বাবা হার্ট অ্যাটাকে ছেলে ক্যান্সারে মর্মান্তিক বিদায় একই পরিবারের দুই প্রাণের

বাবা হার্ট অ্যাটাকে ছেলে ক্যান্সারে মর্মান্তিক বিদায় একই পরিবারের দুই প্রাণের

নেত্রকোনা সংবাদদাতা:

একদিকে ছেলের ফুসফুস ক্যান্সার, অন্যদিকে অর্থ সংকট—এই দুশ্চিন্তাই এক অসহায় বাবার জীবন কেড়ে নিল। আর বাবার মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন পরই বিনা চিকিৎসায় থেমে গেল মেধাবী কলেজছাত্র সোহান হোসেনের জীবন। নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার হাফেজ জিয়াউর রহমান ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোঃ মোরসালিন হোসেন সোহান (১৯) দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ক্যান্সারে ভুগছিলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা মোঃ সোবাহান হোসেন চিকিৎসার ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৩০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

বাবার মৃত্যুর পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এলাকাবাসীর সহায়তায় সোহানকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকায় নেওয়ার পথেই সোহান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অভাব আর অসহায়তার সঙ্গে লড়াই করতে করতে শেষপর্যন্ত হেরে গেল দুই প্রজন্ম—একজন পিতা, আর তার স্বপ্ন বয়ে বেড়ানো সন্তান।

সোহানের মৃত্যুতে গোটা পূর্বধলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কলেজের সহপাঠী, শিক্ষক, প্রতিবেশী এবং সমাজকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এক বিবৃতিতে বলেন, “সোহানের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের ক্ষতি নয়, বরং একটি সম্ভাবনার করুণ মৃত্যু। দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার নিশ্চয়তা না থাকায় প্রতিনিয়ত আমরা এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রত্যক্ষ করছি।”

এদিকে এলাকাবাসীর প্রশ্ন—“দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভোগা একজন ছাত্র এবং তার বাবার আকস্মিক মৃত্যু—এই পুরো বিষয়টিতে কি স্বাস্থ্য বিভাগ বা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো দায়িত্ব ছিল না?” সাধারণ মানুষের চিকিৎসা নিয়ে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সহায়তা প্রাপ্তির সুযোগ ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে এই করুণ ঘটনা। একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে—একটি জীবন বাঁচাতে সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস কতটা জরুরি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম