সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরীর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ

সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরীর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদদাতা:

সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র. আ. ম. উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরীর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা। রোববার (৫ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌর মুক্তমঞ্চ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কাউতুলী মোড়ে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা হেফাজতের সেক্রেটারি মুফতি আলী আজম কাসেমী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মুফতি বুরহান উদ্দিন কাসেমী, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মাওলানা ইউসুফ ভুইয়া, যুব সম্পাদক মাওলানা জুনায়েদ কাসেমী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুফতি উবায়দুল্লাহ মাদানী, দপ্তর সম্পাদক বেল্লাল হোসেন এবং জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী আবদুল্লাহ আল জিহান মাহমুদ প্রমুখ।

বক্তারা অভিযোগ করেন, ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় তৎকালীন সংসদ সদস্য উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরীর ‘প্রত্যক্ষ মদদ’ ছিল। ওই ঘটনায় ১৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যা আলেম-উলামাদের ওপর এক ভয়াবহ হামলা হিসেবে বিবেচিত।

বক্তারা আরও দাবি করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আলেমদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল, আর এর দায় এড়াতে পারেন না উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী। তারা অভিযুক্ত সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হাজির করে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান।

এ সময় বক্তারা শাপলা চত্বরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আলেম-উলামাদের ওপর সংঘটিত নির্যাতনের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পথ প্রশস্ত হয়েছে, তাই সরকারকে এ দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনির্দিষ্টকালের অটোরিকশা ধর্মঘট

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনির্দিষ্টকালের অটোরিকশা ধর্মঘট

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংবাদদাতা:

ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি অতিরিক্ত অর্থ আদায় বিনা কারণে গাড়ি জব্দ এবং লাইসেন্স সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করছেন অটোরিকশার মালিক-শ্রমিকরা। রোববার সকাল থেকে জেলাজুড়ে সব ধরনের অটোরিকশা চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া শহরে ইজিবাইক যেন প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন স্থানে সড়কে অবস্থান নেয় চালকরা।

এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষ শিক্ষার্থী এবং রোগীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চাপ বেড়েছে বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহনে। যাত্রীরা জানান অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে অনেক কষ্ট করে তাদের জেলা শহরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অটোরিকশার চালকরা সড়কে ইজিবাইক আটকে দিচ্ছে। ফলে হেঁটেই অনেকে গন্তব্যে রওনা হয়েছে, কেউ কেউ বাসে চলাচল করছেন।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হেবজুল করিম বলেন প্রতিদিন নানা অজুহাতে ট্রাফিক পুলিশ অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। বৈধ কাগজপত্র থাকার পরেও অনেক সময় বিনা কারণে গাড়ি জব্দ করা হয়। লাইসেন্স নবায়ন ও অনুমোদনের ক্ষেত্রে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। একজন ট্রাফিক পরিদর্শকের অপসারণ দাবি করে তিনি বলেন জব্দ করা শতাধিক অটোরিকশা ছেড়ে দিতে হবে।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড়, কুট্টাপাড়া মোড়, নন্দনপুর বাজার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ও শহরতলীসরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, কোথাও কোনো অটোরিকশা চলাচল করেনি। বিভিন্ন স্থানে অটোরিকশার মালিক, চালক ও তাদের লোকজন (শিশু-কিশোর) লাঠিসোঁটা হাতে পিকেটিং করছেন।

সাজেদ মিয়া (৫৫) নামের এক ব্যক্তি মাথায় করে কৃষিপণ্য নিয়ে যাচ্ছিলেন জেলা শহরে। তিনি নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের বাসিন্দা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া মোড়ে দুপুর ১২টায় তিনি বলেন এইখানে আসতেই মেলা ঝামেলা অইছে। অহন এই বোঝা নিয়া জেলা শহরে যামু কেমনে জানি না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন আমরা গত এক বছরে সরকারকে পাঁচ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছি। অথচ আমাদের বৈধ কাগজপত্র থাকলেও নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়। জেলা শহরে ৫০০ টাকা ভাড়া নিয়ে রোগী বহন করে ফেরার পথে পাঁচ হাজার টাকার মামলা খেতে হয়। এক মাস ধরে আমাদের শতাধিক গাড়ি আটক রাখা হয়েছে। আমাদের তিন দফা দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।

শনিবার রাতে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মালিক সমিতির সভাপতি বলেন আমাদের কর্মসূচির মধ্যে অন্য কোনো যানবাহনকে বাধা দেওয়ার কথা নেই। আমরা শুনেছি, কয়েকটি স্থানে দুষ্কৃতকারী কিছু লোক এমনটি করেছে। আমরা তাদের বাধা দিয়েছি, তারা আমাদের লোক নয়। রিকশা চলতে আমাদের কোনো বাধা নেই।

হঠাৎ করে অটোরিকশার ধর্মঘটে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এখন এইচএসসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির পরীক্ষা চলছে। সকাল-বিকাল চলছে পরীক্ষা। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গ্রাম থেকে উপজেলা সদরে আর স্নাতক শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের জেলা সদরে যেতে হচ্ছে। অটোরিকশার চালকদের কর্মবিরতির ফলে কর্মজীবী মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। তাদের হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

আকলিমা আক্তার নামে এক স্নাতক শিক্ষার্থীকে ১২ দিনের শিশু কোলে নিয়ে সরাইল উপজেলার প্রত্যন্ত শাহবাজপুর থেকে জেলা সদরে যেতে দেখা গেছে। দুপুর পৌনে ১২টায় সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে তার সঙ্গে কথা হয়। হঠাৎ করে এমন কর্মবিরতির কারণে তাকে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। অনেক কষ্ট করে তিনি ১৫ কলোমিটার পথ অতিক্রম করেছেন। তিনি সম্মান চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাকে যেতে হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে। দুপুর ২টা থেকে পরীক্ষা শুরু হলেও বাকি ১৫ কিলোমিটার পথ যাওয়া নিয়ে তাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছিল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন জেলায় অটোরিকশার মালিক-শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের দাবি ছিল আটক গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়া। যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে তাদের গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছি। আর যেগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে, তাদেরটা আটক থাকছে। পরে প্রক্রিয়া শেষে ছেড়ে দেওয়া হবে। কোনো অন্যায়-অবিচার এ ক্ষেত্রে করা হচ্ছে না। অনেকে বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তার নামে অভিযোগ করছেন। বস্তুনিষ্ঠ ও যুক্তিযুক্ত অভিযোগ থাকলে তারা আমার কাছে দিতে পারেন। আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম