নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা এলাকায় অবস্থিত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড-এর ফতুল্লা ডিপো থেকে সম্প্রতি ৩ লাখ ৭৮ হাজার ১৬৮ লিটার ডিজেল চুরির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল গায়েব হওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করলেও, স্থানীয়ভাবে অভিযোগ উঠেছে যে তদন্ত কার্যক্রমটি প্রকৃত সত্য গোপন করে “ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে পরিচালিত” হচ্ছে।
ঘটনাক্রম ও তেল চুরির বিবরণ:
* ২৪ জুন ২০২৫ থেকে ঢাকা–চট্টগ্রাম পাইপলাইনের মাধ্যমে ফতুল্লা ডিপোতে ডিজেল সরবরাহ শুরু হয়। প্রথম ধাপে (২৪ জুন–৪ জুলাই): ২,০৮,৬৩৪ লিটার ডিজেল ঘাটতি ধরা পড়ে। দ্বিতীয় ধাপে (৫ সেপ্টেম্বর–২২ সেপ্টেম্বর): আরও ১,৬৯,৫৩৪ লিটার ডিজেল অনুপস্থিত পাওয়া যায়।
* মোট ঘাটতি: ৩,৭৮,১৬৮ লিটার ডিজেল, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা (বর্তমান সরকারি মূল্যে আনুমানিক)।
. তদন্ত কার্যক্রম:
* বিপিসি এবং জ্বালানি বিভাগ পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জ্বালানি বিভাগীয় কমিটির নেতৃত্বে: অতিরিক্ত সচিব (জ্বালানি)কমিটিতে বুয়েট প্রতিনিধিসহ মোট ৫ সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড থেকেও অভ্যন্তরীণভাবে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।তবে অভিযোগ রয়েছে যে, এসব কমিটি কার্যত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আড়াল করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে এবং তদন্তে নিরপেক্ষতা নেই।
. প্রধান অভিযুক্ত ও তার কর্মকাণ্ড
জয়নাল আবেদিন টুটুল পদবি: অপারেটর (গ্রেজার), যমুনা অয়েল ডিপো, ফতুল্লা। পলাতক ও তিনটি হত্যা মামলার আসামি উক্ত টুটুল ফতুল্লা ডিপোর তথাকথিত “গদফাদার” হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে তেল চুরির সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছেন।তিনি স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের নাম ব্যবহার করে তেল চুরির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের “ম্যানেজ” করে থাকেন।
ঘটনার সময়কার একটি উদ্ধৃতি:
৪ অক্টোবর ২০২৫ (পূজার ছুটির দিন) তিনি কালো গ্লাসের গাড়িতে ডিপোতে প্রবেশ করে উপস্থিত কর্মচারীদের হুমকি দেন—“সব কিছু উপরে ম্যানেজ করা আছে, কেউ যেন মুখ না খোলে। তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে, কিন্তু সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে।”অভিযোগ আছে যে, তিনি অতীতে শত কোটি টাকার তেল চুরির সঙ্গে জড়িত থেকে অবৈধ অর্থে নিজ এলাকায় প্রায় ৭ কোটি টাকায় একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করছেন।
কর্মকর্তাদের নীরবতা ও প্রভাব খাটানো:
ডিপো ঘুরে আসা বিপিসি কর্মকর্তারা স্থানীয় কর্মচারীদের সঙ্গে কথা না বলেই ফিরে যান।স্থানীয় সূত্র মতে, এই কর্মকর্তারা টুটুলের প্রভাবের কারণে মন্তব্য করা বা সাক্ষ্য দিতে ভয় পাচ্ছেন।সম্ভাব্য অনিয়ম ও দুর্নীতির দিকসমূহ:
সরকারি সম্পদ (জ্বালানি তেল) আত্মসাৎ — দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ৪২০ ধারার আওতায় অপরাধ।প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা।. সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্বে গাফিলতি ও তথ্য গোপন।
. সুপারিশ:
দুদক কর্তৃক স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে বিপিসি বা যমুনা অয়েলের বর্তমান কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।পলাতক টুটুলের ব্যাংক হিসাব, স্থাবর সম্পত্তি ও লেনদেনের তথ্য যাচাই করা হোক।. সংশ্লিষ্ট ডিপো কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও হিসাব বিভাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।. তদন্ত চলাকালে অভিযুক্তদের সাময়িক বরখাস্ত করা হোক।এই ঘটনাটি শুধু যমুনা অয়েল ডিপোর নয়, বরং দেশের জ্বালানি খাতে বিদ্যমান দুর্নীতির গভীর সংকেত বহন করছে।জাতীয় স্বার্থে ও সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে দুদকের হস্তক্ষেপ এখন জরুরি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ মাসুদ || বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২১/১ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ || মোবাইল : ০১৫১১৯৬৩২৯৪,০১৬১১৯৬৩২৯৪ || ই- মেইল: dailysobujbangladesh@gmail.com || ওয়েব : www.dailysobujbangladesh.com
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ. All rights reserved.