পতিত স্বৈরাচারী শক্তির পুনরুত্থান না চাইলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে- খেলাফত মজলিস

ডেস্ক রিপোর্ট  :
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খেলাফত মজলিসের উদ্যোগে আজ এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামী শক্তির শক্তিশালী ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ইসলামী দল ও মসলক সমূহের ঐক্যের উপর সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনের বিপরীতে একজনমাত্র প্রার্থী দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করা হয়। খেলাফত মজলিস মনে করে রাজনৈতিক ভিন্নমত, সমালোচনা ও প্রতিযোগিতা সৃজনশীল রাজনীতির অংশ। তবে বিভাজন, বিভেদ, প্রতিহিংসা ও পারস্পরিক অশোভন ভাষায় আক্রমন সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয় বরং জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের কারণ হতে পারে। এছাড়াও ফ্যাসিস্ট ও সহযোগীদের বিচার ত্বরান্বিতকরণ, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা সহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ৬দফা করণীয় ঘোষণা করা হয়।
আজ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সেমিনার হলে দুপুর সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠিত উক্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে সভাপতিত্ব করেন খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ। লিখিত বক্তব্য পেশ করেন মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা অধিবেশনের বিরতিতে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক সিরাজুল হক, মাওলানা সাইয়্যেদ ফেরদাউস বিন ইসহাক, মুফতি আবদুল হামিদ, যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, এবিএম সিরাজুল মামুন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, ডাঃ এ এ তাওসিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিজানুর রহমান, অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, অধ্যাপক ড. আহমদ আসলাম, মাওলানা সামছুজ্জামান চৌধুরী, মাস্টার আবদুল মজিদ, অধ্যাপক মাওলানা এ এস এম খুরশীদ আলম, মাওলানা শেখ সালাহউদ্দিন, অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব আলম, বায়তুলমাল সম্পাদক আলহাজ্ব আবু সালেহীন, সমাজকল্যাণ ও শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান ফিরোজ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো: জহিরুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন সাদী, প্রচার ও তথ্য সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক আবদুল করিম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রিফাত হোসেন মালিক, দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মুফতি শিহাবুদ্দীন, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট হাফেজ মাওলানা শায়খুল ইসলাম, উলামা বিষয়ক সম্পাদক মুফতি আলী হাসান উসামা, যুব বিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ ড. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ রায়হান আলী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পষিদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য বৃন্দ।
খেলাফত মজলিস মহাসচিব লিখিত বক্তব্যে বলেন,
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
খেলাফত মজলিসের আজকের প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!
শুরুতেই আমরা মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার ঘটনা শোক প্রকাশ করছি। আহতদের সুস্থতার জন্য দোয়া করছি। একই সরকারকে প্রয়োজনীয় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি।
বাংলাদেশের জনগণের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আবেগ-উচ্ছ্বাস ও প্রবল প্রত্যাশা ছিল। একই সাথে জনমানসে অস্বস্তি, অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ ও হতাশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। মতানৈক্য ও বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য রাজনৈতিক সৌন্দর্য। রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্কলহ, ঝগড়া-বিবাদ জনমনে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে সংশয়-শংকা সৃষ্টি হয়েছে। মব-এর ঘটনা সরকার ও রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উস্কানীমূলক বক্তব্য ও আশালীন ভাষা ব্যবহার রাজনৈতিক সংষ্কৃতিতে পুরোনো ধারার প্রতিচ্ছবি বয়ে বেড়াচ্ছে। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। নতুন রাষ্ট্রকাঠামোর ব্যাপক সংস্কার করার চেষ্টায় নিজস্ব দর্শন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের সংলাপ অব্যাহত রাখলেও মৌলিক সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগারে লিপ্ত রয়েছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে, যে কোনো সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
ষড়যন্ত্রের সংশয় ট্রমা থেকে জাতি এখনো বের হতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট পতিত শক্তির নানামুখী ষড়যন্ত্র প্রতিনিয়ত চলছে। ফ্যাসিস্ট বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকার পরও সরকার বিচারকে যেমন দৃশ্যমান করতে পারেনি, তেমনি প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফ্যাসিস্ট দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি। প্রতিবেশী দেশ অনৈতিকভাবে কেবল খুনি শেখ হাসিনা ও তার দলবলকে আশ্রয় দেয়নি, বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও নানা ষড়যন্ত্রের প্রত্যক্ষ মদদ যোগাচ্ছে। আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও দলের নেতা-কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির উপর হামলা করেছে এবং নানা ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক এই পরিস্থিতিতে খেলাফত মজলিস মনে করে:
১। আগামী ৫ই আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে।
২। ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল খুন, গুম, গণহত্যা ও অপর্কমের দ্রæত বিচার করতে হবে।
৩। দ্রæততম সময়ের মধ্যে মৌলিক প্রয়োজনী সংস্কার সম্পন্ন করে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। অবাধ-নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪। বাংলাদেশের জনগণ পতিত স্বৈরাচারী শক্তির পুনরুত্থান চায় না। সে ক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে খেলাফত মজলিস মনে করে রাজনৈতিক ভিন্নমত, সমালোচনা ও প্রতিযোগিতা সৃজনশীল রাজনীতির অংশ। তবে বিভাজন, বিভেদ, প্রতিহিংসা ও পারস্পরিক অশোভন ভাষায় আক্রমন সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয় বরং জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের কারণ হতে পারে।
৫। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামী শক্তির শক্তিশালী ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ইসলামী দল ও মসলক সমূহের ঐক্যের উপর সবিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনের বিপরীতে একজনমাত্র প্রার্থী দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করছে।
৬। খেলাফত মজলিস এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগস্ট মাসের মধ্যে ৩০০ আসনে পর্যায়ক্রমে প্রার্থী ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ইতোমধ্যে ১০০টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজধানীতে ১৪৬ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসাবে ডিএমপি

রাজধানীতে ১৪৬ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসাবে ডিএমপি

ডেস্ক রিপোর্ট:

গণ অভ্যুত্থান উদযাপন নির্বিঘ্ন ‌করতে ১১ দিনের বিশেষ অভিযানের নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি। ফ্যাসিবাদী শক্তি নাশকতা করতে পারে এমন শঙ্কায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশের সকল ইউনিটকে। নির্দেশনা পেয়ে রাজধানীতে ১৪৬ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানোর কথা জানিয়েছে ডিএমপি‌।পুলিশ মহাপরিদর্শক জানিয়েছেন গণ অভ্যুত্থানের দুই মাস জুলাই ও আগস্ট পুরোটাই সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে পুলিশ। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ অভিযানের বিকল্প নেই।

২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছিল ছাত্র জনতা। এক বছর পূর্তিতে তাই নানা কর্মসূচি পালন করছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিভিন্ন সংগঠন। গণ অভ্যুত্থান উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ কথা জানিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। এ কারণেই এখন পর্যন্ত তেমন কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটেনি‌।

গণ অভ্যুত্থান উদযাপনের শেষ ১১ দিনে ফ্যাসিবাদী শক্তির নাশকতার আশঙ্কা করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি। তাইতো ১১ দিনের বিশেষ অভিযানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশের সকল ইউনিটকে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে বিশেষ অভিযানে সন্দেহভাজন ব্যক্তি মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসসহ সব যানবাহনে তল্লাশি বাস টার্মিনাল লঞ্চঘাট রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরের আশপাশে বিশেষ নজরদারি এবং মোবাইল পেট্রল বাড়াতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল সাইবার পেট্রলিং এবং গোয়েন্দা নজরদারি জোরদারের নির্দেশনাও রয়েছে।

নির্দেশ পেয়ে নিরাপত্তা জোরদারের কথা জানিয়েছে ডিএমপি‌র অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলছেন সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে নাশকতাকারীদের ধরতে পারলে আতঙ্ক কাটতে পারে। বিশেষ অভিযানের নামে নিরপরাধ কেউ যাতে হয়রানি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখার পরামর্শ অপরাধ বিশ্লেষকের।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম