ফেসবুক কাভারে রাষ্ট্রপতির ছবি: বিআইডব্লিউটিএর তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্না বিশ্বাসের ক্ষমতার কারিশমা!

স্টাফ রিপোর্টারঃ

বিআইডব্লিউটিএর একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্না বিশ্বাস চাকুরি করেন হিসাব বিভাগের অফিস সহকারি পদে। সর্বসাকুল্যে বেতন পান ৩০/৩৫ হাজার .টাকা। লোন কাটারপর থাকে ২০/২২ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি থাকেন ৩০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ার অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটে। অফিস ডিউটি করেন নামে মাত্র। ২/৩ দিন পর পর একবার নিজ কর্মস্থলে এসে হাজিরা খাতায় সহি করেই চলে যান চেয়ারম্যান কমডোব গোলাম সাদেকের দপ্তরে । সেখানেই তিনি কর্মদিবসের বেশি সময় ব্যয় করেন।

রাষ্ট্রপতি,মন্ত্রী,এমপি ও শীর্ষ আ:লীগ নেতা ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের সাথে ছবি তুলে সেগুলো ফেসবুকে আপলোড করে নিজেকে মহাক্ষমতাধর হিসাবে প্রচার করেন। এবং কর্মকর্তা কর্মচারিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন এদের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আমার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। এমন কি চাকুরীও থাকবে না। দুদক এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কর্মকর্তাদের সাথে তার নাকি বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। অতএব হাজারটা অপকর্ম করলেও কেউ তার লোমটিও স্পর্শ করতে পারবে না।

গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরে তার বাড়ী বিধায় সেই দাপটে দাপিয়ে বেড়ান বিআইডব্লিউটিএর নীচতলা থেকে ওপরতলা পর্য়ন্ত। নিজেকে পরিচয় দেন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতা হিসাবে। ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা যায় তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, নৌযান শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরি সভাপতি,বঙ্গবন্ধু পরিষদের য়ুগ্ম সাংধারণ সম্পাদক। আর এসব পরিচয় ব্যবহার করে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের সাথে গড়ে তুলেছেন দহরম মহরম সম্পর্ক। ফলে চেয়ারম্যান এখন এই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির কথামত ফাইল ওয়ার্ক এমন কি নিয়োগ,বদলীও করছেন।
চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের সাথে পান্না বিশ^াসের এই ঘনিষ্ট সম্পর্ক নিয়ে এখন বিআইডব্লিউটিএ ভবনে নানা রসালো কথা চালাচালি হচ্ছে । প্রশ্ন উঠেছে যে, বিআইডব্লিউটিএতে এতো উচ্চ পদস্থ সুশিক্ষিত কর্মকর্তা,কর্মচারি থাকা সত্ত্বেও চেয়ারম্যান কেন একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিকে তার রক্ষাকবচ হিসাবে বেছে নিয়েছেন? এর নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানে জানাগেছে, গোপালগঞ্জের লোক হিসাবে পান্না বিশ্বাস আওয়ামী লীগের কিছু মন্ত্রী,এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতার বাসায় আসা যাওয়া করেন। তাদের সাথে চেয়ারমানের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। এবং চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের অনুমোদিত মামলা যাতে দায়ের না হয় এবং নৌবাহিনীর পদন্নোতি যাতে দ্রুত কার্যকর হয় সেই তদবীরের দায়িত্ব নিয়েছেন তুতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্না বিশ্বাস। যে কারণে চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক এখন পান্না নির্ভর হয়ে পড়েছেন। অফিসিয়াল কর্মকান্ডে যেখানেই যাচ্ছেন পান্না বিশ্বাসকে সঙ্গে নিচ্ছেন। চাকুরীর শৃংক্ষলাবিধি ভংগ করে একসাথে যৌথ ছবি তুলছেন আবার সেগুলো ফেসবুকে প্রচারও করছেন। এসব ছবি দেখে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা পান্না বিশ্বাসকেই চেয়ারম্যানের ডান হাত বলে মনে করছেন এবং তাকে সমীহ করে চলছেন। এমন কি নানা তদবীর নিয়েও পান্না বিশ্বাসের কছে ধর্ণা দিচ্ছেন।
এ দিকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্না বিশ্বাস নিজেকে ভি-ভিআইপি প্রমানের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদের সাথে কর্মদনের ছবি তার ফেসবুকের প্রোফাইল কভারে ব্যবহার করেছেন। এটা আইসিটি আইনের অপরাধজনক কাজ হলেও তিনি অবলীলায় সেটা করছেন।
অন্যদিকে বিআইডব্লিইটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক তার পদ পদবীর মর্যাদা অবমাননা করে একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির সাথে যৌথ ও গ্রুপ ছবি তুলে সেগুলো সোস্যাল মিডিয়ায় প্রদর্শন করে স্বীয় পদের অমর্যদা করেছেন যা একটি সরকার প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি শুধু ক্ষুন্নই করেনি চেইন অব কমান্ডেরও অশেষ ক্ষতি সাধন করেছে। শুধু কি তাই? তিনি নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সাথে তার অফিসে দেখা করতে গিয়েও তুতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্নাকে সাথে নিয়েছেন।
বিআইডব্লিউটিএতে অতীতে এমন কোন রেকর্ড নেই বলে মন্তব্য করেছেন অধিকাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারিবৃন্দ। তাদের প্রশ্ন: চেয়ারম্যান স্যার কেন একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির সাথে এ ধরনের “বন্ধু“ সুলভ সম্পর্ক গড়ে তুললেন? এতে যে প্রতিষ্ঠানটির চেইন অব কমান্ড ভেঙে গেল সেটি কি তিনি বুঝতে পারছেন না?

অভিযোগ উঠেছে যে, চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের সাথে একটি বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্না বিশ^াস কর্মচারি নিয়োগ বাণিজ্য,টেন্ডারে কমিশন বাণিজ্য,কর্মচারি বদলী বাণিজ্য করে গত ২বছরে কোটিপতি বনেগেছেন। এছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বার্ষিক পিকনিকেও কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন। এখন বিআইডব্লিউটিএতে তার একক আধিপত্য চলছে। এসব বিষয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় রিপোর্ট ছাপা হওয়ায় তিনি ওই সব পত্রিকায় সম্পাদক বরাবরে উকিল নোটিশ পাঠিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্ঠা করছেন।
আরো জানাগেছে, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্না বিশ^াসের নামে সুনির্দিষ্ট কিছু দুর্নীতির অভিযোগ দুদকে জমা পড়েছে। দুদকের যাচাই বাছাই কমিটির পরবর্তী সভায় সেটি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হবে বলে দুদকের একটি সুত্র জানিয়েছে। মাত্র ১০ বছর চাকুরী করে পান্না এখন প্রায় ১০ কোটি টাকার মালিক । তিনি এই টাকা কোন পথে অর্জন করলেন তা দুদকের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার দাবী তুলেছেন বিআইডব্লিউটিএর দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।
এ বিষয়ে পান্নার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব মিথ্যা অভিযোগ। ছবিগুলোর ব্যাপারে বলেন ,আমি রাজনীতি ও সিবিএ করি তাই এসব ছবি আমাদের বিভিন্ন কর্মসুচীতে তোলা। চেয়ারম্যানের সাথে তার কোন বিশেষ সম্পর্ক নেই বলেও তিনি দাবী করেন।
কথা বলার জন্য বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান গোলাম সাদেকের অফিসে ফোন করলে জানান হয়-স্যার সরকারী ট্যুরে ঢাকার বাইরে আছেন।

টিউলিপের মতো পদত্যাগে বাধ্য হতে পারেন পুতুলও: দ্য প্রিন্ট

বিশেষ প্রতিনিধি:

যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টিউলিপ সিদ্দিক। একই পথে হাঁটতে হতে পারে তার খালাতো বোন সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকেও। তাকে ছাড়তে হতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালকের পদ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদন সে কথাই বলছে। পত্রিকাটিতে একটি নিবন্ধ লিখেছেন কলকাতাভিত্তিক সাংবাদিক মনদ্বীপা ব্যানার্জি। প্রতিবেদনে তিনি বাইবেল থেকে একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন।

মনদ্বীপা বলেছেন, ‘বাবার পাপের দায় ছেলের ওপর পড়ে। তবে এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পাপের দায় পড়েছে তার বোনের মেয়ে টিউলিপের ওপর। যার কারণে টিউলিপ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এবার এই দায় পড়তে যাচ্ছে তার নিজ মেয়ে পুতুলের ওপর। যিনি ২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হয়েছিলেন।’

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপেই যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ বাগিয়ে নেন তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সে কারণে এবার পুতুলও চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছেন বলে দ্য প্রিন্টের ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন মনদ্বীপা ব্যানার্জি।

ওপার বাংলার এই সাংবাদিক স্বাস্থ্য বিষয়ক জার্নাল ল্যানসেটের ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের একটি সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ওই প্রতিবেদনে পুতুলের প্রার্থিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তারা অভিযোগ করেছিল, মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার যোগ্য না। অভিজ্ঞ ও যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে শুধু স্বজনপ্রীতির কারণে তিনি মনোনয়ন পান। এমন স্বজনপ্রীতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করবে।

এছাড়া ২০২৩ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসও পুতুলের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এতে বলা হয়, আঞ্চলিক পরিচালক পদের জন্য সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে আরেকজন প্রার্থী ছিলেন নেপালের শম্ভু আচার্য। তিনি ছিলেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যিনি ৩০ বছর যাবৎ সেখানে কাজ করছেন। এছাড়া জনস্বাস্থ্যের ওপর তার পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে।

অন্যদিকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ করতেন। তার বেশিরভাগ কাজ ছিল অটিজম নিয়ে। তিনি স্কুল সাইকোলজিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং একটি দাতব্য ও গবেষণা সংস্থা দেখাশোনা করেন। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় বড় বাজেট নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার নেই।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার আগে পুতুল তার মা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন সফরে যেতেন।

দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে যে, পুতুল কিভাবে চাকরি পেলেন। তার নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতে নাকি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মায়ের হস্তক্ষেপ। তাই সবার দৃষ্টি এখন পুতুলের দিকে। এখন দেখার বিষয় পুতুলও তার বোন টিউলিপের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে বাধ্য হন কিনা।’

২০২৩ সালের ১ নভেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান পুতুল। টিউলিপের পদত্যাগের পর থেকেই সবার নজর এখন তার দিকে।

এর আগে গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে টিউলিপের পদত্যাগের খবর প্রকাশ করে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এরপর নিজের এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন টিউলিপ।

শেখ রেহানা-কন্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বড়োসড়ো দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে লন্ডনে ফ্ল্যাট উপহার পাওয়া নিয়েও বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসেন।

এসব অভিযোগের জেরে টিউলিপকে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানায় প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল। এরপরই পদত্যাগ করেন টিউলিপ।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম