স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি জামায়াতের সংঘর্ষে আহত ১৫ জন

স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি জামায়াতের সংঘর্ষে আহত ১৫ জন

ঝিনাইদহ সংবাদদাতা:

ঝিনাইদহে স্কুলের অ্যাডহক কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও দ্বিতীয় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে প্রথম দফায় ঝিনাইদহ জেলা সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর হরিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে আহতরা চিকিৎসা নিতে গেলে বেলা ১২টার দিকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দ্বিতীয় দফায় মারমারিতে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ। এ সময় হাসপাতালে আসা সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায় সম্প্রতি সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর হরিপুর কবি ফজের আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হন জামায়াত সমর্থিত জহুরুল ইসলাম। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকদের মাঝে বিরোধ চলে আসছিল। এর জেরে বৃহস্পতিবার স্কুল কমিটির সভা চলাকালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে জামায়াতের ৯ জন ও বিএনপির ৬ নেতাকর্মী আহত হন। বিএনপি সমর্থিতদের মধ্যে আহতরা হলেন কানুহরপুর গ্রামের ইমাদুর রহমান একই গ্রামের মাসুম, গোলাম মোস্তফা, সুমন, রেহানা খাতুন ও মহারাজপুর গ্রামের রহমতুল্লাহ।

জামায়াত সমর্থিতদের মধ্যে আহতরা হলেন, জহুরুল ইসলাম, হুসাইন, মুজাব আলী, হাফিজুর রহমান, রুপচাঁদ আলী, ফয়জুল্লাহ, সলেমান মন্ডল, তোতা মিয়া ও সফর আলী। বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত আহতরা ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদিকে দুপুর ১২টার দিকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দুই দলের আহত নেতাকর্মীরা আরেক দফায় মারামারিতে লিপ্ত হন। এ সময় সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। হামলার বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াত পরস্পরকে দোষারোপ করছে।

ইসলামপুর হরিপুর কবি ফজের আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম জানান, স্কুলের পরিচালনা কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকেই আমাদেরকে স্কুলে ঢুকতে দেয় না। আজ স্কুলে মিটিং ছিল। সকালে স্কুল খোলার আগেই আমরা স্কুলে য়ায়। এ সময় তারাও স্কুলে আসে। মূলত কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের কিছু লোকের সঙ্গে মিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো উসকানি ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা করে। আমিসহ বেশ কয়েকজন আহত অবস্থায় এখন হাসপাতালে।

মহারাজপুর ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি মো. শাহাজান আলী বিশ্বাস বলেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন মন্টু নিজে কৌশল করে একটি পকেট কমিটি করেছে। সেই কমিটিতে জহুরুল ইসলামকে সভাপতি, প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন মন্টু, শিক্ষক প্রতিনিধি মোস্তফা এবং অভিভাবক সদস্য লাভলু (লাবু) চারজন আছে। তার মধ্যে শিক্ষক প্রতিনিধি মোস্তফা এবং অভিভাবক সদস্য লাভলু (লাবু) পদত্যাগ করেছে। সে কারণে ডিসি অফিস থেকে এলাকায় তদন্ত করে কমিটি না রাখার জন্য চিঠি দিয়েছে। কিন্তু তারা কোনো কিছু না মেনে আজ মিটিং করতে যায়। ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চার মাস আগে স্কুলের কমিটি করা নিয়ে মারামারির সূত্রপাত হয়। একপক্ষ কমিটি মানতে নারাজ। তারা বৃহস্পতিবার হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এখনো থানায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি।

৮ থেকে ১০ সেকেন্ডেই কাজ শেষ করেছি, খুনির স্বীকারোক্তি

৮ থেকে ১০ সেকেন্ডেই কাজ শেষ করেছি, খুনির স্বীকারোক্তি

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা:

চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় নিহত হয়েছেন ওয়াহিদুল হক ওরফে সাব্বির (১৮)। গত ১৬ মে নয়াবাজার এলাকায় চারটি অটোরিকশাযোগে এসে ‘পাইথন’ নামের গ্যাংয়ের ২২ জন সদস্য তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় গ্যাংনেতা মো. আতাউল (২২) ওয়াহিদুলের পেটে ছুরিকাঘাত করেন। গুরুতর আহত ওয়াহিদুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছয় দিন পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। নিহত ওয়াহিদুল নগরের মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা এবং শ্যামলী আইডিয়াল টেকনিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। পুলিশ জানায়, অন্য এক কিশোরকে মারধরের প্রতিশোধ নিতে পাইথন গ্রুপ ওয়াহিদুলকে টার্গেট করে। তবে ওয়াহিদুল নিজেও ‘বিংগু গ্রুপ’ নামের আরেকটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওয়াহিদুলের বাবা মো. এসহাক বাদী হয়ে হালিশহর থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ইতিমধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে মূল আসামি আতাউলকে বৃহস্পতিবার রাতে র‍্যাব পুলিশের যৌথ অভিযানে হালিশহর থেকে আটক করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আতাউলের ছুরিকাঘাতের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আতাউল অপরাধের দায় স্বীকার করে পুলিশের কাছে বলেন, বেশি সময় লাগেনি, ৮-১০ সেকেন্ডেই কাজ শেষ করেছি।ওয়াহিদুলের বাবা জানান, জুমার নামাজ পড়তে বের হওয়ার পর এক বন্ধু তার ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায় নয়াবাজার এলাকায়। সেখানেই তাকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে ফেলে রাখা হয়। তিনি ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরে কিশোর গ্যাংয়ের কার্যক্রম ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত বছরের মার্চে করা এক জরিপে দেখা যায়, নগরে প্রায় ২০০ কিশোর গ্যাং সক্রিয়, যাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৪০০। গত ৬ বছরে এসব গ্যাং ৫৪৮টি অপরাধে জড়িত ছিল। তাদের পেছনে অন্তত ৬৪ জন প্রভাবশালী ‘বড় ভাই’ প্রশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করছে বলেও জরিপে উল্লেখ করা হয়।

সাম্প্রতিক আরেক জরিপে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের স্কুলে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের ৫৪ শতাংশই কোনো না কোনো অপরাধে জড়িত। তারা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মাদক সেবন ও বিক্রি, ছিনতাই, চুরি, সাইবার অপরাধ, অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফির মতো কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে। পুলিশ মনে করছে, এসব প্রবণতা নগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও সামাজিক অস্থিরতার অন্যতম প্রধান কারণ।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম