২রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । রাত ১:৫১ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
মোঃ হাসানুজ্জামান:
দেশজুড়ে ঈদকে কেন্দ্র করে স্বস্তির যাত্রা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছিলেন অনেকেই। তবে বরাবরের মতো এবারও বাড়তি ভাড়া আদায় ও বাস সিন্ডিকেটের ভেলকিবাজিতে চরমভাবে ভুগতে হয়েছে পথযাত্রাীদের। বিশেষ করে ঈদের ছুটি শেষে ঢাকাগামী মানুষের স্রোতকে পুঁজি বানিয়ে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে চলছে হরিলুট। অন্যন্য দিনের তুলনায় আজ শনিবার (২২ জুন) পাটুরিয়া ফেরিঘাটে দুপুর ২ টার সময় বাস যাত্রীদের এমনই হয়রানি, নাজেহালের চিত্র চোখে পড়ে।
মুখে যাত্রী সেবার বুলি আউড়ালেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। মূলত বাস চালকদের ভেলকিবাজি নাকি বাস মালিকদের সিন্ডিকেট, তা বুঝে ওঠা খুবই দুষ্কর। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে পরিবারের সাথে আননে ভাগাভাগি করতে অনেকেই ছুটে যান গ্রামে। তাই অবশ্যই তাদেরকে আবার ফিরতে হবে। ব্যস- এটাই সুযোগ।
ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় যেমন নেয়া হয়েছে বাড়তি ভাড়া। তেমনিভাবে ফেরার সময়ও কোনো ছাড় নেই। সামান্য পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে গাবতলী পৌঁছাতে প্রতিটি যাত্রীকে গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকা। এমনকি গাবতলীর আগে কোথাও নামলেও দিতে হবে সম্পূর্ণ ভাড়া।
হয়রানি এখানেই শেষ নয়। তারা মুখে সিটিং সার্ভিস বললেও বিভিন্ন যায়গা থেকে ওঠানো হচ্ছে অতিরিক্ত যাত্রী। যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষিপ্ত সাধারণ যাত্রী। অবশ্য এতে বাস চালক, হেলপারদের কিছু আসে-যায় না। কিছু বলতে গেলেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে জড়াচ্ছে বিবাদে।
সকল দুষ্টচক্রের মধ্যে কাউকে ভালো বলার উপায় নেই। একনামে পরিচিত গাবতলি সার্ভিস মানেই সেলফি পরিবহন। অথচ সেই সেলফির গন্তব্য নবীনগর, ভাড়া ২০০ টাকা। অনেক কষ্টে দু-একটা বাসকে রাজি করিয়ে যেতে হচ্ছে গাবতলি সহ দূর দূরান্তে।
মূলত বাসের কোনো ঘাটতি নেই। সেলফি, শুভ যাত্রা, ঠিকানা, নীলাচল সহ রয়েছে অসংখ্য বাস। কিন্তু তারা সিন্ডিকেট করে পাকিয়েছে কূটকৌশল। প্রত্যেকটা বাস যাচ্ছে সাভার, নবীনগর সহ আশপাশের এলাকায়। দ্রুত যাত্রী নামিয়ে আবারো ফিরছে ঘাটে। এভাবেই চলছে।
দীর্ঘক্ষণ পর যখন বাসের সিরিয়াল কমে যাচ্ছে, তখনই ঝোপ বুঝে কোপ মারা হচ্ছে। কারণ তখন ভাড়া যতোই চাওয়া হোক, বাধ্য হয়ে যাত্রী রাজি হবেই। অর্থ্যাৎ তাদের কুচক্রের হাতে যাত্রী সাধারণ নিরুপায় জিম্মি।
কথা হয় কয়েকজন বাস চালক, হেলপার, টিকিট কাউন্টারে। তবে তাদের প্রধান শর্ত ছবি তোলা যাবে না, ভিডিওতো বহু দূরের কথা। নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সেলফি পরিবহনের দুজন চালক ও হেলপার বলেন- “ভাই আমরা নিজেরা চাইলেই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। ও-ই দেখেন মাঠের কোনায় বাস মালিক, কমিটির লোকজন বসে আছে। তাদের সিদ্ধান্তেই আমরা সব করি।” তবে তাদের সাথে কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলেই তারা গায়েব হয়ে যান।
অন্যান্য বাসের মতোই নীলাচল পরিবহনেরও একই অবস্থা। কখনো বলছেন গাবতলী যাবেন, কখনো বলছেন চিটাগং রোড যাবেন, আবার কখনো বলছেন নবীনগর পার হবে না। বাসে তোলা হচ্ছে যাত্রী, আবার নামিয়েও দেয়া হচ্ছে। এভাবেই খামখেয়ালি করে চলছে তাদের সিন্ডিকেট।
কথা হয় বিভিন্ন পয়েন্টের যাত্রীদের সঙ্গে। বেজায় ক্ষিপ্ত যাত্রীদের অভিযোগের যেন অন্ত নেই। বিশেষ করে ঝিনাইদহ থেকে আসা রাশেদ নামে একজন যাত্রী বলেন- “ভাই আমরা পাটুরিয়া ঘাটে এসেছি প্রায় ৩০ মিনিট। এখানে এতোগুলা বাস, অথচ সবাই যুক্তি করে নবীনগর পর্যন্ত যাবে। সেখানে ভাড়া ২০০ টাকা। তাহলে রাজধানীর অন্যান্য গন্তব্যে কতো টাকা লাগবে হিসাব করেছেন ? মূলত এই বাস চালকেরা সিন্ডিকেট করে এভাবে যাত্রীদের হয়রানি করছে। কারণ এতোদিন যে বাসগুলো গাবতলী সহ অন্যান্য পয়েন্টে যেতো। সেগুলো আজ নবীনগর পর্যন্ত যেয়েই স্টপ। আমাদের এসব ভোগান্তি কে দেখবে ভাই ?”
মাঝ বয়সী আরেকজন যাত্রী বলেন- “সেলফি পরিবহন সারাজীবন গাবতলি, টেকনিক্যাল যায়। আজ তারা নবীনগর পর্যন্ত যাবে। নীলাচল, ঠিকানা সহ যে বাসগুলো রুট মেইনটেইন করতো। তারা এখন নিজেদের ইচ্ছামতো চলছে। একেতে বাড়তি ভাড়া, তার উপরে কয়েকবার গাড়ি বদলাতে হবে। এভাবে একটা সেক্টর চলতে পারে না। তারা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাচ্ছে না। আবার অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে। দেশটা কি মগের মুল্লুক নাকিরে বাবা…..?”
মূলত এভাবেই কথা হয় অনেক যাত্রীর সাথে। তাদের অভিযোগ, সরজমিন প্রত্যক্ষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া রুটে নিয়মিতই বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সেই সাথে নতুন সিন্ডিকেটের কারণে যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্য যেতে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
Leave a Reply