বিভিন্ন জেলায় টেকনো, ইনফিনিক্স স্মার্টফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক॥

বাংলাদেশে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ট্র্যান্সশন হোল্ডিংস-এর মালিকানাধীন টেকনো, ইনফিনিক্স ও আইটেল ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ফোন নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় এই ব্র্যান্ডগুলোর স্মার্টফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরণ, দগ্ধ হওয়া এবং সফটওয়্যার সমস্যা অনেকাংশে বেড়েছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এমন স্মার্টফোকে চলন্ত “টাইম বোমা”র সাথে তুলনা করেছেন!

ব্যবহারকারিদের অভিযোগ, তিনটি ব্র্যান্ডেরই বিভিন্ন মডেলের ফোনগুলো ছয় মাসের মধ্যে “ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হওয়া, দ্রুত ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়া, সফটওয়্যার ও চার্জিং সমস্যা” দেখা দিচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা কোন কারন ছাড়াই ব্যাটারি বিস্ফোরণ ঘটছে।

সবশেষ গত ১৬ অক্টোবর কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ‘টেকনো ব্র্যান্ডের স্পার্ক ৪০ প্রো মডেলের একটি স্মার্টফোন বিস্ফোরণ হয়ে পলাশ ইসলাম নামে এক যুবক গুরুতর আহত হয়। ভুক্তভোগী গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছে, তারা ব্যক্তিগত কাজে স্থানীয় ভোগডাঙ্গা যাচ্ছিলেন। চলন্ত অবস্থায় তার পকেটে থাকা ‘টেকনো স্পার্ক ফোরটি প্রো’ মডেলের মোবাইল ফোনটি হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে গরম হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই হঠাৎ বিকট শব্দে ফোনটি বিস্ফোরিত হয়।এই ঘটনায় পলাশ ইসলামের গায়ে আগুনের ছিটে লাগলে তার উরুতে আঘাত ও দগ্ধ হয়। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে, টেকনো ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে তাকে আর্থিক সহায়তা করা হয়। এবং বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য বলা হয়।

এই ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ভোলায় তানভীর হোসেন নামের এক যুবকের প্যান্টের পকেটে একই কোম্পানির মালিকানাধীন ‘ইনফিনিক্স হট ফিফটি প্রো প্লাস’ স্মার্টফোন বিস্ফোরণ ঘটে। তিনি মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন। বিস্ফোরনের সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে ওই যুবকের শরীরের অনেকাংশ পুড়ে যায়।

এর আগে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ শহরের ড. তারিকুল আলম নামে এক চিকিৎসকের চার্জে থাকা মোবাইল ফোন বিস্ফোরিত হয়ে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়। পরবর্তীতে তিনি হাসপাতালে মারা যান। এই ঘটনায়ও টেকনো ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনের নাম উঠে আসে।অভিযোগের বিষয়ে কোম্পানীটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিজওয়ানুল হকের সাথে বাংলা অ্যাফেয়ার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মধ্যবিত্ত ও তরুন ক্রেতাদের টার্গেট করে ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের বাজারে যাত্রা শুরু করে ট্র্যান্সশন বাংলাদেশ লিমিটেড। ভিন্ন ভিন্ন নামে তারা তিনটি ব্র্যান্ডই তারা বাজারজাত করছে।

প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কোম্পানীর মোবাইলগুলোর ব্যাটারিতে নিম্নমানের লিথিয়াম-আয়ন সেল ব্যবহারের কারনে দ্রুত গরম হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটছে। জানা যায়, ট্র্যান্সশন হোল্ডিংস মূলত আফ্রিকার বাজার টার্গেট করে বাজারে নামে। কম দামে নতুন নতুন অনেক ফিচার থাকায় দ্রুত এটি দেশটির বাজার দখল করে নেয়। এরপর তারা নাইজেরিয়া, ঘানা, কেনিয়া এবং ইথিওপিয়ায় নিজেদের বাজার সম্প্রসারণ করেন। পরবর্তীতে দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালেও ট্র্যান্সশন তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করে।

জানা যায়, ভারতের বাজারে প্রতারণার অভিযোগে গত বছরের জুলাই মাসে এই কোম্পানীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এছাড়া আফ্রিকায় বিক্রি হওয়া ৫৩ হাজার ফোনে আগে থেকে ইনস্টল করা ক্ষতিকারক সফটওয়্যারের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এই ঘটনায়ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ম্যালওয়্যারযুক্ত ফোনগুলো আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে, যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা, ঘানা, ইথিওপিয়া, মিশর ও ক্যামেরুন-এ বিক্রি হয়েছে। ফোনগুলো মূলত নিম্নআয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। এই অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে থাকা ট্রিয়াডা ম্যালওয়্যার ‘এক্স হেল্পার’ নামে একটি ক্ষতিকারক কোড ইনস্টল করেছিল। এই কোড সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস খুঁজে বের করে ব্যবহারকারীর অজান্তে প্রতারণামূলক অনুরোধ পাঠাত। যদি অনুরোধ সফল হতো, তবে সাবস্ক্রিপশন সার্ভিস প্রিপেইড এয়ারটাইম ব্যবহার করত।

সেনাপ্রধানের বক্তব্য বিকৃতি ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর বিবৃতি

স্টাফ রিপোর্টার॥
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের একটি বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এটি উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সোমবার (০৬ অক্টোবর) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান কার্যক্রমে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কার্যকলাপ আরও উন্নত ও গতিশীল করার উপায় সন্ধানে আয়োজিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনা (স্টাডি পিরিয়ড) অনুষ্ঠানে সেনা সদস্যদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মোতায়েন এবং এর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জসমূহ উপস্থাপিত হয়। ওই আলোচনায় বর্তমানে সেনাবাহিনীকে প্রদত্ত ‘ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা’ আরোপের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন দিক আলোকপাত করা হয়। আইনগত, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে মাঠে নিয়োজিত সেনাদল কর্তৃক প্রযোজ্য আইনের ধারা সঠিকভাবে অনুধাবন করে পেশাদারত্ব ও দক্ষতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব সঠিক ও সুচারুরূপে পালনে সক্ষম করাই ছিল এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।

আইএসপিআর জানিয়েছে, অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে In Aid to Civil Power এ মাঠে নিয়োজিত সেনা সদস্যদের CrPc ১৩২ এ প্রদত্ত দায়মুক্তি (Indemnity) এর বিষয়ে কথা উঠে এবং সেনাপ্রধান আলোচনার অংশ হিসেবে CrPc ১৩২ এ প্রদত্ত দায়মুক্তি (Indemnity) এবং International Crimes (Tribunals) Act, 1973 (সংশোধিত ২০২৪) এর সাথে এর সাংঘর্ষিক অবস্থান সম্পর্কে আলোকপাত করেন। CrPc-এর অধীনে সরকারি আদেশে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী সেনাসদস্যরা প্রদত্ত আইনি বিধান অনুসারে বেআইনি জনসমাগম ছত্রভঙ্গ করেন। অতএব, দায়িত্বরত এই সেনাসদস্যদের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিষয়টি ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আলোচনার কোনো পর্যায়েই সেনাপ্রধান গুম-খুন বা অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত কাউকে দায়মুক্তি (Indemnity) দেওয়ার বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করেন নাই। কিন্তু একটি চিহ্নিত কুচক্রী মহল বিশেষ করে বিদেশে অবস্থানরত কিছু ব্যক্তি অসৎ ও হীন উদ্দেশ্যে বরাবরের মতো এবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্টাডি পিরিয়ডের বিষয়বস্তু ও সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে তারা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা সংবিধান, রাষ্ট্রের আইন ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে পেশাদারিত্ব ও শৃঙ্খলার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে। একটি অসাধু ও কুচক্রী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্য বিকৃত করে যে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে, তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন।

বিজ্ঞপ্তিতে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্যের প্রতি সতর্ক থাকার জন্য জনসাধারণকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম