ডিবি হারুনের শতকোটি টাকার ‘ রিসোর্ট’

স্টাফ রিপোর্টার:

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। পুলিশের এক আলোচিত-সমালোচিত চরিত্র। ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ বিভাগে চাকরি নেন। কিন্তু তার বাবা মো. হাসিদ ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। ১৯৯৬ সালের ১২ই জুনের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জাতীয় সংসদের তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার মো. আবদুল হামিদের প্রভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় জায়গা পান তিনি। ডিএমপি’র সাবেক ডিবি প্রধান হারুন তার গ্রামের বাড়িতে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নামে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল একটি প্রমোদাগার। মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ৪০ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে রিসোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। রিসোর্টটির প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা।

   এ ছাড়া সুপার ডিলাক্স রুমের ভাড়া ১২ হাজার টাকা। ২০২১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। রিসোর্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং রিসোর্ট উদ্বোধন উভয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।
প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার। রিসোর্টটিতে হারুনের পরিবারের ৫ থেকে ৭ একর জায়গা রয়েছে। বাকি অন্তত ৩৫ একর জায়গা ছিল অন্যদের। এসব জায়গার মালিকদের দাম দেয়ার কথা বলে হারুন রিসোর্টের জন্য জায়গা দখলে নেন। জায়গার মালিকদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন রয়েছেন। এসব জায়গার জন্য কেউই পুরো দাম পাননি। কেউ ১০ লাখের মধ্যে এক লাখ, কেউ ২০ লাখের মধ্যে ২ লাখ এমন হারে টাকা পেয়েছেন।

জায়গার দাম না পাওয়ায় এখনো অন্তত ১০ থেকে ১২ জন তাদের জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি। তাদেরই একজন মিঠামইন সদর ইউনিয়নের গিরীশপুর গ্রামের দিলীপ বণিক। তিনি জানান, হারুন রিসোর্ট করার কথা বলে তার এক একর ১০ শতাংশ জায়গা নিয়েছেন। জমির কোনো দরদামও নির্ধারণ করা হয়নি। তাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। অথচ জমির দাম হবে অন্তত ২০ লাখ টাকা। টাকা না পাওয়ায় জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি জানিয়ে দিলীপ বণিক বলেন, আমার মতো এমন অন্তত ১২ জন রয়েছেন, যাদের নামমাত্র টাকা দিয়ে জমি রিসোর্ট করার জন্য হারুন নিয়ে গেছে। আমরা জমির দলিল দেইনি। রিসোর্টের জন্য নেয়া ১২ আনার মতো জায়গার দলিল হয়েছে, বাকি জমির দলিল হয়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে দিলীপ বণিক বলেন, আমার জমির কাগজ ও দলিল রয়েছে। যেহেতু জমি বিক্রি করিনি তাই আমিই জমির মালিক।

এলাকাবাসী বলছেন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের আশীর্বাদ এবং সহযোগিতায় চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে পুলিশের বিভিন্ন উচ্চ পদে আসীন হতে পেরেছেন। মো. আবদুল হামিদ সে সময় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তাকে খুশি করতে দাপুটে পুলিশ অফিসার হারুন তার রিসোর্টের নাম দিয়েছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’। ফলে নিজেদের তেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জায়গা না থাকলেও রিসোর্টের জন্য জায়গা নিতে বেগ পেতে হয়নি। রিসোর্টটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় সেখানে মাত্র একটি পুকুর ছিল। এখন চারপাশে গাছপালা, ডুপ্লেক্স কটেজ, কালচারাল সেন্টার, আউটডোরসহ নানা কারুকার্য সম্বলিত পাথরের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করা হয়েছে।

রয়েছে একটি চাইনিজ রেস্তরাঁ, শিশুপার্ক, ওয়াচ টাওয়ার, লেকসহ নানা কিছু। সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী-এমপি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা, চলচ্চিত্র জগতের তারকা এবং ভিআইপি ব্যক্তিরা বিলাসবহুল রিসোর্টটিতে সময় কাটিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে রিসোর্টটিতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে রিসোর্টে বুকিং চালু রয়েছে।

এদিকে ২০১১ সালের ৬ই জুলাই সংসদ ভবনের সামনে তৎকালীন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুককে পিটিয়ে দেশ জুড়ে আলোচিত হন তৎকালীন ডিএমপির তেজগাঁও জোনের ডিসি (অতিরিক্ত উপ-কমিশনার) হারুন অর রশীদ। এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা কুড়ান আলোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা। ২০১৪ সালের ২৪শে আগস্ট তিনি গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পান। এর মাত্র চার মাস পর ২০১৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর গাজীপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জনসভায় ১৪৪

ধারা জারি এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও দমন-পীড়নের মাধ্যমে ওই জনসভা ভণ্ডুল করে দেন এসপি হারুন। এ ঘটনায় নতুন করে আবারো আলোচিত হন হারুন। টানা ৪ বছর গাজীপুর জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তার বিরুদ্ধে ছিল অভিযোগের পাহাড়। ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের জিম্মি করে টাকা আদায়, জমি দখলে সহায়তা ও মদত দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ সেখানকার মানুষের মুখে মুখে। তার ক্ষমতার দাপটে কোণঠাসা ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে ২০১৬ সালে গাজীপুর সদর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়ায় ইউপি নির্বাচনে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেন এসপি হারুন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২১শে এপ্রিল এসপি হারুন অর রশীদকে গাজীপুর থেকে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এই পুলিশ কর্মকর্তার প্রত্যাহারের আদেশ তুলে নিয়ে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে ৩রা মে গাজীপুরের এসপি পদে পুনর্বহাল করে

এরপর ২০১৮ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর শুরু হয় এসপি হারুনের নারায়ণগঞ্জ অধ্যায়।

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন ও দমন-পীড়নের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন এই হারুন। অপহরণ, গুম, চাঁদাবাজির মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন জেলার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। সে সময় শামীম ওসমানের সঙ্গে দ্বন্দ্বসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আলোচিত হন এই পুলিশ কর্মকর্তা। চাঁদার জন্য তিনি একাধিক শিল্পপতিকে তুলে নিয়ে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ভয় দেখাতেন। এর ধারাবাহিকতায় চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী-সন্তানকে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে এসপি হারুন একদল পুলিশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে তুলে নিয়ে যান। পরে তারা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে ২০১৯ সালের ১০ই নভেম্বর এসপি হারুনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে (ট্রেনিং রিজার্ভ) সংযুক্ত করা হয়।

কিন্তু তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের আশীর্বাদে এসপি হারুনকে ২০২০ সালের ৯ই জুন ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হিসেবে তেজগাঁও বিভাগের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এরপর ২০২১ সালের ২রা মে তাকে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি দিয়ে ১১ই মে ডিএমপি’র যুগ্ম কমিশনার করা হয়। এরপর ২০২২ সালের ১২ই জুন হারুনকে ডিএমপি’র ডিবি প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ডিবি প্রধান হিসেবে বিএনপি’র নয়াপল্টন অফিসে নানা নাটক মঞ্চস্থ করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার ও দমন-পীড়নে নেতৃত্ব দেন হারুন। হেফাজতে ইসলামের অনেক নেতা তার দ্বারা নিগ্রহের শিকার হন। ডিবি অফিসে নিয়ে মধ্যাহ্নভোজ এবং সেসবের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার মাধ্যমে তিনি ডিবি প্রধানের কার্যালয়কে পরিচিত করান ‘ভাতের হোটেল’ হিসেবে। সর্বশেষ কোটা আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে নিরাপত্তা হেফাজতের নামে আটকে রেখে ভিডিও স্টেটমেন্ট নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচিত ও সমালোচিত হন। এরপর গত ৩১শে জুলাই তাকে ডিবি থেকে সরিয়ে ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এর দায়িত্ব দেয়া হয়।

শেখ হাসিনার পতনের পর হারুনের অপকর্মের বিষয়গুলো এখন মানুষের মুখে মুখে।
কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে হারুন-অর-রশীদের জন্ম। তার পিতার নাম আব্দুল হাসিদ ভূঞা। চার ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় হারুন। দ্বিতীয় জিয়াউর রহমান মাদকদ্রব্যের এসআই ও তৃতীয় জিল্লুর রহমান পুলিশের ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়া হারুনের প্রতিষ্ঠিত বিলাসবহুল ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ এর এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সবার ছোট ভাই শাহরিয়ার। হারুন কিশোরগঞ্জের আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সূর্যসেন হলের ২১৩নং রুমে থাকার সময়ে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এডভোকেটের স্নেহভাজন হওয়ার কারণে সে সময় তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

শত কোটি টাকার কাজ নিয়ে পালিয়েছেন এন. এস গ্যালারি ঠিকাদার সাইফুল

* ৫ আগস্টের পর পলাতক সাইফুল, স্থবির কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কাজ  * দুর্নীতি করে শত কোটি টাকার মালিক, কাজ না করেই নিয়েছে বিল
* ৫ থেকে ২০ পার্সেন্টে বেঁচে দিয়েছে ৫০ কোটি টাকার কাজ * ব্যবস্থা নিতে দুদকে অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক॥
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে কোনো প্রকার সম্পর্ক না থাকার পরও এন এস গ্যালারীর স্বত্ত্বাধীকারি সাইফুল ইসলাম ছিলেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সকল ঠিকাদারি কাজের প্রধান নিয়ন্ত্রক। সাইফুলকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের হাজার কোটি টাকার কাজের নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়েছিলে কুমিল্লার সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। সাইফুলের কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু হয় আরফানুল হক রিফাত মেয়র থাকা অবস্থাতেই। কুমিল্লা সিটির টেন্ডার হওয়া কাজের প্রায় ৪০ থেকে ৬০ ভাগ দেয়া হতো সাইফুলের লাইসেন্স এন এস গ্যালারীর নামে। বিগত তিনটি টেন্ডারে সাইফুল ইসলামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এন এস গ্যালারীর নামে টেন্ডার লয়েস্ট হয়েছে ১ শত ৭২ কোটি টাকার কাজ। তবে সকল কাজই এককভাবে দেখাশোনা করতের সাইফুল। যাদেরকে ভাগ করে কাজ দেওয়া হতো, তাদের কাছ থেকে নিতেন ৫ পার্সেন্ট। এছাড়াও কাজের প্রাক্কলন থেকে শুরু করে ফাইনাল বিল পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতেন সাইফুল, সাইফুলের এই দুর্নীত ও কোটি টাকা আত্মসাতের পেছনে জড়িত রয়েছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উচ্চ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। যারা ৫ আগস্টের পর থেকে ভোলপাল্টে এখন অন্তর্র্বতী সরকারের গুণকীর্তন গাইছেন। যার সুবাদে সাইফুল অল্প সময়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক রয়েছে। তবে সাইফুলকে কুমিল্লা সদরের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার দায়িত্ব দিলেও মেয়র আরফানুল হক রিফাতের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে বাহার কন্যা তাহসীন বাহার সূচী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সাইফুল বনে যায় কুমিল্লা সিটির সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি। একটি সূত্র জানায়, কুমিল্লা সিটির টেন্ডার সহ সকল কাজের থেকে নগদ অর্থ আসার বিষয়ে অলিখিত উপদেষ্টা ছিলেন সাইফুল, মেয়র সূচীকে এবিষয়ে সব ধারণা দিতেন তিনি। মেয়রের চেয়ারে বসেই কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের কোটি টাকা ডুকতো সূচীর ভ্যানেটি ব্যাগে, তাই সূচীরও এক নাম্বার লোক হয়ে যান সাইফুল ইসলাম। ৫ আগস্টের পর থেকে ভয়ে ও আতঙ্কে থাকা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী অভিযোগ করে বলেন, কোনো দিন আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন না সাইফুল ইসলাম। তিনি হয়ে যায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের হর্তাকর্তা। দীর্ঘ দিনের পুরনো কর্মীদের বঞ্চিত করে লুটে নেন কুমিল্লা সিটির কোটি টাকার কাজ। অনেকে বলেন, সাবেক এমপি বাহারের দেওয়া কর্মীর কাজও সাইফুল ছলচাতুরি করে আত্মসাৎ করতেন।

অনেকের অভিযোগ আওয়ামী লীগের পুরনো কর্মীর কাজ ও টাকা আত্মসাৎ করেন নব্য আওয়ামী লীগার সাইফুল। তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, সাইফুল ইসলামের এই ক্ষমতার উৎস হচ্ছে টাকা। তিনি বহু আগে থেকেই সাবেক এমপি বাহার পরিবারের সকলকে নিয়মিত টাকা দিতেন। যার সুবাদে সাইফুল হয়ে উঠেন বাহার পরিবারের কাছে বিশ্বস্ত ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি। বাহার কন্যা সূচী মেয়র হওয়ার পর পরই তিন থেকে চারটি টেন্ডারে প্রায় সাড়ে ৫শত কোটি টাকার টেন্ডার হয় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে। যেখান থেকে প্রায় একশত কোটি টাকার মতো কাজের টেন্ডার হয় সাইফুলের এন এস গ্যালরীর নামে। সেখান থেকে সাইফুল একাই নিতেন ৩০ কোটি টাকার কাজ। সাইফুল পলাতক হওয়ায় মুখথুবরে পরেছে কুমিল্লা সিটির উন্নয়ন প্রকল্প। এদিকে কাজ পাওয়া অনেকে জানিয়েছেন, সাইফুল পলাতক হলেও কাজের পার্সেন্টিজ নিয়মিত নিচ্ছেন তিনি। নিজের নামে নেওয়া কাজ বিক্রি করে দিচ্ছেন ১৫ থেকে ২০ পার্সেন্টে। পলাতক হয়েও কিভাবে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের টাকা আত্মসাৎ করছেন। এবিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও নির্বাহীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে একটি গ্রুপ। নামে-বেনামে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তদন্ত করে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ ও তার লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান ঠিকাদার ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা সহ অনেকে। ভুক্তভোগিরা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান প্রশাসক ও নির্বাহীর কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেন, সাইফুল ইসলাম, প্রোপ্রাইটর-এন. এস গ্যালারি. পিতা-মোঃ আঃ মালেক (তিশার ড্রাইভার), মাতা-আনোয়ার বেগম, গ্রাম-চম্পকনগর, পোঃ তালপুকুর পশ্চিম পাড়, কুমিল¬া সিটি করপোরেশন, কুমিল¬া। কুমিল¬ার সাবেক এমপি বাহাউদ্দিন বাহার, তার মেয়ে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা-এর যোগসাজশে তাদের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অবৈধভাবে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে, কাজ না করে বিল ভাউচার তৈরি করে, ভুয়া পে-অর্ডার বানিয়ে, ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টার হয়ে, চেক জালিয়াতি করে, ভুঁয়া মানি রিসিট তৈরি করে, আংশিক কাজ সম্পন্ন করে প্রকল্পের পুরো বিল হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্রে জানা যায়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলো। নগরবাসীর প্রত্যাশা ছিল নগরীর জীর্ণ শীর্ণ সড়ক ব্রিজ কালভার্ট, ড্রেনসহ বিভিন্ন গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করবেন। নগরবাসীর চলাচলে নিরাপদ সড়ক তৈরি করবেন। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের নামে ঠিকাদার সাইফুল বাহিনী যে লুটপাট করেছে তা নজিরবিহীন। স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, কুমিল¬া সিটি কর্পোরেশনের কোনো উন্নয়ন কাজ করতে হলে আগে সাইফুলের সাথে আগে যোগাযোগ করতে হবে, তারপর অন্যান্য কর্মকর্তা। সাইফুল দাম্বিকতার সাথে বলেন, এখানে যত বাজেট বা কাজের সিডিউল সব আমার হাত থেকে হয়। তাই অন্যত্র যোগাযোগ করে কোনো লাভ নেই। যা আমি পারবো, তা অন্য কেউ পারবে না।

অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, এক সময় কুমিল্লার এমপি বাহারের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল, যা বর্তমানে দখল করেছে সাইফুল বাহিনী। সাইফুলের পরিবারের একসময় নূন আনতে পানতা ফুরানোর অবস্থা ছিল। তার বাবা কুমিল্লা এলাকার তিশা গাড়ীর ড্রাইভার ছিল। সেই ড্রাইভারের ছেলে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার দোসর কুমিল্লার সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিনের একান্ত আপনজন হিসেবে তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন। শেখ হাসিনার দম ফুরিয়ে গেলেও এই সাইফুলের দম ফুরায়নি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে ক্ষমতাসীনদের বিপুল সম্পদ অর্জনের ইতিহাস তো সবারই জানা। এ অর্থ সম্পদের পাহাড় কেবল তৎকালীন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরাই গড়ে তুলেননি, তাদের অনুসারী দোসররাও সৃষ্টি করেছেন নতুন নতুন ইতিহাস, বানিয়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ গাড়ি-বাড়ি। এমপি বাহার এবং তার কন্যা তাহসিন বাহার সূচনার খুব কাছাকাছি থাকায় ছাইফুল লাগামহীন অর্থের নাগাল পেয়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ভুল করেননি। তাই রাতারাতি গড়ে তুলেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট বাহিনী। আর অল্পদিনে দিনে গড়ে তোলেন বিলাস বহুল গাড়ি বাড়ি। ব্যাপক দুর্নীতি, কাজ না করে বিল উত্তোলন ও ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ভাগভাটোয়ারা ও কমিশন বাণিজ্যের মূল হোতা সাইফুল ইসলাম রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে, কেউ কেউ বলছেন ৫ আগস্টের পর থেকে সাইফুল দুবাই বা সিঙ্গাপুরে পালিয়ে গিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, সাইফুল ইসলাম দুর্নীতির মাধ্যমে যে পাহাড়সম সম্পদ গড়েছেন, তা রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। সাইফুল ইসলাম সবার সাথে মিলে যে, সিন্ডিকেট বাণিজ্য করেছে তা সবার মুখে মুখে আলোচিত হলেও তার ভয়ে কেউ কখনও কিছু বলার সাহস পায় নাই। এবিষয়ে জানার জন্য কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহীকে বার বার কল দিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম
প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কার্গো ভিলেজের অগ্নিকাণ্ডে অত্যন্ত হতাশাজনক : মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দের মাঝে যে অনৈক্য কুমিরের দেখা মিলল রাজশাহীর পদ্মায় সরকার ও সেনাবাহিনী, গণতন্ত্রে উত্তরণ ও ন্যায়বিচার যেন ব্যাহত না হয় আজ থেকে আমরণ অনশন, প্রত্যাখ্যান শিক্ষকদের শিক্ষার্থীরা রোডম্যাপের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন শাকসু নির্বাচনের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল গণফোরাম অন্যদেরও সই করার আহ্বান কমিশনের সূচক সাড়ে ৩ মাস আগের অবস্থানে লেনদেন ৪ মাসে সর্বনিম্ন আওয়ামীলীগ ফিরলে হাসিনার পা ধরেও মাফ পাবেন না: রাশেদ খান বিমানবন্দর অগ্নিকান্ডে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম