ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন ৭ দেশের ১৯ হাজারেরও বেশি প্রবাসী

স্টাফ রিপোর্টার:

আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদেরকেও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কাজ চলছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) লক্ষ্য, প্রবাসীরাও যেন এবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। সেই লক্ষ্যে বেশ অগ্রগতিও অর্জন করেছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে সাতটি দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে ১৯ হাজারের বেশি প্রবাসীকে ভোটার হিসেবে চূড়ান্ত করেছে ইসি। তদন্তাধীন রয়েছে আরও প্রায় একই পরিমাণ নাগরিকের আবেদন। এছাড়া, নতুন আরও আবেদনও আসছে প্রতিদিন।

সোমবার (১৯ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর। তিনি জানিয়েছেন, সাতটি দেশ থেকে আসা আবেদনগুলোর মধ্যে তদন্ত শেষে ১৯ হাজারের বেশি নাগরিকের আবেদন অনুমোদন পেয়েছে। তারা ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। এই সংখ্যা ধীরে ধীরে আরও বাড়বে, কারণ প্রবাসে ভোটার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার তৈরি করা এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার জন্য অনুমোদন পেয়েছে ১৯ হাজার ২৮৬টি আবেদন। এদের মধ্যে ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন ১১ হাজার ১২৩ জন।

জানা গেছে, সাতটি দেশ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত মোট আবেদন করেছেন ৪৫ হাজার ১৮৪ জন প্রবাসী। এদের মধ্যে আঙুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ২৮ হাজার ৯২৬ জন। তদন্তে বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৫৬৩টি আবেদন। বিভিন্ন উপজেলায় তদন্তাধীন রয়েছে ২১ হাজার ৮৮৯টি আবেদন।

দেশভিত্তিক আবেদন ও অনুমোদনের সংখ্যা:

সংযুক্ত আরব আমিরাত: ১৯ হাজার ১৯৭টি আবেদন, অনুমোদন ১০ হাজার ৬২৭টি

সৌদি আরব: ৩ হাজার ৫৫৪টি আবেদন, অনুমোদন ১ হাজার ৭৪টি

যুক্তরাজ্য: ৮ হাজার ৫২৯টি আবেদন, অনুমোদন ৩ হাজার ৯৯টি

ইতালি: ৬ হাজার ৩৭২টি আবেদন, অনুমোদন ১ হাজার ৮৪৪টি

কুয়েত: ৩ হাজার ৮৭২টি আবেদন, অনুমোদন ১ হাজার ৩৮টি

কাতার: ২ হাজার ৮৩২টি আবেদন, অনুমোদন ৯৪৪টি

মালয়েশিয়া: ৯৪৮টি আবেদন, অনুমোদন ২৬০টি

এছাড়াও সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় এ কার্যক্রম উদ্বোধন হয়েছে; দেশ দুটি থেকে আসা আবেদনের তথ্য এখনও একীভূত করা হয়নি।

বিদেশে বসে ভোটার হওয়ার জন্য প্রবাসীদের জন্য চারটি তথ্য বাধ্যতামূলক:

ক। অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র (ফরম-২(ক))

খ। মেয়াদসহ বাংলাদেশি পাসপোর্ট

গ। অনলাইন জন্ম নিবন্ধন

ঘ। পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি

এগুলো বাধ্যতামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন কেন্দ্রে জমা দিতে হবে।

প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় তথ্য:

বিশেষ এলাকার নাগরিকদের জন্য “বিশেষ তথ্য ফরম”

শিক্ষা সনদ (JSC/SSC/HSC/সমমান)

পিতামাতার এনআইডি বা মৃত্যু সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়)

ড্রাইভিং লাইসেন্স/টিআইএন (যদি থাকে)

দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

নিকাহনামা এবং স্বামী-স্ত্রীর এনআইডি (যদি প্রযোজ্য হয়)

নাগরিকত্ব সনদ (কাউন্সিলর/চেয়ারম্যান/মেয়র/সিইও কর্তৃক প্রদত্ত)

ইউটিলিটি বিলের কপি বা বাড়িভাড়ার চুক্তিপত্র ও বাড়িওয়ালার অনাপত্তিপত্র (ভাড়াটিয়া হলে)

বাধ্যতামূলক নয় এমন তথ্য জমা দিতে না পারলে প্রবাসী নাগরিকের দেশে বসবাসকারী আত্মীয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া যাবে।

নির্বাচন কমিশন ৪০টি দেশের প্রবাসীদের নিজ নিজ দেশেই ভোটার করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এরই মধ্যে ৯টি দেশে কার্যক্রম চলছে। ডিসেম্বর নাগাদ আরও ১০ থেকে ১২টি দেশে এ কার্যক্রম শুরু করতে চায় কমিশন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় ২০১৯ সালে তৎকালীন কমিশন (কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে) প্রবাসে এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের জন্য ভোটার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবং ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় এ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপেও সুযোগ চালু করা হয়। তবে করোনা মহামারির কারণে কার্যক্রমে ভাটা পড়ে।

২০২২ সালে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর আবারও এ কার্যক্রম শুরু হয়। আগের আবেদনগুলো পেছনে ফেলে নতুনভাবে কাজ শুরু করে তারা। বর্তমানে সেই কার্যক্রমকেই এগিয়ে নিচ্ছে নাসির কমিশন।

জুলাই জাতীয় সনদের অঙ্গীকারনামায় যা আছে

স্টাফ রিপোর্টার॥
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্যও এক উদাহরণ স্থাপন করেছে।

আজ সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর শেষে বক্তৃতায় এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।      অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জুলাই সনদ দিয়ে আমাদের বাংলাদেশ পরিবর্তন হবে। এটা হলো গণঅভ্যুত্থানের দ্বিতীয় অংশ। আমরা পুরোনো কথাবার্তাগুলো পালটে ফেলে নতুন কথাগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে নিয়ে আসলাম। সংসদ থেকে শুরু করে সরকার পরিচালনা-অনেকগুলো বিষয়ে আমরা এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে আসলাম।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই পরিবর্তন এখন আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাবে। আমরা সেই পথে অগ্রসর হবো। আমাদের নবজন্ম হলো আজকে। এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।’

প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, সব মতভেদ ভুলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সনদের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই পরিবর্তন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলেই এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, `আমাদের জাতীয় জীবনে পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের সংবিধান ও সরকার পরিচালনার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনতে হবে।‘

তিনি বলেন, যে তরুণরা এই পরিবর্তনের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে, তারাই নতুন করে দেশকে গড়ে তুলবে। `তরুণরাই আমাদের পথ দেখাবে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, `দেশটি তরুণদের। ১৮ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকই ২৭ বছরের নিচে।‘

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্যও এক উদাহরণ স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, `অনেক দেশ আমাদের কাছে জানতে আসবে—কিভাবে আমরা গোটা জাতিকে সম্পৃক্ত করে জুলাই সনদ স্বাক্ষর সম্ভব করেছি।‘

আজ শুক্রবার বিকাল ৫টায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এ স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। এর আগে বিকাল চারটা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীতে শুরু হয় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পাঁচটা পাঁচ মিনিটে প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলোর দুজন করে প্রতিনিধি ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও সদস্যরা স্বাক্ষর করেন। এরপর পাঁচটা সাত মিনিটে সনদে স্বাক্ষরের করেন প্রধান উপদেষ্টা। স্বাক্ষরের পরে তারা সনদ উঁচিয়ে ধরে দেখান।

বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান সনদে স্বাক্ষর করেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম