দৈনিক দেড় টাকা বেতনের শ্রমিক এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক: আওয়ামী লীগের একডজন মন্ত্রী,এমপি তার আশ্রয়ে!

বিশেষ প্রতিনিধি

……………………
একজন অশিক্ষিত লোক, দৈনিক দেড় টাকা মজুরির শ্রমিক কিভাবে মাত্র ১৫ বছরে (আওয়ামী শাসন আমলে) হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারেন? কোন অনৈতিক সুবিধা না নিয়ে? রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাৎ না করে? কর ফাঁকি ও চোরাচালানে সম্পৃক্ত না হয়ে? এই প্রশ্ন আজ সমগ্র দেশবাসীর। কিন্তু এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকার ৪৩/এ, নবাবগঞ্জ বাজার লেন এলাকার হাজী আলাউদ্দিন খাঁন ওরফে আলতু খাঁনের ছেলে হাজী মো. লোকমান হোসেন খাঁন।

একাধিক সুত্রে জানাগেছে, প্রাথমিক স্কুলের গন্ডি পার না হওয়া এই হাজী লোকমান এক সময় পুরান ঢাকার হাজী সেলিম এমপির ব্যাটারি তৈরির কারখানা আল-মদিনা ব্যাটারি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন দৈনিক দেড় টাকা বেতনে। পরে মাসে বেতন পেতেন ১৫০ টাকা। একসময় তিনি ব্যাটারি কারখানায় কয়লা সরবরাহ শুরু করেন। পরে হাজী সেলিম তার কিছু অর্থ বেনামে গচ্ছিত রাখেন লোকমানের কাছে। লোকমান ওই সময় হাজী সেলিমের অর্থপাচারসহ নানান কাজে দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত শুরু করেন। সেখানে গিয়ে মানব পাচারে যুক্ত হন। তিনি সেখানে বেশ কয়েকটি ‘হেরেমখানা বা রংমহল’ খোলেন। বাংলাদেশ থেকে লোকজন নিয়ে সেখানে রাতে খাটাতেন তিনি। এর মাধ্যমে প্রতিমাসে আয় করেন লাখ লাখ টাকা। জড়িয়ে পড়েন স্বর্ণ চোরাচালন ও হন্ডির কারবারে। দুবাইতে তার বিশ্বস্থ সহযোগী চট্টগ্রামের দিদার হোসেন ও হাসানের মাধ্যমে দিরহাম সংগ্রহ করেন। ওই দিরহাম দিয়ে স্বর্ণের বার কিনে দেশে আনেন। এক্ষেত্রে তার ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ননক্ষীর গ্রামের সাইফুল ইসলাম ঠিকানা: আরিফাবাদ হাউজিং বাড়ি-৬, রোড-৭, ব্লক-জি, রূপনগর, মিরপুর,ঢাকা।
চট্টগ্রামের দিদার ও ঢাকার হাসান যেসব হুন্ডির দিরহাম, সংগ্রহ করেন সেগুলোর টাকা বাংলাদেশে দিয়ে দেন লোকমান ও তার ম্যানেজার হেলাল। এভাবে নানা অনৈতিক কারবারে জড়িয়ে অল্পদিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যান লোকমান। বাগিয়ে নেন রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘সিআইপি’ পদ। লোকমান প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে বড় অংকের ডলার দুবাই নিয়ে যান এবং দুবাই থেকে বিপুল পরিমানা ঋণ বাংলাদেশে আনেন। বিমানবন্দরে কয়েক দফায় তার ক্যারিয়ার ধরা পড়লেও গডফাদার লোকমান থেকে যান ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
হুন্ডি ও মানবপাচারের পাশাপাশি দেশে সিসা পুনঃপ্রক্রিয়াজাত ব্যাটারি কারখানাসহ বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করেন লোকমান হোসেন। তার ভাতিজির নামে প্রতিষ্ঠা করেন পান্না গ্রুপ। পান্না ব্যাটারির উৎপাদক ও ভলবো ব্যাটারির আমদানী কারক তার কোম্পানী। এর মাধ্যমে নিজেকে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক দাবি করেন। এগুলো তার কথিত সফলতার গল্প। কিন্তু তার সফলতা ছাপিয়ে তার উত্থানের নেপথ্যে রয়েছে বড় ধরনের চোরাচালান ও জালিয়াতির ইতিহাস। তিনি মূলত: ভয়ানক একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী, বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ, মাদক ও মানব পাচারকারি। এই পাচারে নিজেকে জড়িত করে শনৈ শনৈ উন্নতি হয়েছে তারা। হয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। তিনি মূলত: সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাজধানী দুবাইতে ব্যাটারি পাঠানোর আড়ালে অর্থ, মাদক দ্রব্য ও মানবপাচার করেন। করেন ওভার ইনভয়েসিং। সেখানে রয়েছে তার বিশাল সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের মূল নিয়ন্ত্রক চট্টগ্রামের দিদার।

লোকমানের পান্না গ্রুপের অফিসে অফিস স্টাফরা জানান, তিনি ‘ব্যবসায়িক কাজে বিদেশে অবস্থান করছেন। অথচ বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে তিনি র্বতমানে দুবাই অবস্থান করছেন।’ দুবাইতে হাইপার ক্যাপিটাল ইন্টারন্যারশনাল ও রোজা ফিনান্স নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। সম্প্রতি তিনি আড়ই মিলিয়ন ডলারের একটি চালান বাংলাদেশ থেকে দুবাই নেওয়ার চেষ্টা করছেন। দুবাই জনতা ব্যাংক, এইচএসবিসি ব্যাংক মিডিল ইস্ট লিমিটেড, ব্যংক অব বোরদা ইন্ডিয়া, আবর ব্যাংক পিএলসি, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এডিসিবি ব্যাংকে তার একাউন্ট রয়েছে। রোজা ফাইনান্স গ্রুপের মাধ্যমে তিনি বিপুল  অংকের টাকা পাচার করেছেন। তিনটি ব্যাংকে তিনি দৈনিক ৩-৪ কোটি টাকা লেদদেন করেন। এছাড়া দুবাই ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, কমাসিয়াল ব্যাংক অব দুবাই, সারজাহ ইসলামী ব্যাংক পিজেএসসি, সাম্বা ফাইনান্স গ্রুপ-এর মাধ্যমে ওভার ইনভয়েসিংসহ নানা কৌশলে তিনি অর্থ পাচার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
লোকমান হোসেন নানান কোম্পানীর আড়ালে দুবাইতে মানব পাচার, মুদ্রা পাচার ও সোনা চোরাচালানের কারবার করেন। বহুল আলোচিত ওয়ান ইলেভেনের পর ও পরর্বতীতে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধানে নামলে দুবাই গিয়ে আত্মগোপন করেন লোকমান। তিনি প্রতিমাসে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর যান। প্রতিবার যাওয়ার সময় তিনি মানবপাচার করেন। আসার সময় নিয়ে আসেন স্বর্ণের বার ও যাওয়ার সময় নিয়ে যান বৈদেশিক মুদ্রা।

অবৈধপথে সম্পদের পাহাড়:
চোরাকারবার ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জ বাজার লেনে কমপক্ষে ৬টি বাড়ির মালিক এই হাজী লোকমান। ঢাকার লালমাটিয়ার ডি- ব্লকের ৩/১২ নম্বর বাড়ি (কেয়ারটেকার রিপন), হাজারীবাগে পান্না টাওয়ার, ঠিকানা: হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ (হাজারীবাগ ফায়ার স্টেশনের উল্টো পাশে) তার বিশাল ভবন রয়েছে। সদরঘাটে ও মতিঝিলেও রয়েছে ভবন। তার বেশ কয়েকটি ভবন খাস জমি ও সাধারণ মানুষের জমি দখল করে করা। কিন্তু হাজী সেলিমের বিশ্বস্থ ক্যাডার হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায় না। লোকমানের ধানমন্ডি ও গুলশানে আছে অভিজাত ফ্ল্যাট। যেটি তার ঢাকাই ‘হেরেমখানা’ হিসেবে পরিচিত। সেখানে দেশি-বিদেশি লোকজন নিয়ে আড্ডা দেন তিনি। এছাড়া বসুন্ধরায় রয়েছে ফ্ল্যাট ও প্লট। এছাড়া পান্না ডিস্ট্রিবিউশন, আলতু খান জুট মিল, পান্না ব্যাটারি লিমিটেড, লুবেন লিমিটেড, পিআরডিএফসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। পান্না ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে ভলবো, পিবিএল অ্যান্ড ম্যাক্স পাওয়ার, ইত্যাদি ব্যাটারি আমদানী ও বাজারজাত করেন। তার ভাইয়ের নামে মধুখালিতে ৫ শত বিঘা জমি কিনেছেন। তার দুই স্ত্রী, দুই মেয়ে এক ছেলে এবং দুই ভাইয়ের নামে অপ্রদর্শিত বিপুল সম্পদ রয়েছে।
ফরিদপুরের মধুখালীতে তার আলতু জুট মিলের অফিস। সেখানে যখনই যান হেলিকপ্টার নিয়ে যান। আলতু জুট মিলের নামে মুধখালীতে অসংখ্য কৃষকের জমি জোর করে দখলের অভিযোগ রয়েছে লোকমানের বিরুদ্ধে। সরেজমিন অনুসন্ধান করলে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে।
লোকমান গংরা জমি দখল করার কারনে এলাকার বহু আগে মানববন্ধন ও ঝাড়– মিছিল করেছিল। হাজী লোকমান অনেক টাকা ব্যয় করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেন। এই জুট মিলের শ্রমিকদের ঠকানো ও তাদের প্রাপ্য পাওনা না দেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। দুবাইতে পান্না গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন, ৪৯ এফজে+কিউ৩এইচ, দুবাই সিলিকন ওয়েসিস ঠিকানায় রয়েছে তার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী। এই কোম্পানীর আড়ালে তিনি দুবাইতে মুদ্রা ও নারী পাচার করেন। তার পাসপোর্ট নীরিক্ষা করলেই প্রিকুয়েন্ট ট্রাভেলার হিসেবে তার নাম চলে আসবে। পাসপোর্ট নং বি-০০০২১১৬৭ (বাংলাদেশ)। দুবাইতে তার বেশ কয়েকটি বাড়ী আছে বলে তথ্য পাওয়াগেছে। তিনি যতবারই দুবাই যান ততোবারই একজন সুন্দরী নারী সঙে করে নিয়ে যান। দুবাই ডনদের সাথেও তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।
লোকমান নিজের অপর্কম আড়াল করার উদ্দেশ্যে নিজের ছেলে মেয়ের নাম বাদ দিয়ে নিজের ভাইয়ের মেয়ে (ভাতিজি) পান্নার নামে পান্না গ্রুপ খোলেন। তার এই পান্না গ্রুপ কোটি কোটি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। যার মাধ্যমে দ্রতই তার কোম্পানী ফুলে ফেঁপে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। কয়েকদিন আগে তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ১৫ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। তখন হাজী লোকমান তুচ্ছ করে বলেন, এই ১৫ কোটি টাকা আমার হাতের ময়লা।

সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তা কানেকশন:
হাজী লোকমান তার অপরাধ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় ফান্ডে প্রায় ২০ বছর যাবত অর্থ অনুদান বা চাঁদা দিয়ে আসছেন। যেহেতু তার বাড়ী ফরিদপুর জেলায় সেহেতু এই জেলার কমপক্ষে ৫ জন আওয়ামী দলীয় এমপিকে তিনি কেবল নির্বাচনী খরচ বাবদই শত কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছেন। যা তার একজন বিশস্থ কর্মচারি সুত্রে জানাগেছে। তিনি আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ ডোনার হিসাবে সর্বমহলে পরিচিত। যে কারণে তাকে সিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বিগত সময়ে তিনি আয়নাঘরের প্রধান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জিয়াউল হাসানের সাথে এবং র‌্যাবের সাবেক একজন মহাপরিচালক এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এ ছাড়াও ডিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মনিরুজ্জামান, ডিআইজি বাতেন ও ডিবির ডিআইজি হারুনের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। তাদের মাধ্যমে বেশ কিছু বিএনপি,জামায়াত নেতা-কর্মীকে হত্যা ও গুম করিয়েছেন বলেও প্রচার আছে। এই দুই সেনা ও র‌্যাব কর্মকর্তার সাথে প্রায়ই তিনি মিলিত হতেন এবং জামায়াত- বিএনপিকে শেষ করার প্ল্যান করেন এমন অভিযোগ উঠেছে।

ধানমন্ডির বাড়ীতে অবৈধ মিনি চিড়িয়াখানা:
অনুসন্ধানে জানা যায, তিনি বাংলাদেশে প্রচলিত বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন ভংগ করে তার ধানমন্ডির বাড়ীতে একটি মিনি চিড়িয়াখানা গড়ে তুলেছেন। সেখানে বেআইনী ভাবে ২ টি বাঘ, ১১ টি হরিণ ও ৩ টি ময়ুর খাঁচাবন্দী করে রেখেছেন। এ বিষয়ে তিনি বন বিভাগ থেকে কোন প্রকার ছাড়পত্র বা অনুমোদন গ্রহন করেন নি যা একটি দন্ডনীয় ফৌজদারী অপরাধ।

আওয়ামী লীগের একডজন মন্ত্রী,এমপি তার আশ্রয়ে:একাধিক সুত্রে জানাগেছে, আওয়ামী লীগের অধিকাংশ মন্ত্রী এমপি তার ঘনিষ্ঠজন। গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারত চলে যাওয়ার পর তিনি তার বাড়ীতে প্রায় এক ডজন আওয়ামী লীগ নেতা (মন্ত্রী,এমপি) কে আশ্রয় দিয়েছেন। কাউকে কাউকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন যা একটি দেশদ্রোহী অপরাধ। তিনি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে উতখাত করার আওয়ামী চক্রান্তেও যুক্ত রয়েছেন। তার সাথে প্রায়ই পুরান ঢাকার হিন্দু সংগঠন ইসকন এর নেতাদের বৈঠক করতে দেখা যায়। কিছুদিন আগে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী তার অফিসে এসে মিটিং করেন। তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনকে প্রতিহত করতে নিজের ফরিদপুর,গাজীপুর ও কামনাঙিরচর এলাকা থেকে টাকা দিয়ে শতশত লোক ভাড়া করে এনে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তার সেল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি। পরে তার ধানমন্ডির বাস ভবনে যেয়ে খোঁজ করলে বাসা থেকে জানানো হয় যে, তিনি এখন দুবাই আছেন।
দেশ প্রেমিক ছাত্র-জনতা অনতিবিলম্বে এই আওয়ামী ডোনার ও আওয়ামী সিআইপিকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার জোর দাবী তুলেছেন।

বিএসএমএমইউ অনিয়ম, লোপাট আড়াইশো কোটি টাকা!

সবুজ বাংলাদেশ ডেক্স॥
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির ২৯টি খাতে প্রায় ২৪৬ কোটি টাকা লোপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিভিন্ন খাতের অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- বিল-ভাউচার ছাড়া ব্যয়, যন্ত্রপাতি না কিনলেও ঠিকাদারকে অর্থ পরিশোধ, পিপিআর বিধিমালা লঙ্ঘন করে অনিয়মিত ব্যয়, নির্মাণ ও মেরামতে অনিয়মিত ব্যয় ইত্যাদি।

বিএসএমএমইউয়ের এ আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুদক। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন এবং হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক চলতি বছরের জুনে সংস্থাটির উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বেশ কিছু তথ্য চেয়ে দুদক বিএসএমএমইউকে চিঠি দিয়েছে গত ২৬ জুন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এর জবাব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানা যায়।

অনুসন্ধান দলের সদস্য সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি কিছু বলতে রাজি হন নাই।

বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, বিএসএমএমইউয়ের চিকিৎসাসেবা জনকল্যাণমূলক হিসেবে বিবেচিত। তবে এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রোগীদের স্বল্পমূল্যে চিকিৎসার বিষয়টি আমলে না নিয়ে বাড়ানো হয় হাসপাতালটির অপারেশন ও চিকিৎসাসেবার ফি। এভাবে রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় বাড়তি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির ২০১৭-২০১৮ সালের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, বাজারে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে অপারেশন চার্জ বাড়িয়ে অতিরিক্ত টাকার বড় অংশ কমিশন হিসেবে বণ্টন করে নেন হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যদিও নিরীক্ষাকালে চিকিৎসাসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান থাকায় অনুসন্ধানী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অডিট আপত্তির অনেক কিছুই সে সময় নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, অনুসন্ধান কেবল শুরু হয়েছে। শুরু হলেই তো কিছু বলা যায় না। অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করবেন তিনি। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অডিটের কিছু বিষয় নিষ্পত্তি করা হয়েছে। চাহিদামাফিক বেশ কিছু প্রশ্নের জবাবও দেওয়া হয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে আসা অনিয়মের মধ্যে ৮৩ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ৭৩৪ টাকা বিভাগীয় প্রাপ্তি বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে হস্তান্তর না করা, অব্যয়িত ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা বছর শেষ না করে সমর্পণ না করা, বিভাগীয় আয় থেকে অনিয়মিতভাবে ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস পরিচালনা কমিটির ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, ব্যয়ের সমর্থনে ৪২ কোটি টাকার বিল/ভাউচার না পাওয়া, আইন লঙ্ঘন করে ইউজার ফির পৌনে ১৪ কোটি টাকা ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন।

এছাড়া অহেতুক অপারেশন চার্জ ও আইসিইউ চার্জসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চার্জ বৃদ্ধি, পিপিআর বিধিমালা লঙ্ঘন করে ১৯ কোটি ৯২ লাখ টাকার অনিয়মিত ব্যয়, বিল থেকে ভ্যাট ও আয়কর কর্তন না করায় ৬৯ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতি। ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করার সমর্থনে প্রয়োজনীয় প্রমাণক না পাওয়ায় এক কোটি ৮৭ লাখ টাকার অনিয়মিত ব্যয়, নির্মাণ, মেরামতে ৬৭ লাখ টাকার অনিয়মিত ব্যয়, ৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ের সমর্থনে রেকর্ড সংরক্ষণে অনিয়ম, অতি জরুরি এমএসআর (ইটিটি মেশিন) না কেনায় রোগীদের ভোগান্তি ও বার্ষিক ৩০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি।

অন্য অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- মেডিকেল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্টটি পারমানেন্ট সাইটে প্লেসমেন্ট না করেই তিন কোটি ৩৩ লাখ টাকার বিল পরিশোধ, অকেজো লিফট রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৩২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা খরচ, এই কার্যাদেশের বিপরীতে দুবার বিল পরিশোধ, কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের আয়ের হিসাবে গরমিল ইত্যাদি।

দুদক সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ২৯টি খাতে ২৪৬ কোটি ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৮৮ টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে চিকিৎসা ব্যয় বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে এক কোটি ৭১ লাখ ৯১ হাজার ১০৯ টাকা। এছাড়া একই সময়ে ইভনিং ইনসেনটিভ হিসেবে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ৪১২ টাকা জমা করা হয়। ওই সময় অপারেশনের ফি দ্বিগুণ বাড়িয়ে রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় বাড়তি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, যা অসহায়, বিপদাপন্ন রোগীদের প্রতি সেবার প্রমাণ নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে অপারেশনসহ সার্বিক চার্জ কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

জানা যায়, ওই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট বার্ষিক খরচের চেয়ে আয় অনেক বেশি বা দ্বিগুণ, যা অপারেশন চার্জ দ্বিগুণ করার কারণে হয়েছে। ২০১৩ সালের সিন্ডিকেট সভায় এ চার্জ দ্বিগুণ করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের মার্চের কোটেশন বিজ্ঞপ্তির আলোকে পরের বছরের সেপ্টেম্বরে ইস্যু করা এক লাখ ১৭ হাজার ৫শ টাকার মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মালামাল সরবরাহের জন্য দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকার দুটি বিল ধরা হয়। কার্যাদেশের দ্বিগুণ এই অর্থ ২০১৮ সালের মে মাসে চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। যদিও বিল দুটিতে উল্লেখিত মালামাল মজুত বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়নি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কার্ডিয়াক সার্জারির তিনটি ওটিতে প্রতিদিন একজন করে কমপক্ষে তিনজন রোগীর অপারেশন করা হয়। প্রতিটি অপারেশনের সর্বনিম্ন নির্ধারিত খরচ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। ছুটি ও অন্যদিন ছাড়া প্রতিবছর কমপক্ষে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা আয় হওয়ার কথা থাকলেও এ খাতে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে চার কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা সম্ভাব্য আয় থেকে সাত কোটি ৫৭ লাখ টাকা কম।

প্রতিষ্ঠানটির হিসাব শাখার বাজেট বরাদ্দ ও বিভাজিত খাতভিত্তিক খরচের বিল রেজিস্টার নিরীক্ষায় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একাধিক খাতের প্রায় ২৫ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার ৫৬২ টাকা ব্যয় না হওয়া অর্থের কোনো হদিস নেই। যার মধ্যে ১০টি খাতের ২৩ কোটি ৭০ লাখ ৮ হাজার ৮৬২ টাকা ব্যয় হয়নি। কিন্তু ওই টাকা প্রতিষ্ঠানের কোষাগারে সমর্পণ করারও প্রমাণ নেই। বিনা অপারেশনে শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ চিকিৎসায় সরকার থেকে দেওয়া আট কোটি টাকার মধ্যে অব্যয়িত ছিল এক কোটি ৫০ লাখ ৭১ হাজার ৭শ টাকা। কিন্তু ওই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা হয়নি। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই দুটি খাতের ব্যয় না হওয়া অর্থ কোষাগারে জমা না দেওয়ায় ২৫ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার ৫৬২ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ইউজার ফি বাবদ আদায় করা অর্থ কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু কয়েকটি বিভাগের ৮২ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ৭৩৪ টাকা এবং এফডিআর থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের এক কোটি টাকাসহ মোট ৮৩ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ৭৩৪ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করা হয়নি। সাতটি বিভাগের মোট আয়ের চেয়ে ৪৫ কোটি ১৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা কম জমা দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ১২৮ কোটি ৩৯ লাখ ৮২ হাজার ৭৩৪ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা হয়নি। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার প্রয়োজনে জরুরি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি কেনার জন্য অর্থ-কমিটির অনুমোদনক্রমে ক্রয় কমিটির মাধ্যমে বিভাগকে ক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগ যথাসময়ে তা প্রয়োগ না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিধি লঙ্ঘন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে কোনো ব্লক আছে কি না তা শনাক্ত করার যন্ত্র এক্সারসাইজ টলারেন্স টেস্ট বা ইটিটি। ২০১৭-১৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন রোগীদের পরীক্ষার জন্য অতিপ্রয়োজনীয় যন্ত্রটির সংখ্যা ছিল মাত্র একটি। তহবিলে যথেষ্ট টাকা থাকার পরেও আইন লঙ্ঘন করে যন্ত্রটি না কেনায় প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক ক্ষতি হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। আর ভোগান্তির স্বীকার হওয়া রোগী যথাযথ সেবা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালমুখী হয়েছেন।

নিরীক্ষাকালে কার্ডিওলজি বিভাগের মেডিকেল স্টোরেজ রুম ঘুরে দেখা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের অত্যাবশ্যকীয় দ্বিতীয় পর্যায়ের ইটিটি পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বছর থেকেই একটি ইটিটি মেশিন কার্যকর। ফলে প্রতিদিনই এ পরীক্ষাটির জন্য রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ২০১৫ সালে ইটিটি যন্ত্র না কেনায় হাসপাতালটির ৩০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ বিভাগ থেকে যন্ত্রটি কেনার চাহিদা দেওয়া হয় ২০১৫ সালে। কিন্তু ২০১৮ সাল পর্যন্ত তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও যন্ত্র কেনা হয়নি।

২০১৭-২০১৮ সালে কার্ডিওলজি বিভাগের মোট আয় ছিল ৪ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার ২১০ টাকা। যার মধ্যে অর্জিত ১২ লাখ টাকা ইউজার ফি থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। ২০১৮ সালের ৩০ জুন বিভাগটির তহবিলে ৬১ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত ছিল। নিরীক্ষাকালে ইটিটির আনুমানিক মূল্য ছিল ২৫ লাখ টাকা। যন্ত্রটি দিয়ে জনপ্রতি পরীক্ষার ফি ছিল ১৪শ টাকা। বছরে পরীক্ষা করা হয় গড়ে ২২শ জন রোগী। সে মোতাবেক বছরে আয় হওয়ার কথা ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতিবেদন বলছে, উদ্যোগের অভাবে মেশিন না কেনায় রোগীদের যেমন ভোগান্তি হয়েছে, তেমনি প্রতিষ্ঠানটিও আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

একটি প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসা বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট কেনা বাবদ ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু ওই ক্রয়ের কার্যাদেশ, বিল ও সরবরাহ চালানের সঙ্গে মডেল নম্বর, উৎস দেশ, আমদানি-সংক্রান্ত কাগজপত্র ও বিবরণী না থাকায় দরপত্র শিডিউলে দাখিল করা স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী যন্ত্র কেনা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া প্ল্যান্টটি স্থায়ী জায়গায় স্থাপন না করেই ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ১৫ মে অডিট চলাকালীন পর্যন্ত প্ল্যান্টটি প্রতিস্থাপন বা সচল থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া ২০১৮-এর মাঝামাঝি ইএমজি/এনইভি/এসইপি মেশিনটি ক্রয় বাবদ একটি প্রতিষ্ঠানকে ২৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হলেও দীর্ঘ ১১ মাস পরে যন্ত্রটি ব্যবহারের কোনো প্রমাণ পায়নি নিরীক্ষক দল।

২০১৫ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ছিলেন প্রফেসর কামরুল হাসান খান। আর অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত উপ-উপাচার্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর বর্তমান উপাচার্য ও ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার আগে দুজন ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। প্রফেসর কামরুল হাসান খান ও প্রফেসর কনক কান্তি বড়ুয়া। ওনাদের আমলে দুটো অডিট আপত্তির ব্যাপার রয়েছে। দুদক থেকে চিঠি এসেছে, আমি আমার ফাইন্যান্স বিভাগের ট্রেজারার ও ফাইন্যান্স ডিরেক্টরদের দিয়েছি। ওনারা কাগজপত্র রেডি করছেন। দুদকে সময় চাওয়া হয়েছে, দুদককে জবাব দেবেন।

তিনি আরও বলেন, কাগজপত্রের বাইরে আমার কিছু করার নেই। এটা তো আমার বিষয় নয়। এটা আগে যারা ছিলেন ওনাদের। যেহেতু আমি প্রধান, যাই হোক না কেন এর কাগজপত্রগুলো আমরা পাঠিয়ে দেবো যত দ্রুত সম্ভব। দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা পাঠিয়ে দেবেন।

বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, আমি ২০১৮ সালের মার্চে জয়েন করি। এর আগে কামরুল হাসান খান ছিলেন। এছাড়া কামরুল হাসান খানেরও কিছু করার আছে বলে মনে হয় না। ফাইন্যান্স বিভাগ এগুলোর উত্তর দিতে পারবে। ডকুমেন্টস তো সব অফিসে থাকে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৭-১৮ সালেও আমিও যদি ভিসি থাকতাম, এগুলো তো আমার হাতে থাকতো না। থাকবে অফিসে। ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্ট তার উত্তর দেবে। তারা যদি বলে, ভিসি সাহেবের কারণে এগুলো হয়েছে, তখন আমার কাছে আসতে পারেন, যা কিছু হয়ে থাকুক, আমাদের গোচরে আসে। আমি যতটুকু জানি এগুলোর অনেকগুলোই মিটমাট হয়ে গেছে। আমি থাকতে অনেক কিছুই মিটমাট হয়েছে যতদূর জানি।

সাবেক এই ভিসি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারবো না, আমার পূর্ববর্তী ভিসি যিনি ছিলেন উনিও এতদিন পরে এগুলো বলতে পারবেন কি না আমি জানি না। আমিতো পেয়েছি কেবল তিনমাস। সে সময়তো কোনো ফাইন্যান্সিয়াল অর্ডার হয়নি। বুঝতে বুঝতে তো তিনমাস চলে গেছে।
সূত্র: জাগোনিউজ॥

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম