মতিউরের বান্ধবী আরজিনার অঢেল সম্পদ

স্টাফ রিপোর্টার:

আলোচিত ছাগলকাণ্ডে ওএসডি রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সাথে সম্পর্ক রেখে অঢেল সম্পদের মালিক আরেক এনবিআর কর্মকর্তা আরজিনা খাতুন। রাজধানীতে ফ্ল্যাট, গ্রামে আলিশান বাড়ি, পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে জমি, বাসায় বিলাসবহুল ইন্টেরিয়র এবং দামি সব আসবাবপত্র করেছেন। মাত্র তিন বছরে ৫০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের মালিক তিনি। যার ২০০ ভরিই চোরাচালানের মাধ্যমে আনা, দুদকের কাছে এসেছে এ অভিযোগ। মতিউরের সাথে আরজিনার কিছু ফোনালাপও এসেছে আমাদের হাতে।

এই আরজিনা খাতুন হচ্ছেন রাজস্ব বোর্ডের মূসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয়ের দ্বিতীয় সচিব। এর আগে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার ছিলেন।

গত ১০ জুন দুদকে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন একজন। তাতে বলা হয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য আমদানি, মানিলন্ডারিং, স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সাথে যোগসাজস আর দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন আরজিনা খাতুন।

এরই ভিত্তিতে  অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, রাজধানীর মিরপুরে প্রায় ২ হাজার বর্গফুটের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে তার। থাকেনও সেখানেই। যা কিনেছেন ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায়, কিন্তু রেজিসস্ট্রেশনসহ খরচ দেখিয়েছেন মাত্র ৬৮ লাখ।

ফ্ল্যাটটি কিনতে গিয়ে তার নেয়া ব্যাংক ঋণ স্যাংশন হয় ২০২০ সালে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা মিলে, এর ১ বছর আগেই ফ্ল্যাট কেনা আর রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। তাও ঋণের টাকার দ্বিগুণ দামে। বাসায় ব্যয়বহুল আসবাব আর অত্যাধুনিক ইন্টেরিয়র করেছেন ১ বছরের মধ্যেই।

আরজিনার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর নারোয়া ইউনিয়েনর তালুতপারা গ্রামে। কাস্টমসে চাকরির ৩ বছরের মধ্যে গ্রামের ছন আর টিনের বাড়িটিকে বদলে করেছেন আলীশান এক ভবন।

তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগে বলা হয়, চট্টগ্রামে বদলির পর ২০২২ সালেই গ্রামে তার পরিবারের সদস্যদের নামে কিনেছেন ৫টি জমি। যার বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকা। সেসব জমির দলিলও পেয়েছে সবুজ বাংলাদেশ । আরও কোটি খানেক টাকার জমি বন্ধক নেন আরজিনা।

আরজিনা প্রাত্যহিক যে গহনা ব্যবহার করেন, এর বেশিরভাগই হীরার। যার মূল্যমান ১০ লাখ টাকা বলা হয়েছে দুদকে জমা পড়া অভিযোগে। ২০১৮ থেকে ২৩ সালের মধ্যে ৫০০ ভরি স্বর্ণ আর ডায়মন্ড কিনেছেন নগদ টাকায়। যার ২০০ ভরি এক সিএন্ডএফ ব্যাবসায়ীর মাধ্যমে ৩ ধাপে চোরাচালানের মাধ্যমে এনেছেন বলে প্রমাণসহ অভিযোগ পড়েছে দুদকের টেবিলে।

২০২২ থেকে শেয়ার বাজারেও আছেন সরকারি এ কর্মকর্তা। ১ দিনে বিনিয়োগ করেন ১০ লাখ টাকা। লাভ করেন প্রায় দ্বিগুণ। আছে ৩ টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিনিয়োগ আছে সঞ্চয়পত্রে।

মতিউর রহমানের সাথে একই ব্রোকারেজ হাউসে একইরকম বিনিয়োগ ছিল আরজিনার। অভিযোগ আছে, কারসাজি করে মতিউরই আরজিনাকে শেয়ার বাজারে মুনাফা তুলে দেন।

তাদের দুইজনের মধ্যে কী সম্পর্ক? যা হাতে আসা কয়েকটি ফোনালাপে স্পষ্ট হয়েছে। ফোনালাপে মতিউরের উদ্দেশে মারজিনাকে বলতে শোনা যায়, কালকে যাই? কী বলে বের হবো, কী বলে বের হবো কোনো ইয়া পাচ্ছি না। বাসায় আছে তো…

জবাবে মতিউর বলেন, তাহলে ১৩ তারিখে…। উত্তরে তখন আরজিনা বলেন, ১৩ তারিখ? মন খারাপ হলো? মতিউরের জবাব ছিল, না অসুবিধা নেই।

এবার আরজিনা বলেন, শুক্রবার তো, কী বলে বের হবো, কোনো ইয়া খুঁজে পাচ্ছি না, বাইরে যে যাবো। আবার যদি সন্দেহ তৈরি হয়।

যদিও মুঠোফোনে আরজিনা খাতুন  বলেন, আমি আসলে যড়যন্ত্রের শিকার। আমার এক্স হাজবেন্ড একটা মামলা করেছেন, আমি একটা করেছি। আসলে সবগুলো মিলিয়ে আমি খুব বিপর্যস্ত। আমি তাকে ডিভোর্স দিয়েছি, তাই উনি ক্ষীপ্ত হয়ে এগুলো করছেন।

মূলত, আরজিনার এমন ফুলেফেঁপে ধনী হয়ে ওঠা মতিউরের ছত্রছায়ায়। ছাগলকাণ্ডের এই কর্মকর্তা যাদেরকেই ছুঁয়েছেন তাদের বেশীরভাগই সম্পদ বানিয়েছেন, বানাচ্ছেন।

ঈদযাত্রার রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ৮

 

তাছলিমা তমা :

রেলওয়ে টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতাসহ আট জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

আজ মঙ্গলবার(২৫ মার্চ) বেলা ১১টায় উত্তরাস্থ র‍্যাব-১ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় সোমবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক লে. কমান্ডার মোহাম্মদ জাকিউল করিম জানান, রেলওয়ে টিকিট কালোবাজারি চক্রের শিকড়ের খোঁজে র‌্যাবের অনুসন্ধানে টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতাসহ আট জনকে রাজধানীর কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, বিগত বছরগুলোতে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে অধিক সংখ্যক মানুষ ঘরে ফিরছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ট্রেনের টিকেট কালোবাজারীর সাথে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। আপনারা জানেন যে, এবার প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ রেলওয়ের শতভাগ টিকেট অনলাইন প্লাটফর্ম সহজ ডট কম এর মাধ্যমে বিক্রয় করছে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের টিকেট ছাড়ার সাথে সাথে টিকেট শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া যায়। এতদ্সংক্রান্তে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত অপরাধের সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন হতে টিকেট কালোবাজারী চক্রের শিকড়ের অনুসন্ধানে তৎপর হয়।

র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল এই চক্রের সাথে জড়িত অপরাধদের চিহ্নিতকরণ ও তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে বিমানবন্দর স্টেশন এলাকায় প্রাথমিকভাবে আভিযানিক দল ফাঁদ পাতে। উক্ত ফাঁদে প্রথমে পা দেয় ১) উত্তম চন্দ্র দাস (৩৪), পিতা- হরি দাস, মোল্লাবাড়ি, কাওলা, থানা- দক্ষিণখান, ডিএমপি, ঢাকা যাকে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন এলাকা হতে একটি অনলাইন টিকেটের প্রিন্টেড কপিসহ গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্যমতে র‌্যাব-১ এর গোয়েন্দা চৌকশদল ঢাকার কাওলা হতে তারই ঘনিষ্ঠ সহযোগী ২) হাবীব আহমেদ (২৬), পিতা- আমিনুর ইসলাম, মোল্লাবাড়ি, কাওলা, থানা- দক্ষিণখান, ডিএমপি, ঢাকা, ৩) মোঃ ফারুক (৫৫), পিতা- লাবু সরকার, মোল্লাবাড়ি, কাওলা, থানা- দক্ষিণখান, ডিএমপি, ঢাকা এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারী ৪) মোঃ জুবায়ের (২৯), পিতা- মোঃ আমিনুল ইসলাম, গ্রাম- হলনা নামাপাড়া, থানা- দক্ষিণখান, ঢাকা’কে তিনটি অনলাইন টিকেটের প্রিন্টেড কপিসহ আটক করা হয়। উত্তম চন্দ্র দাসের নিকট হতে জানা যায় যে, তিনি প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে আনুমানিক প্রায় ৫০০-৭০০ রেলওয়ে টিকেট অবৈধ উপায়ে কালোবাজারী করত। এভাবে প্রতি মৌসুমে তিনি প্রায় ০৩-০৪ লাখ টাকার মত অবৈধভাবে আয় করতেন বলে স্বীকার করেছেন। উল্লেখ্য উত্তম চন্দ্র দাস (৩৪) এর বিরূদ্ধে ইতোমধ্যে পুলিশের পিসিপিআর অনুযায়ী ০৪ টি মামলা রয়েছে।

পরবর্তীতে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল পূনরায় ফাঁদ পাতে। এবার উক্ত ফাঁদে পা দেয় স্বয়ং বাংলাদেশ রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারী ৫) মোঃ সোহেল রানা (২১), পিতা- মোঃ শরিফুল ইসলাম, মহাখালী, থানা- বনানী, ডিএমপি, ঢাকা যাকে ছয়টি অনলাইন টিকেটের প্রিন্টেড কপিসহ বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে আটক করা হয়। এবার আটককৃতদের সাথে নিয়ে র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল গমন করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। আটককৃতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা হতে বাংলাদেশ রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারী ৬) আব্দুল্লাহ আল মুমিন (৩০), পিতা- মোঃ আবুল হাসেম, আহমদ বাগ, থানা- শাজাহানপুর, ডিএমপি, এবং ৭) প্রকাশ চন্দ্র রায় (৩৪), পিতা- সকাল চন্দ্র রায়, কামলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, থানা- শাজাহানপুর, ডিএমপি, ঢাকা’কে আটক করা হয়। আটককৃতদের মোবাইল যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় তারা প্রত্যেকে টিকেট কালোবাজারীর সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত। উল্লেখ্য আটককৃত প্রকাশ চন্দ্র রায় (৩৪) এর সাথে অনলাইন প্লাটফর্ম সহজ ডট কম এর কিছু অসাধুকর্মী টিকেট কালোবাজারীর সাথে জড়িত আছে মর্মে স্বীকার করেন। উক্ত চক্রের অন্যতম গ্রাহক ৮) কামরুজ্জামান(৩৫), পিতা- খলিলুর রহমান, কসাই বাজার, থানা- দক্ষিণখান, ডিএমপি, ঢাকা’কে আটক করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, উক্ত কামরুজ্জামান(৩৫) সাধারনত প্রতিমাসে ১০০-১৫০ এর অধিক টিকেট উক্ত কালোবাজারীর চক্র হতে ক্রয় করত বলে জানা যায়। এ সময় ধৃত আসামীদের নিকট হতে ১২ টি মোবাইল ফোন এবং নগদ- ৩,০৩,০৪২/- টাকা উদ্ধার করা হয়।
ধৃত অভিযুক্তদের বিষয়ে আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম