অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক মুন্সি রোকন গণপূর্তের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী

স্টাফ রিপোর্টারঃ

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বুকে ধারণ করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইন ও চাকরিবধিকে কোন প্রকার তোয়াক্কা না করে হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। শত কোটি টাকা পাচার করেছেন তার সেকেন্ড হোম অস্ট্রেলিয়ায়। দুর্নীতি দমন কমিশনে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। দেশের একাধিক পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ। তবুও তিনি নির্ভার, নিষ্পাপ, ধরাছোঁয়ার বাইরে। আঁকড়ে আছেন সরকারি দপ্তর আর নিজস্ব চেয়ার। তিনি দেশব্যাপী সমালোচিত জি কে শামীমের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাজন গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকনদ্দিন ওরফে মুন্সি রোকন।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের এই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশল একসাথে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন। সেই সাথে নামে-বেনামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ফলে নিজ দপ্তরের ব্যবসা করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন তিনি। আইনকে থোড়াতোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে উপার্জিত কোটি কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠিয়েছেন বিদেশে। এমনটাই জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের একাধিক প্রকৌশলী।

সরকারি কর্মকর্তা হয়ে একাধারে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার দুটি পাসপোর্ট প্রায় নয় বছর ধরে ব্যবহার করে আসছেন প্রকৌশলী রোকন। বিষয়টি এতদিন সহকর্মীদের মুখে মুখে থাকলেও এবার এই প্রকৌশলীর স্ত্রীই কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত প্রকৌশলীর বিষয়ে তদন্ত শুরু করে কর্তৃপক্ষ কিন্তু কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও সেই তদন্ত এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের স্ত্রী-সন্তান থাকেন অস্টেলিয়ায়। তিনি সেখানে অস্বাভাবিক পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন কি না তাও একটি দায়িত্বশীল সংস্থা খোঁজ-খবর নিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছিল।

চাকুরী বিধি অনুসারে একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী একসাথে দুটি পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন না। এমন গুরুত্বের অভিযোগের সাথে যোগ হয়েছে অর্থ পাচার ও আয় বহির্ভূত অর্জিত সম্পদের। প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ছয় মাসের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন কেন আলোর মুখ দেখল না তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধিদপ্তরের অন্যান্য প্রকৌশলীরা।

অধিদপ্তরের একাধিক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তান বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। রোকন তার আয়-রোজগারের একটা বড় অংশ সেখানে জমা করেছেন বলে শোনা যায়। গত কয়েক বছর ধরে তার বর্তমান কর্মস্থল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীতে (ঢাকা সার্কেল-৩) কর্মরত থাকাকালীন অধীনস্থ একজন নারী সহকর্মীকে ঘিরে নানান সমালোচনার মুখে পড়েন এ প্রকৌশলী। একপর্যায়ে তার স্ত্রী এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হলেও খুব একটা কাজ হয়নি। সম্প্রতি রোকনের স্ত্রী গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সেখানে নানা অনিয়মের সঙ্গে রোকন উদ্দিনের দুটি পাসপোর্ট ব্যবহারের বিষয়টিও আছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টে এ প্রকৌশলীর নাম মো. রোকন উদ্দিন। পাসপোর্ট নম্বর ‘ওসি৪১৫৭১৪৮’। আর অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্টে তার নাম মুন্সি রোকন উদ্দিন, এর নম্বর ‘এন৮৩৭০২৭৬’।

জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিনের স্ত্রীর দেওয়া অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা মিললে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে

এ বিষয়ে প্রকৌশলী মো. রোকন উদ্দিনের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। পরে এই প্রতিবেদক তার নিজের পরিচয় দিয়ে কী কারণে কথা বলতে চান তা জানিয়ে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠান। বার্তা পাঠিয়ে আবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

গণপূর্তের একাধিক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি সার্কেল-৩-এ দায়িত্ব পান। এরপরও তিনি তার শ্যালক মমতা ট্রেডার্সের মালিক সাইফুল আলম ও ছোট ভাই নাজিম উদ্দিন মিঠুর মুন্সি ট্রেডার্সের নামে ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন। এ কর্মস্থলে প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালনকালে শুধু মহাখালী ডিভিশন থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের নামে কয়েকশ কোটি টাকার কাজ করেছেন। এর মধ্যে শেরেবাংলা নগরে দুটি প্যাকেজে ১৮ কোটি টাকা, তিনটি প্যাকেজে ৫ কোটি টাকা এবং আরও একটি প্যাকেজে ৮ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ করেছেন। এ প্রকৌশলীর প্রাক্কলন তৈরির কাজে নিয়োজিত একজন নারী সহকর্মী তার শ্যালককে ঠিকাদারি কাজ পেতে সহযোগিতা না করায় এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে সমস্যা তৈরি হয়। একপর্যায়ে নারী সহকর্মীকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়। সেই বদলিও হয়েছিল প্রকৌশলী রোকনের অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী স্ত্রীর চাহিদা অনুযায়ী। পরে শেরেবাংলা নগরে কর্মরত নারী সহকর্মী নিজে ও তার পক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল সমিতির নেতারা বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে দেনদরবার করেন। এসব ঘটনার পর প্রকৌশলী রোকনের স্ত্রী ও শ্যালক মিলে ওই নারীর নানা বিষয় উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেন।

অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা বলছেন, রোকন উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ যতই গুরুতর হোক শেষ পর্যন্ত তার কিছুই হবে না। এর কারণ আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামীম ক্যাসিনোকা-ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে রোকনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসে। জি কে শামীমকে সবচেয়ে বেশি কাজ দিয়েছেন রোকন। এরপরও তার তেমন কিছুই হয়নি। এবারও প্রকৌশলী রোকন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ফেলবেন বলে মনে করছেন তারা।

একাধিক অভিযোগ ও দৃশ্যমান অপরাধের পরেও দুর্নীতিবাজ এমন সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তির মুখোমুখি না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে মানবাধিকারকর্মী আবু সালেহ আহমদ বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও সমূহে থাকা কর্মকর্তাগণ পাহাড় সমান অপরাধ করেও স্বাস্থ্যের মুখোমুখি না হয়ে এমন নির্লজ্জ বহাল থাকাটা দেশ ও জনগণের দুর্ভাগ্য বটে।

রাজধানীর গুলশানে অবৈধ স্পা সেন্টারে অবৈধ কার্যকলাপ; নিরব ভূমিকায় প্রশাসন!

স্টাফ রিপোর্টার:

মাদকের আখড়া ও মিনি পতিতালয়ের ডিজিটাল ভার্সন স্পা সেন্টার নামক অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো। গত কিছু দিন ধরে এসকল অবৈধ স্পা সেন্টারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ ও তার প্রিন্ট ও অনলাইন কপি গুলশান থানা বরাবর প্রেরণ করা হলেও নিরব ভূমিকায় রয়েছে গুলশান থানা পুলিশ।

এ কে হৃদয় ও তার স্ত্রী সুলতানা

এসকল অবৈধ স্পা সেন্টারগুলোর কোনো ধরনের বৈধতা না থাকায় সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। ওপর দিকে সরকারি ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ছেন স্পা সেন্টারগুলোর মালিকেরা।

এদিকে সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম নীতিরও কোনো তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন আবাসিক ভবনে অতি মুনাফার আশায় ভবনের মালিকেরা বাণিজ্যিক ফ্লোর হিসেবে ভাড়া প্রদান করছেন এসকল অবৈধ স্পা ব্যবসায়ীদের।

রাজধানীর গুলশান ও বনানীতে প্রায় কত সংখ্যক এ সকল অবৈধ স্পা সেন্টার রয়েছে তার নেই কোনো সঠিক পরিসংখ্যানও। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসকল স্পা সেন্টারের ভিতরে অসামাজিক কার্যকলাপ এখন ওপেন সিক্রেট।

গত ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখে রাজধানীর গুলশান-২ এর ৪৭নং রোডের ২৫নং আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সেখানে অভিযান চালাতে গেলে দুই তরুণী ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন। এর মধ্যে একজন মারা যান। ওই স্পা সেন্টার থেকে পরে সাতজনকে আটক করা হয়। এঘটনায় একটি মামলাও হয় স্পা সেন্টারের বিরুদ্ধে। কিছু দিন বন্ধ থাকলেও ফের ওই স্পা সেন্টারের কার্যক্রম চলছে দেদারসে। থেমে নেই সেই স্পা সেন্টার সহ গুলশানে অবস্থিত অন্যান্য স্পা সেন্টারের অবৈধ স্পা বাণিজ্য। জানা গেছে ঘটনার কয়েক মাস যেতে না যেতেই স্পা সেন্টারের মালিক শাহিনুর আক্তার পায়েল ও তার স্বামী হাসান স্পা নামক দেহব্যবসা চলমান রেখেছেন

ওপর দিকে বনানী থেকে একাধিক মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা মাথায় নিয়ে গুলশান-১ এর রোড নং-১৩০, বাড়ী নং-২৮ এ স্পা সেন্টারের নাম দিয়ে দেহ ও মাদকের রমরমা বাণিজ্য পরিচালনা করছেন আয়েশা সিদ্দিকা লাবণী (ওরফে ইভা)।
এছাড়াও একাধিক মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা হওয়ার পরও বহাল তবীয়তে গুলশান-১ এর রোড নং-১৩১, বাড়ী নং-৬০/বি তে স্পা সেন্টারের নাম দিয়ে দেহ ও মাদকের রমরমা বাণিজ্য পরিচালনা করছেন রহিমা বেগম (ওরফে সুমনা, ওরফে সুলতানা) এবং তার স্বামী কখনো নাটকের পরিচালক আবার কখনো পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়দানকারী নারী পাচার চক্রের সদস্য এ কে হৃদয়। যার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন, নারী পাচারকারী চক্রের দালাল নুরুল ইসলাম নাহিদ (ওরফে নাবিল হাসান)।

গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলামকে দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ  পত্রিকার প্রতিবেদনের লিঙ্ক পাঠানো হয় তার মুঠোফোনে। মুঠোফোনের বার্তাটি দেখে তিনি আস্বস্ত করে ফিরতি বার্তায় লিখেন ‘ভাই ব্যবস্থা নিচ্ছি’ অথচ কয়েক দিন অতিবাহিত হলেও অবৈধ স্পা সেন্টারগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দেদারেসে তাদের অনৈতিক কর্মকান্ড চলমান। পরবর্তিতে ওসি মাজহারুল ইসলামকে একাধিকবার বার্তা পাঠালেও তিনি তার কোনো উত্তর দেননি।

এবিষয়ে এলাকার সচেতন নাগরীকেরা জানান, স্পা সেন্টারগুলোর ভিতরে বডি মাসাজের নামে অবাধে পতিতাবৃত্তি চলছে। পতিতাবৃত্তির পাশাপাশি এরা মাদকেরও যোগান দিয়ে থাকে। মরণব্যাধি সৃষ্টিকারী মদ, ইয়াবা সহ বিভিন্ন মাদক ও দেহ ব্যবসা চলে স্পা সেন্টারের নামে। আমরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আশা করি এধরনের অবৈধ স্পা সেন্টারগুলো উচ্ছেদ করে আমাদের সন্তানদের আগামী ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলে তারা দায়িত্ববান ভূমিকা পালন করবেন।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম