
ডেস্ক রিপোর্ট:
দেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে প্রায় ১ কোটি মানুষ আক্রান্ত। বেসরকারি হিসাবে হেপাটাইটিসে- দেশে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশী মানুষ মারা যায়। ১০ জনের ৯ জনই জানেন না তারা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। প্রতি বছর গোটা বিশ্বে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন লোক মারা যায়, প্রতি সেকেন্ডে মারা যায় ১ জন। সোমবার (২৮ জুলাই) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস- ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত জনসচেতনতামূলক এক সায়েন্টিফিক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য হল হেপাটাইটিস লেটস ব্রেক ইট ডাউন বা হেপাটাইটিস বাধা ভেঙে ফেলি। সচেতন হোন, বাঁচান জীবন স্লোগান নিয়ে আয়োজিত জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ এই দিবস উপলক্ষে জনসচেতনতামূলক র্যালি ও সায়েন্টিফিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন-বিএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার।
গুরুত্বপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. দেওয়ান সাইফুদ্দিন আহমেদ, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ডা. সাইফুল ইসলাম এলিনসহ হেপাটোলজি বিভাগ ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্টরা, হেপাটোবিলিয়ারি সার্জনগণ, পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টগণ উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচীতে জানানো হয়, হেপাটাইটিস শুধু একটি রোগ নয় এটি মানবাধিকার, স্বাস্থ্য সমতা ও সামাজিক ন্যায়ের বিষয়। এ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মী, গণমাধ্যম, উন্নয়ন সংস্থা এবং সাধারণ মানুষ সবারই সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, রোগীদের স্বার্থে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে প্রয়োগ করতে হবে। ব্যবসায়িক স্বার্থে বা কর্পোরেট প্রভাবে না। হেপাটাইটিস নিয়ে কুসংস্কার, বৈষম্য আছে তা দূর করতে হবে। রোগীদেরকে কোনোভাবেই চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। গাইডলাইন অনুসরণ করে প্রেসক্রিপশন লেখাসহ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। সমানভাবে কার্যকরী হলে কমদামী ওষুধটাই লিখতে হবে। এদেশে প্রচুর রোগী, তাই গবেষণা সুযোগও বেশি, এই সুযোগ অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয় বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার তথ্যমতে- প্রতি বছর গোটা বিশ্বে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন লোক মারা যায়, প্রতি সেকেন্ডে মারা যায় ১ জন। আর নীরব ঘাতক ভাইরাল হেপাটাইটিস বি অথবা সি ভাইরাসে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণে আক্রান্ত। বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি এবং সি। লিভার ক্যান্সারে শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী এই দুইটি ভাইরাস। ভাইরাল হেপাটাইটিস একটি গুরুতর রোগ যা লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সেমিানরে বলা হয় সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিনই বাড়ছে এই নীরব ঘাতকের ভয়াল থাবা। বাংলাদেশে আনুমানিক ৫ থেকে ৭ শতাংশ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস বি অথবা সি ভাইরাসে আক্রান্ত। গ্রামীণ জনপদ ও সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় সচেতনতার অভাব, নিরাপদ রক্ত সরবরাহের সীমাবদ্ধতা এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা-ব্যবস্থার অভাবে সংক্রমণ আরও বাড়ছে।
এতে আরও বলা হয়, হেপাটাইটিস মানে লিভারে প্রদাহ। সাধারণত ভাইরাসজনিত সংক্রমণের মাধ্যমে এটি হয়ে থাকে। পাঁচটি প্রধান ধরণ এ, বি, সি, ডি এবং ই, এর মধ্যে বি এবং সি ভাইরাস দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণের কারণে সবচেয়ে বিপজ্জনক। সময়মতো চিকিৎসা না করলে এর ফল হতে পারে লিভার সিরোসিস, লিভার ফেলিওর এবং এমনকি লিভার ক্যান্সার। উদ্বেগের বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রে হেপাটাইটিসের কোনো উপসর্গ থাকে না, ফলে রোগীরা বুঝতেই পারেন না যে তারা আক্রান্ত। তাই হেপাটাইটিসকে সাইলেন্ট কিলার বলা হয়।
হেপাটাইটিস প্রতিরোধের বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, বিশুদ্ধ খাবার গ্রহণ, হাত ধোয়া, নিরাপদ রক্তদান ও গ্রহণ, জীবাণু মুক্ত চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ব্যবহার, হেপাটাইটিস এ এবং বি এর টিকা নেওয়া, হেপাটাইটিস বি ও সি এর পরীক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় হেপাটাইটিস পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। কারণ মা আক্রান্ত হলে সন্তানের শরীরেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। গর্ভাবস্থায় সঠিক চিকিৎসা ও জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাকে টিকা দিলে সংক্রমণ ঝুঁকি ৯০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে কমানো সম্ভব। নিরাপদ স্বাস্থ্যচর্চা যেমন ইনজেকশন, দাঁতের চিকিৎসা, ব্লেড, কানের ছিদ্র এবং রক্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।