রাজউকের ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ৭ বছরেই শত কোটি টাকার মালিক

রাজউকের ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ৭ বছরেই শত কোটি টাকার মালিক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা হয়েও ৭ বছরেই হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক। পটুয়াখালী জেলার বাউফলের রনভৈরব, ছিটকা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি শিক্ষক মোতাহার উদ্দিনের ছোট পুত্র মনিরুজ্জামান।

 

ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় মনিরুজ্জামান জহির রায়হান হলে থাকতেন এবং সেখান থেকেই তিনি ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্র জীবনে মনিরুজ্জামান ছাত্রলীগের কর্মী হওয়ায় বাউফলের তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক চীফ হুইপ ও সংসদ সদস্য আ.স.ম ফিরোজ এবং এইচটি ইমামের সুপারিশে রাজউকে ইমারত পরিদর্শক হিসেবে চাকরি বাগিয়ে নিয়ে ০২ জুলাই ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে রাজউক প্রধান কার্যালয়ে যোগদান করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে মনিরুজ্জামান নিজেকে বিএনপির একজন বলে দাবি করছেন। মনিরুজ্জামান বিয়ে করেছেন ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার হরিপাশা ইউনিয়নের বীরকাঠী গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক কাঞ্চন আলী মোল্লার মেয়ে কানিজ জাহানকে। বর্তমানে মোন্তাকিম মোনেম নামে এক পুত্র সন্তানের জনক এই মনিরুজ্জামান।

 

দুদকে জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগে মনিরুজ্জামানকে একটি ঘুষ সিন্ডিকেটের অন্যতম মূল ব্যক্তিত্ব হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অভিযোগকারীদের দাবি মনিরুজ্জামান মাত্র কয়েক বছরে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ঢাকায় কিনেছেন একাধিক ফ্লাট, গাজীপুরে কিনেছেন একাধিক প্লট, বরিশাল সদরে ও নিজ গ্রাম বাউফলের ছিটকায় জমি কিনে ভবন নির্মাণ করেছেন। রয়েছে মটরসাইকেল, ব্যবহার করেন ব্যক্তিগত গাড়ি। ব্যাংকে কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে বলেও জানা গেছে। এসব সম্পদের কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

মনিরুজ্জামান এবং কানিজ জাহানকে ০২ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তলব করে তাদের এবং আপনার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্বনামে/বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও উহা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী অত্র আদেশ প্রাপ্তির ২১(একুশ) কার্য দিবসের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর কোন অদৃশ্য কারনে দুর্নীতি দমন কমিশনের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।

 

রাজউকের ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা হলেও ঢাকা, গাজীপুর, বরিশাল, ও বাউফলে তার নিজের এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট, জমির শেয়ার ও একাধিক বিলাসবহুল ব্যক্তিগত যানবাহন ও নিজের স্ত্রীর নামে রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

 

মনিরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ির পৈতৃক ভিটার বাসভবনটি খুবই ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে, ঘরের নড়বড়ে বেড়া ও মরিচা পরা টিনের ঘর হলেও বাংলামটরে সারিনা আশরাফ নিবাশের ৯/সি ফ্লাটের মালিক মনিরুজ্জামান, বর্তমানে তিনি এই ফ্লাটেই বসবাস করছেন। মহাখালীর ফ্যালকন গার্ডেনে তার ফ্লাট রয়েছে । ফ্যালকন গার্ডেনের সিকিউরিটি গার্ড আব্দুস সবুর দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিবেদককে নিশ্চিত করে বলেন ‍‍”এই ফ্লাটটি মনিরুজ্জামান স্যারের”। তিনি আরো জানান ফ্লাটটি কিছুদিন পূর্বে এক কোটি দশ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চাইলেও এখন আর বিক্রি করবেন না। উত্তরার উলুদাহা,বাউনিয়া মৌজায় পলিয়েন্থাস ভবনে একটি ফ্লাট ও  দক্ষিণ পীরেরবাগের আমতলা টাওয়ারে ১,৬৩০ বর্গফুট আয়তনের একটি ফ্ল্যাটের মালিক ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাউপাড়া মৌজায় বন বিভাগের জমি ভূমি দস্যুরা দখল করে বিক্রি করছে, সেই জমি চারজনে মিলে শেয়ারে ক্রয় করেছেন এই মনিরুজ্জামান। সরেজমিনে গিয়ে সেই জমিতে মনিরুজ্জামানের নামসহ মালিকানা সাইনবোর্ড দেখা গেছে। সাতাইশ, টঙ্গী, গাজীপুরে জমি ক্রয় করে তৈরি করেছেন টিনশেড বাড়ি। এই বাড়িতে মোট ০৯টি রুম রয়েছে যার ০৩ টিতে তার বোন-জামাই বসবাস করে, বাকিগুলো ভাড়া দেয়া হয়। বরিশালের চাঁদমারি, বান্দ রোডে ১০ শতাংশ জমির উপরে টিনসেড তিন ইউনিটের ঘর রয়েছে তার। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে বর্তমানে এখানে জমির শতাংশ ৩৫ লক্ষ টাকা করে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে, এই হিসেবে তার মোট জমির মূল্য রয়েছে ৩,৫০,০০,০০০/=। এখান থেকে মাসে ১৫,০০০/- টাকা ঘর ভাড়া আদায় করেন মোঃ মনিরুজ্জামান। এছাড়াও বরিশালের কাশিমপুর এলাকায় পাঁচতলা ভবন রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। বাউফলের ছিটকা রণভৈরবে মনিরুজ্জামানের পৈতৃক ভিটার কাছের বাজারে রয়েছে তার সুবৃহৎ ০৩ তলা বাড়ি, যার নিচে গাড়ি পার্কিংয়ের সুব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়াও নিজ পৈত্রিক ভিটার কাছেই ৯৬০ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি।

 

বাউফলের ছিটকা রণভৈরবে সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে স্থানীয় কয়েকজন বলেন মনিরুজ্জানের একাধিক মাছের ঘের রয়েছে ও বিভিন্ন জায়গায় জমিও কিনেছেন তিনি। কিন্তু যখনই তারা বুঝতে পারে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছে তখনই চুপ হয়ে যায় কোন অদৃশ্য ভয়ে।

 

ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামান খুব সাদাসিদে ভাবে অফিসে আসলেও ব্যক্তি জীবনে চলাফেরার জন্য তিনি একটি ইয়ামাহা এফজেডএস ভার্সন২ মটরসাইকেল (এল-৬*-৬*২*) ও একটি বিলাসবহুল টয়োটা প্রিমিও ২০১৭ মডেলের প্রাইভেট কার (গ-৩*-৩*০*) ব্যবহার করেন। প্রতি শনিবার মনিরুজ্জামান ও তার স্ত্রী কানিজ জাহান পুত্র মোনেমকে নিয়ে কোচিং এর উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ব্রিটিশ কাউন্সিলে যান।

 

এমকে ডিজাইন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্স লি: নামে ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যদিও এই প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-৫ থেকে ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের স্ত্রী গৃহিনী কানিজ জাহানের নামে নিবন্ধিত। ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। একই নামে গাজীপুরের টঙ্গির সাতাইস স্কুল এন্ড কলেজ মার্কেটে রয়েছে আরেকটি অফিস ।

 

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা এই সকল বিষয় নিয়ে ইমারত পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনভাবেই প্রতিবেদক এর সাথে কথা বলেননি। একবার ফোন রিসিভ করে নামাজের পরে কথা বলবো বলে আর পরবর্তীতে কল রিসিভ করেননি। মুঠোফোনে বার্তা প্রেরণ করা হলেও তার কোন উত্তর দেননি মনিরুজ্জামান।

 

 

হত্যা মামলার আসামির ডাকে দুবাই গেলেন সাকিব

স্টাফ রিপোর্টারঃ

আরাভ জুয়েলারি শপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। আসছি ১৫ তারিখ। শপ ১৬, বিল্ডিং ৫, হিন্ড প্লাজা, নিউ গোল্ড শপ, দুবাই। আপনারা আসছেন তো?’ ভিডিওবার্তায় দুবাইয়ে আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি শোরুমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এভাবেই আমন্ত্রণ জানাতে দেখা যায় বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। তার এই বিজ্ঞাপনী বার্তাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে। সাকিবের এই ভিডিওবার্তাটি ওই জুয়েলারির স্বত্বাধিকারী খুনের আসামী আরাভ খানের ফেসবুক পেজ থেকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি শেয়ার করা হয়।

সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ইজ কামিং অন ফিফটিনথ মার্চ, টু থাউজেন্ড টোয়েন্টি থ্রি- ফর দ্য ওপেনিং সেরিমনি অব আরাভ জুয়েলার্স ইন দুবাই। ওপেনিং সেরিমনি টাইম সেভেন পিএম। এভরিওয়ান ইজ ইনভাইটেড অ্যান্ড রিকোয়েস্ট টু শেয়ার দিজ উইথ ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি। থ্যাংক ইউ!’ একই পোস্টে বাংলায় লেখা হয়- ‘কোনোদিন কাউকে শেয়ার করতে বলিনি আমার কোনো পোস্ট। দয়া করে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন এবং আপনাদের ফ্রেন্ড অ্যান্ড ফ্যামিলি সবাইকে ইনভাইট করবেন।

শুধু সাকিব নন, আরাভ খানের জুয়েলারি শপের উদ্বোধন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন ইংলিশ ক্রিকেটার বেনি হাওয়েল, শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের পেসার উসুরু উদানা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁহাতি ওপেনার এভিন লুইস, সংযুক্ত আরব আমিরাত ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রোহান মোস্তফা, আফগানিস্তানের হজরতউল্লাহ জাজাই, পাকিস্তানের ক্রিকেটার মোহাম্মদ আমিরসহ অনেকে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস, গায়ক নোবেল, রুবেল খন্দকার, বেলাল খান, জাহেদ পারভেজ পাভেল এই জুয়েলার্সের উদ্বোধন উপলক্ষে দুবাই যাচ্ছেন বলে তারাও ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন। একই রকম ভিডিওবার্তায় আলোচিত কনটেন্ট নির্মাতা হিরো আলম জানিয়েছেন, তিনিও একই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দুবাই যাবেন। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষে আরাভ খান তার দুবাইয়ের বাড়িতে নিজের মাজরা থেকে নিয়ে আসা মায়া হরিণ জবাই করে শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়মিত দাওয়াত খাওয়াচ্ছেন। এ নিয়ে তিনি নিয়মিত ফেসবুক লাইভও করছেন।


সাকিব গতকালই (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৪০ মিনিটে এমিরেটসের ফ্লাইটে দুবাইয়ের পথে পাড়ি জমান। কিন্তু এতটা পথ তিনি উড়ে গেলেন কার ডাকে? সাকিব ভালো করে জানেন তো সেটা? এ প্রশ্ন ওঠার পেছনে যথেষ্ট সঙ্গত কারণ রয়েছে।

সবার ভাবতে হয়তো ভালো লাগবে, একজন বাঙালি কীভাবে দুবাইয়ে এত বড় একটি জুয়েলারি শপ গড়ে তুলেছেন! যেটির উদ্বোধনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেটারসহ বিভিন্ন অঙ্গনের একঝাঁক তারকা উপস্থিত থাকছেন। দৃষ্টিনন্দন একটি বাড়িতে বাংলাদেশি জুয়েলারি ব্যবসায়ীদেরও ভিড় জমে যাবে। কিন্তু এই আলো ঝলমলে পর্দার আড়ালে লুকানো রয়েছে অন্ধকারের এক অজানা কাহিনি।

আরাভ খানের জুয়েলারি শপের উদ্বোধনের একটি প্রতিবেদন দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইনে গত ১১ মার্চ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে তাকে একসময়ের চলচ্চিত্র অভিনেতা বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু কয়েকজন চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ নামে কোনো অভিনেতাকে চেনেন না বলে জানান। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা ওই প্রতিষ্ঠান নিয়ে দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরাভ খানের বক্তব্য প্রচার করে, যেখানে তাকে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী উল্লেখ করা হয়। যেখানে আরাভ জুয়েলার্সের লোগোটি ৪১ কোটি টাকারও বেশি খরচ করে ৬০ কেজি স্বর্ণ দিয়ে বানানো হয়েছে বলে জানানো হয়। যেখানে আরাভ খান বলেছেন, ‘আমরাও ইন্ডিয়া থেকে কম না। এটা যাতে আমরা দেখাতে পারি… ইনশা আল্লাহ। আমি সেই সব থিঙ্কিং নিয়ে বাংলাদেশের জন্য এটা করেছি।

কিন্তু খটকা দেখা দেয় তার ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা কিছু পোস্টে। একটি পোস্টে আরাভ খান একটি বাড়ি দেখিয়ে বলছেন, ‘এটি গ্রামের বাড়ি, কিন্তু গোপালগঞ্জ নয়।’ একটি বিএমডব্লিউ মোটরসাইকেল নিয়ে মাছ কিনতে যাওয়ার ভিডিও শেয়ার করেছেন। রাস্তার ট্যাক্সিক্যাব, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাক ও সবশেষ বাজার দেখে বোঝা গেল এটি কলকাতার কোথাও। এতে সন্দেহ জাগে- কে এই আরাভ খান? কী তার আসল পরিচয়?
এই আরাভ খানকে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। এতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, আরাভ খান নামের মানুষটি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। তার বাবার নাম মতিউর রহমান মোল্লা। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মো. মামুন এমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি এই আরাভ খান। ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি দুবাইয়ে কয়েক বছর অবস্থান করছেন। তার পাসপোর্ট নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। শুধু আরাভ খানই নন, তার স্ত্রী সাজেমা নাসরিন এবং কথিত বাবা-মায়ের পাসপোর্টও ভারতীয়।

আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্টের তথ্য বলছে, তার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুর। কথিত বাবা জাকির খানের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে কন্দর্পপুর, রাজপুর সোনারপুর (এম), গড়িয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। কিন্তু সেখানে খোঁজ লাগিয়ে তার কোনো হদিস মেলেনি। এলাকার অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেও তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের বক্তব্য- এ নামে কাউকে তারা এলাকায় দেখেননি। ছবি দেখানোর পর প্রতিবেশীরাও চিনতে পারেননি।

পুলিশ সূত্র বলছে, ২০১৮ সালে মামুন এমরান খানকে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরে বনের ভেতরে ফেলে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয়। এ মামলার ৬ নম্বর আসামি হলেন রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। ওই সময় থেকেই তিনি পলাতক। পরে জানা যায়, যোগসাজশের মাধ্যমে প্রকৃত আসামি রবিউলের পরিবর্তে জেলে গেছেন চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার আইনপুর গ্রামের নুরুজ্জামানের ছেলে আবু ইউসুফ লিমন। একাধিক গণমাধ্যমে ওই খবরও প্রচার হয়। ক্রিকেট খেলার স্বপ্নে বিভোর লিমন জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার প্রলোভনে রবিউলের পরিবর্তে হত্যা মামলার হাজিরা দিতে আদালতে যান। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার নথি অনুযায়ী, রবিউল ইসলামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামে। বাবা মতিউর রহমান মোল্লা এবং মা লাকি বেগম। পুলিশের তদন্তেও এর সত্যতা মেলে। ওই তদন্তে বলা হয়, প্রকৃত আসামি রবিউলের সঙ্গে যোগসাজশে আবু ইউসুফ লিমন নিজেকে আসামি পরিচয় দিয়ে আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করে অপরাধ করেছেন। এটি প্রতারণা। এরপর লিমনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করা হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (খিলগাঁও জোনাল টিম) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার শাহিদুর রহমান বলেন, রবিউল দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বাড়িতে আসে না। শুনেছি সে এখন দুবাই থাকে, এখন সেখানে স্বর্ণের ব্যবসা করে। তার বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের মামলা রয়েছে। শুনেছি কয়েকদিন আগে তার মা-বাবাকে দুবাই নিয়ে গেছে। অনেক টাকা-পয়সার মালিক হলেও গ্রামের বাড়িতে কোনো বাড়িঘর তৈরি করেনি। ওর দুটি বোন আছে। তাদের বাগেরহাটের মোল্লাহাটে বিয়ে হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার এক প্রতিবেশী জানান, রবিউলের বাবা মাছ বিক্রি করতেন। তা দিয়ে সংসার চলত। সেই রবিউল কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন তা তাদের জানা নেই।

এদিকে দুবাইয়ের অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস। তিনি এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে জানতে চাইলে তিনি ফোনে বলেন, আরাভ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা তেমন নেই। তবে কয়েক বছর ধরে শোবিজ অঙ্গনে ঘোরাঘুরির কারণে তার সঙ্গে পরিচয়। সম্প্রতি দুবাই থেকে আরাভ খানের ম্যানেজার পরিচয়ে একজন ফোন করে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনার প্রস্তাব দেন। বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান উপস্থাপনার কারণে তার প্রস্তাবটি গ্রহণ করি। এরপর জানতে পারলাম সাকিব আল হাসানও অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। তখন তাদের নিশ্চিত করি যে, অনুষ্ঠানটি আমি উপস্থাপনা করব। কারণ সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক তারকা। তিনি থাকা মানে কোনো সমস্যা নেই। এরপর সাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করলে জানান, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা শেষে তিনি ১৫ মার্চ দুবাই যাবেন।

আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের এ আয়োজন নিয়ে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। দুবাইয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিউ গোল্ড সুক এলাকায় আরাভ জুয়েলার্স যে সাজসজ্জা ও আয়তন নিয়ে চালু হচ্ছে, তাতে বড় অঙ্কের অর্থের বিনিয়োগ হয়েছে। দুবাইয়ে এর আগে এত বড় আয়োজন করে কোনো বাংলাদেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন হয়নি। সে কারণে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা নিয়ে বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে বেশ কৌতূহল ও আলোচনা রয়েছে।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম