ঘুষের টাকায় ভারতসহ ৬ দেশে সম্পদ গড়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ

স্টাফ রিপোর্টার॥

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশ্বস্ততার কোটায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পান তুষার মোহন সাধু খাঁ। এরপরেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানকে বানিয়েছেন অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছেন।

জানা গেছে, সিনিয়রিটির পরীক্ষায় অংশ না নিয়েই পদোন্নতি পাওয়া তুষার মোহন সাধু খাঁ ডিপিএইচইতে দুর্নীতির নিজস্ব বলয় তৈরি করছেন। প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। আগে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও আর্সেনিকঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের পরিচালক থাকাকালেও তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অডিটেও খরচে গরমিল পায় সরকারি সংস্থা। আইএমইডিসহ বিভিন্ন সংস্থা বললেও তা মানেননি তিনি। আওয়ামী লীগের অনুগত ও বিশ্বস্ত হওয়ায় প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। কর্মকর্তাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসে তাকে নিয়োগের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন সাধু খাঁ। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নানা সুবিধা দিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সারা দেশে গভীর নলকূপ স্থাপন করে থাকে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোয় অর্থায়ন করে সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থা। তবে কে প্রান্তিক আর কে অসচ্ছল তা যাচাই না করে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী নলকূপ বিতরণ করেছেন তিনি। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং মন্ত্রী-এমপিদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী এসব নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী। প্রান্তিক অনেক এলাকায় এখনো নিরাপদ পানি প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন না নাগরিকরা। ঠিকাদাররা বলছেন, তবে দলীয় পরিচয়েও কমিশন ছাড়া কেউ কাজ পাননি। কাজ পেতে তাকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আগেই দিতে হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে খোলস পাল্টাতে শুরু করেন সাধু খাঁ। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করাচ্ছেন তিনি বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ঘনিষ্ঠ। বিএনপির এই নেতার পরিচয়ে তিনি দুর্নীতির রাজত্ব টিকিয়ে রাখতে চাইছেন। নানা মহলে তদবিরও করে যাচ্ছেন।

তুষার মোহন সাধু খাঁর যত অনিয়ম

গত বছরের ৩১ অক্টোবর শামীম হোসেন নামের এক ব্যক্তি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তুষার মোহন সাধু খাঁর অপকর্ম নিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি সাধু খাঁর ঘুষ, কমিশন বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ আনেন। বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, তুষার মোহন ঘুষের টাকা লালমাটিয়ায় তার বোনের বাসায় রাখতেন। পরে ঠিকাদার দিলীপ বাবুর মাধ্যমে হুন্ডি করে ওই টাকা ইন্ডিয়া ও আমেরিকায় বসবাসরত তার ছোট ভাই এবং কানাডায় বসবাসরত তার মেয়ের কাছে পাঠাতেন। ভারত, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই ও শ্রীলঙ্কায় নামে-বেনামে তার গাড়ি-বাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রাক্কলনিক আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে আগে ঘুষের টাকা নিলেও, পরে বিশ্বস্ত ঠিকাদার ও বিভিন্ন জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে ঘুষের টাকা নেওয়া শুরু করেন।

পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের রিভাইজড হওয়ার কথা থাকলেও বিধি লঙ্ঘন করে আগের আইটেমের সঙ্গে নতুন আইটেম যোগ করে প্রকল্প রিভাইজড হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পানি সরবরাহ প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী উপজেলাওয়ারি বণ্টননামায় ১৫০ থেকে ১৫ হাজার টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া আছে। একটি জেলায় ১৫ হাজার টিউবওয়েল স্থাপনের কথা রয়েছে ডিপিপিতে। বেশিরভাগ উপজেলায় ৪ হাজার, ৫ হাজার, ৬ হাজার বা ৭ হাজার টিউবওয়েলের বরাদ্দ রয়েছে।

পানি সরবরাহ প্রকল্পে ৩৭ কোটি টাকার অনিয়ম

২০১৯ সালের ২০ মে সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয় তুষার মোহন সাধু খাঁকে। এ প্রকল্পে ব্যয়ের ক্ষেত্রে ৩৭ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার ৬৩৩ টাকার গরমিল পাওয়া গেছে। তখন এ নিয়ে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, তাতে অডিট কমিটি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সমীক্ষা দলের প্রতিবেদনে এ টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে রাখার পাশাপাশি অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।

আর্সেনিকঝুঁকি নিরসন প্রকল্পে অনিয়ম

২০১৮ সালের ১৩ মে থেকে ২০১৯ সালের ৪ জুলাই পর্যন্ত পানি সরবরাহে আর্সেনিকঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন তুষার মোহন সাধু খাঁ। ১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার প্রকল্পটির শুরুতেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। টিউবওয়েলে আর্সেনিক আছে কি না তা পরীক্ষা করার এনজিও নিয়োগ করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করেই ২০১৮ সালে ৫৪ জেলায় ৬৫০ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তিনি দায়িত্বে থাকাকালে এনজিও নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

তুষার মোহন সাধু খাঁ সম্প্রতি বলেন, ‘প্রতিদিন অন্তত ৫০ জন সাংবাদিক ফোন করেন। এসব বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। যারা আমাকে চেয়ারে বসিয়েছেন (স্থানীয় সরকার বিভাগ) তাদের জিজ্ঞেস করুন।’ স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ অনু শাখার কেউ এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

হাসপাতালের ডিসপ্লেতে ‘আওয়ামী লীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’

স্টাফ রিপোর্টারঃ

নোয়াখালীর সদর উপজেলার একটি হাসপাতালের ডিজিটাল ডিসপ্লেতে আওয়ামী লীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ লেখা ভেসে উঠেছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার হাসপাতাল রোডের ‘সিটি হসপিটাল’-এর মূল ফটকের ডিসপ্লেতে এ লেখা ভেসে ওঠে। ঘটনার পরপরই বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবি করেন।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুম ইফতেখার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলা শহর মাইজদীর হাসপাতাল রোডের ‘সিটি হসপিটাল’-এর ডিসপ্লেতে ‘আওয়ামী লীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ লেখা ভেসে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে হাসপাতালের সামনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

সিটি হসপিটালের ম্যানেজার কাজী মো. শাহজাহান নাজিম বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে প্রথম হাসপাতালে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’ লেখা ভেসে ওঠে। তখন আমাদের নৈশপ্রহরী সেটা ডিসকানেক্ট করে দেয়। পরে এটা নিয়ে আর কোনো কথাবার্তা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে স্থানীয় কিছু লোকজন এসে আবার ডিসপ্লেতে কানেকশন দেয় এরপর লেখাটি পুনরায় ভেসে ওঠে। হাসপাতালের ডিসপ্লের অ্যাপে তার নিয়ন্ত্রণে নেই। এটি হাসপাতালের বাহির থেকে চলে।

ম্যানেজার নাজিম অভিযোগ করে বলেন, গতকাল রাতে ডিসপ্লেতে লেখা ভেসে ওঠেনি। এটি ঘটানো হয়েছে। এরপর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকারসহ হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় এবং নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এতে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক সালমা ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় এক ব্যক্তির পূর্ব বিরোধ ছিল। ধারণা করছি, ওই বিরোধের জের ধরে এই ঘটনা ঘটানো হয়।

সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুম ইফতেখার বলেন, ‘ঘটনাস্থলে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

সবা:স:জু- ৭০৫/২৫

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
আমতলীতে সাংবাদিক ও শিক্ষককে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানকে কেন বরখাস্ত করলেন নেতানিয়াহু কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বুয়েট শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে ওসাকা এক্সপো–২০২৫: কৃত্রিম দ্বীপে এ যেন এক টুকরা ফিলিস্তিন জেনেভা ক্যাম্পের মাদক সম্রাট বশির মোল্লার হাতে নাশকতার নীলনকশা বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছে: আসিফ নজরুল রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার শিশুকে বাসায় নিয়ে ধর্ষণ, ট্রাফিক কনস্টেবল কারাগারে আবহাওয়া অফিস বৃষ্টি নিয়ে যে বার্তা দিলো মায়ের বিয়ের বেনারসি শাড়িতে জয়া আহসান