শহীদ ও আহতদের আর্থিক সহায়তায় 

স্টাফ রিপোর্টার:

জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের পরিবারে আর্থিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। একই সঙ্গে শহীদদের পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন কিভাবে হবে, বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার ও আহতদের সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।

জুলাই বিপ্লবে হতাহত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের পুনর্বাসনে গড়া হয়েছে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন।

এই সংস্থা থেকে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দৃশ্যমান হবে বলেও জানানো হয়। কিন্তু এখনো এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে কিছু দেখা যাচ্ছে না।

জুলাই বিপ্লবে রাজধানীর উত্তরায় গুলিতে ডান হাত হারিয়েছেন আকিকুল ইসলাম। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট আকিকুল বাবা ও মাকে নিয়ে আগারগাঁওয়ে থাকেন।

উত্তরায় সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতেন। পরিবারের হাল ধরতে বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে ডান হাত হারিয়ে এখন তিনি কাজে অক্ষম।

বিশেষ করে আহতরা পিছিয়ে। সরকার হয়তো বাকিদের দ্রুত এ সহায়তা দেবে। তবে অনেকের জন্য সময়টা লম্বা হয়ে গেছে।’

আর্থিক সহযোগিতার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি অঙ্গের মূল্য কখনো এক বা দুই লাখ টাকা হতে পারে না। আহতরা এমন অবস্থায় আছেন যে তাঁদের চিকিৎসায় হয়তো আরো চার-পাঁচ বছর সময় লেগে যাবে।

বেশির ভাগই হয়তো আর কর্মজীবনে ফিরতে পারবেন না। ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। এখন মূল প্রয়োজন সরকারঘোষিত পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা। কিভাবে এই পুনর্বাসন করা হবে, এ বিষয়টি এখনো কারো জানা নেই। এটা নিয়েই সবার মধ্যে হতাশা কাজ করছে। সরকার বলছে করে দেবে (পুনর্বাসন), তবে কী করবে, বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সংঘটিত হয় ‘জুলাই বিপ্লব’। সংগঠনটির দাবি, এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন অন্তত এক হাজার ৪২৩ জন। একই সময় আহতের সংখ্যা ২২ হাজার। যদিও এ নিয়ে সরকার এখনো কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করতে পারেনি। তবে নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’।

নরসিংদীর বাসিন্দা তৌহিদ উদ্দিন ভূঞার (৩৬) স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে আর মাকে নিয়ে টানাপড়েনের সংসার। স্থানীয় পর্যায়ে কাপড়ের ব্যবসা করে সন্তানদের পড়ালেখা ও সংসার খরচ চালিয়ে আসছিলেন তিনি। জুলাই বিপ্লবে অংশ নিয়ে গত ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলগেট মোড়ে ছররা গুলিতে দুই চোখের দৃষ্টি হারান। দীর্ঘ পাঁচ মাস চিকিৎসা নেওয়ার পরও কোনো চোখে আলো ফেরেনি তাঁর। ফলে ব্যবসা বা কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে এখন বেকার। এখন পরিবারের খরচ মেটাতে গিয়ে ঋণে জর্জরিত তৌহিদের পরিবার।

মুঠোফোনে তৌহিদ উদ্দিন বলেন ‘আহত হওয়ার চেয়ে আন্দোলনে মরে গেলেও ভালো হতো। উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো আবার কাজে ফিরে যেতে পারতাম। পরিবারের হাল ধরতাম। আমার সঙ্গে পরিবারের সবার এখন মরণদশা।’

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুনেছি সরকার আর্থিক সহযোগিতা করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজও নেয়নি। যারা আমার মতো পুরোপুরি কর্মক্ষমতা হারিয়েছে, তাদের পরিবার কিভাবে চলবে?’

রাজধানীর উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে গত ১৯ জুলাই আন্দোলনে নেমে দুই চোখে ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন মো. দেলোয়ার হুসেন (৪৫)। মা, স্ত্রী ও তিন কন্যাসন্তান নিয়ে তিনি উত্তরার দেওয়ানবাড়ি এলাকায় বাস করেন। টাইলসের দোকানে কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি।

দেলোয়ার হুসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘উন্নত চিকিৎসার অভাবে এক চোখ এখনো অন্ধকার। সেই চোখের ব্যথায় অন্য চোখেও ঝাপসা দেখি। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে প্রায় এক লাখ টাকা পেয়েছি। তবে দীর্ঘ পাঁচ মাস বেকার থাকায় যে ঋণ হয়েছে, তা পরিশোধ করতেই এই অর্থ চলে যাবে। আমার আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে দুই চোখ ফিরে পেতে চাই। আবার কর্মজীবনে ফিরে সংসারের হাল ধরতে চাই।’

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে ছিল শহীদ ও আহতদের নির্ভুল এবং সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা। আহতদের ইউনিক আইডি কার্ড দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশে বা বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া। আহতদের আর্থিক সহযোগিতা সর্বোচ্চ এক লাখ থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা।

পুনর্বাসনের কর্মপরিকল্পনায় ছিল আহতদের যাঁরা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, তাঁদের পছন্দ, আগ্রহ, সামর্থ্য ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। যাঁরা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, কোনো কাজ করতে পারবেন না, তাঁদের আজীবন ভাতা দেওয়া। শহীদ বা কর্মক্ষম ব্যক্তির পরিবারের একজন সদস্যের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এ লক্ষ্যে অর্থনৈতিক বা সামাজিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গঠনের উদ্যোগ নেওয়া। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে বলেও জানানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টার করে তা সম্ভব হয়নি।

সবা:স:জু- ৪৪৫/২৪

পর্দা কেলেঙ্কারির হোতা সাজ্জাদ মুন্সিকে কাজ দিতে শর্ত ভঙ্গ

মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগে পাঠানোর জন্য ৫ হাজার ৭৯০টি ট্যাবলেট পিসি কিনছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। এ জন্য সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদানের আনুষ্ঠানিকতাও প্রায় সম্পন্ন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বিতর্কিত ঠিকাদারের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে এ ক্ষেত্রে সূক্ষ্মভাবে কিছু অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ট্যাবলেট পিসি কেনার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ শর্ত সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশনের প্রথম শর্তে বলা আছে, ট্যাবলেট পিসি হতে হবে ‘স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের’। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শর্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দেশীয় কোম্পানি ওয়ালটনের ট্যাবলেট পিসি কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর এই অনিয়ম করা হয়েছে বিতর্কিত ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার জন্য।

জানা গেছে, ট্যাবলেট পিসিগুলো কিনতে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে ‘আয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে, যার মালিক সাজ্জাদ মুন্সি। তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘পর্দা কেলেঙ্কারি’র হোতা। এ কারণে তাঁকে কারাভোগও করতে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কালো তালিকাভুক্ত দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাও তাঁর পরিবারের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সুপারিশে ২০২০ সালের ৯ জুন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব হাসান মাহমুদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ১৪ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই তালিকার দুটি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স অনিক ট্রেডার্স’ এবং ‘মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ’-এর মালিকানার পেছনেও রয়েছেন সাজ্জাদ মুন্সি। যদিও ট্রেড লাইসেন্সে কোনোটিতে ছেলের নাম, আবার কোনোটিতে ভাইয়ের নাম দিয়ে রেখেছেন তিনি।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওই ঠিকাদারের যোগসাজশে টেকনিক্যাল সাবকমিটিকে চাপ প্রয়োগ করছেন অধিদপ্তরের একজন পরিচালক ও একজন উপপরিচালক।

প্রসঙ্গক্রমে তাঁরা এটাও বলেন যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২২ সালে প্রায় ৪ লাখ ওয়ালটন ট্যাবলেট পিসি ক্রয় করে, যা বর্তমানে অচলাবস্থায় পড়ে আছে। এসব ট্যাবলেট পিসি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিতরণের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু কোনো মন্ত্রণালয় সেগুলো নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। এত কিছুর পরেও অধিদপ্তরের একটি অসাধু চক্র সরকারের বিপুল অর্থের ক্ষতিসাধন করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (লজিস্টিকস অ্যান্ড সাপ্লাই) মো. হুমায়ূন কবীর তালুকদার বলেন, কার্যাদেশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কারিগরি কমিটি সুপারিশ করেছে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি।

বিতর্কিত ও কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে এই পরিচালক বলেন, এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই, এমনকি তাঁকে কেউ তা জানায়নি।

এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে দুর্নীতি, লুটপাট এবং বদলী ও পদায়ন বাণিজ্যে করে যাচ্ছে একটি চক্র। দীর্ঘদিন ধরে অপকর্ম গুলো চালিয়ে যাওয়ার মূল হোতাদের অন্যতম হলেন সহকারী পরিচালক সমন্বয় কারী মতিউর রহমান। সে দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে একই চেয়ারে থেকে বহাল তবিয়তে সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন। কথিত আছে যে ডিজিই আসুক না কেনো মতিউরকে সরাতে পারে না। বরং মতিউরের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এছাড়া পরিচালক প্রশাসন খান মো: রেজাউল করিম নিজেকে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির ঘনিষ্ঠ লোক পরিচয় দিয়ে চলে। ডিজিকে পরিচালক প্রশাসন একদম পাত্তা দেন না। অধিদপ্তের সকল ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে রেজাউল করিম জড়িত, মতিউর রহমান ও রেজাউল করিমের অবৈধ কালো থাবা থেকে বাঁচতে পারেনি একজন ডা: মনোয়ার নামে এক মেডিক্যাল অফিসার। প্রমোশন/পদায়নের জন্য পঞ্চাশ লাখ টাকা দাবি করেছিলো এই চক্রটি। মনের দুঃখে ঐ কর্মকর্তা অফিসেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। যা অনুসন্ধানে আরো অজানা সত্য ও ভয়াবহ দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
বিদেশ থেকে যতটুকু স্বর্ণ আমদানি করলে দিতে হবে না ভ্যাট প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎতে যাচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব ফকরুল বাংলাদেশে ইতিহাস গড়ল উইন্ডিজ দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন রাজউক ইমারত পরিদর্শক শামীম রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে কে জিতবে, তা নিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচেছ ট্রাম্প নাসার চন্দ্র মিশনে স্পেসএক্স জুলাই যোদ্ধা স্বীকৃতি পেতে নতুন করে দেড় হাজারের বেশি আবেদন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু প্রধান প্রকৌশলীর আস্থাভাজন ইএম ২ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কায়কোবাদ সম্পদের পাহাড় জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি