চেয়ারম্যানের ছায়ায় বেপরোয়া বিআইডব্লিউটিএ‘র তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি পান্না বিশ্বাস!

 

বিশেষ প্রতিবেদকঃ
একজন তুতীয় শ্রেণির কর্মচারিকে সাথে নিয়ে একটি সংস্থার প্রধান (এ গ্রেড পদমর্যাদার কর্মকর্তা) কি তার দপ্তরের মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করতে যেতে পারেন? সরকারি চাকুরী শৃংক্ষলা বিধি কি বলে? অথচ: এই কাজটিই করেছেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম মো: সাদেক। কেন তিনি তার দপ্তরের স্টাফ অফিসার,পিএ বা পিএসকে বাদ দিয়ে একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারিকে এতো প্রাধান্য দিলেন তার নেপথ্যে কাহিনী অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে অনেক রহস্য। সে রহস্য ভেদ করার আগে এই মহা ক্ষমতা ধর তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির আমলনামা একবার অবলোকন করা যাক।
বিআইডব্লিউটিএ’র তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি ও সিবিএ নেতা পান্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সীমাহীন,অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবিস্বাস্য দাদাগিরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কর্মক্ষেত্রেই নয়, চাকুরী বিধি লঙ্গন করে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন বলে তথ্য প্রমান রয়েছে। আর এসবের আড়ালে থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরন, সহকর্মীদের মারধর পূর্বক জেলখাটাসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। আর এসব অপকর্মের ছায়া দিচ্ছেন সয়ং চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম মো: সাদেক। ফলে আতংকে আছেন বিআইডব্লিউটিএর কয়েকশত কর্মকর্তা ও কর্মচারি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পান্না বিশ্বাস বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিউটিএ’র হিসাব বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারি ও অত্র দপ্তরের সিবিএ নেতা। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিকলীগের কার্যকরী সভাপতি। গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার লরেন্দা গ্রামে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ নেতাদের সহযোগিতায় বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান কার্যালয়কে অপরাধ ও দুর্নীতি আখড়ায় পরিনত করে রেখেছেন। নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, বিদেশে টাকা পাচার ও সম্পদ পাড়ার গড়ে তোলা, মাদক গ্রহণ, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে খারাপ আচরণ, সহকর্মীদের মারধর, জেলখাটাসহ এহেন অপরাধ নেই যে তার বিরুদ্ধে নেই। দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিএ’র সুনাম ক্ষুন্নকারী এই দুর্নীতিপরায়ণ কর্মচারী পান্নার অপকর্ম ও দুর্নীতির কিছু তথ্য হাতে এসছে আমাদের ।
পান্না বিশ্বাস ২০১২ সালে বিআইডব্লিউটিএতে হিসাব বিভাগে সহকারী পদে যোগদান করেন। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার লরেন্দা গ্রামে। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ হলেও সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর প্রভাব দেখানোর জন্য মাদারীপুরের বাসিন্দা পরিচয় দিতেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়ে পান্না বিশ্বাস কর্মজীবন শুরু করে। পান্নার বর্তমানে সর্বসাকুল্যে বেতন ২২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি রাজধানীর টিকাটুলীর হুমায়ুন কমপ্লেক্সের পাশের লেনে যে ভাড়া বাসায় থাকেন তার মাসিক ভাড়া ৩৫ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচ মিলে মাসে তার সংসারে ব্যয় কমপক্ষে এক লাখ টাকা। এ থেকে বোঝা যায় কোন পথের আয়ে তার সংসার চলে।
পান্না বিশ্বাসের অবৈধ উপার্জনের টাকা নিজের নামে না রেখে স্ত্রী, শাশুড়ি, ভারতের নাগরিক ভাইয়ের একাউন্টে রেখেছেন। তাদের নামে ব্যাংকে ডিপিএস, এফডিআর করে রেখেছন দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা। ভারতেও তার সম্পদ আছে বলে জানা গেছে। কলকাতায় বাড়ি কিনেছেন। এছাড়া নিয়মিত টাকা পাচার করছেন ভারতে। তার ভাই রাহুল দেব বিশ্বাস ভারতের নাগরিক। তার আরেক ভাইয়ের স্ত্রীর নাম তাপসী বিশ্বাস, যিনি নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করেন। তার মাধ্যমেই মূলত অর্থ পাচার করে থাকেন পান্না বিশ্বাস।
এছাড়া শাশুড়ির নামে রাজধানীর পুরান ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছে পানা বিশ্বাস। গাড়ীও কেনা আছে শাশুড়ির নামে। মাদারীপুরে বোনের নামে বাড়ি কেনা আছে পান্না বিশ্বাসের। গোপালগঞ্জ মকসুদপুরে আলিশান বাড়ি করেছেন। এছাড়া একাধিক জমি ক্রয় করা আছে তার। চাঁদাবাজির পাহাড় সম অপরাধ পান্না বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। প্রতিমাসে সদরঘাট, চাদঁপুর, আরিচা, বরিশাল ঘাট থেকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় পান্না বিশ্বাসকে। এছাড়া বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তানিয়া এন্টার প্রাইজ, দিপিকা ইঞ্জিনিয়ারিং, চায়না ট্রেডিংসসহ বেনামে আরো কিছু ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন পান্না বিশ্বাস। ক্ষমতাসীনদের ভুল বুঝিয়ে টেন্ডারবাজির মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান কাজ আদায় করে। কিন্তু কাজ বাস্তবায়নে এখান থেকেও হাতিয়ে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বিআইডব্লিউটিএ’র সাইনবোর্ড ডিজিটালকরণের ২৫ লাখ টাকা রাসেল এন্টার প্রাইজের নামে বরাদ্দ নেয়া হয়, এটি মূলত পান্না বিশ্বাসের প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ খনন ও ক্যাপিটাল ড্রেজিং নামক ২টি প্রকল্প হতে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় পান্না বিশ্বাস।
রাজধানীতে রফিক ঠিকাদার নামে এক যুবদল নেতার বাড়িতে নিয়মিত মাদকের আডডায় নিয়মিত যোগদান করে পান্না বিশ্বাস। মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান কার্যালয়ে একটি কক্ষ অবৈধভাবে ব্যবহার করতেন পান্না বিশ্বাস। কারোর তোয়াক্কা না করে সেখানে বহিরাগতদের নিয়ে নিয়মিত মাদকের আসর বসাতেন। একপর্যায়ে অন্যান্য কর্মকর্তারা অতিষ্ঠ হয়ে তাকে সেখান থেকে বের করে দেয়।
সরকার যেখানে প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেখানে পান্না বিশ্বাস নিয়োগ বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করে যাচ্ছে। বিআইড্িব্লউটিএতে নিয়োগ পাওয়া অনেকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন পান্না বিশ্বাস। এর মধ্যে রয়েছে নড়াইলের সুজন মোল্লা ও লস্কর অন্যতম। শুধু তাই নয়, আলামিন, লস্করকে মুক্তিযোদ্ধার জাল সনদ দিয়ে চাকরি দিয়েছন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করেছে। এছাড়া বেয়ারার পদে জুয়েল সরদার, শুল্ক প্রহরী পদে জয়দেব পাল, ট্রাফিক সুপারভাইজার পদে অনিমেষ বৈদ্য, দেবাশীষ মিত্র, বার্লিং সারেং পদে মো. আমিনুর রহমান, এমএলএস পদে মো. কুদ্দুস মোল্লা, সমীর গাঙ্গুলী, অমিত চাকমা, নিরপাত্তা প্রহরী পদে তুষার কান্তি ঘোষ, শঙ্কর বিশ্বাসকে ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছে পান্না বিশ্বাস।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত পান্না বিশ্বাস। ১১ দফা দাবি আদায়ে ২০ অক্টোবর-২০২০ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হয়। বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন আটটি সংগঠন এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। নৌপরিবহন মন্ত্রী এবং বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে ধর্মঘট দীর্ঘায়িত করতে ইন্ধন যোগায় পান্না বিশ্বাস। ধর্মঘটে সহযোগিতার পুরষ্কার হিসেবে সম্প্রতি তাকে নৌযান শ্রমিক লীগ নামে সদরঘাট কেন্দ্রীক ওই সংগঠনটির কার্যকরী সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে তাকে। একজন সরকারি কর্মচারি হয়ে এ ধরনের কোনে সংগঠনে থাকার বৈধতা তার নেই। এরপরও পান্না বিশ্বাস সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া সেই সংগঠনেই জড়িত।
চাকুরি জীবনের আগেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়ে মারধর, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজির সাথে জড়িত ছিলেন পান্না বিশ্বাস। অপকর্মের কারণে জেলও খেটেছেন। তার সেই অস্ত্রবাজি এখনো বহাল রয়েছে। এর আগে হিসাব বিভাগের রেকর্ড কিপার সঞ্জীব কুমার দাসকে মারধর করায় পান্না বিশ্বাসের নামে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাও হয়েছে (মামলা নং ১৫৯৭/২০১৭)। মামলায় চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই।
গত ৬ ডিসেম্বর সকালে ফুটিং শাখায় কর্মরত আব্দুর রাজ্জাক (ড্রাইভার-১) ও মনির চৌধুরী (মাস্টার-১) কে মারধর করে জখম করেন পান্না বিশ্বাস। এ ঘটনা এখনো তদন্ত করছে অফিস। গত ৩১ ডিসেম্বর-২০২০ বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের অফিস সহকারী দিদার হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন পান্না বিশ্বাস। সারাদেশ রাজস্ব কম আদায় হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জাহাজের পাইলট ও মার্কম্যানদের বদলির আদেশ দেয়া হয়। এসব পাইলট ও মার্কম্যানদের বদলি ঠেকাতে তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করে পান্না বিশ্বাস। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ও নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে পান্না বিশ্বাস। তার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে লেখালেখি হলেও এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এখনো বহাল তবিয়তে দেশবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত।
এত অপরাধ করার পরও তার বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএতে কথা বলার সাহস পায়না কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে এহেন অপরাধ নেই যে পান্না বিশ্বাস করছে না। বিআইডব্লিউটিএতে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে পান্না পান্না বিশ্বাস। এ অবস্থায় বিআইডব্লিউটিএ’র সুনাম রক্ষায় ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাঙলা পড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস পরিশ্রমে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এই পানা বিশ্বাসের ত্রাসের রাজত্ব বন্ধ করার দাবী তুলেছেন বিআইডব্লি¬উটিএর সাধারণ কর্মচারি ও কর্মকর্তারা। । পান্না বিশ্বাসের এই পাহাড়সম দুর্নীতি রুখতে পারে একমাত্র দুর্নীতি দমন করার কাজে নিয়োজিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠান দুদক।
এ বিষয়ে পান্না বিশ্বাস এ প্রতিবেদককে বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। ( আগামী কিস্তিতে পড়–ন: বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কেন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্নার কব্জায় ?)

বিটিভির জুলাই হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকাল ১ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ‘জুলাই গণহত্যায় বিটিভির কুশীলব’-দের একজনকেও গ্রেপ্তার, বরখাস্ত, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, বাধ্যতামূলক অবসর কিংবা সামান্যতম বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। বরং জুলাই গণহত্যায় প্রমাণিত বিটিভির অন্যতম কুশীলব উপ-মহাপরিচালক (বার্তা) ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ, প্রোগ্রাম ম্যানেজার [তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার (চলতি দায়িত্ব)] দুর্নীতির রানীক্ষ্যত মাহফুজা আক্তার, ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অর্থ যোগানদাতা সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (চলতি দায়িত্ব) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো: মনিরুল ইসলাম এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গঠিত প্রচার-প্রচারণা কমিটির প্রধান-নির্বাহী প্রযোজক (বার্তা) শামছুল আলমদের সুপরিকল্পিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে পূর্বের মত ফ্যাসিবাদী রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে দুর্নীতি, লুটপাট এবং তথ্য পাচারের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে হাসিনার আস্থাভাজনদের ভয়াল ছোবল থেকে যেন মুক্ত হচ্ছেই না দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন।
অন্যদিকে আওয়ামী আশীর্বাদপুষ্ট ও বিশেষ সুবিধাভোগী জুলাই আন্দোলনকালীন বিটিভির মহাপরিচালক দুর্নীতির রাজাক্ষ্যত ড. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধেও এখন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে বিটিভি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এরূপ রহস্যজনক ভূমিকায় শিল্পী, কলাকুশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গণহত্যায় আহত-নিহতদের পরিবারসহ জুলাই-আন্দোলনকারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ প্রেক্ষিতে ‘ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন’-এর নেতৃবৃন্দ সমমনা ৯ টি সংগঠনকে নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
আর তাই ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সমমনা ৯ টি সংগঠনকে নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো : মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায়- ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন এর সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার এর সভাপতিত্বে : বক্তব্য রাখেন – ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রধান ও দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন এর সভাপতি ও বিএনপি নেতা এম রফিকুল ইসলাম রিপন, মানবাধিকার সংগঠক ও ন্যাশনাল লেবার পার্টির দলীয় মুখপাত্র মো: শফিকুল ইসলাম। ডিইউজে সদস্য সাংবাদিক তাজুল ইসলাম।
এছাড়াও উপস্থিত থেকে সংহতি প্রকাশ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক নেতা ও বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকির হোসেন। ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন এর সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ স্বপ্নীল সরকার,। সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন আরিয়ান। সদস্য – সুহিল ইরফান কৌশিক, সদস্য ইমরান আহমেদ চৌধুরী, সদস্য শিহাব উদ্দীন সরকার, সদস্য তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।
মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার বলেন, যেখানে বিটিভিতে কর্মরত জুলাই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া কথা সেখানে আওয়ামী পুনর্বাসনে ব্যস্ত সময় পার করছেন এক সময়ে দুর্নীতির কারণে চাকুরিচ্যুত বর্তমান চুক্তিভিত্তিক মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র হত্যায় মিডিয়া কুশীলবদের অন্যতম উপ-মহাপরিচালক ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তার সহযোগী মুন্সী ফরিদুজ্জামানকে সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও উপকেন্দ্রে বদলি মাধ্যমে জুলাই হত্যার দায় শেষ করার ষড়যন্ত্রে মেতে রয়েছেন আওয়ামী সিন্ডিকেট। সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের টাকার উৎস সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিটিভির প্রকৌশলী মো: মনিরুল ইসলামও রয়েছেন বহাল তবিয়তে। আন্দোলনকালে ছাত্রদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারে সেসময় বিটিভিতে গঠিত কমিটির প্রধান শামছুল আলমকে উল্টো প্রমোশন দিয়ে বার্তা শাখার নির্বাহী প্রযোজক ও বেআইনী ভাবে প্রোগ্রাম ম্যানেজার বানানো হয়। শুধু তাই নয় প্রেস সচিবের নাম ভাঙিয়ে বিটিভির পক্ষ থেকে যুক্ত করা হয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। জুলাই আন্দোলনে বিটিভিতে হামলাকারী হিসেবে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনিসহ বিএনপি-জামায়েত নেতা ও আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মামলাকারী তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তারের বিরুদ্ধেও নেওয়া হয়নি শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা বরং বদলী করে তাকে বাঁচানোর চেষ্টায় মেতে আছে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা।
মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও তার আস্থাভাজন কর্মকর্তারা এখনো বিটিভিতে বহাল রয়েছেন। হাসিনাসম্যান দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ সাবেক সিনিয়র সচিব মো. মহসিনের প্রভাবে তার স্ত্রী তাসমিনা আহমেদ ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নাম ভাঙিয়ে বার্তা শাখার শামছুল আলম এখনো প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছেন পুরো বিটিভি জুড়ে। মহাপরিচালক উল্লিখিত হাসিনার আস্তাভাজনদের নিয়ে ইতোমধ্যে বার্তা বিভাগে ছাত্রলীগ কর্মীকে সংবাদ উপস্থাপিকা, বিশেষ ক্যাটাগরীর শিল্পীদের বাদ দিয়ে খ ও গ ক্যাটাগরির শিল্পীদের দিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান নির্মাণ, নতুন কুঁড়িকে বিতর্কিত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অনেক অভিযোগ রয়েছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেখানে জুলাই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে সেখানে বিটিভির ‘জুলাই গণহত্যায় বিটিভির কুশীলব’-দের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার রহস্য আমার জানতে চাই? আমরা বলতে চাই, জুলাই হত্যাকারী বিটিভির অন্যতম কুশীলব মাহফুজা, তাসমিনা, শামছুল, ইঞ্জি. মনিরুল এবং জাহাঙ্গীরদের ২/১ জনকে বদলি করে কিংবা তদন্তের নামে আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করবেন। আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে এদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো যা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জন্য শুভকর হবে না।
বক্তারা বলেন, বিটিভিতে কোনো সংস্কারই হয়েনি; এখনো পরীক্ষিত ফ্যাসিস্ট-দুর্নীতিবাজদের কাছেই পুরোটাই জিম্মি রয়েছে। বিশেষ করে বার্তা ও ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ‘দুর্নীতি ও ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেট’ এতটাই শক্তিশালী যে, দুর্নীতির উপযুক্ত প্রমাণ, কয়েকটি তদন্তের রিপোর্ট, প্রধান উপদেষ্টার লিখিত নির্দেশ, আইনি নোটিশ, বিশেষ অডিট রিপোর্ট এবং দেশ-বিদেশের শত-শত মিডিয় অপরাধের খবর প্রকাশের পরও মূলহোতাদের প্রায় সকলেই রয়েছেন বহাল তবিয়তে। প্রশ্ন উঠছে ডিজি মাহবুবুল আলম এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে।
বক্তারা আরো জানায়, ফ্যাসিস্ট সরকারের পুরো সময়ে উপ-মহাপরিচালক (বার্তা ও অনুষ্ঠান) ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ এবং নির্বাহী প্রযোজক (বার্তা) শামছুল আলম-এর নেতৃত্বে বিটিভির বার্তাকক্ষ ছিল আওয়ামী লীগের প্রচার সেল, নিউজ ও অনুষ্ঠানের পর্দা ছিলো শেখ মুজিব-শেখ হাসিনাময়। সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (চলতি দায়িত্ব) মো: মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রকল্প থেকে লুট হয়েছে শত শত কোটি টাকা এবং সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (চলতি দায়িত্ব)] মাহফুজা আক্তার ঢাকা ও সাবেক মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে অনিয়ম-দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতায় বিটিভি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে অথচ ৫ আগস্ট’২০২৪-এর পর ভোল পাল্টে তাসমিনা, শামছুল, ইঞ্জি. মনিরুল নতুন করে অনিয়ম-দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারে মেতে উঠেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ও যে তাসমিনা আহমেদ ও শামছুল আলমরা আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রী ও বিএনপি-জামাতকে জঙ্গি বানিয়ে বারংবার সংবাদ, অনুষ্ঠান, ফিলার প্রচার করতো, যারা দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বিটিভিতে ফ্যাসিবাদি রাজত্ব কায়েম করেছে তারাই অভ্যুত্থানের পরেও টেন্ডারবাজি, মানহীন সংবাদ পরিবেশনা, শিল্পী সম্মানী খাতে নিয়োগ-বাণিজ্য, অনিয়ম-দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারে মেতে উঠেছে! প্রকল্পের নামে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ধুমছে চলছে টেন্ডারবাজি, লুটপাট আর দুর্নীতির মহাউৎসব।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
জানানো যাচ্ছে অভিযোগ, থানায় বসলেই ভিডিওকলে হাজির এসপি প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে অত্যন্ত হতাশাজনক : মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দের মাঝে যে অনৈক্য কুমিরের দেখা মিলল রাজশাহীর পদ্মায় সরকার ও সেনাবাহিনী, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয় আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান