বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছে: আসিফ নজরুল

ডেস্ক রির্পোট:

বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, বরং অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা চেয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ নজরুল এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষাৎ করে তাঁর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন থেকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। সে সঙ্গে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দলঘনিষ্ঠদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলেছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, উনারা (বিএনপি) চেয়েছে ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তী) সরকার, যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো ভূমিকা পালন করে। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। তো আমরা উনাদের বলেছি, আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকাই পালন করছি। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা এমনকি এ অ্যাসিওরেন্স (নিশ্চয়তা) দিয়েছেন যে এখন জনপ্রশাসন বা অন্য কোনো জায়গায় বড় বড় বদলির ব্যাপারটা উনি নিজে দেখবেন। তো বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, এটা বলেনি। বলেছে, ইন্টেরিম সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো রোল (ভূমিকা) পালন করতে হবে।

নির্বাচনকালীন সরকার পরিবর্তন হবে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, না। এ ধরণের কোনো কিছু আলোচনা হয়নি। এটা উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনার বিষয়। নির্বাচনকালীন সরকার ছোট হবে, না কেমন হবে, এ ধরনের কোনো দাবিও কোনো মহল থেকে উত্থাপিত হয়নি।

উপদেষ্টাদের মধ্যে দলীয় কেউ থাকলে তাঁদের উপদেষ্টা পরিষদে না রাখার বিষয়ে বলেছে বিএনপি। এ বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, এটা তারা এর আগেও বলেছে। এ নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল আরও বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে সব দলই অভিযোগ করে, এক দল বলে ওই দলের লোক আছে, আরেক দল বলে ওই দলের লোক আছে। যেহেতু সব দলই অভিযোগ করে, অন্য দলের লোক আছে। তার মানে হচ্ছে আমরা নিরপেক্ষভাবেই দায়িত্ব পালন করছি।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতিবাচক ভূমিকায় অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে সেনাবাহিনী সহযোগিতা করেছে উল্লেখ করে তাদের এই কাজের প্রশংসা করেন আসিফ নজরুল।

আইন উপদেষ্টা বলেন, বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে সেনাসদস্যদের যেভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে নিয়ে আসা হয়েছে, এ কাজে সেনাপ্রশাসন, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সেনাপ্রধান যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, সেটি অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। আইনের শাসনের প্রতি তাঁরা যে শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছেন, এটি ইতিবাচক।

এই কর্মকর্তাদের সাবজেলে কেন রাখা হয়েছে বা কোথায় রাখা হবে, সেটি সম্পূর্ণভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভুক্ত বিষয় বলে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, যেটি প্রয়োজন ও যুক্তিযুক্ত, তাঁরা সেটিই করবেন।

আগামী নির্বাচন নিয়ে আস্থার অভাব আছে কি না, তা জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে আস্থার অভাব আছে কি না, তা জানা নেই। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে রকম অনৈক্য, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে যেভাবে বলে, সে কারণেই হয়তো এই আস্থার অভাব দেখা দিতে পারে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাস্তব অগ্রগতি দেখা গেলে এসব সংশয় দূর হবে।

জাতির অনেক অর্জনের মধ্যে জুলাই বিপ্লব একটি অর্জন: রিজভী

ডেস্ক রিপোর্ট:

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও যোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদা দিতে চাই। এই জুলাই আগস্টেই তাদেরকে সম্মান দিতে হবে।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা সভা ও বিশেষ অনুষ্ঠানের ভেন্যু পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির সদস্য সচিব ও গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রশিদ হাবিব, ড. মাহদী আমিন, ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, ফারজানা শারমিন পুতুল প্রমুখ।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা ১ জুলাইকে কেন্দ্র করে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমরা যথাযথভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাই। যাদের সন্তানেরা গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য দুনিয়া থেকে চলে গেছেন তাদেরকে বিশেষ সম্মান জানাতে হবে। সেই প্রত্যয় নিয়ে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জুলাই আন্দোলনে সারাদেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

তিনি বলেন, আমার জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবস পালনের লক্ষ্যে প্রথম কর্মসূচি পালনের জন্য ভেন্যু পরিদর্শন করেছি। এই কমিটির উদ্যোগে ভেন্যু পরিদর্শন করলাম। যাতে অনুষ্ঠান ভাবগাম্ভীর্য সহকারে পালন করতে পারি। অতিথিরা ও শহিদ পরিবারের সদস্যরা যাতে সুন্দরভাবে বসতে পারে। অনুষ্ঠান যাতে সার্থক হয়।

রিজভী বলেন, জাতির অনেক অর্জনের মধ্যে জুলাই বিপ্লব একটি অর্জন। আমরা প্রথম বর্ষপূর্তি পালন করতে যাচ্ছি। আমরা এমন একটা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি। যে স্বপ্ন সাধারণ মানুষ দেখে। সকলে নিরাপদ জীবন আমরা প্রত্যাশা করি।

তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি ও সামাজিক সংকট রয়েছে। মব কালচার আছে। এসব থেকে মুক্ত হতে হবে। গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে। গত বছরেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.২। এবার সেটি হয়েছে ৩.৯। আমরা সরকারকে সেটি দেখার জন্য বলব। আমরা তো সমালোচনা করবোই। অবশ্যই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি নির্বাচন কমিশন দ্রুত একটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।

তিনি আরও বলেন, বিগত অগণতান্ত্রিক সরকার দেশের অর্থ লোপাট করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। যার অন্যতম নির্বাচন কমিশন ও মিডিয়া। তারা কখনো প্রকৃত গণতন্ত্র চায়নি। জনগণ মনে করে ড. ইউনূস দেশবাসীর মনের প্রত্যাশা মোতাবেক ব্যবস্থা নেবেন।

শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, জুলাই বিপ্লবকে স্মরণীয় করে রাখতে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমাদের দাবি ও প্রত্যাশা খুব শিগগিরই শেখ হাসিনার বিচার কাজ দৃশ্যমান হবে। জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হবে। আমরা বিশ্বাস করি এই নির্বাচনে জনগণের দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জয়লাভ করবে এবং জনগণের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবে।

তিনি বলেন , আমরা শহীদ ও আহত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি এবং করছি। আমরা মনে করি একটি কমিশন বা সংস্থার মাধ্যমে শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়াবো। আমাদের এ ধরনের কাজ অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য যে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন উপলক্ষে ১ জুলাই সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম