অনশন ভাঙাতে ব্যর্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

অনশন ভাঙাতে ব্যর্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

বরিশাল সংবাদদাতা:

বরিশালে চলমান স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর।বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুর দেড়টায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় মহাপরিচালক এ কথা বলেন। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি সতর্ক করে বলেন, আমরা কি বিনা কারণে সরকারের সঙ্গে বিরোধ চাই, না বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অন্য ফায়দা নিতে চাই? এ সুযোগ আমরা দিতে চাই না। আন্দোলনকারীদের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ডের কোনো বিরোধ নেই।

এসময় উপস্থিত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা নিরাপত্তাসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। এর আগে মহাপরিচালক হাসপাতালে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান এবং হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে অবগত হন। এদিকে বিকেল তিনটার দিকে মহাপরিচালক অনশন ভাঙাতে শিক্ষার্থীদের পানি ও জুস পান করানোর চেষ্টা করেন। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরিশালে না আসা পর্যন্ত তারা অনশন ভাঙবেন না। একইসঙ্গে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

এদিকে আন্দোলন চলাকালে বিকেল চারটার আগমুহূর্তে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন, যাদের মধ্যে ৭ জন শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। হামলাকারীদের তদন্ত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রনি। তিনি জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১১টা থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ব্লকেড চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একদল অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তাদের ওপর হামলা চালায়। রনি আরও বলেন, ব্লকেডের পাশাপাশি এখন গণঅনশনও চালানো হবে এবং স্বাস্থ্যখাত সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ দিন ধরে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা দূরীকরণ ও স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের দাবিতে তিন দফা আন্দোলন চালাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। প্রথমে আন্দোলন ক্যাম্পাস ও নগরকেন্দ্রিক থাকলেও পরবর্তীতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নথুল্লাবাদ এলাকায় অবরোধ কর্মসূচিতে রূপ নেয়, যা যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।

বরগুনায় প্রতারণার রাজা হারুন অবশেষে পুলিশের জালে

বরগুনা প্রতিনিধি:

“অপরের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়” বহুল প্রচারিত এই প্রবাদটিই যেন সত্য হয়েছে বরগুনার প্রতারক মোশাররফ হোসেন হারুনের বেলায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অপরকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই এখন জেল হাজতে।

আজ ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল দশটায় এলাকাবাসী প্রতারক হারুনকে আটক করে বরগুনা সদর থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসেন। বিকেল তিনটার দিকে পুলিশ তাকে কোর্টে প্রেরণ করেন।

বরগুনা সদরের আয়লা কলেজের গ্রন্থাগারিক মোশাররফ হোসেন হারুন তার নিজ বাড়িতে ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া প্রতিবন্ধী (অটিজম) বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পলাতক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামীর নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বিগত সরকারের আমলে কেউই ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি। ৫ ই আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পরে প্রতারণার শিকার সকল ভুক্তভোগী টাকা চাইলে তিনি উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন।

ওয়াজেদ মিয়া অটিজম বিদ্যালয় এর পরিচালনা কমিটির সদস্য শাহ আলম হাওলাদার গরিব শিক্ষকদের থেকে নেয়া ঘুষের টাকা ফেরত দিতে বললে প্রতারক হারুন তার বিরুদ্ধে বরগুনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিয়া বরগুনা থেকে বদলি হলে তিনি সেই সুযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে জমা দেন। আসামি শাহ আলম হাওলাদার তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই এর আবেদন করলে আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে স্বাক্ষর যাচাইয়ের জন্য পাঠালে এটি ভুয়া প্রমাণিত হয় এবং এই জালিয়াতির জন্য ফৌজদারী কার্যবিধিতে মামলা করতে আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে আমলি আদালত বরগুনা সদর এর বেঞ্চ সরকারী নাদিরা বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।

মামলার এজাহার হতে জানা যায়, আসামী মোঃ মোশারেফ হোসেন বাদী হইয়া মোঃ শাহ আলমকে আসামী করে তার বিরুদ্ধে বরগুনা বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ইং-০৯/১২/২০২৪ তারিখ একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার নম্বর সি.আর ১৭২০/২৪ (বর), ধারাঃ ৪০৬/৪২০ পেনাল কোড। বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলাটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বরগুনাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে মামলার ধার্য্য তারিখ অর্থাৎ মামলার ঘটনার দিন ইং-০৬/০২/২৫ ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ১০.৩০ ঘটিকার সময় ঘটনাস্থল জনাব শেখ আনিসুজ্জামান, বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আমলী আদালত, বরগুনা সদর, বরগুনা এঁর এজলাসে অত্র মামলার নথি উপস্থাপিত হয় এবং তৎপরবর্তী ধার্য্য তারিখ ২৩/৬/২৫ ইং তারিখ জনাব মো: মনিরুজ্জামান বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরগুনা নথি পর্যালোচনান্তে আদেশ প্রদান করেন যে, অত্র মামলায় গত ইং-০৬/০২/২৫ তারিখে মোঃ শামিম মিঞা উপজেলা নির্বাহী । অফিসার বরগুনা সদর, বরগুনা এর স্বাক্ষরিত এক তদন্ত প্রতিবেদন যাতে হাতে লেখা সূত্র উপ/নি/বর-১১০-১৯-১-২৫ ইং এবং তিন ফর্দ সাক্ষীর জবানবন্দী ও কতক ফটোকপি দাখিল করা হয়। উক্ত প্রতিবেদন কোন মাধ্যমে – প্রাপ্ত হয়ে নথি ফাইলে এসেছে তা উল্লেখ নাই। বিগত ১২/০৩/২৫ ইং তারিখ ৩নং আদেশে উক্ত তদন্ত ধারায় অপরাধ আমলে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৩/০৩/২০২৫ ইং তারিখ আসামী মোঃ শাহ আলম হাওলাদার এর আবেদনের প্রেক্ষিতে অত্র আদালতে নথি সামিলে থাকা তদন্ত প্রতিবেদনটি তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত কিনা সেই সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। উক্ত আদেশের প্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা লিখিতভাবে জানান যে, সূত্র উপ/নি/বর-১১০-১৯-১-২৫ ইং “অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে আদালতে দাখিলকৃত গত ১৯/০১/২৫ ইং তারিখে তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে মোঃ শামিম মিঞা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাতিবান্দা, লালমনিরহাট ও পূর্বতন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরগুনা সদর, বরগুনা অবগত নয়। প্রতিবেদনে স্বাক্ষরটি তার নয় বরং জালিয়াতির মাধ্যমে স্বাক্ষর করা হইয়াছে।”

এমতাবস্থায় অত্র আদালতের নিকট প্রতিয়মান হয় যে, অত্র মামলার বাদী কিংবা তৃতীয় কোন পক্ষ অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ শামিম মিঞা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাতিবান্দা, লালমনিরহাট ও পূর্বতন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরগুনা সদর বরগুনা এর স্বাক্ষর জাল করে অত্র আদলতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। যা ফৌজদারী অপরাধ। উক্ত বিষয়ে পূর্নাঙ্গ তদন্তের আবশ্যকতা রয়েছে বিধায় অত্র আদালতের বেঞ্চ সহকারীকে অত্র আদেশ মোতাবেক অত্র মামলার বাদী ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে এজাহার দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হইল। আসামী মোঃ মোশারেফ হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা পরস্পর যোগসাজসে বরগুনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব, মোঃ শামিম মিঞা এর স্বাক্ষর জাল জালিয়াতি ভাবে সৃষ্টি করিয়া প্রতিবেদন তৈরী করিয়া আদালতে উপস্থাপন করিয়াছে। যাহা পেনাল কোড আইনের ৪৭১ ধারার অপরাধ।

প্রতারক মোশাররফ হোসেন হারুন এর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা সহ অনেকগুলো মামলা বিচারাধীন আছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম