পারলে তারা গণমাধ্যমেরও কবর রচনা করতে চান

সাঈদুর রহমান রিমন:

মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়ন লাকীর বিরুদ্ধে এক হাজার কোটি টাকার মানহানী মামলার ঘোষণা দিতেই মুখ খুলেলেন তিনি, তড়িঘড়ি নিজের বক্তব্য দেয়ার কথাও অস্বীকার করলেন। এরপর থেকেই ‘সাংবাদিক বিরোধী অপপ্রচারকারীরা’ ভিডিও ক্লিপ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। খুঁজছেন লাকীর সাংবাদিক কেনা সংক্রান্ত সেই বক্তব্যের ক্লিপ। কারণ, আদৌ লাকী বড় বড় সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে কেনার কথা বলেছিলেন কিনা- সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়েই ভণ্ডরা গোটা সাংবাদিক সমাজকে হেয় করার অপকর্মে নেমে পড়েছিলেন। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে টাকা নেওয়া সাংবাদিকদের সম্ভাব্য তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিতেও দ্বিধা করেননি।

আসলে সাংবাদিক পরিচয়েই সাংবাদিকতাকে বিতর্কিত করে জঘণ্য ভাষায় বক্তব্য মন্তব্য প্রদানের খুব বাজে প্রবণতা ছড়িয়ে আছে। সাংবাদিকদের খাটো করে বক্তব্য, মন্তব্য দিতে পারলেই নিজেকে খুব যোগ্যতাসম্পন্ন উচু কাতারের লোক বলে ভাবেন। পেশার মর্যাদাকে ডুবিয়ে উদার আলোচক সাজতে চান। মাত্র ৮/১০ বছর আগেও গোটা পেশা তুলে যা খুশি বলার পরিবেশ ছিল না বললেই চলে। পেশাদারিত্বের ভুল ত্রুটি নিয়ে সাংবাদিকরা একান্ত বৈঠক বা আড্ডাতেই আলোচনা সমালোচনা করতেন।

অনেকের অস্থি-মজ্জা-রক্তের সঙ্গে মিশে আছে সাংবাদিকতা। তাদের কেউ কেউ নানা ঘাত প্রতিঘাত আর ধারাবাহিক বঞ্চণার মুখে পেশা থেকে বিদায় নিতে চান, কিন্তু বার কয়েক চেষ্টা করেও সাংবাদিকতাকে গুডবাই জানাতে পারেননি। নিষিদ্ধ নেশার মতো এ পেশাকেই আঁকড়ে ধরে পড়ে আছেন। ইদানিং শ্রদ্ধাভাজন সেই কলমযোদ্ধা বন্ধুদেরও দেখি, সুযোগ পেলেই সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়েন। সাধ্যে কুলোলে গণমাধ্যমেরও কবর রচনা করে ফেলেন।

এই কষ্ট যন্ত্রণাতেই বোধহয় ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকরাই কেবল সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে পারে।’

একটা শ্রেণী সাংবাদিক পরিচয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাউন্ট খুলে, সেই সুবাদে গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সম্পর্কিত গ্রুপগুলোতে ঢালাওভাবে সংযুক্ত হয়। রাত-দিনের সিংহভাগ সময় তারা গ্রুপগুলোতে বিচরণও করে থাকে। গত কিছুদিন তাদের টাইম লাইন ও গ্রুপসমূহে দেয়া পোস্ট ও মন্তব্যগুলো পর্যবেক্ষণ করে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক বিদ্বেষী কথাবার্তা দেখা যায়।

মিডিয়া নামের বেশ কিছু গ্রুপও সাংবাদিক বিদ্বেষী বক্তব্য-মন্তব্য ও সাংবাদিকদের বিতর্কিত করার হাতিয়ার হয়ে উঠছে। সাংবাদিক পরিচয়ধারীরা যখন গোটা সাংবাদিক সমাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, বাজারদরের মতো সব সাংবাদিককে ১০০ টাকার পণ্য ভাবে, সবাই বিক্রি হয় ভাবে- তখন তাদের পরিচয়ের গন্ডি নিয়ে প্রশ্ন জাগে মনে। কারণ, তাদের বিচরণ করা গন্ডির কথিত সাংবাদিকরা হয়তো ১০০/৫০০ টাকায় অহরহ বিক্রি হয়।

তবে আমাদের চেনাজানা অনেক অর্থ কষ্টে থাকা সাংবাদিককেও রাজউকের কয়েক কোটি টাকার প্লট অফার হাসিমুখে প্রত্যাখ্যান করতে দেখেছি। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট একটি দপ্তরের কর্তা ব্যক্তির পাঠানো মাসিক ত্রিশ হাজার টাকার খামটাও যত্ন করে ওই অফিসে গিয়ে ফেরত দেয়া সাংবাদিকও আমাদেরই সহকর্মি। সাংবাদিকতায় এমন গৌরব করার মতো হাজারো নজির রয়েছে।

লায়লা লাকী নাকি সাংবাদিক কিনে ফেলেছে? এরপরেও মতিউর গংদের নিউজ কারা করছে? জ্বীন, ভূতে? কেউ কেউ বলেন, ক্ষমতার কাঠামো থেকে ছিটকে পড়লে, দাপুটে কর্তারা অবসরে গেলেই কেবল নিউজ হয়? গত দেড় মাসে “ক্ষমতায় আসীন” অর্ধ শতাধিক কর্মকর্তার দুর্নীতি লুটপাটের কাহিনী প্রকাশ হয়েছে মিডিয়ায়। একটু চোখ কান খোলা রাখলেই তা দেখতে পাওয়ার কথা। দুই-চার জন সাংবাদিক বা গণমাধ্যম মালিক কোনো লুটেরার পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করলেও অন্য দশটা মিডিয়া তো তাদের ছাড় দেয়নি।

তারপরও গোটা সাংবাদিক সমাজের গায়ে ব্যর্থতা, দুর্ণাম, বদনামের কালিমা লেপনের আগে সাংবাদিক হিসেবে নিজের অপারগতার কারণটি তুলে ধরা উচিত। সেই ব্যর্থতার কারণ থেকে আমার মতো আধা দক্ষরা কিছু না কিছু শিখতে পারবে। কিন্তু নিজের অপারগতা চিহ্নিত করার যোগ্যতা এদের আছে কিনা এটাই তো প্রশ্ন।

তারা একবারও ভাবেন না- লায়লা লাকীর মতো লুটপাট সহযোগীরা যা খুশি বলতেই পারে, তাদের শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই বলে তার সুরে সুর মিলিয়ে একজন সাংবাদিক যা খুশি লিখতে পারেন কি? ইচ্ছে হলেই কি কারো পক্ষাবলম্বন করতে পারেন? সাংবাদিকের জন্য নানারকম দায়বদ্ধতার গেট পার হতে হয়। শুধুই অনুমান আর ধারণামূলক বিশ্বাস থেকে কোনো খোঁজ খবর, প্রমাণ ছাড়াই একজন সাংবাদিকের যথেচ্ছা অভিমত প্রকাশ করাটাও অন্যায়।

সাংবাদিকদের বিতর্কিত করা, গণমাধ্যম বিরোধী কুৎসা রটানোসহ লুটেরা গোষ্ঠীর সব অপকৌশলের পেছনেই একশ্রেণীর সাংবাদিকের বেশ সমর্থন থাকে। না পাওয়ার বেদনা, হতাশা, কিছু করতে না পারার ব্যর্থতায় সৃষ্ট প্রতিহিংসার নির্মম শিকার হয় তারই সহকর্মী, এমনকি গোটা পেশাটাও। পেশায় কিছু খারাপ লোকের অনুপ্রবেশ রয়েছে ঠিক, তাই বলে তারাই সাংবাদিকতার সবকিছু নয়।

বলতে দ্বিধা নেই যে, ‘সমাজ ও রাষ্ট্রের সব জায়গা যদি ঘুণে ধরে তা থেকে সাংবাদিকতা মুক্ত থাকবে কিভাবে? এরমধ্যেও যারা সৎ সাংবাদিকতা করেন, সাংবাদিকতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই করেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতেই হবে। এ কারণে একচেটিয়া সবাইকে দোষারোপ করলে সেই শ্রদ্ধাভাজনদের প্রতি অবিচার হয়ে যায়।’

লেখক: সিনিয়র অনুসন্ধানী সাংবাদিক

——-

শপথ নেওয়ার পর যা বললেন নতুন সিইসি

স্টাফ রিপোর্টার:

নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম মো. নাসির উদ্দীন বলেছেন, আমাদের নিয়ত সহি। জাতিকে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে চাই। আর এ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার তাই করব।

রোববার (২৪ নভেম্বর) শপথ গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় সিইসি বলেন, যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা আমাদের আছে। এর আগে তথ্য ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকাকালে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এসেছি।

এর আগে, আজ দুপুরে নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) বাকি চার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) শপথ নেন। সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাদের শপথবাক্য পাঠ করান।

প্রসঙ্গত, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) নিয়োগ পান সাবেক সচিব এ এম এম মো. নাসির উদ্দীন। তার সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনারের নামও ঘোষণা করা হয়।

তারা হলেন—সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তাহমিদা আহমেদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

নিয়োগ পাওয়ার পর সেদিন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নাসির উদ্দীন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তা তা করব, ইনশাআল্লাহ। যে দায়িত্ব এসেছে, তা আমাদের সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে সবার সহযোগিতা নিয়ে।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। এরপর আত্মগোপনে চলে যায় দলটির প্রভাবশালী এমপি-মন্ত্রী এবং দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। পরে ৫ সেপ্টেম্বর একযোগে পদত্যাগ করেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। নতুন এই কমিশনের ওপর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব থাকবে।

সবা:স:জু-১৮১/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন ইএম ২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ সম্পদের পাহাড় জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে অত্যন্ত হতাশাজনক : মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দের মাঝে যে অনৈক্য কুমিরের দেখা মিলল রাজশাহীর পদ্মায় সরকার ও সেনাবাহিনী, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয় আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের