কঠিন সময়ের বিষয়ে ফের সতর্ক করলেন তারেক রহমান

ডেস্ক রিপোর্টঃ

বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও নিজের অবস্থান তুলে ধরে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের আবেগ আপ্লুত করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার আবেগঘন বক্তব্যে পিনপতন নীরবতায় অনেক নেতা যেমন কাদলেন, তেমনি দলের প্রয়োজনে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারেও অঙ্গীকার করেন।  তারেক রহমান বলেন, ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দল মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ না করলে সামনে আরও কঠিন সময় আসবে। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করলে প্রতিপক্ষ সুযোগ পাবে।

দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বিকেলে দলের চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আলাদাভাবে পাঁচ বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানান, তার মায়ের মতো তিনিও এই দলকে নিজ সন্তানের মতো করে ভালোবাসেন। এ দলই তার ঠিকানা। তার আবেগতাড়িত এই বক্তব্যে অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা বলেন, তারেক রহমানের এই বক্তব্যের পর যদি মনোনয়ন নাও পান, তাহলেও দলের জন্য কাজ করে যাবেন। তাদের কোনো আফসোস থাকবে না। 

পাঁচ বিভাগের ৯ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে সমকালের কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন সামনে রেখে যে ষড়যন্ত্র চলছে, এ পরিস্থিতিতে ভুলত্রুটি না করার জন্য নেতাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান। ঐক্যবদ্ধভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধানের শীষের পক্ষে সব নেতাকে কাজ করার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া যারা মনোনয়ন পাবেন, তাদের আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ থেকে ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নির্দেশনা দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ২০০ থেকে ২৫০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। সভায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এক আসনে একজন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। সবাই মনোনয়ন পাবেন না। যারা মনোনয়ন পাবেন না, তাদের দল বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করবে।  সভায় শুধু তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বক্তব্য দেন। বিকেল ৫টা থেকে সিলেট ও খুলনা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ সভায় সিলেট বিভাগে মনোনয়নপ্রত্যাশী ৬৬ জন উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি আসনে ১৬ জন, সিলেটের ছয়টি আসনে ২৬ জন, হবিগঞ্জের চারটি আসনে ১৬ জন এবং মৌলভীবাজারের চারটি আসনে আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত সিলেট ও খুলনা বিভাগের সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, সভায় তারেক রহমান নেতাদের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের স্বার্থে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। বলেছেন, মনোনয়ন পাওয়ার পরে কোনো মিছিল, মিষ্টি বিতরণ, ফুল বিতরণ করা যাবে না। এগুলো করলে দলের ঐক্য বিনষ্ট হবে। সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ বলেন, সভায় বলা হয়েছে, দল একজনকে মনোনয়ন দেবে। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। সবাইকে নিয়েই কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

খুলনা-৪ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী পারভেজ মল্লিক বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। আর যে ষড়যন্ত্র চলছে, এজন্য সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। সুনামগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী মাহবুবুর রহমান জানান, দল ত্যাগী, পরিশ্রমী ও পরিচ্ছন্নদের মনোনয়ন দেবে। সেই হিসেবে তিনি সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এই আসনটি তারেক রহমানকে উপহার দিতে পারবেন।

এর আগে বিকেল ৪টা থেকে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগের ১০০ মনোনয়নপ্রত্যাশী উপস্থিত ছিলেন। বরিশাল বিভাগের ৭০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী উপস্থিত ছিলেন।  রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম বলেন, সভায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন যে নেতাকেই দেওয়া হোক না কেন, ধানের শীষকে জেতাতে হবে।  বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্য ধরে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।

বিমানবন্দরে আখতার-জারার সংবাদ সম্মেলন বর্জন সাংবাদিকদের

বিমানবন্দরে আখতার-জারার সংবাদ সম্মেলন বর্জন সাংবাদিকদের

ডেস্ক রিপোর্ট:

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এর জেরে তারা যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ঢাকায় ফেরা এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার সংবাদ সম্মেলন বর্জন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিমানবন্দরের ভিআইপি ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছিলেন। নয় দিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ঢাকায় ফেরেন প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীরা।

এ সফরে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সদস্য মোহাম্মদ নকিবুর রহমান এবং এনসিপির আখতার ও জারা। তারা বিমানবন্দরে ভিআইপি ফটকের সামনে যাওয়ার আগেই দুর্ব্যবহারের ঘটনাটি ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানান, ওই নেতারা বের হওয়ার আগে ভিআইপি ফটকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন হুমায়ুন কবির। এ সময় আখতার ও জারাকে স্বাগত জানাতে পাশেই ফুল নিয়ে অবস্থান এবং স্লোগান দিতে থাকেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। এতে হুমায়ুনের কথা শুনতে সাংবাদিকদের সমস্যা হচ্ছিল। তাই তাদের উচ্চস্বরে স্লোগান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন এক সাংবাদিক। তখন দলটির কিছু নেতাকর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। একে কেন্দ্র করে সাংবাদিকরা বিমানবন্দরে আখতার ও জারার সংবাদ সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেন।

এ বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও মিডিয়া সেলের সদস্য খান মুহাম্মদ মুরসালীন এক বিবৃতিতে জানান, আখতার ও জারা দেশে ফেরার পর বৈশ্বিক নেতৃত্বের জায়গায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা, অর্জন ও চ্যালেঞ্জগুলোই মূলত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরার কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে এনসিপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে, যা একই সঙ্গে দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।

মুরসালীন বলেন, এ ঘটনায় আখতারসহ দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ও যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি এনসিপির পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম