জর্জিয়ায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢোকার চেষ্টা বিক্ষুব্ধ জনতার

জর্জিয়ায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢোকার চেষ্টা বিক্ষুব্ধ জনতার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের আলোচনায় স্থবিরতা ও নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ ঘিরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে জর্জিয়া। এসময় বিক্ষোভকারীরা রাজধানী তিবলিসিতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢোকার চেষ্টা করে এবং পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা বাহিনী জলকামান ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। পরে বিক্ষোভকারীদের অনেককে আটক করে পুলিশ।

রোববার (৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত বছরের পার্লামেন্ট নির্বাচনে শাসক দল জর্জিয়ান ড্রিম জয় দাবি করার পর থেকেই দেশটি রাজনৈতিক অচলাবস্থায় রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থি বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করছে, নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে শাসকদল জয় পেয়েছে। এরপর থেকে সরকার ইইউ-তে যোগদানের আলোচনা স্থগিত রেখেছে।

এমন অবস্থায় শনিবার স্থানীয় নির্বাচনের দিনই রাজধানীতে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। সরকারবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে অধিকাংশ বিরোধী দল এ নির্বাচন বর্জন করে। বিক্ষোভের অন্যতম সংগঠক অপেরা গায়ক পাতা বুড়চুলাদজে আগেই শাসক দলের নেতাদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এদিন তিবলিসির রাস্তাগুলোতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জর্জিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকা হাতে মিছিল করেন। বুড়চুলাদজে এক ঘোষণায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে তারা যেন অবিলম্বে জর্জিয়ান ড্রিম দলের ছয়জন শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করেন।

পরে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনে গিয়ে সেখানে ঢোকার চেষ্টা করলে দাঙ্গা পুলিশ পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে।

মূলত গত কয়েক মাস ধরে সরকারবিরোধী কর্মী, স্বাধীন গণমাধ্যম ও পশ্চিমাপন্থি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর দমননীতি জোরদার করেছে জর্জিয়ার সরকার। অধিকাংশ বিরোধী নেতা এখন কারাগারে।

২১ বছর বয়সী ইয়া নামের এক তরুণী কালো পোশাক, হেলমেট ও গ্যাসমাস্ক পরে বিক্ষোভে যোগ দেন। তিনি বলেন, “রঙিন কিছু পরলে সহজেই আমাদের চেনা যাবে, আর চেনা গেলে জেলে যেতে হবে”। মূলত সরকারি নজরদারির অংশ হিসেবে রুস্তাভেলি এভিনিউতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন নজরদারি ক্যামেরা বসানো হয়েছে এবং এটাই বোঝাতে চাচ্ছিলেন তিনি।

লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করবে না

লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করবে না

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ যুক্তরাজ্যের অভিবাসননীতিতে কড়াকড়ি আরোপের ফলে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিয়োগ কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে বি‌শেষ ক‌রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা উল্লেখযোগ্য নতুন বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। লন্ডন মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে তারা ঘোষণা করেছে যে,বাংলাদেশ থেকে নতুন কোনও শিক্ষার্থী ভর্তি করবে না। যুক্তরাজ্যের বেসিক কমপ্লায়েন্স অ্যাসেসমেন্ট (বিসিএ) থ্রেশহোল্ডে (যা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা করার ক্ষমতা নির্ধারণ করে) প্রত্যাশিত পরিবর্তনের সরাসরি প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সরকারের সর্বশেষ অভিবাসন শ্বেতপত্রে বর্ণিত প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘গ্রিন’ কমপ্লায়েন্স স্ট্যাটাস বজায় রাখার জন্য অনুমোদিত ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার মাত্র ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এই আসন্ন পরিবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া সক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করতে বাধ্য করছে। বিশেষ করে ভিসা আবেদনের জন্য উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত দেশগুলোর ক্ষেত্রে।

লন্ডন মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির ডেপুটি ভাইস-চ্যান্সেলর গ্যারি ডেভিস নিশ্চিত করেছেন যে, বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার বেড়ে যাওয়া তাদের এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ।

তিনি উল্লেখ করেছেন যে,বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ভিসা প্রত্যাখ্যানের ৬০-৬৫ শতাংশই বাংলাদেশ থেকে এসেছে। যা ইউকে ভিসা ও ইমিগ্রেশন (ইউকেভিআই) ব্রিফিংয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ডেভিস বলেন,এ পর্যন্ত আমরা যে পরিমাণ প্রত্যাখ্যান দেখেছি,তা নিয়ে আমরা স্বস্তিতে নেই।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত ৫ শতাংশ বিসিএ ভিসা প্রত্যাখ্যানের সীমার মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় আশ্বাস দিয়েছে যে, কোনও শিক্ষার্থী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। পূর্ববর্তী জারি করা স্টাডি অ্যাকসেপ্টেন্সের নিশ্চিতকরণ (সিএএস) নথিগুলো প্রত্যাহার করা হবে এবং অর্থ ফেরত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। ডেভিস জোর দিয়ে বলেছেন যে, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদী ভিসা সম্ভাবনাসহ কল্যাণ রক্ষা তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভিসা প্রত্যাখ্যান ভবিষ্যতের আবেদনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যদিও লন্ডন মেটের বর্তমান কমপ্লায়েন্স মেট্রিক্স শক্তিশালী রয়েছে।

এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পদ্ধতি পরিবর্তন করছে। উদাহরণস্বরূপ, গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান ইউনিভার্সিটি ইতোমধ্যে নতুন কমপ্লায়েন্স মেট্রিক্সে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা কোর্সগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। একইভাবে, ইউনিভার্সিটি অব সান্ডারল্যান্ড অভিবাসন শ্বেতপত্র দ্বারা প্রবর্তিত অতিরিক্ত বিবেচনার স্তর উল্লেখ করে সুদান, ইরান, ইরাক, সিরিয়া এবং ইয়েমেনসহ বেশ কয়েকটি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল থেকে ভর্তি স্থগিত করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোও সিএএস পেয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

যুক্তরাজ্যে ভর্তি আকাঙ্ক্ষী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর এর প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জন্য ইউকে স্টাডি ভিসা ইস্যু করার হারে উল্লেখযোগ্য পতন দেখা গেছে। ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে অনুমোদনের হার ৬৩ শতাংশে নেমে এসেছে। যা গত বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ পয়েন্ট কম।

যুক্তরাজ্যের কঠোর অভিবাসননীতির মধ্যেই এটি ঘটছে। যার মধ্যে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ভরশীলদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এটি ইতোমধ্যে সামগ্রিক পৃষ্ঠপোষকতামূলক স্টাডি ভিসায় ১৪ শতাংশ হ্রাস ঘটিয়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসের অভিবাসন শ্বেতপত্রে আরও প্রস্তাবনা থাকতে পারে। যেমন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চ শিক্ষা প্রদানকারীদের আয়ের ওপর শুল্কারোপ। যা সম্ভাব্যভাবে টিউশন ফি বৃদ্ধি করতে পারে এবং ইউকে সেটেলমেন্টের জন্য যোগ্যতার সময়কাল পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত বাড়ানো। এই সম্মিলিত পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি তৈরি করছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম