যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে হরিলুট: তদন্ত কমিটি গঠন হদিস নেই বেকারদের ২৫ কোটি টাকার!

স্টাফ রিপোর্টারঃ

যুব উন্নয়ন অধিদফতর ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বেকার যুবক-যুবতীদের ২৫ কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। সিলেটের জকিগঞ্জের অ্যাকাউন্টস অফিসের সহযোগিতায় ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির’ দুই কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা, পোষাক বিক্রয় ২ কোটি টাকা ও এফডিআর এর ৩ কোটি টাকা,সর্ব মোট ২৫ কোটি টাকা যুবক-যুবতীদের বদলে কর্মকর্তাদের পকেটে ঢুকেছে বলে খোদ অধিদফতরের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। অথচ গত অর্থবছরে সিলেট অঞ্চলে এই কর্মসূচিই ছিল না।

দেশের তরুণ-তরুণীদের বেকারত্ব দূর করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে সরকার যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উদ্যোগে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি’ চালু করে। যা দেশের বেশিরভাগ উপজেলায় চালু করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই কর্মসূচির প্রায় দুই কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় গত অর্থবছরে ৬ষ্ঠ পর্বের একটি ও ১০ পর্বের ১০টি উপজেলায় টাকা যাওয়ার কথা। উপজেলাগুলো হলো- রংপুরের মিঠাপুকুর, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, পাবনার বেড়া, যশোরের বাঘারপাড়া, ফরিদপুরের সালথা, কক্সবাজারের মহেশখালী, পটুয়াখালী সদর, মাদারীপুরের শিবচর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা। এরমধ্যে মিঠাপুকুর ৬ষ্ঠ পর্বের আওতাধীন এলাকা।
নিয়ম অনুযায়ী এই ১১ উপজেলা ছাড়া অন্য কোথাও বরাদ্দের টাকা যাওয়ার কথা না। কিন্তু সিলেটের জকিগঞ্জে দুই কোটি ৪৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা যাওয়ায় তা উত্তোলন করে খরচও করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তে ধরা পড়ে।
জকিগঞ্জজসহ দেশের কয়েকটি উপজেলা হতে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির ২০ কোটি টাকা পোষাক বিক্রয় ২ কোটি ও এফডিআর এর ৩ কোটি, সর্বমোট ২৫ কোটি টাকা আতসাত্বের অভিযোগ উঠেছে মহাপরিচালক মো: আজহারুল ইসলাম খান, পরিচালক প্রশাসন ও অর্থ, আলী আশরাফ, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার আবুল কালাম আজাদ, একাউন্টেট অফিসার, রুহুল আমিন (খাগডড়াছড়ি বদলি)। আলী আশরাফের কম্পিউটার অপারেটর (ঢাকা জেলায় বদলি) বাজেট, পরিবহন, অডিট অফিসার আলী আশরাফ এর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সব মিলে মোটি ৩ টি তদন্ত চলমান আছে।
অধিদফতর সূত্রে গেছে, সিলেটের জকিগঞ্জে অপ্রত্যাশিতভাবে এই পরিমাণ টাকা চলে যাওয়ার বিষয়টি নজরে আসার পর প্রাথমিক তদন্ত করে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি সেলের পরিচালক অধিফতরের মহাপরিচালকে প্রতিবেদন দেন।
এদিকে বিপুল পরিমাণ টাকা নয়ছয়ের এই ঘটনা সামনে আসার পর নতুন করে গত ২ অক্টোবর ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করেছে। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা অডিটে এমন আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়ার কথা স্বীকার করলেও তদন্ত প্রতিবেদন আসার পর এটা নিয়ে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে অনিয়ম করে টাকা উত্তোলনের জোরালো অভিযোগ যার দিকে তিনি যুব উন্নয়নের জকিগঞ্জ উপজেলা কর্মকর্তা মো. আজহারুল কবির। এই ঘটনা সামনে আসার পর গত একমাস ধরে তিনি কর্মস্থলেও আসছেন না বলে জানা গেছে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি অডিটে এসেছে। আমরা ২ অক্টোবর তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত শেষ হোক। প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, গত ২৩ অক্টোবর সিলেটে যেসব উপজেলায় এই কর্মসূচি আছে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে তদন্ত কমিটির শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা ছিল। তবে শুনানি হয়েছে কি না সেটা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।
যুব উন্নয়নের সিলেট বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, শুনানির জন্য ২৩ অক্টোবর দিন ধার্য ছিল বলে জেনেছি। কিন্তু হয়েছে কি না সেটা মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।
সংস্থাটির সিলেট অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজহারুল সাহেব হঠাৎ করে অফিসে আসা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় বোঝা যায় কিছু একটা হয়েছে।’
এ বিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত পরিচালক প্রশাসন ও অর্থ, আলী আশরাফ বলেন, আপনি অফিসে আসেন সরাসরি কথা বলব। মহা পরিচালক মো: আজহারুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন আছে।

যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

নওগাঁ সংবাদদাতা:

নওগাঁয় স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য হত্যা করার অভিযোগে মো. মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আসামছ জগলুল হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার নথি অনুযায়ী, ২০০৭ সালে নওগাঁর মান্দা উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মো. আনিছুর রহমান সাকিদারের মেয়ে মোছা. রাণী বেগমের সঙ্গে নিয়ামতপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় নগদ ৪০ হাজার টাকা, একটি ভ্যান গাড়ি ও একটি সেলাই মেশিন যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

তবে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মোস্তাফিজুর রহমান পুনরায় যৌতুক দাবি করে রাণী বেগমের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন। স্ত্রীর পিত্রালয়ে ফিরে যাওয়া ও পরে দ্বিতীয়বার পুনরায় বিয়ের পরও চলতে থাকে যৌতুকের দাবি। সর্বশেষ তিনি ভটভটি কেনার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এতে সম্মতি না দেওয়ায় ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট রাতে নিজ ঘরে কাঠের খাটিয়া দিয়ে মাথায় আঘাত করে স্ত্রী রাণী বেগমকে নির্মমভাবে হত্যা করেন তিনি। পরদিন নিহতের বাবা মো. আনিছুর রহমান নিয়ামতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক) ধারায় গৃহীত হয় (মামলা নম্বর- ১১১/২০১৬)। মামলার তদন্ত করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. ইকবাল জামিল চৌধুরী (লাকি)। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অমরেন্দ্রনাথ ঘোষ। সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা শেষে আদালত রায়ে বলেন আসামি মোস্তাফিজুর রহমান স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ অপরাধের একমাত্র উপযুক্ত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

আদালত রায়ে আরও বলেন আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন এবং সেই অর্থ রাণী বেগমের পরিবারের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদানের নির্দেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন হবে বলে আদালত উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে আসামিকে ৬০ দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগও দেওয়া হয়েছে। এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত রাণী বেগমের পরিবার। তারা জানিয়েছেন বিচার পেয়েছি তবে মেয়েটা তো আর ফিরে আসবে না।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম