ করেছে, তখন আমাদের দায়িত্বও নিশ্চিত করা যে আর কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ড এখানে না চলে।
আইনজীবীর পরামর্শ
ব্যারিস্টার এস এম শাকিল পারভেজ বলেন—রাজউকের নির্দেশেই প্রমাণিত, প্রকল্পটি অবৈধ। গ্রাহকদের উচিত দ্রুত টাকা ফেরতের উদ্যোগ নেয়া, নইলে কোম্পানি ‘প্রকল্প বন্ধ’ অজুহাতে অর্থ আত্মসাৎ করতে পারে।
‘বিশ্বাস বিল্ডার্স’ বলছে কী?
বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন—এই জায়গা আমাদের বহু আগেই ক্রয়কৃত। কিছু অসাধু চক্র সাইনবোর্ড বসিয়ে প্রতারণা করছে। প্রকৃত মালিকানা যাচাই না করে কেউ যেন টাকা না দেন।
কেন অনুমোদন জরুরি?
আসল আবাসন প্রকল্প পরিচালনার জন্য ভূমি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, জেলা প্রশাসন ও বিএলডিএ থেকে অনুমোদন ও NOC নিতে হয়। পাশাপাশি সাইট অফিস, বৈধ দলিলপত্র ও সঠিক ক্রয়-দখল নিশ্চিত করতে হয়—এসব ছাড়া কোনো প্রকল্পকে বৈধ ধরা যায় না। অথচ মেগা বিল্ডার্স লিমিটেডের মেগা টাউন প্রকল্পের কোনো অনুমোদন নেই। পাশাপাশি এক শতাংশ জমিও নেই।