রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের চতুর্মুখী সংঘর্ষ, চাকু সহ হাসপাতালে

মোঃ হাসানুজ্জামান:

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সরাসরি জড়িত তিনটি কলেজ সহ পাঁচটি কলেজের শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

আহত শিক্ষার্থীদের একজন তাশরিফ (১৭)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন তিনি। পুরান ঢাকার কবি নজরুল কলেজের পরিচয় দেওয়া এ শিক্ষার্থী ঘটিয়েছেন আশ্চর্যজনক এক ঘটনা।

২৫ নভেম্বর (সোমবার) এক্সরে করার সময় তার কোমরে ধারালো চাকু ও হাতুড়ি পাওয়া যায়। পরে যাচাই-বাছাই করে ওই শিক্ষার্থীকে থানায় হস্তান্তর করা হয়। তবে তাকে ছেড়ে দিয়েছে হাসপাতালস্থ পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক মো. ফারুক।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, যাত্রাবাড়ী থেকে আহত অবস্থায় তাশরিফকে উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছিল। চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মাথায় ব্যান্ডেজসহ তাকে এক্সরে করতে পাঠান। আর এক্সরে রুমেই ঘটে এই বিপত্তি। টেকনিশিয়ানরা এক্সরে করতে গিয়ে তার কোমড়ে ধারালো চাকু ও হাতুড়ি দেখতে পান। এরপরই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন সংশ্লিষ্টরা।

তাশরিফকে হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢামেকের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক।

তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের অনেকেই ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ সময় আহতদের এক্সরে করতে পাঠান চিকিৎসকরা। এক্সরে করার সময় এক রোগীর কোমরে গুঁজে রাখা চাকু ও হাতুড়ি দেখতে পান সংশ্লিষ্টরা। পরে তারা জানালে আমরা তাকে হেফাজতে নিই।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ওই শিক্ষার্থীর কাছে কোনো আইডি কার্ড নেই। তবে সে কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিয়েছে। আমরা কলেজের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানায়। এরপর ওই শিক্ষার্থীর সিনিয়র ভাইয়েরা তার আইডি কার্ড নিয়ে আসেন। পরে আমরা কলেজের শিক্ষার্থী নিশ্চিত হয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।

তবে ওই শিক্ষার্থী কেন হাতুড়ি এবং ছুরি নিয়ে এসেছিল, সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি তিনি। দেশীয় অস্ত্র পাওয়ার পরও কেন তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা ওই শিক্ষার্থীর পরিচয় পেয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।”

সরকারি খাল দখল করে ‍কুতুবুদ্দিন একাই গড়েছেন একাধিক ভবন

স্টাফ রিপোর্টারঃ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক সময় ১৪ টি খাল থাকলেও এখন যেন তা গল্প। ডেভেলপার কোম্পানী ও ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের দোষররা মিলে গত ১৭ বছরে গিলে ফেলেছে মোহাম্মদপুরের খালগুলো। সরকারি খাল দখল করে গড়ে উঠছে একাধিক বহুতল ভবন এর মধ্যে কুতুবুদ্দিন নামে একজন একাই গড়ে তুলেছেন একাধিক ভবন।

মোহাম্মদপুরের শাহজালাল হাউজিং এর একটি রোডেই এই কুতুবুদ্দিন সরকারি খালের যায়গায় রাজউকের অনুমোদন নিয়ে একটি ১২ তলা ও দুইটি ১০ তলা ভবন নির্মান করেছেন। ভবন তিনটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা গেছে এটি ঢাকা জেলার কাটাসুর মৌজার ০১ নং খাস খতিয়ানের (বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক) সিএস দাগ নং ৭০৩ এ অবস্থিত।

ভবন মালিক কুতুবুদ্দিনের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানাগেছে তিনি পেশায় শিক্ষক। শিক্ষকতা করে তিনি গড়ে তুলেছেন একাধিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। আমাদের দেশের শিক্ষকদের যেখানে বেতনের টাকায় সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয় সেখানে তিনি কিভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন ? তার অর্থের উৎস কি?

মোঃ কুতুবুদ্দিনের কাছে মুঠোফোনে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবগুলো ভবন আমার একার নয়, একটি মাত্র আমার। আমার জানামতে আমি কোন সরকারি জমি দখল করিনি।

সরকারি খাল দখল করে ভরাট পরবর্তী রাজউক অনুমোদন না নিয়ে বহুতল ভবন নির্মানের বিষয়ে রাজউক পরিচালক (জোন-৫) মোঃ হামিদুল ইসলাম বলেন, মোহাম্মদপুরে বর্তমানে অবৈধ ভবন উচ্ছেদ অভিযান চলছে। পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ ভবনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন সরকারি জমি ও খাল উদ্ধারে আমাদের অভিযান চলমান আছে। আপনারা দেখেছেন পূর্বেও মোহাম্মদপুরে আমরা অভিযান পরিচালনা করে খাল উদ্ধার করেছি। আপনাদের দেয়া তথ্য নোট করলাম, সরকারি খাল অবশ্যই উদ্ধার করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি।

 

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী গাজী রাকিবুর রহমান এর কাছে সরকারি খাল দখলের বিষয়ে আইনগত ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল বা কোনো অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করলে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। ভবন নির্মাণের অনুমোদন গ্রহণ না করা মূলত ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২ এর ৩ (১) ধারা ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ১৯৯৬ এর ৩ উপবিধির লঙ্ঘন। অনুমোদনের বাইরে ভবন করলে নির্মাণ আইন, ১৯৫২ এর ১২ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তির সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে। এই আইনটি মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর তফসিলভুক্ত হওয়ায় মোবাইল কোর্টেও এই আইনের অধীনে অপরাধ বিচার্য হবে।

তিনি আরও বলেন, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২১ এর ২২ ধারায় বলা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি, সরকারি খাসজমি বা অন্য কোনো সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ভূমি বেআইনিভাবে দখল করেন বা উহাতে অবৈধ অবকাঠামো নির্মাণ করেন, তাহা হইলে তাহার অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক দুই বৎসরের কারাদন্ড, বা অনধিক চার লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। ইহা জামিন অযোগ্য অপরাধও বটে।

তিনি বলেন মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ সনের ৩৬ নং আইন, ৮(১) কোন ব্যক্তি এই আইনের কোন বিধান লঙ্ঘন করিলে অনধিক ৫ বছরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে (২) ধারা ৫ এর বিধান অনুযায়ী খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাইবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনভাবে ব্যবহার করা যাইবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা যাইবে না।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম