সাবেক মন্ত্রী হাসান মাহমুদের ভাগ্নি জামাই, ১৬ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন সার্কেলে চাঁদাবাজি করেও মোয়াজ্জেম রিয়াদ ধরা ছোয়ার বাইরে

চট্টগ্রাম অফিস॥
১৬ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন সার্কেলে চাঁদাবাজি করেও ফ্যাসিস্ট মোয়াজ্জেম রিয়াদ এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে তিনি হাসান মাহমুদের ভাগনি জামাই, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের পলাতক সাধারণ সম্পাদকের বড় ভাই, বনের লেনদেন তিনিই করতেন, গড়েছেন ভাল্লুক পাচার সিন্ডিকেটও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিবাদের দোসর আওয়ামী লীগের বিনা ভোটের মন্ত্রী হাসান মাহমুদের মন্ত্রিত্ব চলে গেলেও তার তৈরি করা সিন্ডিকেট এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। বন বিভাগের বিভিন্ন তদবির, বদলি বাণিজ্য এবং বনের জমি দখল ও বিক্রি এসব কার্যক্রম এখনো হাসান মাহমুদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে।

কক্সবাজারের যুবলীগ নেতা মোয়াজ্জেম রিয়াদ তাদেরই একজন, যিনি বিগত ১৬ বছর ধরে হাসান মাহমুদের ভাগ্নি জামাই পরিচয়ে বনের জমি দখল, বিট থেকে চাঁদা আদায়, বদলি ও টেন্ডার বাণিজ্যের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং এখনো রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বন বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডাররা এবং স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা মিলে বিশাল একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। মোয়াজ্জেম রিয়াদ, যিনি এক সময় ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন এবং হাসান মাহমুদের ভাগ্নি জামাই এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসাইন তানিমের বড় ভাই হওয়ায়, এই প্রভাব কাজে লাগিয়ে বনের অভ্যন্তরের তদবির ও টেন্ডার বাণিজ্য গড়ে তোলেন। অভিযোগ রয়েছে, বন কর্মকর্তাদের বদলি বাণিজ্যে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, যেখানে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন হতো।

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বন বিভাগের বিপুল পরিমাণ জমি দখল হয়ে গেছে, যার অধিকাংশই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়েছে। এসব দখলের নেতৃত্ব দিয়েছেন মোয়াজ্জেম রিয়াদের মতো আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। অভিযোগ রয়েছে, বিগত ১৬ বছরে বন বিভাগের প্রতিটি বিট, রেঞ্জ ও ডিভিশন থেকে মাসে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করেছেন মোয়াজ্জেম রিয়াদ। উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, রামু, চকরিয়া এবং ঈদগাহ উপজেলায় বন বিভাগের বহু জমি পান বরজ, আবাসন প্রকল্প ইত্যাদি হিসেবে দখল করেছেন তিনি ও তার সহযোগীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, যারা তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, তাদের উপর হামলা ও হয়রানি চালানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, হাসান মাহমুদের ‘সুখী বাংলা’ নামে একটি এনজিওর নাম ভাঙিয়ে তিনি শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বন বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পেও তিনি কমিশন নিতেন বলে জানা গেছে।

জুলাইয়ের গণআন্দোলন শুরু হলে মোয়াজ্জেম রিয়াদের নেতৃত্বে ২৯ ও ৩০ জুলাই এবং ৩ ও ৪ আগস্ট মুক্তিকামী ছাত্রজনতার ওপর ব্যাপক হামলার ঘটনা ঘটে। তার নেতৃত্বে সশস্ত্র ক্যাডাররা সাধারণ ছাত্রদের মারধর ও অপহরণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এখনো পর্যন্ত মোয়াজ্জেম রিয়াদ গ্রেপ্তার না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কক্সবাজারের ছাত্রজনতা। তারা অবিলম্বে মোয়াজ্জেম রিয়াদ ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারসহ তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির তদন্তপূর্বক বাজেয়াপ্তের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে, মোয়াজ্জেম রিয়াদের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভারতে ভাল্লুক পাচারের অভিযোগও রয়েছে। ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার এক পাচারকারী (নিতাই মন্ডল, ছদ্মনাম) জানান, ‘আমরা বাংলাদেশ থেকে ভাল্লুক এবং জীবিত হনুমান সংগ্রহ করি মোয়াজ্জেম রিয়াদ ও আরও কিছু সরবরাহকারীর মাধ্যমে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তারা আমাদের জীবিত বন্যপ্রাণী সরবরাহ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোয়াজ্জেম রিয়াদ ও তার সহযোগীরা বাংলাদেশের ক্যাপটিভ ব্রিডিং ফ্যাসিলিটিগুলো থেকেই এসব প্রাণী আমাদের সরবরাহ করে।’ তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী বিশেষ করে ভাল্লুক ও বানরের কোনো ব্রিডিং ফ্যাসিলিটি নেই এবং সরকার কোনো ধরনের বন্যপ্রাণী বিক্রির অনুমতিও দেয় না। এছাড়াও, মোয়াজ্জেম রিয়াদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে শুধু বন্যপ্রাণী নয়, বিভিন্ন মূল্যবান কাঠ, এমনকি মানুষের পাচারের সাথেও তার নাম জড়িত বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে। কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন যে, তার সিন্ডিকেটের লোকেরা নিরীহ মানুষকে বিদেশে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করেছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাগরপথে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাচারের অন্যতম হোতা হিসেবেও মোয়াজ্জেম রিয়াদের নাম উঠে এসেছে। তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে মানবপাচার সিন্ডিকেটের সাথে সরাসরি যুক্ত।

এছাড়া, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর জঙ্গলে বিশাল এলাকাজুড়ে রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে পুনর্বাসিত করার কাজও তিনে করেছেন এবং তাদের দিয়ে পাহাড়ি পথে চোরাচালান পরিচালনার কাজও তিনি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তিনি এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন নামক একটি মূল দ্বারার সংগঠনে নিজেকে সংযুক্ত করে তার আওয়ামী তকমা মোচার চেস্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে মোয়াজ্জেম রিয়াদ এখন বিভিন্ন তদবির এবং উপডৌকনের মাধ্যমে বাংলা এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে জনমনে নানা বিরুপ মন্তব্য প্রকাশ পাচ্ছে। এই বিষয়ে মোয়াজ্জেম রিয়াদের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম