রংপুর সংবাদদাতা:
রংপুর বিভাগের আট জেলার ৪৪০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ। একই সঙ্গে জনবল সংকট চরমে ওঠায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে তৃণমূলের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো এক সময় ছিল প্রাথমিক চিকিৎসা ও মাতৃসেবা প্রদানের অন্যতম ভরসা। কিন্তু এখন সেইসব কেন্দ্রে নেই ওষুধ, নেই চিকিৎসক, নেই সেবিকা। ইকরচালী ইউনিয়ন ও আলমপুর ইউনিয়ন দুই জায়গার দৃশ্যই এক, শুধুমাত্র ‘জননী প্রকল্প’ আওতায় সীমিত প্রসূতি সেবা ছাড়া নেই কোনো চিকিৎসা কার্যক্রম। প্রসূতিদের জন্য থাকা সেই সেবাটুকুও অনেক কেন্দ্রে এখন বন্ধ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আরও বেশি প্রভাবিত হবে। বাড়বে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি, কমবে জন্মনিয়ন্ত্রণের কার্যকারিতা। তাদের মতে, প্রায় অচল হয়ে যাওয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো সচল করা এখন সময়ের দাবি। ওষুধ সরবরাহ ও জনবল নিয়োগ দ্রুত নিশ্চিত না হলে, সরকার ঘোষিত ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা’ শুধুই কাগুজে অঙ্গীকার হয়েই থেকে যাবে।
রংপুর বিভাগের পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী প্রথম থেকে নবম গ্রেড পর্যন্ত মোট ২০৫টি পদের মধ্যে ১১৪টি শূন্য। একাদশ থেকে ষোড়শ গ্রেডে ১৯৭০টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৬১৮টি। ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে ৪০৩৬টি পদের মধ্যে ১৩৮৫টি শূন্য। সব মিলিয়ে বিভাগজুড়ে ৫০ শতাংশেরও বেশি পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। চিকিৎসা ও পরিবার পরিকল্পনার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের এ ধরনের জনবল সংকট চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলেছে তৃণমূলের মানুষকে।
আশপাশের গ্রাম থেকে আসা রোগীরা জানান, এখন শুধুমাত্র ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু ভেতরে নেই ওষুধ, নেই ডাক্তার, নেই সেবা। আগে অন্তত জ্বর-সর্দির ওষুধ মিলত। এখন আর কিছুই পাওয়া যায় না। গাইবান্ধা জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক তারিকুল ইসলাম জানান, ওষুধের বরাদ্দ না থাকায় সেবা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রংপুর বিভাগীয় পরিচালক দেওয়ান মোর্শেদ কামাল বলেন, ‘চিঠি চালাচালি চলছে, আমরা আশান্বিত। খুব দ্রুত সংকট কেটে যাবে।’
নব্বইয়ের দশকে প্রতিষ্ঠিত এসব কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য ছিল সাধারণ চিকিৎসা, প্রসূতি সেবা, কৈশোরকালীন প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনাসামগ্রী সরবরাহ। অথচ এখন এসব কেন্দ্রের প্রায় ৮০ শতাংশ কার্যক্রমই বন্ধ রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ মাসুদ || বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২১/১ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ || মোবাইল : ০১৫১১৯৬৩২৯৪,০১৬১১৯৬৩২৯৪ || ই- মেইল: dailysobujbangladesh@gmail.com || ওয়েব : www.dailysobujbangladesh.com
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ. All rights reserved.