
ডেস্ক রিপোর্ট :
বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের পদত্যাগের সুযোগ নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করে অবিলম্বে সর্বদলীয় জাতীয় কনভেনশন আহ্বান, সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা সহ দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণে ৮ দফা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে খেলাফত মজলিস। আজ দুপুর ১টায় দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। পল্টন ফায়েনাজ টাওয়ারস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আমীরে মজলিস মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ। লিখিত বক্তব্য পেশ করেন মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুর রহমান ফিরোজ, কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শায়খুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হাজী নুর হোসেন, আবুল হোসেন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতে দেশবাসী সকলের মধ্যে আশংকা বিরাজ করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ বা অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে অন্যান্যদের মতপার্থক্যের বিষয়ে যেসব খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাতে জনগণ খুবই উদ্বিগ্ন ও শংকিত। এ অবস্থায় একটি প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে খেলাফত মজলিস জাতির সামনে তার বক্তব্য তুলে ধরতে চায়।
আমরা মনে করি অপরিসীম ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে। ২৪’র জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দুই হাজরেরও বেশী মানুষ শহীদ হয়েছেন, হাজার হাজার ছাত্র জনতা আহত হয়েছেন। এখনো অনেকে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। জুলাই-আগস্টের পূর্বে পিলখানায় বিডিআর হত্যা, ২০১৩ সালের শপলায় গণহত্যাসহ দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ অসংখ্য বিরোধী রাজনৈতিক নেতা কর্মী, আলেম- ওলামা গুম, খুন হত্যা, জেল জুলুমের শিকার হন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দু:শাসনের অবসান ঘটেছে। এরপর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে। পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা- সংস্কৃতি, প্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ সব কিছু বিপর্যস্ত অবস্থায় রেখে যায়। এ অবস্থার উত্তরণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। সকল রাজনৈতিক দল, সামরিক বাহিনী-সহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল শক্তি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে। সরকার সংস্কার, ফ্যাসিবাদীদের বিচার ও নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছিল। রাজনৈতিক দলসমূহও সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে মতবিরোধ, মতভেদ প্রকাশ্য রূপ নেয়। ইতিমধ্যে সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে মতপার্থক্যের খবর প্রকাশ পায়, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস পদত্যাগ করতে চাচ্ছেন বলে খবর ছড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশবাসী শংকিত হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে সব ধরণের শংকা দূর করা জরুরী।
এ পরিস্থিতিতে খেলাফত মজলিস মনে করে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দেশের চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমন করা সম্ভব। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণে বিভিন্ন দল ও পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক মতপার্থক্য- বিভেদ দূর করতে সংলাপ শুরু করা প্রয়োজন। এজন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট রাখার স্বার্থে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে স্ব স্ব গ-ির মধ্যে থেকে দায়িত্বশীলতার সাথে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য জুলাই অভ্যুত্থানের সুযোগকে কোনভাবেই বেহাত হতে দেয়া যাবে না। ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান বা পুনর্বাসন জুলাই শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানীর শামিল। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষ করে একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সম্ভব। সংস্কার, নির্বাচন, ফ্যাসিবাদের বিচার- যুগপৎভাবে করতে হবে। এ অবস্থায় খেলাফত মজলিসের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে-
১. বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের পদত্যাগের সুযোগ নেই। আমরা মনে করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সংস্কার-নির্বাচনে সার্বিকভাবে সহযোগিতায় সকল দল ও প্রতিষ্ঠান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে দেশের পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করবে। পতিত ফ্যাসিবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
২. অবিলম্বে সর্বদলীয় জাতীয় কনভেনশন আহ্বান করা। ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল দল ও স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সৃষ্ট মতানৈক্য দূর করতে হবে। বিভেদ সৃষ্টিকারী কর্মকা- থেকে সকল মহলকে বিরত থাকা।
৩. সংস্কারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা অর্থাৎ প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কারের রূপরেখা ও তা চূড়ান্তের মেয়াদ নির্ধারণ করা।
৪. অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা করা।
৫. পতিত ফ্যাসিবাদীদের বিচার দ্রুত সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে গতিশীল করা।
৬. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন হয় এমন পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সতর্ক থাকা। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও প্রশাসনসহ সকল অঙ্গকে কার্যপরিধির মধ্যে থেকে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সরকারের কাজকে গতিশীল করা।
৭. রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে নিয়মিত আলোচনা অব্যাহত রাখা। বিশেষ করে রাখাইনকে মানবিক করিডোর প্রদান, বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশী সংস্থাকে প্রদানের মত জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনা করা।
৮. নির্ধারিত সংস্কার, পতিত ফ্যাাসিবাদীদের বিচার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতায় নতুন- পুরাতন সকল রাজনৈতিক দল, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া।