দুর্নীতির বরপুত্র সাবেক কাষ্টমস কমিশনার বেলাল এখনো বহাল তবিয়তে

# সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করতেন কর্মস্থলে
# হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন : তবুও অধরা
# আলোর মুখ দেখেনি এক ডজন অভিযোগের অনুসন্ধান
# শেখ পরিবারের তদবিরে দুইবার পার পেয়েছেন দুদক থেকে

স্টাফ রিপের্টার॥
বেনাপোল কাস্টমস বিভাগের আলোচিত কর্মকর্তা সাবেক কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী। চাকরি জীবনে যেখানে পদায়ন পেয়েছেন, সেখানেই জড়িয়েছেন সীমাহীন দুর্নীতিতে। নিজে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন, এই পরিচয়ে আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে দু’হাতে নিয়েছেন সুবিধা। কখনো শেখ পরিবারের বন্দনা লিখে বই ছাপানো, কখনো বা কবিতা, স্বৈরাচার সরকারের খাস লোক হিসাবে নিজেকে জাহির করতে হেন কোন মাধ্যম নেই, যা ব্যবহার করেননি বেলাল। নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ওয়াল ভাসিয়ে দিতেন ‘হাসিনা বন্দনায়’। চাকরিকালীন সময়ে সবসময় ‘ভালো পোস্টিং’, অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত¦ পেতে তদবির করতেন। আর এসবের মূলে লক্ষ্য ছিল একটাই, হাত ভরে টাকা কামানো। অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য এমনকি বহিরাগত লোকজন দিয়ে নিজ অফিসে সিন্ডিকেট বানিয়ে চাঁদাবজির মত গুরুতর অভিযোগ আছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। দুর্নীতিলব্দ অবৈধ অর্থে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়, যা নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুর্নীতি প্রমাণ পাওয়ায় ইতিমধ্যে দুদকের আবেদনে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত বেলাল হোসাইন চৌধুরী এবং তার স্ত্রী হোসনা ফেরদৌস সুমির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন।

বেলালের যত সম্পদ:
বেলাল হোসেন এবং তার স্ত্রীর নামে দুদকে জমা হওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর বারিধারায় এফ ব্লকে ১২ নম্বর প্লটে পাঁচকাঠা জমির উপর পাঁচতলা বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য ৫ কোটি টাকা। নিউ ইস্কাটন রোডে বেস্ট উইশেস কোম্পানিতে চার হাজার বর্গফুটের চার কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট যা স্ত্রীর নামে কেনা। বারিধারা ডি ব্লকে পাঁচ কাঠা এবং পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট। যমুনা ফিউচার পার্ক ও অন্য আরেকটি মার্কেটে কোটি টাকা মূল্যের চারটি দোকান, আশুলিয়ায় ১০ বিঘা জমি ও ভাইয়ের নামে গার্মেন্টস রয়েছে গাজীপুরে।
ধানমন্ডির ১৫/এ, রোড নম্বর-৪-এর ১৫ নম্বর বাড়ির কথা উল্লেখ আছে অভিযোগে। এছাড়া দেড়শো কোটি টাকা মূল্যের ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ি এবং একই এলাকার ৫ নম্বও রোডের ১৬ নম্বর বাড়িটিও বেলাল চৌধুরীর নামে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া তার নামে যশোর এসপি অফিসের পাশে ১৫ কাঠা জমির ওপর ১৫ তলা ভবন নির্মাণ, সিভিল সার্জন অফিসের পাশে ৩৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে ১০ তলা ভবন নির্মাণ এবং নোয়াখালী শহরে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে ১০ কাঠা জমির ওপর ৬ তলা বাড়ি নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। নিজ উপজেলা সোনাইমুড়িতে রয়েছে ৫০ বিঘা জমি।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, বেলাল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বিদেশেও। কানাডায় বিলাসবহুল বাড়ি আছে এই কর্মকর্তার, যেখানে তার ছেলে-মেয়েরা বসবাস করেন। আছে দুবাই মেরিনায় ফ্ল্যাট, ডাউন টাউনে বাড়ি, এমনি স্পেস কিনেছেন বুর্জ আল খলিফায়। বিনিয়োগ সূত্রে পেয়েছেন দুবাইয়ের গোল্ডেন ভিসা। দুবাই ভ্রমণে সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না। অনুমতি ব্যতিত ভ্রমণ এবং বিনা ছুটিতে সেদেশে অবস্থান করা যেন তার কাছে ‘ডালভাত’। দুর্নীতির টাকায় স্ত্রী, ভাই-বোন ও শ্যালকের নামেও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বেলাল। শেয়ার মার্কেট কেলেংকারি এবং বিটকয়েন সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে।

পাহাড়সম অভিযোগ বেলালের বিরুদ্ধে:
দুদকের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সরকারের একাধিক দফতরে করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঘুষের মাধ্যমে পণ্য খালাস দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছেন তিনি। বেনাপোল কাষ্টমসে দ্বায়িত্ব পালনকালে ৮০ লাখ টাকার মালামালের ডিউটি মাত্র ১১ লাখ টাকায় ডিউটি দিয়ে সাতটি পণ্যবাহী ট্রাক ছেড়ে দেয়া হয় তার নির্দেশে। পরবর্তীতে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা কাউসার আলম পাটোয়ারী ঐ মালামাল জব্দ করলেও আবারো মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে ট্রাকগুলো খালাস করে দেন তিনি। এছাড়াও বেনাপোলে কমিশনার থাকাকালে কাস্টমসে স্বর্ন ও ডলার নিয়ে একাধিক কেলেংকারির অভিযোগ উঠেছিল। কুমিল্লায় দ্বায়িত্বরত অবস্থায় বন্ধ ইপিজেড প্রতিষ্ঠানের নামে মদের চালান খালাস করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন বেলাল। যুক্তরাষ্ট্র, সেন্ট কিটস এন্ড নেভিস ও মাল্টা তিন দেশের পাসপোর্টও রয়েছে তার।
শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তর (ডেডো)’র মহাপরিচালক থাকাকালীন আফজাল হোসেন নামের এক বহিরাগতকে নিজ অফিসে বিধিবহিঃর্ভূত নিয়োগ দেন বেলাল হোসেন চৌধুরী। কথিত সেই কর্মচারী আফজালকে দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদাবজি করাতেন তিনি। ২০২৩ সালে তুরাগ এলাকায় লামইয়া ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের স্বত্তাধিকারী মো: আব্দুর রাজ্জাকের কাছে রাতের অন্ধকারে আফজালের নেতৃত্বে কয়েকজন লোক পাঠান বেলাল। এসময় ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের সাথে বাকবিতন্ডনায় জড়ালে এক পর্যায়ে সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হয় আফজাল চক্র। এই ঘটনায় সেই ব্যবসায়ী লিখিত অভিযোগ করেছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে। তবে এই অভিযোগের তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি বেলালের প্রভাবে।

বেলালের বিদেশ বিলাস:

বারো মাসে তের বার বিদেশ ঘোরা বেলালের একপ্রকার নেশা। এমনকি বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে উর্ধতন কর্মকর্তা কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতির তোয়াক্কাও করেন না তিনি। অর্থ মন্ত্রনালয়ের উপসচিব ড. কে এম আলমগীর কবির স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ০৯ ফেব্রুয়ারি ১৫ দিন যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ড ভ্রমণের অনুমতি দেয়া হয় । ২০২২ সালে আরেক চিঠিতে ৩ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল ১৫ দিনের ছুটি নেন অর্থ মন্ত্রনালয়ের উপসচিব আহসান হাবিবের স্বাক্ষরিত চিঠিতে। এমন আরও চার বার ছুটি নেন। কিন্তু প্রতিবারই দুবাইয়ের আলাদা ভিসা নিয়ে সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করেন । অভিযোগ রয়েছে, দুবাইতে তার অবৈধ সম্পদ আছে, তাই প্রতিটি ভ্রমণেই যেকোন দেশের অনুমতি নিয়ে এক চক্কর । ২০২৩ সালের অক্টোবরেও অতিরিক্ত ৪ দিন ছুটি কাটান। এর বাইরেও প্রায়শই বিদেশ যান বেলাল। অর্জিত ছুটির বাইরেও বিদেশে অবস্থান করা তার এক প্রকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

তবুও অধরা বেলাল:

শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরের মহাপরিচালক থাকাকালীন চাঁদাবজির অভিযোগই শুধু নয়, বেলালের বিরুদ্ধে এই পর্যন্ত এক ডজন লিখিত অভিযোগ জমা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর গুলোতে। তবে অভিযোগের তদন্ত শুরু হলেই নিজের ‘সাবেক ছাত্রলীগ নেতা’ পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে থামিয়ে দেন পুরো তদন্ত প্রক্রিয়াকে। শেখ পরিবারের প্রভাবশালীদের দিয়ে চাপ প্রয়োগ করান তদন্ত সংশ্লিষ্টদের। কখনো আবার অবৈধ টাকার জোরেও পার পেয়ে যান। ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের অনুমোদন দিয়েছিল দুদক। ঐ বছরের ৮ সেপ্টেম্বর তাকে তলব করেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য চাইতে নোটিশ পাঠানোর পর পরই তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং শেখ হাসিনার পরিবারের লোকজন দিয়ে ব্যপক চাপ প্রয়োগ করেন দুদকের উপর। থেমে যায় অনুসন্ধান কার্যক্রম।
২০২২ সালে আবারো শুরু হয় অনুসন্ধান। সেই বছর ১ জুন দুদকের সাবেক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন নোটিশ পাঠান বেলালকে। যেখানে ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিলের অনুরোধ করা হয়। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বাসার ঠিকানায় পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, “প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দুদকের স্থির বিশ্বাস যে, আপনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। আপনার নিজ ও আপনার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে-বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী কমিশনে দাখিল করবেন। এ আদেশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে কিংবা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ৫(২) ধারা মোতাবেক আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” নোটিশ পাওয়ার পর আবারো তদবির করতে মাঠে নামেন বেলাল। শেখ রেহানা এবং শেখ সেলিমকে মোটা অংকের বিনিময়ে ‘ম্যানেজ করেন’। পরবর্তিতে তাদের অদৃশ্য চাপে আবারো থমকে যায় দুদক।
এভাবেই তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কিংবা তদন্ত প্রক্রিয়া থামিয়ে দেয়া, অথবা তদন্ত প্রতিবেদন নিজের পক্ষে নেয়ায় সিদ্ধহস্ত এই কাস্টমস কর্মকর্তা। যার ফলে দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেন দিনে দিনে।
অবশেষে দুদকের জালে:
চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেলাল হোসাইন চৌধুরী এবং তার স্ত্রী হোসনা ফেরদৌস সুমির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। এদিন দুদকের পক্ষে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন কমিশনের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। শুনানি শেষে বিচারক আবেদন মঞ্জুর করেন।
দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন তার আবেদনে বলেন, বেলাল হোসাইন চৌধুরীর দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইসহ ঘুষ, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অনুসন্ধানকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বেলাল হোসাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত অভিযোগসহ বিভিন্ন গোপনীয় উৎসের মাধ্যমে জানা যায়, তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে দেশে ও কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে প্রচুর স্থাবর অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তাছাড়া তিনি তার ভাইসহ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডেভেলপার, রিয়েল এস্টেট কোম্পানিসহ শেয়ার বাজারে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্জিত অর্থ দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভিন্ন মাধ্যমে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করেছেন মর্মেও অনুসন্ধানকালে তথ্য পাওয়া যায়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম বলেন, অনুসন্ধানকালে বিশ^স্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, বেলাল হোসাইন চৌধুরী সপরিবারে গোপনে দেশত্যাগ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘœ সৃষ্টিসহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। তাই সুষ্ঠু অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধ করা একান্ত প্রয়োজন মনে করে আদালতে আবেদন করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে বেলাল হোসাইন চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও উত্তর দেননি তিনি।

 

ঢাকার সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়া

স্টাফ রিপোর্টার॥
ঢাকার আটটি সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ঢাকা সদর, গুলশান, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, উত্তরা, বাড্ডা ও খিলগাঁও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। জমির নিবন্ধন, নামজারি, জাল দলিলে জমি দখলসহ নানা ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। জমির দলিল আটকে রেখে ভুক্তভোগীদের চাপের মুখে ঘুষ দাবি সাব-রেজিস্ট্রার, উম্মেদার, পিওন ও নকলনবিশদের নিয়মিত আচরণে পরিণত হয়েছে। ঘুষ আদায়ের কৌশল হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রারের রুটিনমাফিক কাজ নকলনবিশ, উম্মেদার ও পিওন দিয়েও করানো হচ্ছে। এই সুযোগে নকলনবিশ, উম্মেদার ও পিওন কোটি কোটি টাকার মলিক হচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন ম্যানুয়াল-২০১৪ মানছেন না সাব-রেজিস্ট্রাররাও। তারা নিবন্ধন ম্যানুয়াল অনুযায়ী নিজেদের কাজ নকলনবিশ, উম্মেদার ও পিওনদের দিয়ে করাচ্ছেন। দলিল চেক করার কাজ সাব-রেজিস্ট্রারদের করার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না তারা। অনুসন্ধানে ও সরেজমিন এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন ম্যানুয়াল-২০১৪-এর অধ্যায়-২৬-এ উল্লেখ আছে যে, সহকারীগণ কর্তৃক দলিল পরীক্ষাকরণ কাক্সিক্ষত নয়, এই কাজটি অবশ্যই স্বয়ং নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সম্পাদিত হবে।
সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য গণশুনানির আয়োজন করেছে। শুনানিও চলছে। এতে ভুক্তভোগীরা তুলে ধরেছেন তাদের নানা সমস্যার কথা। বলেছেন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র। তারা বলেন, ‘আমরা আমজনতা। আমরা কোনো কাজের জন্য ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে হয়রানির শিকার হই। মোটা অঙ্কের ঘুষ ছাড়া কাজ হবে না বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন। আমরা তাদের কাছে জিম্মি।’ ভুক্তভোগী জনগণের দাবি, নামজারি, খারিজ, জমির শ্রেণী পরিবর্তনসহ নানা কাজে জনগণের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন ভূমি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রারসহ কর্মচারীরা।
সরেজমিন গিয়ে রোববার দেখা গেছে, গুলশান সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের মনির হোসেন ও মঞ্জু মোল্লা রেজিস্ট্রি দলিল চেক করছেন। তিনি দলিল মালিককে জিজ্ঞাসা করছেন আপনার তথ্য-প্রমাণ ঠিক নেই। অথচ নিবন্ধন ম্যানুয়াল অনুযায়ী, দলিল চেক করার কাজ করার দায়িত্ব রয়েছে গুলশান সাব-রেজিস্ট্রারের।কিন্তু এই মঞ্জু মোল্লা অনেক ক্ষমতাধর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় রয়েছ তার একাধিক বাড়ী, এছাড়াও ঢাকার তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স ভবনে অপর সাতটি সাব রেজিস্ট্রার অফিসের দলিলও চেক করা হচ্ছে নকলনবিশ, উম্মেদার ও পিওনদের দিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী, নকলনবিশগণ অফিসের অন্যান্য কাজ করবেন। সাব-রেজিস্ট্রার দলিল চেক করার পর নকলনবিশগণ দলিল ভলিউমে লিপিবদ্ধ করবেন।
এ বিষয়ে গুলশানের সাব-রেজিস্ট্রার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নিজেও দলিল চেক করি। নকলনবিশ দিয়ে বাজারমূল্য চেক করাই। আমরা তিন-চার জন মিলে চার-পাঁচ বার দলিল চেক করি। যাতে কোন ভুল না থাকে।মঞ্জুর মোল্লাও দলিল চেক করেন বলেও তিনি জানান। ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স ভবনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনির হোসেন মঞ্জু মোল্লাসহ কয়েকজন নকলনবিশ ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের সাথে যোগসাজশে দলিল রেজিস্ট্রি ভুক্তভোগীদের জিম্মি করে ভয়-ভীতি দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। নকলনবীশগণ দলিল রেজিস্ট্রি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের মীমাংসার কথা বলেও অর্থ আদায় করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ওমেদার মনির হোসেন মঞ্জু মোল্লা ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে এ কর্মকা- চালান অভিযোগ রয়েছে। আবার কখানও দুদক ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে তার ভাই, আত্মীয়-স্বজন আছে বলে দাবি করে প্রভাব বিস্তার করে চলছেন। এছাড়াও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স ভবনের প্রধান সহকারী সালাউদ্দিন, কম্পিউটার অপারেটর মতিউর রহমানও ক্ষমতার প্রভাব চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বর্তমান আইনমন্ত্রীর লোক বলে পরিচয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই বিষয়ে মঞ্জুর মোল্লার মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার সাথে নাকি অনেক সাংবাদিকের ভাল সম্পর্ক।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম