বিশ্বের বৃহৎ বিমানন্দর হচ্ছে জেদ্দায়

রাজধানীর বর্তমান রিয়াদ আন্তর্জাতিক বিমানন্দরটি চলে যাবে মক্কা প্রদেশের জেদ্দা শহরে। এখানে সৌদি আরবের বিমান পরিবহনের উচ্চতম পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হবে।

 

এর নাম ‘দ্য কিং সালমান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’। সোমবর (২৮ নভেম্বর) রিয়াদে বিশ্ব পর্যটন ও ভ্রমণের বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনে ঘোষণাটি প্রদান করেছেন সৌদি যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ।

 

তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব কেবল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিমানবন্দরই তৈরি করতে যাচ্ছে না, রাজ্যটির ব্যবসা ও পর্যটনের একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হবার বাসনায় বিরাট উন্নতিসাধনও তাতে করা হবে।’ তিনি মহা-পরিকল্পনার ত্রিমাত্রিক নকশা অনুমোদন ও প্রকাশ করেছেন।

 

রিয়াদের পুরোনো বিমানবন্দরকে নতুন যে বিমানবন্দর করবেন তিনি, থাকবে তাদের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক শহর রিয়াদে। বর্তমান রিয়াদ আন্তর্জাতিক বিমানন্দরের কিং খালেদের নামে প্রতিষ্ঠিত টার্মিনালগুলো এমনভাবে বাড়ানো হবে-যাতে ২০৫০ সালের মধ্যে ৩.৫ মিলিয়ন কার্গো মালামাল পরিবহনের সক্ষমতা হবে। কেননা একই সঙ্গে ছয়টি রানওয়ে কার্যরত থাকবে।

 

কিং সালমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমেই অ-তেলখাতে দেশীয় আয় হিসেবে বছরে ২৭ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা ৭ দশমিক ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জন করতে পারবে দেশটি।

 

সৌদি আরবের এই বিমানবন্দরটি ২৯ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৯০ লাখ বিমানযাত্রী পরিবহণ করবে শুরুতে। ২০৩০ সালের মধ্যে ১শ ২০ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। ২০৫০ সালের মধ্যে ১শ ৮৫ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহনেরও স্বক্ষমতা সম্পন্ন করে তৈরি করা হচ্ছে।

 

ফলে দেশের ২ লাখ ১১ হাজার বিমান ট্রাফিকিং থেকে নির্মাণের পর থেকে এখানেই প্রতি বছরে ১ মিলিয়ন ফ্লাইট ওঠা, নামা করানো সম্ভব হবে।

 

মূল স্থাপনাগুলোর ক্ষেত্রে নতুনভাবে তৈরি বিমানবন্দরটি অর্জন করবে ‘এলইডিডি প্রিমিয়াম সাটিফিকেট’। ‘লিডারশিপ ইন অ্যানার্জি অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল ডিজাইন (এলইডিডি)’ হলো বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত সবুজবান্ধব ভবন নির্মাণের একটি সেরা প্রত্যয়নপত্র। কানায়, কানায় ছড়িয়ে থাকবে সবুজ।

 

আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরের শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি-জানিয়েছে সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ)।

 

এই উন্নয়নকর্ম সম্পাদন করা হবে সৌদি সরকারের ‘দ্য পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড’-এ। তারা নিজেরাই এখানে বিনিয়োগ করবেন। বিমানবন্দরটি হয়ে যাবে ‘এয়ারোট্রপলিস’, যেটি ঘিরে শহর বা শহরাঞ্চলগুলো গড়ে ওঠে। বিরামহীনভাবে সর্বক্ষণ তার ক্রেতা ভ্রমণকারীদের সেবা প্রদান করে যাবে।

 

বিশ্বমানের সুদক্ষ অপারেশন সার্ভিসগুলো পরিচালিত হবে। নানা ধরনের উদ্ভাবন থাকবে। রাজধানী রিয়াদের আত্মপরিচয় বহন করবে। রাজধানী শহর ও সৌদিদের সংস্কৃতিকে যুক্ত করা হবে বিমানবন্দরের নকশাতে। যারা নানা জায়গায় যাওয়ার জন্য মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবেন এবং যারা দর্শনাথী হবেন তাদের দেশে, যারা কাজ করবেন এখানে; তাদের সবার জন্যই একটি অনন্য বিমানভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রদান করবে বিমানবন্দরটি।

 

বিমানবন্দর প্রকল্পটি হবে সৌদি আরবের ‘রাজধানী রিয়াদকে বিশ্বের সেরা ১০টি অথনৈতিক শহরের প্রধান’ হিসেবে রূপান্তরের জীবনপ্রবাহ।এ ছাড়া, ২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানীর জনসংখ্যা দেড় থেকে ২ কোটিতে উন্নীত হওয়ার পরও তার উন্নয়নকে প্রবলভাবে সমর্থন জানাবে।

 

দ্য কিং সালমান এয়ারপোর্টে ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ চাকরির ব্যবস্থা থাকবে।

এই মহা-পরিকল্পনাটির বিস্তারিত এসপিএ জানাতে পারেনি। তবে পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গে জড়িত একজন ব্যক্তি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্বভৌম আর্থিক বিনিয়োগ তহবিলটির মাধ্যমে তাদের বিমান চালনা বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগ বিরাট অনুদানগুলো লাভ করতে যাচ্ছে।

 

এ ছাড়া, এই বিমানন্দরের বাস্তুসংস্থান প্রকৃতিবান্ধব হবে। সেখানে অত্যন্ত উন্নত ও সেরা বৈজ্ঞানিক উপায়ে কার্গো বিমান ও যাত্রী পরিবহনের বিমানগুলো চলাচল করতে পারবে। বিমান প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিমানগুলোকে মেরামত করতে পারবেন। ৭৭ বছরের সৌদি আরবের সরকারী সাউদিয়া এয়ারলাইনসকে নিয়ে যাওয়া হবে রেড সি বা লাল সাগর তীরবর্তী ও মক্কা প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর জেদ্দাতে।

 

যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই কর্মকৌশল দুটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে দেশটি কথা বলছে ইউরোপের বহুজাতিক বিমান নির্মাতা সংস্থা এয়ারবাস এসই’র সঙ্গে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নকশা, প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কো’র সঙ্গে দুটি ক্যারিয়ার কিনতে।

গতকাল থেকে রিয়াদে শুরু হওয়া বিশ্ব পযটন ও ভ্রমণের বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলন এই বছরের সবচেয়ে বড় পর্যটন আয়োজনের একটি। করা হচ্ছে কিং আবদুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে। এবারের বিষয়-‘উন্নত ভবিষ্যতের জন্য ভ্রমণ’

ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর যুদ্ধবিরতিতে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য

স্টাফ  রিপোর্টার: 

ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যকার যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদিত হওয়ার পর পরই পৃথক বিবৃতিতে একে স্বাগত জানায় ইসরায়েলের ঘনিষ্ট দুই মিত্র দেশ। খবর আল জাজিরার।

বুধবার (২৮ নভেম্বর) থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এর মধ্যদিয়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান এক রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই যুদ্ধবিরতিকে ‘সুসংবাদ’ বলে অভিহিত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই চুক্তির উদ্দেশ্য ‘শত্রুতা স্থায়ীভাবে বন্ধ’ করা। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানিজ সেনাবাহিনী ‘তাদের নিজস্ব অঞ্চলের’ নিয়ন্ত্রণ নেবে।

সেইসঙ্গে একটা প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন বাইডেন। তিনি বলেছেন, চুক্তিটি ভঙ্গ হলে ইসরায়েল তার ‘আত্মরক্ষার’ অধিকার চর্চা করবে।

এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি বেসামরিক জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দেবে।

এরপর তিনি ‘দীর্ঘ সময় ধরে’ চলা এ শত্রুতা বন্ধের প্রশংসা করেন এবং যুদ্ধবিরতিকে ‘লেবাননে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানে পরিণত’ করার আহ্বান জানান।

সেইসঙ্গে একইরকমভাবে গাজায়ও যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সামাজিক যগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির দিকে এগোতে হবে। সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার ওপর থেকে বিধিনিষেধ অপসারণ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের এক হামলার প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনের গাজায় বড় ধরনের সামরিক আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। একই সময়ে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গেও সংঘাত শুরু হয় তাদের।

প্রথমদিকে সংঘর্ষের মাত্রা তীব্র না হলেও চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে লেবাননে বিমান হামলা জোরদার করে ইসরায়েল। এরপর অক্টোবরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী এবং হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করে।

হিজবুল্লাহও পাল্টা জবাব দেয়। এর মধ্যদিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দেয়। যুদ্ধের ভয়াবহতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যা।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ যুদ্ধবিরতি কার্যকরে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে হিজবুল্লাহ ও লেবানন সরকার। রোববার (২৪ নভেম্বর) এ প্রস্তাবে নীতিগতভাবে সম্মতি জানায় ইসরায়েল। এদিন রাতে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকের পর সম্মতি জানান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

এরপর মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন নেতানিয়াহু। বৈঠকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা চুক্তি কার্যকর করব। তবে চুক্তির কোনো লঙ্ঘন হলে জোর প্রতিক্রিয়া জানাব।’

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ণ সমন্বয় সাপেক্ষে আমরা সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখব। তবে যদি হিজবুল্লাহ চুক্তি লঙ্ঘন করে বা ফের সশস্ত্র হওয়ার চেষ্টা করে, আমরা আঘাত করব।’

 

সবা:স:জু-২০৯/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম