ঘৃণার রাজনীতি বন্ধে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে-ড. মোশাররফ

নিজস্ব প্রতিবেদক॥
সরকার অব্যাহতভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত ও কলঙ্কিত করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, গত এক যুগ ফ্যাসিবাদী কায়দায় ক্ষমতায় টিকে থাকা ও ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য তারা এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সম্পূর্ণভাবে বিকৃত করে জনগণকে ও নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করছে। ইতিহাস বিকৃতি রোধ এবং ঘৃণার রাজনীতি থেকে দেশকে বাঁচাতে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালন করতে হবে। কারণ গণমাধ্যমই হচ্ছে সত্যিকারের চলমান নির্ভরযোগ্য ইতিহাস। তিনি বলেন, আজকে এই মিডিয়ার মাধ্যমে নেতৃবৃন্দের সামনে আমি আহবান জানাতে চাই যে, আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। সেজন্যে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সরকারের পতন না ঘটিয়ে এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। তাই এই সরকাকে হাটানো ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ইস্যুতে আমরা কি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি না? বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র উদ্যোগে “ইতিহাস বিকৃতি, ঘৃণার চাষ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা” শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিএফইউজে’র চার যুগপূূর্তি উপলক্ষে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়। বিএফইউজে’র সভাপতি এম আবদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীরপ্রতিক, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহবায়ক আবদুস সালাম, বিশিষ্ট কলামিস্ট, সাবেক ভিসি আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, বিএফইউজে’র সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিইউজে’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালিন নোমানী, সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমদ খান, বিএফইউজে’র সহসভাপতি রাশিদুল ইসলাম, ডিইউজে’র সহসভাপতি বাছির জামাল। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক খুরশীদ আলম, কোষাধ্যক্ষ খায়রুল বাশার, নির্বাহী সদস্য একেএম মহসীন, আবদুস সেলিম, জাকির হোসেন, ডিইউজে’র সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, ডিইউজে’র দফতর সম্পাদক ডিএম আমিরুল ইসলাম অমর, প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাসুদা সুলতানা, নির্বাহী সদস্য জেসমিন জুঁই প্রমুখ।

ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এই স্বৈরাচারী সরকারকে হঠাতে আমরা ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ করতে পারি। যদি ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ আপাতত করা সম্ভব না হয় যুগপৎ আন্দোলন করতে পারি। এই ইস্যুর (সরকার হটানো) ওপরে যদি আমরা সকলে একমত হই তাহলে আসুন সম্ভব হলে ঐক্যবদ্ধ একটি মঞ্চ গঠন করি। আর সম্ভব না হলে যুগপত আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পতন ঘটাই এবং এটাই এখন সময়ের দাবি।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভ্ন্নি পথ আছে, মত আছে। কিন্তু আমি আহবান জানাব, এটা জনগনের দাবি, এটা বিএনপির দাবি নয় যে, এই শেখ হাসিনার সরকার থেকে রেহাই দিতে হবে জনগনকে অথবা এই সরকারকে হটাতে হবে। এই ইস্যুতে এবং গণতন্ত্র পুররুদ্ধারে ইস্যুতে আমার মনে হয় কোনো দলের কোনো দ্বিমত নেই।

মেজর জেনারেল অব. ইব্রাহীম বলেন, ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে এক যুগ ধরে। আমরা কি করতে পারছি? আজ জাতীয়ভাবে নেতৃত্বের সংকট চলছে। আমাদের নেত্রী বন্দী, আরেক নেতাকে বিদেশে আটকে রাখা হয়েছে। বিরোধী দলকে নেতৃত্বহীন করতে এ চক্রান্ত চলছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যেও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা আছেন। কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চেয়ে দলীয় আনুগত্য বেশী করায় ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে কথা বলেন না।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ২৫ মার্চ পাক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা ছিল না। এটা সত্য। তখন জিয়াউর রহমানের ঘোষণা মানুষকে উজ্জীবিত করেছে, যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উৎসাহ যুগিয়েছে। এ সত্য ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না।

শওকত মাহমুদ গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে এ সরকারকে গঠাতে হবে বলে মন্তব্য করে বলেন, বিএনপি বিপ্লবী রাজনীতি করে না, কিন্তু শহীদ রাষ্ট্রপতি যখন বিএনপি গঠন করেছেন তার আগে ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের মাধ্যমেই তিনি ক্ষমতায় এসে দল গঠন করেছেন। তিনি বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা যখন থাকে না তখন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার কোন বিকল্প নেই।

নুরুল হক নুর বলেন, সরকার প্রধান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে লাগামহীন বক্তব্য দিয়ে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই। তিনি বলেন, ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে ভেদাভেদ ভুলে সব দল ও মতের লোককে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়ে বাকশাল করেছিলেন, তাঁর কন্যা অঘোষিত ভাবে বাকশাল চালু করেছে। আগামী নির্বাচন তারা পার করতে পারলে দেশে রাজতন্ত্র কায়েম হবে বলে মন্তব্য করেন ভিপি নুর।

আবদুস সালাম বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। জনগণকে নিয়ে গণঅভ্যূত্থান সৃষ্টি করে এ ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিদায় করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে এম আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ দরজা দিয়ে ঢুকলে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা জানালা দিয়ে পালায়। তারা যতবার ক্ষমতায় গেছে ততবারই তা প্রমান করেছে। আজ ইতিহাস বিকৃতির যে জঘন্য খেলা চলছে, তাতে কোন কোন গণমাধ্যম সহায়ক ভ’মিকায় রয়েছে। গণমাধ্যমের উচিৎ সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা এবং বিকৃত ইতিহাসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা। তা না হলে এক সময় নতুন প্রজন্মের কাছে গণমাধ্যমকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

সংস্কারের নামে জনগণের চোখে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা যাবে না: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সংস্কারের নামে জনগণের চোখে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা যাবে না।

আজ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রয়ারি) দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খান রিতা, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইদুল আলম বাবুলসহ অর্থ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, এস এ জিন্নাহ কবিরসহ নেতাকর্মীরা।

রিজভী বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে আপনারা সংস্কার করলে করুন কিন্তু সংস্কারের নামে গণতন্ত্রকে মজবুত শক্তিশালী করার জন্য যে কাজগুলো রয়েছে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে জনগণের শক্তি জনগণের ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্যে নির্বাচনের তারিখ ঠিক করতে হবে।

তিনি বলেন, জবাবদিহিতা নাই বলেই সরকার গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে। এই সরকারের জবাবদিহিতা থাকলে ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারে ১৯ টাকা বাড়িয়েছে, এটা তো হতে পারে না। যারা সীমিত আয়ের মানুষ। নিম্নআয়ের মানুষ সিএনজি, রিকশাচালক, যারা দিনমজুরি করে খায় তাদের ওপর ভয়ংকর চাপ পড়বে। এই যে প্রতি সিলিন্ডারে ১৯ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে এটা অযৌক্তিক। এটা গণবিরোধী। নির্বাচিত সরকার থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতি হবে না।

রিজভী বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাপোর্ট দেই। কিন্তু আপনাদের (সরকারকে) মনে রাখতে হবে আপনাদের সিদ্ধান্ত যেন গণবিরোধী না হয়, গরিব মানুষ মারার সিদ্ধান্ত যেন না হয়। এমনিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য প্রতিদিন বাড়ছে। চালের দাম কমাতে পারেননি। তার মধ্যে যদি গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় তাহলে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ ছাড়া কিছুই নয়।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনা দেশের জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। সেই ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। এই দেশে কে সরকার গঠন করবে তা নির্ধারণ করবে দেশের জনগণ। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা করতে দেয়নি। ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরা গণআন্দোলনে সেই ভয়ংকর ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছে এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য জনগণের আসা জাগানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেক কিছু করার আছে। দেশের জনগণ গত ১৬-১৭ বছর ধরে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে নাই। ভোট দিতে পারে নাই। জনগণের চাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই পরিবেশটা তৈরি করবে দেশের জনগণ যাতে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে ভোট দিতে পারে।

তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কে সংগঠন তৈরি করবে। কে দল তৈরি করবে সেই দায়িত্ব হচ্ছে সেই ব্যক্তির এই দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টার নয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা আপনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) করতে হবে তা না হলে জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে যে শেখ হাসিনার কোন প্রেতাত্মা আবার জন্ম নেয় কিনা একটা সংশয় দেখা দিবে। ’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার নাই বলে আজ ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে না। বিনিয়োগ করতে কেউ সাহস পাচ্ছে না। কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হচ্ছেস সাময়িক সময়ের সরকার। সুতরাং মানুষ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। মানুষ একটা ধোঁয়াশার মধ্যে আছে। এই অনিশ্চয়তা কাটানোর জন্যই রাজনৈতিক সরকার দরকার। জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দেবে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন যাতে ঘটাতে পারে সেই ধরনের সরকার দরকার। জনগণের জবাবদিহিমূলক সরকার হবে সেটা হবে নির্বাচিত সরকার। তাহলে আমাদের অর্থনীতির যে সংকট। বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমাদের জাতীয় রিজার্ভ আবার কমতে শুরু করেছে দিগন্ত রেখায় কালো মেঘ দেখা দিচ্ছে। এগুলো দূরীভূত করতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে নির্বাচিত সরকারের পথে হাঁটতে হবে।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম