নিজস্ব প্রতিনিধি:
যশোর বিআরটিএ অফিসে বর্তমানে যে চিত্র বিরাজমান, তা কার্যত এক দুর্নীতির দুর্গে রূপ নিয়েছে। আর এই দুর্গের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মোটরযান পরিদর্শক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ তারিক হাসান- যার বিরুদ্ধে ঘুষ, দালাল নিয়ন্ত্রণ, নারী কেলেঙ্কারি ও মাদক সংশ্লিষ্টতার ভয়াবহ অভিযোগ ইতোমধ্যেই এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
মাত্র সরকারি চাকরিজীবী পরিচয়ে অস্বাভাবিকভাবে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়ে ওঠা এই কর্মকর্তা মূলত প্রশাসনিক অদক্ষতা ও রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের ফসল। ঝিনাইদহে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি যে পরিমাণ দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন, তা জনমনে অপরাজনৈতিক শাসনব্যবস্থারই প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল। অফিসের ভেতরে-বাইরেই অর্ধশতাধিক দালাল নিয়োগ দিয়ে তিনি ‘ঘুষ আদায়ের কারখানা’ চালু করেছিলেন।
জাতীয় পরিচয়পত্রে সামান্য ত্রুটি দেখানো, ফিঙ্গারপ্রিন্টে কৃত্রিম জটিলতা সৃষ্টি করা কিংবা পুরনো এমআরপি নবায়নের অজুহাতে আবেদনকারীদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়া- এগুলো ছিল তার দৈনন্দিন রুটিন। এ যেন প্রশাসনিক কার্যালয়ের ছদ্মবেশে অধিকৃত লুণ্ঠনের খোলাখুলি মহড়া।
কেবল ঘুষ-দুর্নীতিই নয়, তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির একাধিক ভয়াবহ অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহে চাকরির সময় একাধিকবার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে হাতেনাতে ধরা পড়লেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না হয়ে বরং তাকে বদলির মাধ্যমে আড়াল করা হয়েছে। আরও উদ্বেগজনক অভিযোগ হলো- অফিস কক্ষে বসেই ঘনিষ্ঠ দালালদের মাধ্যমে মাদকের যোগান নেওয়া হতো। অর্থাৎ একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজ অফিসকেই বানিয়েছিলেন এক অঘোষিত অপসংস্কৃতির আস্তানা।
যশোরে বদলি হওয়ার পরও তার চরিত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি। একই ধাঁচে আবারও দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভুক্তভোগী মোটরযান মালিক ও শোরুম ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন- রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফিকেট, এনডোর্সমেন্ট, স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স, শ্রেণী পরিবর্তন, ডুপ্লিকেট সার্টিফিকেট, রুট পারমিট- সব ধরনের সেবার জন্যই ঘুষ দিতে হয় মোটা অঙ্কে। এমনকি অনেক সময় ঘুষের পরিমাণ অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
অভিযোগ এখানেই সীমাবদ্ধ নয়- সাধারণ মানুষকে অপমান, হেনস্তা ও অমানবিক দুর্ব্যবহার এখন অফিসটির নিত্যদিনের বাস্তবতা। সেবাপ্রত্যাশীরা যেন সেখানে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সেবা নয়, বরং ‘ঘুষ নামক টিকিট’ কেটে দাঁড়াচ্ছেন এক প্রহসনের লাইনে। এতসব অভিযোগের পরও কেন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? বরং একের পর এক বদলিই যেন তার জন্য হয়ে উঠেছে নিরাপদ আশ্রয়। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ভেতরেই দুর্নীতির এক অদৃশ্য আঁতুড়ঘর বিদ্যমান, যা তারিক হাসানের মতো অসাধু কর্মকর্তাদের শুধু টিকিয়েই রাখে না, বরং আরও প্রভাবশালী করে তোলে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ মাসুদ || বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২১/১ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ || মোবাইল : ০১৫১১৯৬৩২৯৪,০১৬১১৯৬৩২৯৪ || ই- মেইল: dailysobujbangladesh@gmail.com || ওয়েব : www.dailysobujbangladesh.com
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ. All rights reserved.