মুদিদোকানি থেকে শতকোটি টাকার মালিক কাউন্সিলর আকাশ

স্টাফ রিপোর্টার:
চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কালীরবাজারে মুদি দোকানের আয়ে সংসার চালাতেন আকাশ কুমার ভৌমিক। কিন্তু বছর দুয়েকের ব্যাবধানে তিনি হয়ে গেছেন শতকোটি টাকার মালিক। এক মন্ত্রীর সান্নিধ্যে থেকে তার এ বিশাল উন্নতি। তিনি শুধু শতকোটি টাকার মালিকই নন, হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। আকাশ কীভাবে মুদিদোকানি থেকে এত সম্পদের মালিক হলেন, তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আকাশ কুমার ভৌমিকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ, বদলিবাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করে বিপুল সম্পদের মালিকানা অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী
কম্বল সরবরাহসহ অন্যান্য মাল সরবরাহ না করা ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের তথ্যমতে, আকাশের অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদকের উপপরিচালক (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) মোশাররফ হোসেন মৃধাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের কোথায় কী সম্পদ রয়েছে তার তথ্য জানতে চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠান। পরে তিনি পরিচালক পদে পদোন্নতি পান এবং ২০২২ সালে পিআরএলে চলে যাওয়ায় অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপপরিচালক আহসানুল কবীর পলাশকে
অনুসন্ধানের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের উপপরিচালক আহসানুল কবীর পলাশ অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান থাকায় কিছু বলতে রাজি হননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আকাশ কুমার ভৌমিক বলে ন ‘আমার যেসব সম্পদ রয়েছে তা ট্যাক্স ফাইলে রয়েছে। ট্যাক্স ফাইলের বাইরে আমার কোনো সম্পদ নেই। এসব সম্পদ বৈধ আয় দ্বারা করা হয়েছে।

দুদকের টেবিলে থাকা অভিযোগে বলা হয়, এক মন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে সখ্য ছিল আকাশের। ওই মন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পরই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। তিনি কৌশলে মন্ত্রীর আস্থাভাজন হয়ে মুদি দোকানদার থেকে বনে যান মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ঠিকাদার। অনেকে তাকে মন্ত্রীর স্টাফ হিসেবেও জানতেন। তিনি মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায়নি। তিনি টিআর, কাবিখা, ব্রিজ, কালভার্ট, সাইক্লোন সেন্টার ও ফ্লাড সেন্টার অনুমোদন করিয়ে বা বরাদ্দ দিতে মোটা অঙ্কের টাকা কমিশন নিতেন। এসব কাজ করতে তিনি কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী চক্র করে তোলেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আকাশ কুমার টিআর-কাবিখার প্রতি টন বরাদ্দ দিতে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা কমিশন নিতেন। আবার প্রকাশ্যে টিআর, কাবিখার বিশেষ বরাদ্দ বেচাকেনা করতেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ব্রিজ, কালভার্ট, সাইক্লোন সেন্টার, ফ্লাড সেন্টার বরাদ্দ নিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কমিশন নিতেন আকাশ কুমার। এর মধ্যে ব্রিজ বরাদ্দে ২ থেকে ৫ লাখ, কালভার্ট বরাদ্দে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ, সাইক্লোন সেন্টার বরাদ্দে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিতেন। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা বদলি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। বদলির ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আকাশ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কমিশন গ্রহণ করতে করতে একপর্যায়ে অন্যের লাইসেন্স দিয়ে ঠিকাদারি কাজ শুরু করেন। পরে অবশ্য নিজেই ঠিকাদারি লাইসেন্স করে ব্যবসা করতে থাকেন। তার রাজধানীর বিজয়নগরে মাহতাব সেন্টারের সাত ও নয়তলায় তালুকদার অ্যান্ড কোং এবং প্রভাতী অ্যান্ড কোং নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান তিন বছরে মতলব উত্তর উপজেলায় ৪৮টি ব্রিজের কাজ করেছে। তিনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

তথ্য বলছে, আকাশ বেইলি রোডের ১৩৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের জারা টাওয়ারে প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুটের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট কিনেছেন। প্রতি স্কয়ার ফুট কিনেছেন প্রায় ১২ হাজার টাকা দরে। সেই হিসাবে ফ্ল্যাটটির দাম প্রায় ৫ কোটি টাকার বেশি। একই এলাকার নাভানা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির তৈরি নাভানা বেইলি স্টার শপিং কমপ্লেক্স ভবনে তার আরও দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। বেইলি রোডের ১৮ নম্বর বেইলি নেস্ট ভবনের দ্বিতীয়তলার পুরো ফ্লোর নিয়ে তার একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। সব মিলিয়ে বেইলি রোডে তার যে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। রাজধানীর বিজয়নগরের আকরাম টাওয়ারে তার কয়েক হাজার বর্গফুট আয়তনের দুটি ফ্লোর রয়েছে।

ডেমরা থানার এস আই নাজমুলের বিরুদ্ধে সুকৌশলে চাঁদাবাজির অভিযোগ

রাজু আহাম্মেদঃ

রাজধানীর ডেমরা থানার এস আই নাজমুলের বিরুদ্ধে মটরসাইকেলকে জিম্মি করে সুকৌশলে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, গত ১২/১১/২০২৩ ইং তারিখ রাত আনুমানিক ১:২০ ঘটিকার সময় কবি নজরুল ইসলাম কলেজে অধ্যায়নরত শিহাব মটরসাইকেল যোগে ডেমরা থানাধীন স্টাফ কোয়ার্টার যাওয়ার পথে বামৈল নামক স্থানে মটরসাইকেলের তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় তেলের খোজে গাড়ি ঠেলতে থাকেন। একই স্থানে ডেমরা থানার এস আই নাজমুল ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন বলে জানা যায়। ভুক্তভোগী শিহাবকে দূর থেকে গাড়ি ঠেলে নিয়ে যেতে দেখে এস আই নাজমুলের ড্রাইভার বিল্লাল সহ এস আই নাজমুল থানার গাড়ী নিয়ে শিহাবের পথ আটকায়। অতঃপর গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চাইলে, শিহাবের সাথে কাগজপত্র নেই বলে জানায় তবে কাগজপত্র বাসায় ফোন দিয়ে আনাবে। কাগজপত্র নেই জেনে এস আই নাজমুল বিএনপির লোক বলে এবং বিভিন্ন মামলার হুমকি দিয়ে শিহাব এবং তার সাথে থাকা সামির ও মামুনকে থানার গাড়িতে তোলেন এবং বলেন, তোমরা এই গাড়ি জালাও পোড়াও করতে এসেছো। শিহাব গাড়ীর কাগজ আনার জন্য তার বড় ভাই হিমেল কে ঘটনা সম্পর্কে জানালে, শিহাবের বড় ভাই যাত্রাবাড়ী থেকে বামৈল মটরসাইকেলের লাইসেন্স সম্পর্কিত কাগজপত্রাদী নিয়ে যায়। কিন্তু গাড়ীর কাগজপত্র দেখার পরেও বিএনপির প্রিকেটিং এর মামলা দেওয়ার কথা বলেন এস আই নাজমুল। কোনো প্রকার দিশা না পেয়ে নিজের ভাইকে মামলা থেকে বাচানোর জন্য এস আই নাজমুলের সাথে কথা বললে এস আই নাজমুল পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করেন । উক্ত টাকা না দিলে এত রাতে গাড়ী পোড়াতে এসেছে বলে প্রিকেটিং মামলা দিয়ে দিবে বলে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে। অতঃপর নিরুপায় হয়ে শিহাব ও তার ভাই হিমেল অনেক আকুতি মিনতি করার পর পনেরো হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ভুক্তভোগী শিহাবের বড় ভাই হিমেল তখনি যাত্রাবাড়ীতে তার নিজ বাসায় এসে পনেরো হাজার টাকা নিয়ে পূনরায় বামৈল চলে যান। এসময় এস আই নাজমুল সাদা পোশাকে থাকা একজনের সাথে পরামর্শ করে টাকা পনেরো হাজার সেই ব্যক্তির হাতে তুলে দিতে বলেন। এস আই নাজমুলের নির্দেশে ভুক্তভোগী শিহাবের বড় ভাই হিমেল ৩ টি এক হাজার টাকার নোট এবং ১২০ টি একশত টাকার নোট মিলিয়ে মোট পনেরো হাজার টাকা নাম না জানা সাদা পোশাকে থাকা ব্যক্তির হাতে তুলে দেন। টাকা বুঝে পাওয়ার পর শিহাবের বড় ভাই হিমেলের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে এবং এই বিষয় কারোর সাথে আলোচনা বা না জানানো শর্তে শিহাব, সামির ও মামুনকে ছেড়ে দেন। এছাড়াও পরবর্তীতে উক্ত বিষয় কাউকে জানালে বিএনপির প্রিকেটিং এর মামলা দিয়ে দিবে বলে হুমকি প্রদান করেন।

ঘটনার পরের দিন ভুক্তভোগী শিহাবের বড় ভাই স্থানীয় সাংবাদিকদের ঘটনা সম্পর্কে জানায়। উক্ত ঘটনার বিষয়ে সংবাদকর্মীরা এস আই নাজমুলের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে প্রথমে এস আই নাজমুল সম্পূর্ণ ঘটনা অস্বীকার করেন এবং পরবর্তীতে সংবাদকর্মীদের মুঠোফোনে কল দিয়ে চায়ের দাওয়াত দেন। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের স্বার্থে সংবাদকর্মীরা এস আই নাজমুলের সাথে সাক্ষাৎ করতে স্টাফ কোয়ার্টার যায়। স্টাফ কোয়ার্টারে সংবাদকর্মীদের সাথে এস আই নাজমুল সহ গাড়ীর ড্রাইভার বিল্লাল একটি রেস্টুরেন্টে বসে উক্ত ঘটনার বিষয়ে আলোচনা করেন। এক পর্যায়ে ঘটনার সম্পর্কে এস আই নাজমুল বলেন, টাকা পয়সা সম্পর্কে আমি জানি না, তবে ঘটনা স্থানে আওয়ামীলীগের দলীয় কিছু লোক উপস্থিত ছিলো। তারাই প্রতারনার মাধ্যমে টাকা টা নিয়ে গেছে। সাদা পোশাকে থাকা ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে এস আই নাজমুল বলেন, সাদা পোশাকে থাকা ব্যক্তি টি আওয়ামীলীগের নেতা । আর টাকা পয়সা নেওয়ার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।
অন্যদিকে ভুক্তভোগী জানায়, সাদা পোশাকে থাকা ব্যক্তিটি এস আই নাজমুলের সোর্স হিসেবে কাজ করছিলো এবং টাকা নেওয়ার পূর্বে সাদা পোশাকে থাকা ব্যক্তি টি একাধিক বার এস আই নাজমুলের সাথে আলোচনা করেছে। এস আই নাজমুলের সাথে একাধিক বার আলোচনা করার পরেই পনেরো হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে ।

এস আই নাজমুলের মত পুলিশের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সাধারন জনগন নিরাপত্তাহীনতায় থাকবে বলে আশংকা ব্যাক্ত করে, উক্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয় সচেতন মহল।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম