সোনারগাঁয়ের মেঘনায় নৌ-পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টারঃ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনায় বালুবাহী বাল্কহেড, ট্রলার, জেলে, নৌকাসহ বিভিন্ন নৌযানে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি চলছে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যেরবাজার নৌ-ফাঁড়ি পুলিশ টহলের নামে ট্রলারে চেপে দীর্ঘদিন ধরে এই চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের ও পিরোজপুর ইউনিয়নের ফ্রেশ কোম্পানির এলাকায় নৌ-পুলিশ প্রতিদিন ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। বৈদ্যেরবাজার নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহিন’র কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাঁদা আদায়ের বিঘয়টি অস্বীকার করেন।

গতকাল (৯ মে, 2023) মঙ্গলবার সরেজমিনে সকালে মেঘনা নদীতে গিয়ে বৈদ্যেরবাজার নৌ-ফাঁড়ি পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজির ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। ভোর সকালে পৌনে ৬ টার দিকে পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনায় ফ্রেশ কোম্পানির বরাবর নদীর মাঝখানে গিয়ে দেখা যায়, গেঞ্জি ও ফুল শার্ট পরিহিত একটি স্পিডবোর্ডে বালুবাহী বাল্কহেড থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। দুই পুলিশ বিভিন্ন নৌযানে পাঁচশত থেকে শুরু করে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। ক্যামেরা দেখেই চাঁদা আদায়কারী দু’জনই দ্রুত স্পিডবোর্ড চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করে।

এ সময় আশুগঞ্জ থেকে বালুবাহী বাল্কহেডের কুদ্দুস মিয়া জানান, তার কাছ থেকে পাঁচশ’ টাকা নিয়েছে ফাঁড়ি পুলিশ। শুধু আজকেই নয়, প্রতিনিয়ত মেঘনার এ স্থান দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়। একই অভিযোগ বালুবাহী বাল্কহেড এমভি লিলির জামান, নাজমুল, জহিরসহ আরও অনেকের।

তারা জানান, প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত এই চাঁদাবাজি চলে। মেঘনার এলাকায় মাঝ নদীতে এলে তাদের চাহিদামতো চাঁদা আগে থেকে হাতে তুলে রাখতে হয়। তা না হলে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়।

কুমিল্লায় পতিতা, মাদক ও জুয়াসহ অপরাধীদের অভয়ারণ্য আবাসিকগুলো

ষ্টাফ রিপোর্টার; কুমিল্লা।।

❝কে না খায়? নেতা, প্রশাসন, সাং*বাদিক সবারে ম্যানেজ করেই ব্যবসা করি, মাসে ১২ লাখ মান্তি দেই❞- জনৈক আবাসিক হোটেল মালিক।

কুমিল্লা সেনানীবাসের অদুরে জেলা সদরের আমতলী থেকে কোটবাড়ি বিশ্বরোড পর্যন্ত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক আবাসিক হোটেল নামের পতিতালয়, জুয়া ও মাদকের আখড়া। প্রকাশ্যে দিনরাত ২৪ঘন্টা মহাসড়কের পাশে মাদক জুয়া ও অনৈতিক দেহব্যবসাসহ নানা অপকর্মের এসব আখড়া এখন ওপেন সিক্রেট। নামে আবাসিক হোটেল হলেও এসব প্রতিষ্ঠান মুলত অপরাধীদের আখড়া।

প্রাশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী, স্থানীয় নেতা, বখাটে রংবাজ ও কতিপয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যেই চলছে নানা অপকর্ম। করনাকালে বা তার আগে পরে জেলা প্রশাসন, ‌র‌্যাব, পুলিশ ও ডিবির অভিযানে বিভিন্ন সময় এসব আখড়ায় অভিযান পরিচালানা করেছে। সেসব অভিযানে পতিতা, খদ্দের, বিপুল পরিমাণ মাদক ও জুয়ার টাকা সহ আটকও করা হয়েছে অনেককে। তবে অদৃশ্য কারনে দীর্ঘদিন ধরেই নির্বিঘ্নে অবলিলায় বুক ফুলিয়ে মহাসড়কের পাশে অপকর্মের আখড়া, পতিতালয় চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা।

অবশ্য এসব অপকর্মের হোতা হোটেল মালিকদের দাবি ভিন্ন, পরচয় গোপন করে তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় সেসব তথ্যও। তাদের দাবী, একেবারে মাগনা এসব ব্যবসা করেন না তারা, প্রতি মাসে প্রতিটি আখড়া বা কথিত আবাসিক হোটেল চালাতে মাসোহারা দিতে হয়, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় অসাধু সদস্য, পাতিনেতা, জনপ্রতিনিধি, রংবাজসহ কথিত সাংবাদিক সহ বিশেষ শ্রেনীর লোকজনকে । আলেখারচর ও ঝাগুজুলি এলাকার এক আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাইলে তার ভাষ্য, ❝মাগনা করি না ব্যবসা, কারে না দেই টাকা, কেডায় না খায়? একটা হোটেল চালাইতে সব মিলাইয়া মাসে ১০/১২ লাখ টাকা মান্তি (মাসোহারা) দেই। এলাকার পোলাপান, মেম্বার, নেতা, প্রশাসন, সাং*বাদিক কত জনরে দেওয়া লাগে খবর লন গিয়া। নিউজ করবেন, করে দেখেন, নিউজ করলে কিছু হয়না মিয়া, আইসা চা খাইয়া যাইয়েন❞

কুমিল্লা সেনানীবাসের ২০০গজ পূ্র্ব থেকে শুরু করে তিন কিলোমিটারের মধ্যেই গড়ে উঠেছে ৮থেকে১০টি আবাসিক হোটেল নামের এসব পতিতালয়। পুলিশি অভিযানের ভয় বা প্রশাসনিক ঝামেলা না হওয়ার মোটামুটি নিশ্চয়তা থাকায় মহাসড়কের পাশের আবাসিক হোটেল নামের পতিতালয়গুলো একপ্রকারে হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী, ডাকাত, জুয়ারি, পতিতা ও মাদক কারবারিদের অভয়ারণ্য। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ সহ নানা কারনে এসব হোটেলে রাত্রীযাপনের জন্য সাধারণত কেউ যাতায়াত করে না।

এছাড়াও বেশকিছু গুরতর অভিযোগের কথাও জানা যায় অনুসন্ধানে, হোটেলের নির্দিষ্ট দালালচক্রের মাধ্যমে পতিতাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নানা ভাবে ফুসলিয়ে দরিদ্র নারী ও মেয়েদের ভালো চাকরি ও ইনকামের প্রলোভনে ফেলে, কিংবা বিয়ের প্রলোভনে অসহায়, বিপদগ্রস্ত নাবালিকা কিশোরী ও নারীদের এনে এসব হোটেলে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করে। এসব আবাসিকে গিয়ে ব্যবসায়ী চাকুরীজীবি, শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার নাগরিকদের অনকেই নানা ভাবে ব্লাকমেইলিং এর শিকার হয়ে হারিয়েছেন সর্বস্ব। এলাকাবাসীর অভিযোগ শুধু পতিতা মাদক কারবার বা জুয়ার আসরই নয়, এসব হোটেলে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীসহ শিশু কিশোরদেরও যাতায়াত করতে দেখা যায়। তাদের দাবি, স্থানীয় প্রশাসনেরও এসব অজানা নয়। প্রতিবাদ করলে উল্টো মামলা হামলা হয়রানির ভয় রয়েছে। অবৈধ টাকার জোরে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট তাদের হয়ে কাজ করে। এছাড়াও প্রতিবাদ করলে উল্টো মিথ্যা নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মামলা এবং মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ভয়ে কেউ সরাসরি তাদের বাঁধা দেয়ার সাহস করে না। প্রশাসনিক প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে কিভাবে এমন অপরাধ করে বহাল তবিয়তে রয়েছে সেবিষয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। আশপাশের এলাকার যুব ও তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করছে জানিয়ে, এসব অপকর্ম বন্ধে স্থানীয় এলাকাবাসী সদর আসনের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র‌্যাব ও ডিবি সহ সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জোরালো আহ্বান জানান তারা ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় বিগত দুবছর ধরে কোন অভিযান না হওয়ায় অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এসব আখড়াগুলো। এর আগে হোটেল বৈশাখী, রাজধানী, অভী, কুমিল্লা হাইওয়ে সহ প্রায় প্রতিটি আবাসিক হোটেলেই অভিযান চালিয়ে অনৈতিক ব্যবসাসহ গুরুতর অপরাধ নজরে আসায় “সীলগালা” করা হয়। আটক করা হয় পতিতা, খদ্দের, মাদক কারবারি সহ আখড়ার কর্মচারীদের, জব্দ করা হয় মাদক ও যৌন উত্তেজক ঔষধ সহ বিভিন্ন মালামাল । তবে মুল হোতা হোটেল মালিক ম্যানেজাররা ধরা ছোঁয়র বাইরে থাকায় স্বল্প সময়ে আটককৃতদের জামিনে ছাড়িয়ে এনে আবারো পুরোদমে শুরুকরে অপরাধ বাণিজ্য! সীলগালা করা এসব অবৈধ হোটেলের তালাও খুলে যায় খুব অল্প সময়ে!

অনৈতিক দেহ ব্যবসাই শুধু নয়, কুমিল্লা মহারসড়ক এলাকার ডাকাত, ছিনতাইকারী ও মাদক কারবারিদের নিরাপদ আশ্রয় এসব আবাসিক হোটেল। তথ্য রয়েছে প্রশাসনিক অভিযান নেই অভয় দিয়ে এসব আবাসিকের কক্ষে নিয়মিত বসে জুয়া ও মাদকের আসর। অনতিবিলম্বে অবৈধ ও অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনার নিরাপদ আশ্রয়স্থল এসব আবাসিক হোটেলে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা, মুল হোতাদের গ্রেফতার ও অবৈধ ব্যবসা বন্ধে উদ্যোগ নেয়ার দাবী সচেতন নাগরিক সমাজের।

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার এম এ মান্নান (বিপিএম বার) জানান, ইতিমধ্যেই এসব বিষয়ে জেনেছি এবং খুব শীঘ্রই পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাদকসহ কোন প্রকার অবৈধ ব্যবসা ও আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করার কোন সুযোগ নেই। ডিসি মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এসকল অনৈতিক কর্মকান্ড ও অবৈধ ব্যবসা বন্ধে উদ্যোগ নেয়া হবে। পুলিশ বাহিনীর কেউ এসবে জড়িত থাকার কোন সুযোগ নেই, সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে৷

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম