তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বিপর্যস্ত জনজীবন

 

মুহাম্মদ রুহুল আমীন:
দীর্ঘদিন ধরে যে আশঙ্কার কথা বলছিলেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা, আজ তা বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকা উষ্ণতা ও লাগাতার দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে দেশের জনজীবন। শুধু দিনের বেলায় নয়, রাতের আবহাওয়াও এখন আর স্বস্তিদায়ক থাকছে না। গরম যেন ঘুম কেড়ে নিচ্ছে মানুষের চোখ থেকে, আর বাড়িয়ে তুলছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

জলবায়ুবিষয়ক গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে চরম আবহাওয়ার ঘটনা গত কয়েক দশকে ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে তীব্র তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, অকাল বন্যা ও খরার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই উষ্ণতা প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে তাপজনিত মৃত্যুর হার বেড়েছে ১৪৮ শতাংশ। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে অতিরিক্ত গরমে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার চারশত ত্রিশ জনের।

একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মোট একশো পঁচাশিটি চরম আবহাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনায় কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের লাখো মানুষ। বিশেষ করে কৃষিকাজ, মাছ চাষ, পশুপালন কিংবা খোলা জায়গায় শ্রমনির্ভর কাজ করা মানুষের জীবন-জীবিকা আজ চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এই ভয়াল অবস্থার মূল কারণ যে কেবল প্রাকৃতিক নয়, তাও এখন স্পষ্ট। ব্যাপক হারে জ্বালানি পোড়ানো, কারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের কালো ধোঁয়া-সব মিলিয়ে পরিবেশে যুক্ত হচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস। কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস জমে থেকে উষ্ণতা বাড়িয়ে তুলছে। অন্যদিকে, এই গ্যাস শোষণ করে অক্সিজেন উৎপাদনকারী বনায়ন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

একটি অঞ্চলের মোট আয়তনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকতে হয় সেখানে বাতাসের ভারসাম্য রক্ষায়। কিন্তু বাংলাদেশে এখন অনেক জেলাতেই এই অনুপাতে বনায়ন নেই। ফসলি জমি কিংবা পাহাড়ি বন কেটে তৈরি হচ্ছে বসতবাড়ি, শিল্প-কারখানা কিংবা অপরিকল্পিত শহর। এইসব কৃত্রিম কাঠামো সূর্যের তাপ শোষণ করে দিনে গরম এবং রাতে গরম বাতাস সৃষ্টি করে চলেছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উষ্ণতা শরীরের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ডিহাইড্রেশন, হিটস্ট্রোক, ত্বকের রোগ, হৃদযন্ত্রের জটিলতা ও মানসিক অস্থিরতা বাড়ছে গরমের কারণে। গর্ভবতী নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি।

পরিবেশবিদদের ভাষায়, “এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে, যদি আমরা এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিই।” তারা মনে করেন, উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে সবুজায়ন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার, শিল্প বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ ও গণসচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

এখন সময়, মানুষের জীবনধারা বদলানো। প্রয়োজন প্রকৃতিনির্ভর চিন্তা ও আচরণ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৃতির গুরুত্বকে ফিরিয়ে আনা দরকার। ঘরে-বাইরে গাছ লাগানো, ইট-পাথরের পরিবর্তে খোলা জায়গা সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শীতলতা বজায় রাখা এসব ছোট ছোট পরিবর্তন এনে দিতে পারে বড় স্বস্তি।

আমরা যদি এখনই না জাগি, তবে ভবিষ্যতের প্রজন্মকে রেখে যাব এক বিষাক্ত ও অস্বস্তিকর পৃথিবী। তাই জীবন, প্রকৃতি ও ভবিষ্যতের জন্য- আজ থেকেই শুরু হোক আমাদের সচেতনতা, আচরণ ও সিদ্ধান্তের পরিবর্তন।

সন্ধ্যার মধ্যেই ৭ অঞ্চলে ঝড় বৃষ্টির আভাস

সন্ধ্যার মধ্যেই ৭ অঞ্চলে ঝড় বৃষ্টির আভাস

ডেস্ক রিপোর্ট:

সন্ধ্যার মধ্যে দেশের সাত অঞ্চলে বজ্র বৃষ্টিসহ ঝড়ের আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসব অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সোমবার (২৮ জুলাই) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানার দেওয়া সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।

আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কি.মি. বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অফিস সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানায়, আজ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে খুলনা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে খুলনা ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম