জুয়ার আসর থেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ আটক ৩৪ জন

জুয়ার আসর থেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ আটক ৩৪ জন

টাঙ্গাইল সংবাদদাতা:

টাঙ্গাইলে জুয়ার আসর থেকে সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজগর আলীসহ ৩৪ জনকে আটক করেছে যৌথবাহিনীর সদস্যরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ এক লাখ ৪৯ হাজার ৪১০ টাকা, জুয়া খেলার বিভিন্ন সরঞ্জাম ও দুটি খালি মদের বোতল জব্দ করা হয়। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) গভীর রাতে শহরের ভিক্টোরিয়া রোডে অবস্থিত শতাব্দী ক্লাব থেকে তাদের আটক করা হয়।

আজগর আলী বাদে আটককৃতরা হলেন, সাবেক জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক দেওয়ান শফিকুল ইসলাম, কালিবাড়ি এলাকার বিধুণ ভুষনের ছেলে রক্ষিত বিশ্বজিৎ, সবুর খান বীর বিক্রমের ছেলে মো. শাহ আলম খান মিঠু, দিঘুলিয়ার জসিম উদ্দিন, বাঘিলের গোলাম মাওলা, থানাপাড়ার শাহিন আহমেদ, আবু জাফর খান, বিশ্বাস বেতকার মো. আব্দুর রশিদ, আকুর টাকুর পাড়ার মঈন খান, করটিয়ার ইসমাইলের ছেলে মোস্তফা কামাল, সাবালিয়া এলাকার বিশ্বনাথ ঘোষ, একে এম মাসুদ, বেতকার শিপন, মহব্বত আলী, বিশ্বাস বেতকার আশিকুর রহমান, রফিক, আখতারুজ্জামান, বেপারী পাড়ার এস এম ফরিদ আমিন, কবির হোসেন, আদালত পাড়ার মোশারফ উদ্দিন, রফিকুল, বিশ্বজিৎ, হাসান আলী, ঘারিন্দা এলাকার হাবিল উদ্দিন, আকুর টাকুর পাড়ার জাহিদ, থানা পাড়ার প্রিন্স খান, সৈয়দ শামসুদ্দোহা, পাড় দিঘলিয়ার সাদেকুর, কাজিপুরের সেলিম, আদালত পাড়ার শাহ আলম, সিরাজুল, আদি টাঙ্গাইলের শফিক, আশেকপুর এলাকার আরমান ও ছয়আনি পুকুর পাড় এলাকার শামসুল হক।

টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানবীর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাতে যৌথবাহিনী শতাব্দী ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়ার আসর থেকে বিএনপি নেতাসহ ৩৪ জনকে আটক পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলার পর তাদের আদালতে হাজির করা হবে।

৩ হাজার টাকা বেতনের হিসাবরক্ষক এখন ২৫ কোটি টাকার মালিক!

স্টাফ রিপোর্টার:

আকরাম মিয়া। রাজধানীর ডেমরা এলাকার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে হিসাবরক্ষক পদে যোগদান করেন ২০১০ সালে। এখন তিনি সেই কলেজের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। আছে কোটি কোটি টাকা। আছে অর্থপাচারের অভিযোগও। তবে তার এ অর্থের বৈধ কোনো উৎস নেই বলে উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে। ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
অনুসন্ধানেও আকরাম মিয়ার দুর্নীতির বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তার বেসিক ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখায় পাঁচটি স্থায়ী হিসাবে জমা আছে ২৪ কোটি ২৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৪ টাকা।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লার কলেজ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, চাকরিতে যোগদান থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আকরাম কলেজ থেকে চাকরি বাবদ সর্বসাকুল্যে আয় করেন ৪২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪৩ টাকা। তাহলে কীভাবে তার ব্যক্তিগত হিসাবে ২৪ কোটি টাকা এলো, সেই হিসাব এখন পর্যন্ত আকরাম মিয়া এবং কলেজ কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি দুদককে।

আকরাম মিয়ার এমন আয়ের উৎসের খোঁজে অনুসন্ধানে নেমে দুদক বেসিক ব্যাংক মাতুয়াইল শাখায় হিসাব নং-৬১১৮-০১-০০১০৬৩৭, ৬১১৮-০১-০০১০৬৪২, ৬১১৮-০১-০০১০৬৫৮, ৬১১৮-০১- ০০১০৬৬৩ এবং ৬১১৮-০১-০০১০৬৭৯ এ ২৪ কোটি টাকার বেশি জমা থাকার প্রমাণ পেয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক আকরাম মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ব্যাংকে রাখা টাকা ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের বলে দাবি করেন। এ বিষয়ে আকরাম মিয়ার নামে কলেজের কোনো অর্থ জমা করা হয়েছে কি না দুদক জানতে চাইলে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

এরপর সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক শারিকা ইসলাম বাদী হয়ে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন আকরাম মিয়ার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমিশনের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম।

মামলা সূত্রে জানতে পেরেছে, আকরাম মিয়া ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর আইএফআইসি ব্যাংকের কোনাপাড়া শাখায় ১৪ কোটি টাকার একটি এফডিআর হিসাব খোলেন। তবে ২০১৭ সাল থেকে কলেজের অর্থ আকরাম মিয়ার ব্যাংক একাউন্টে রাখার বিষয়ে কলেজের গভর্নিং বর্ডির কোনো অনুমোদন বা রেকর্ডপত্র প্রদান করতে পারেনি। কলেজের আয়-ব্যয় খাতওয়ারী হিসাবভুক্ত করে কলেজের নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টে রাখার বিধান রয়েছে, তা কোনো কর্মচারীর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে রাখার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৪ জুন একই ব্যাংকের একই শাখায় অপর দুটি স্থায়ী ফিক্সড ডিপোজিট হিসাব খুলে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৩০ টাকা জমা রাখেন। পরবর্তীতে দুটো পে-অর্ডারের মাধ্যমে আইএফআইসি ব্যাংকের কোনাপাড়া শাখা থেকে মোট ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখায় দুইটি হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করেন। এই ব্যাংকের দুইটি হিসাবই আকরাম মিয়া তার নিজের নামে খোলেন।

এরপর ওই অর্থ চতুর আকরাম মিয়া ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখা থেকে পাঁচটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের মাতুয়াইল শাখায় স্থানান্তর করেন এবং একই মাসের ২৭ তারিখে তার নামে বেসিক ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট খুলে টাকাগুলো জমা রাখেন।

দুদকের তথ্য বলছে, আকরাম মিয়া এই টাকাগুলো অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন এবং দখলে রেখেছেন। যার বৈধ কোনো উৎস নেই।

এ বিষয়ে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের প্রধান হিসাবরক্ষক আকরাম মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক শারিকা ইসলাম বলেন, প্রধান হিসাবরক্ষক আকরাম মিয়ার মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে মামলা হয়েছে। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এখনও নিয়োগ হয়নি। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তপূর্বক এ আসামিকে আইনের আওতায় আনবেন বলেও জানান দুদক কর্মকর্তা শারিকা ইসলাম।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম