অনলাইন ডেস্কঃ
নড়াইলের লোহাগাড়া উপজেলার সাতকানিয়ায় প্রেমিকের বাড়িতে বিয়ের দাবি নিয়ে এসে লাশ হয়ে ফিরলেন পেকুয়ার কলেজছাত্রী প্রেমিকা। গত সোমবার দিবাগত রাতে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের বারদোনা মৌলভী পাড়ায় প্রেমিক আমিনুর রহমানের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে প্রেমিক আমিনুরসহ পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছেন।
আমিনুর রহমান সাতকানিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বারদোনা মৌলভী পাড়ার মৃত শব্বির আহমদের ছেলে। প্রেমিক আমিনুর রহমানের দাবি প্রেমিকা বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। আর কলেজছাত্রী প্রেমিকার স্বজনদের দাবি মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। এখন সবার প্রশ্ন হত্যা নাকি আত্মহত্যা?
জানা যায়, এখন থেকে প্রায় দেড় বছর আগে কক্সবাজারের পেকুয়ার টৈটং এলাকার বাসিন্দা ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের বারদোনা মৌলভীপাড়ার আমিনুর রহমানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমিনুর বিভিন্ন সময়ে প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে গেছে।
গত সোমবার সকালে আমিনুর রহমান কলেজছাত্রীকে নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে যায় এবং হোটেলে উঠে। বিকালে কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে আমিনুর কাজ থাকার কথা বলে চকরিয়ায় নেমে যায়। এরপর কলেজছাত্রীর মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেয়। ওই কলেজছাত্রী ঘরে পৌঁছার পর প্রেমিকের মোবাইলে বার বার কল দিয়েও সংযোগ না পাওয়ায় রাতে সাতকানিয়ায় প্রেমিকের বাড়িতে চলে আসে। প্রেমিকের বাড়িতে আসার পর তার পরিবারের সদস্যরা জানায় আমিনুর বাড়িতে নাই। তখন কলেজছাত্রী প্রেমিক আমিনুরের পরিবারের সদস্যদেরকে প্রেমের সম্পর্ক, সকালে কক্সবাজারে যাওয়া এবং হোটেলে উঠার বিষয়টি জানায়। এজন্য বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান করে। এসময় আমিনুরের বোন-ভগ্নিপতিসহ পরিবারের সদস্যরা গালিগালাজ ও মারধর করে তাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। এরপর ওই কলেজছাত্রী সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস ছবুরের কাছে ফোন করে প্রেমিকের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করে।
এদিকে মঙ্গলবার ভোরে প্রেমিক আমিনুরের বোন কলেজছাত্রীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে লোহাগাড়া থানা পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওই কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।
সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস ছবুর জানান, মেয়েটি রাতে আমাকে ফোন করে আমিনুরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকার কথা বলেছে। তাকে প্রেমিক আমিনুরের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছে। তখন আমি তাকে অভিভাবকদের নিয়ে আসতে বলেছি। সকালে জানলাম মেয়েটি মারা গেছে। তবে কিভাবে মারা গেছে সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. জিয়া উদ্দিন আহমেদ জানান, ওই কলেজছাত্রীকে ভোরের দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে হাসপাতালে আনার আগেই মেয়েটি মারা গেছে। তার শরীরে উল্লেখযোগ্য কোনো আঘাতের চিহ্ন নাই। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়ার আগে মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাাচ্ছে না।
ওই কলেজছাত্রীর চাচা মিজানুর রহমান জানান, প্রেমিক আমিনুর বিয়ের কথা বলে মেয়েকে কক্সবাজারে নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর হোটেলে উঠে। কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে আমিনুর কাজ থাকার কথা বলে চকরিয়ায় এসে গাড়ি থেকে নেমে যায়। পরে আমিনুর মেয়ের মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেয়। মেয়ে ঘরে পৌঁছার পর আমিনুরকে ফোনে না পেয়ে রাতে প্রেমিকের বাড়িতে চলে যায়। সেখানে প্রেমিকের বোন-ভগ্নিপতিসহ পরিবারের সদস্যরা মিলে তাকে গালিগালাজ ও মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে তাদের আঘাতে মেয়েটি মারা যায়।
ঘটনার বিষয়ে প্রেমিক আমিনুর রহমান মুঠোফোনে জানান, তার প্রেমিকা বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। তাকে কেউ মারধর করেনি।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ মাসুদ || বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ২১/১ নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ || মোবাইল : ০১৫১১৯৬৩২৯৪,০১৬১১৯৬৩২৯৪ || ই- মেইল: dailysobujbangladesh@gmail.com || ওয়েব : www.dailysobujbangladesh.com
Copyright © 2025 দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ. All rights reserved.