মোবাইলে ডেকে নিয়ে মারধর হত্যার হুমকি ও ছিনতাই

স্টাফ রিপোর্টার:

ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানা তাঁতীলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়দানকারী মাহাবুবুল আলম বাদশা ও তার সহযোগী কয়েকজনের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার বাসিন্দা কাজী জালালকে মোবাইল ফোণে ডেকে নিয়ে মারধর হত্যার হুমকি টাকা,স্বনের চেইন,মোবাই,মানিব্যাগসহ এনআইডি,ক্রেডিড কার্ড ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে।

গত ১৮/৮/২৩ ইং শুক্রবার রাত আনুমানিক ১০টায় যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার শহীদ ফারুক রোডে আল ইসলাম রেষ্টুরেন্টও মাহাবুবুল আলম বাদশার অফিসে টর্চার সেলে এঘটনা ঘটে।
অভিযুক্তরা হলেন,যাত্রাবাড়ী থানা শাখার তাঁতীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম বাদশা তার সহযোগী জয়,ল্যাড়া মনির,সুমন,টুকু,আউলিয়া,বেনু,রিপন,কালাম,বাবু,সিএনজি মনির সহ কয়েকজন।
ভুক্তভোগী কাজী জালাল যাত্রাবাড়ী থানা এলালায় বসবাস করেন।তিনি জানান,গত শুকবার আনুমানিক রাত ১০টায় বাসায় ফেরার পথে মাহাবুবুল আলম বাদশার নির্দেশে জয় ও ল্যাড়া মনির চা খাওয়ার কথা বলে শহীদ ফারুক রোডে আল ইসলাম রেস্টুরেন্টে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায়।সেখানে পূর্ব থেকেই ওতপেতে থাকা সুমন,টুকু,আউলিয়া, বেনু,রিপন,সালাম,বাবু,সিএনজি মনির সহ কয়েকজন বলে তুই বাদশার জুয়াড় বোর্ড র্যাব প্রশাসন দিয়ে বন্ধ করে আমাদের অনেক ক্ষতি করেছিস।আজ তোরে পাইছি একথা বলেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ,মারধর দিয়ে টেনে হিছরে বাদশার অফিস রুমে নিয়ে কেচিগেট লাগিয়ে টর্চার সেলে নিয়ে তাঁতীলীগের বাদশা মধ্যপান অবস্হায় সহযোগি সহ ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে কাজী জালালকে শরীরের বিভিন্ন স্হানে নিলাফুলা জখম করে এবং নগদ ত্রিশ হাজার টাকা,গলায় থাকা একটি স্বর্নের চেইন,দুটি মোবাইল ফোণ সিম সহ একটি রিয়েলমি নারজো২০ ও বেনকিউ বাটন সেট,মানিব্যাগ সহ এনআইডি, ক্রেডিড কার্ড,একটি হাত ঘড়ি কেড়ে নেন তাতীলীগের এই সাধারণ সম্পাদক ও তার সহযোগীরা।এছাড়া মাথা ও কানে মদের বোতল দিয়ে আঘাত করে হত্যার হুমকি দেন।
কাজী জালাল আরো বলেন,যাত্রাবাড়ী থানা শাখার তাঁতীলীগের মাহাবুবুল আলম বাদশার নেতৃত্বে তার অফিসের পিছনে দীর্ঘদিন জুয়ার বোর্ড চলতো কে বা কারা প্রশাসনকে অভিযোগ দেওয়ায় সেটি বন্ধ হয়ে গেলে তার উপর দোষারোপ এনে অযথা গত শুক্রবার রাত আনুমানিক ১০টায় যাত্রাবাড়ী থানা তাঁতীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম বাদশার সহযোগি জয় চা খাওয়ার কথা বলে মুঠোফোণে ডেকে নিয়ে শহীদ ফারুক রোড আল ইসলাম রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলে ওৎপেতে থাকা আরো কয়েকজন সেখানেই মারধর করে টেনেহিচড়ে বাদশার অফিস রুমে নিয়ে কেচিগেট আটকিয়ে হত্যার হুমকি সহ টাকা,স্বর্নের চেইন,মোবাইল,হাত ঘড়ি,মানিব্যাগসহ এনআইডি,ক্রেডিড কার্ড ছিনতাই করে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নিলাফুলা জখম করে।
পরবর্তীতে বাদশা তার দুই সহযোগিকে হুকুম করে বলে,শালারে সিএনজিতে করে হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে নিয়ে উপর থেকে নিছে ফেলে দিবি যাতে সবাই ভাবে আত্বহত্যা করছে।কাজী জালাল আরো জানান,এমন ভাবে মারধর করে পুরো শরীর থেথলে দিয়েছে তথন কথা বলার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিলো।তবুও সিএনজিটি যখন সায়দাবাদ জনপদের মোড় দিয়ে হানিফ ফ্লাইওভারে উঠলো কান্না জড়িত কন্ঠে চিৎকার দিয়ে ডিউটিতে থাকা আনসারদের সাহায্য চেয়ে বললেন ওরা উপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলতে পারে দয়াকরে সায়দাবাদ ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে সিএনজিটি মেডিকেলে যেতে বলেন।আনসার সদস্যরা চালককে সোজা মেডিকেলে নিয়ে যেতে দিলেন।ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার পথে সিএনজিতে থাকা বাদশার দুই সহযোগি চালককে বলে,ডেমরা আমুলিয়া মডেল টাউনে নিয়ে যেতে কিন্তু চালক সোজা ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলেন।বাদশার সহযোগিরা বিনা চিকিৎসায় হাসপাতালে রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়।কাজী জালাল আরো বলেন,ঢাকা মেডিকেল থেকে এক ব্যক্তির মোবাইলে তার ভাইয়ের মোবাইল নাম্বারটি দিলে তিনি ফোন দিয়ে মেডিকেলে জরুরী ভাবে আসতে বলেন।পরবর্তীতে তার ভাই এসে জরুরী বিভাগ থেকে টিকেট কেটে চিকিৎসার ব্যবস্হা করেন।
ভাই জয়নাল আবেদীন জানান,গত শুক্রবার রাত আনুমানিক রাত সারে এগারোটা বাজে কিন্তু জালাল বাসায় না ফেরায় জালালের মোবাইল ফোনে তার ভাই ফোণ করলে অচেনা কন্ঠ ভেসে আসে তবুও জালাল কোথায় জানতে চাইলে মোবাইল ফোনটি রিসিভ করা ব্যাক্তি বলেন,জালালকে তিনি চেনেন না ফোণটি তিনি পেয়েছেন তবে শহিদ ফারুক রোডে এসে কল দিলে ফোনটি দিয়ে যাবে বলে ফোন কেটে দিলে কিছুক্ষন পর জালালের ভাই ফোন দিলে রিসিভ না করায় সে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে শহিদ ফারুক রোড বাদশা নামটি উঠে আসে।তিনি তাৎক্ষণিক যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে কর্তব্যরত অফিসারকে বিস্তারিত বললে কর্তব্যরত অফিসার বাদশার মোবাইল নাম্বার কল দিয়ে জালাল তার অফিসে আছে কিনা জানতে চাইলে বাদশা অস্বীকার করে বলেন জালাল আসেনি।তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে চাই দায়িত্বরত অফিসার শহীদ ফারুক রোড গিয়ে দায়িত্বরত এস আই তুহিন সাহেবকে সাথে নিয়ে বাদশার ওখানে গিয়ে খোঁজ নিতে বলেন না পেলে জিডি করার জন্য বলেন।জালালের ভাই
থানা থেকে বের হয়ে শহীদ ফারুক রোড আসার উদ্দেশ্যে রওনা হলে এমন সময় সংবাদ আসে ঢাকা মেডিকেলে কে বা কারা জালালকে বিনা চিকিৎসায় ফেলে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্হা করেন।সেই রাতে তার ভাই যাত্রাবাড়ী থানার দায়িত্বরত এস আই তুহিন ও থানায় মুঠোফোনে বিষয়টি অবগত করেন।পরবর্তীতে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মাহাবুব আলম বাদশার মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।তবে তার সহযোগি জয় মুঠোফোনে কাজী জালালকে ডেকে আনার বিষয়টি স্কীকার করেন।
তাঁতীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা বলেন,কোন ব্যক্তির অপরাধের দায় সংগঠন নিবেনা।সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কোন নেতা কর্মি অপকর্ম করলে অভিযোগের সত্যতার ভিক্তিতে ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মফিজুল আলম বলেন,অভিযোগ প্রমানিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১১ মাসে ৫৪৮ নারী ও কন্যাশিশু হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার: 

১১ মাসে ৪৯০ ধর্ষণ।বিচারের আগেই বিদেশে পালিয়ে যায় আসামি।ধর্ষণকারীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধের দাবি।

চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এগারো মাসে ৫৪৮ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। আর যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় ২৯ জনকে। এই ১১ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৯০ জন।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল নিবন্ধে এ সব তথ্য জানানো হয়।

‘পারিবারিক আইনে সমতা আনি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করি’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, ‘আমরা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন ও হত্যার তালিকা করে থাকি। এ সংক্রান্ত মামলার সঙ্গেও আমরা সম্পৃক্ত হই। একেকটি মামলার রায় পেতে ১৫-২০ বছর লেগে যায়। দেখা যায়, বিচারের আগেই বিদেশে পালিয়ে যায় আসামি।’

লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। তিনি বলেন, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১ হাজার ৩৬ জন কন্যাসহ ২ হাজার ৩৬২ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গত ১১ মাসে নারী ও কন্যার বিরুদ্ধে নানা ধরনের সহিংসতার মধ্যে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে নারী হত্যার ঘটনা।

ইউএন উইমেন এর তথ্যসূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই সারা পৃথিবীতে প্রতি ১০ মিনিটে একজন নারী অথবা কন্যা পরিবারের সদস্য এবং তার সঙ্গী দ্বারা হত্যার শিকার হয়েছে। অমানবিক, পাশবিক, নৃশংস এসব ঘটনায় নারীর অগ্রযাত্রায় সৃষ্টি হয় পাহাড় সমান প্রতিবন্ধকতা। নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় শুধু ব্যক্তি নারী নয়, পরিবার, সমাজ এবং পরবর্তী প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বক্তারা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা একটি দীর্ঘকালীন চলমান সামাজিক ব্যাধি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক উদ্বেগজনক কিছু বিষয়। নারীর মানবাধিকার বিরোধী পরিস্থিতি তৈরির একটি প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্নতার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, নারীর প্রতি বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী, ভিন্ন লিঙ্গের মানুষের প্রতি ঘৃণা আর বিদ্বেষের সংস্কৃতির ক্রম বিস্তার ঘটছে। ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন সংস্কৃতির বিরুদ্ধে উগ্র মৌলবাদের উত্থান ঘটছে আশঙ্কাজনকভাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনায় আমরা দেখছি, যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গঠিত অভিযোগ কমিটিগুলোকে অকার্যকর করার একটি অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট কর্তৃক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পর শান্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

নারী আন্দোলনের দাবির পরও এখনো যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করা হয়নি। একটি বৈষম্যহীন সমাজ, রাষ্ট্র গড়ার অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে—নারীর প্রতি সব প্রকার বৈষম্য এবং সহিংসতার অবসান। সমাজের গভীরে বিস্তৃত ক্ষতিকর নানা প্রথা, পারিবারিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিভিন্ন স্তরে অসমতার চর্চা, বৈষম্যমূলক আইন এবং প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা, ব্যক্তি মানুষের মননে প্রোথিত নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের পরিবর্তন না হলে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধ অসম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে ধর্ষণকারীর সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ের উদ্যোগ বন্ধের দাবি জানানো হয়। এ বিষয়ে ডা. ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘সালিসের মাধ্যমে বিয়ের উদ্যোগ নিয়ে অনেক সময় ধর্ষণ মামলা মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কোনো ক্রিমিনাল (ফৌজদারি) অপরাধের বিচার সালিসের মাধ্যমে হতে পারে না। আমরা এমনও দেখি, কোর্ট প্রাঙ্গণে বিচারক অনেক ক্ষেত্রে মীমাংসা করে ফেলছেন। কিন্তু এটা আমাদের আইনের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।’

সংবাদ সম্মেলনে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—পরিবারের সব ক্ষেত্রে পুত্র ও কন্যার সম অধিকার নিশ্চিত করা। বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা, বিদ্যমান আইনগুলোর ব্যাপক প্রচার ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম প্রমুখ।

সবা:স:জু- ২৯৯/২৪

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম