সচিবের সহায়তায় ভুয়া নিয়োগ পত্রের মাধ্যমে প্রতারক দম্পতির কোটি টাকা প্রতারণা

মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান: কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সহকারী সচিব নুরুল ইসলামকে সঙ্গী করে স্বামী স্ত্রীর একটি প্রতারক সিন্ডিকেট সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে চাকরি দেয়ার নামে ভুয়া নিয়োগ পত্র প্রদান করে কোটি কোটি টাকার প্রতারণার করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী অসংখ্য চাকরি প্রত্যাশীর। প্রতারকের সন্ডিকেটের সাথে উত্তর সচিবের রয়েছে দহরম-মহরম সম্পর্ক। রাজধানীর বিলাসবহুল হোটেলে চক্রের মূল হোতা শুভ ও সচিবের রঙ্গলীলা ও সবার মুখে মুখে।

 

চাকরি প্রত্যাশী এসব ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার বালিয়াডাঙ্গা উপজেলার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনের পুত্র তৌহিদুল ইসলাম শুভ মাদ্রাসা শিক্ষা ও কারিগরি বোর্ডের সহকারী সচিব নুরুল ইসলাম এর সহায়তায় সরকারি দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি দিবেন এমন প্রলোভন দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণা করেছেন। ভুক্তভোগী প্রত্যেক চাকরিপ্রত্যাশী যুবককে সঙ্গে করে সচিবালয়ের সচিব এর কার্যালয় নিয়ে চাকরির কথাবাত্রা পাকাপোক্ত করেন। সচিবের কার্যালয়ের সচিব এসব চাকরি প্রত্যাশীদেরকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তীতে প্রতারক তৌহিদুল ইসলাম শুভ সচিবের বরাত দিয়ে এসব চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ৫ থেকে ১৫ লক্ষ করে মোট কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা। আর এসব প্রতারণায় প্রতারক শুভর সহকারী হিসেবে কাজ করেন তার নিজের স্ত্রী মুক্তা যিনি নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

 

পরবর্তীতে রাজবাড়ী এলাকায় প্রতারক শুভ বেশকিছু ভুক্তভোগীর রোষানলে পড়ে একপর্যায়ে সময় নিয়ে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি লিখিতভাবে দিয়ে সাড়া পেয়ে আবারোও লাপাত্তা হন তিনি। উপায়ন্তর না পেয়ে ভুক্তভোগীরা বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করেন এই প্রতারক দম্পতির বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীদের একজন বলেন আমরা মামলা দায়ের করার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতারক শুভকে গ্রেফতার করে পরবর্তীতে তার স্ত্রী সময় নিয়ে আমাদেরকে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং ৪০ লক্ষ টাকার একটি চেক প্রদান করেন। স্ট্যাম্পে টাকা দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতিও দেন। প্রতারক শুভর স্ত্রী মুক্তা ভুক্তভোগীদের কাছে সময় চাওয়ার পাশাপাশি শুভকে জামিনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। তৌহিদুল ইসলাম শুভরাত্রি মুক্তার এমন কথোপকথন অডিও চেক ও লিখিত প্রমাণাদি ভুক্তভোগীদের নিকট সংরক্ষিত রয়েছে বলেও জানান তারা। প্রতারক মুক্তার অনুরোধে ভুক্তভোগীরা শুভকে জামিনের ব্যবস্থা করে সময় বেঁধে দেন কিন্তু চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী তেমনি করেই প্রতারক শুভ জামিনে এসে পালিয়ে যান ভুক্তভোগীদের টাকা না দিয়ে উল্টো তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করেন।

 

পরবর্তীতে চাকরিপ্রত্যাশী এসব ভুক্তভোগী দিশেহারা যুবক প্রতারক সমূহ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও অর্ধকোটি টাকার চেকের মামলা দায়ের করেন।

 

উল্লেখ্য, এসব প্রতারণায় প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষা বিভাগের সহকারি সচিব নুরুল ইসলাম শুভকে সহায়তা করেছেন তা তথ্য-প্রমাণ স্পষ্ট। প্রতারক তৌহিদুল ইসলাম শুভ এর আগেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে র্যাব ও ভুয়া মেজর পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল বলে জানা গেছে। বিভিন্ন তদবির দালালি ও চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে এর আগেও তৌহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছিল।

 

পরবর্তী পর্বে শুভর প্রতারণা ও শিক্ষা বিভাগের সহকারি সচিব নুরুল ইসলামের প্রতারণার সহায়তার তথ্য-প্রমাণসহ বিস্তারিত তুলে ধরা হবে…….

৩ বছরে প্রায় শত কোটি টাকার অনিয়ম:বিআইডব্লিউটিএ’র

 

স্টাফ রিপোর্টারঃ

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ( বিআইডব্লিউটিএ) এর নদী খনন ও নিয়মিত পলি অপসারণে ব্যবহৃত ড্রেজারগুলো সংরক্ষণ, পরিচালনা ও মেরামত খাতে গত ৩ বছরে প্রায় শত কোটি টাকা ভুয়া বিল ভাউচারে আত্মসা/ করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশার নাগরিকরা। রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যবহার ও অপচয় বন্ধে এ খাতের গত তিন বছরের অনিয়ম,দুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটনে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের দাবিও জানিয়েছেন তারা। বুধবার (২ নভেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের ২৩ জন প্রতিনিধি এ দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নৌযান চলাচলের উপযোগী নাব্যতা উন্নয়ন ও সংরক্ষণে নদী খনন ও নিয়মিত নৌপথের পলি অপসারণ করে থাকে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ কাজের জন্য সংস্থার বহরে ৪৫টি ড্রেজারসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জলযান রয়েছে। এগুলো সংরক্ষণ, পরিচালনা ও মেরামতের জন্য বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অধীনে রয়েছে আলাদা কয়েকটি ‘ড্রেজারবেইজ’।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ড্রেজার ও সহায়ক জলযানগুলো সংরক্ষণ, পরিচালনা ও মেরামত খাতে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে জলযানগুলোর মিটার টেম্পারিং করে জ্বালানি তেল আত্মসাৎ ও মেরামতের নামে সরকারি টাকা হরিলুট অন্যতম। বিবৃতিদাতারা এ খাতের গত তিন বছরের অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান। এছাড়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে খাতভিত্তিক খরচের তথ্য গণমাধ্যমে সরবরাহ ও সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশের দাবিও জানানো হয়।

বিবৃতিদাতারা হলেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, বিশিষ্ট শিশু সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুর রহমান সেলিম, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশের (জিসিবি) কার্যকরী সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, নৌপ্রকৌশলী মো. আবদুল হামিদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মানিক লাল ঘোষ, প্রভারটি ইমুলিনেশন অ্যাসিস্ট্যান্স সেন্টার ফর এভরিহোয়্যারের (পিস) নির্বাহী পরিচালক ইফমা হুসেইন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল, আলোকিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাপ্পিদেব বর্মণ, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম, মিডিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডেভেলপমেন্টের (মেড) নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াৎ, লেখক ও শিশুসংগঠক রাজন ভট্টাচার্য, জনলোকের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম সুজন, সচেতন সংস্থার আহ্বায়ক সাকিলা পারভীন, কমিটি টু প্রোটেক্ট রিভার অ্যান্ড কোস্টের (সিপিআরসি) সভাপতি কামরুজ্জামান নাছিম, ঢাকা উত্তর সিটি নাগরিক ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তফা কামাল আকন্দ, পুরোনো ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন ও মুক্তি শিখার আহ্বায়ক জিহাদ আরিফ।
এ ক্ষেত্রে প্রায় সকল বিবৃতিদাতাই বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেককে দায়ী করেছেন।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম