রাজউকের ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ৭ বছরেই শত কোটি টাকার মালিক

রাজউকের ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ৭ বছরেই শত কোটি টাকার মালিক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা হয়েও ৭ বছরেই হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক। পটুয়াখালী জেলার বাউফলের রনভৈরব, ছিটকা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি শিক্ষক মোতাহার উদ্দিনের ছোট পুত্র মনিরুজ্জামান।

 

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় মনিরুজ্জামান জহির রায়হান হলে থাকতেন এবং সেখান থেকেই তিনি ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্র জীবনে মনিরুজ্জামান ছাত্রলীগের কর্মী হওয়ায় বাউফলের তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক চীফ হুইপ ও সংসদ সদস্য আ.স.ম ফিরোজ এবং এইচটি ইমামের সুপারিশে রাজউকে ইমারত পরিদর্শক হিসেবে চাকরি বাগিয়ে নিয়ে ০২ জুলাই ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে রাজউক প্রধান কার্যালয়ে যোগদান করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে মনিরুজ্জামান নিজেকে বিএনপির একজন বলে দাবি করছেন। মনিরুজ্জামান বিয়ে করেছেন ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার হরিপাশা ইউনিয়নের বীরকাঠী গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক কাঞ্চন আলী মোল্লার মেয়ে কানিজ জাহানকে। বর্তমানে মোন্তাকিম মোনেম নামে এক পুত্র সন্তানের জনক এই মনিরুজ্জামান।

 

দুদকে জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগে মনিরুজ্জামানকে একটি ঘুষ সিন্ডিকেটের অন্যতম মূল ব্যক্তিত্ব হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অভিযোগকারীদের দাবি মনিরুজ্জামান মাত্র কয়েক বছরে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ঢাকায় কিনেছেন একাধিক ফ্লাট, গাজীপুরে কিনেছেন একাধিক প্লট, বরিশাল সদরে ও নিজ গ্রাম বাউফলের ছিটকায় জমি কিনে ভবন নির্মাণ করেছেন। রয়েছে মটরসাইকেল, ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত গাড়ি। ব্যাংকে কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে বলেও জানা গেছে। এসব সম্পদের কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

মনিরুজ্জামান এবং কানিজ জাহানকে ০২ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তলব করে তাদের এবং আপনার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্বনামে/বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও উহা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী অত্র আদেশ প্রাপ্তির ২১(একুশ) কার্য দিবসের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর কোন অদৃশ্য কারনে দুর্নীতি দমন কমিশনের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।

 

রাজউকের ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা হলেও ঢাকা, গাজীপুর, বরিশাল, ও বাউফলে তার নিজের এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট, জমির শেয়ার ও একাধিক বিলাসবহুল ব্যক্তিগত যানবাহন ও নিজের স্ত্রীর নামে রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

 

মনিরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ির পৈতৃক ভিটার বাসভবনটি খুবই ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে, ঘরের নড়বড়ে বেড়া ও মরিচা পরা টিনের ঘর হলেও বাংলামটরে সারিনা আশরাফ নিবাশের ৯/সি ফ্লাটের মালিক মনিরুজ্জামান, বর্তমানে তিনি এই ফ্লাটেই বসবাস করছেন। মহাখালীর ফ্যালকন গার্ডেনে তার ফ্লাট রয়েছে । ফ্যালকন গার্ডেনের সিকিউরিটি গার্ড আব্দুস সবুর দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিবেদককে নিশ্চিত করে বলেন ‍‍”এই ফ্লাটটি মনিরুজ্জামান স্যারের”। তিনি আরো জানান ফ্লাটটি কিছুদিন পূর্বে এক কোটি দশ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চাইলেও এখন আর বিক্রি করবেন না। উত্তরার উলুদাহা,বাউনিয়া মৌজায় পলিয়েন্থাস ভবনে একটি ফ্লাট ও  দক্ষিণ পীরেরবাগের আমতলা টাওয়ারে ১,৬৩০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাটের মালিক ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাউপাড়া মৌজায় বন বিভাগের জমি ভূমি দস্যুরা দখল করে বিক্রি করছে, সেই জমি চারজনে মিলে শেয়ারে ক্রয় করেছেন এই মনিরুজ্জামান। সরেজমিনে গিয়ে সেই জমিতে মনিরুজ্জামানের নামসহ মালিকানা সাইনবোর্ড দেখা গেছে। সাতাইশ, টঙ্গী, গাজীপুরে জমি ক্রয় করে তৈরি করেছেন টিনশেড বাড়ি। এই বাড়িতে মোট ০৯টি রুম রয়েছে যার ০৩ টিতে তার বোন-জামাই বসবাস করে, বাকিগুলো ভাড়া দেয়া হয়। বরিশালের চাঁদমারি, বান্দ রোডে ১০ শতাংশ জমির উপরে টিনসেড তিন ইউনিটের ঘর রয়েছে তার। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে বর্তমানে এখানে জমির শতাংশ ৩৫ লক্ষ টাকা করে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে, এই হিসেবে তার মোট জমির মূল্য রয়েছে ৩,৫০,০০,০০০/=। এখান থেকে মাসে ১৫,০০০/- টাকা ঘর ভাড়া আদায় করেন মোঃ মনিরুজ্জামান। এছাড়াও বরিশালের কাশিমপুর এলাকায় পাঁচতলা ভবন রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বাউফলের ছিটকা রণভৈরবে মনিরুজ্জামানের পৈতৃক ভিটার কাছের বাজারে রয়েছে তার সুবৃহৎ ০৩ তলা বাড়ি, যার নিচে গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়াও নিজ পৈত্রিক ভিটার কাছেই ৯৬০ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি।

 

বাউফলের ছিটকা রণভৈরবে সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে স্থানীয় কয়েকজন বলেন মনিরুজ্জানের একাধিক মাছের ঘের রয়েছে ও বিভিন্ন জায়গায় জমিও কিনেছেন তিনি। কিন্তু যখনই তারা বুঝতে পারে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছে তখনই চুপ হয়ে যায় কোন অদৃশ্য ভয়ে।

 

ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান খুব সাদাসিদে ভাবে অফিসে আসলেও ব্যক্তি জীবনে চলাফেরার জন্য তিনি একটি ইয়ামাহা এফজেডএস ভার্সন২ মটরসাইকেল (এল-৬*-৬*২*) ও একটি বিলাসবহুল টয়োটা প্রিমিও ২০১৭ মডেলের প্রাইভেট কার (গ-৩*-৩*০*) ব্যবহার করেন। প্রতি শনিবার মনিরুজ্জামান ও তার স্ত্রী কানিজ জাহান পুত্র মোনেমকে নিয়ে কোচিং এর উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ব্রিটিশ কাউন্সিলে যান।

 

এমকে ডিজাইন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্স লি: নামে ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যদিও এই প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-৫ থেকে ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের স্ত্রী গৃহিনী কানিজ জাহানের নামে নিবন্ধিত। ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। একই নামে গাজীপুরের টঙ্গির সাতাইস স্কুল এন্ড কলেজ মার্কেটে রয়েছে আরেকটি অফিস ।

 

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা এই সকল বিষয় নিয়ে ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনভাবেই প্রতিবেদক এর সাথে কথা বলেননি। একবার ফোন রিসিভ করে নামাজের পরে কথা বলবো বলে আর পরবর্তীতে কল রিসিভ করেননি। মুঠোফোনে বার্তা প্রেরণ করা হলেও তার কোন উত্তর দেননি মনিরুজ্জামান।

 

 

গাজীপুরে বিএনপি নেতার মদদে জমি দখলের চেষ্টা, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

বিএনপি নেতার মধ্যে জমি দখলের চেষ্টা, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

শরিফুল হাসান গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি:

জুলাই ১, ২০২৫। গাজীপুর প্রতিনিধি গাজীপুরে বিএনপির এক নেতার মধ্যে হামলা ও জমি দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী পরিবার। আজ মঙ্গলবার ( ১লা জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া সাংবাদিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে শাখাওয়াত হোসেন জানান, জয়দেবপুর থানা এলাকায় বানিয়ার চালা মাহনা ভবানীপুর মৌজাস্থিত এস এ ৫৬৩,আর এস ২৪৯ খতিয়ান ভুক্ত এস এ ৫৯৬, আর এস ২৫৪৮ দাগে ৭ একর ২ শতাংশ জমির কাতে ক্রয়কৃত ১২৬ শতাংশ জমির মালিকানা লাভ করিয়া দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করিয়া আসতেছি।

ইতিপূর্বে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও নব গঠিত গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির ৭নম্বর আহ্বায়ক সদস্য ইসলাম উদ্দীন আমার কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। এবং বিভিন্ন কৌশলে ১২ লাখ টাকা আমার কাছে থেকে হাতিয়ে নেয় বিএনপির এই নেতা এবং বাকী টাকা দাবি করে বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে হুমকি দিয়ে আসছে। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, আমার জমি কিভাবে ভোগদখল করি তা দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়।

পরবর্তীতে বিএনপির এই নেতা ইসলাম উদ্দীন এর মধ্যে গত ২৩ জুন রাতে স্থানীয় ভূমিদস্যু ও দখলবাজ মোঃ রমজান (৪৫), ফারুক হোসেন (৪০), মোঃ বাবু মিয়া (৪০),দেলোয়ার হোসেন দেলু (৪২), ফরিদ আলম (২৭), মাসুদ (২৫), আলভী সরকার (২৮), মোঃ রাজ্জাক (৩২), কফিল (৪৭) ও আল আমীন (২৮) সহ আরও ১৮ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমার ভোগ দখলীয় জমিতে প্রবেশ করিয়া প্রথমে নিরাপত্তা সিসি ক্যামেরা, বসতবাড়ী এবং মার্কেটে ভাঙচুর করে কয়েক লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে।

আমি এই ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করলে গত ২৫ জুন তাদের নামে মামলা হয়।

তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতা ইসলাম উদ্দীনের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের নামে থানায় মামলা করার পর থেকে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আমার ছবি এডিট করে আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাতে লিপ্ত।

গত ২৯ জুন নাদিম হায়দার বাদী হয়ে আমি ও আমার পরিবারের ৮ জনের নামে জয়দেবপুর থানায় সাজানো মিথ্যা মামলা করে। এমতাবস্থায় আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে হয়রানির উদ্দেশ্য করা মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সু-দৃষ্টি কামনা করছি। একইসাথে রাজনৈতিক দলের পরিচয় বহনকারী ইসলাম উদ্দিনের নামে কয়েকটি পত্রিকায় ঝট ব্যবসা নিয়ে নিউজ হইছিল। এইসব ভূমিদস্যুদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান ভুক্তভোগী পরিবার।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম