ভোজ্যতেলের দাম না বাড়ালে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হতো

স্টাফ রিপোর্টার: 

লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। হঠাৎ করে এত দাম বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, বাস্তবতা মেনে নিয়ে এটি করতে হয়েছে। তা না হলে সরবরাহে বড় ঘাটতি তৈরি হতো। দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির কারণ হয়ে যেত।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে ইআরএফ–প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড–২০২৪ অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন এসব কথা বলেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার কাজ হচ্ছে, পণ্যের সরবরাহ ও জোগানে ঘাটতি হলে আমদানি করে হলেও বাজারকে স্থিতিশীল করা। গতকাল আমরা ভোজ্য তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়েছি। এটাকে বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমরা বাড়িয়েছি। যদি এটা না বাড়াতাম তবে সরবরাহে বড় একটা ঘাটতি তৈরি হতো।’

তিনি বলেন, ‘আমি রমজানের জন্য আপনাদের সুখবর দিতে চাই। ইনশা আল্লাহ আমি আশা করি, আগামী রমজানে প্রয়োজনীয় যেসব পণ্য রয়েছে যেমন: খেজুর ছোলা, তেল বা অন্যান্য পণ্য এগুলোর দাম বাজার স্থিতিশীল থাকবে অথবা নিম্নগামী থাকবে।’

তবে বাজারে আলুর দাম কমাতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা ঠিক যে আমরা আলুর দাম কমাতে পারিনি, এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা রয়েছে। এ বছর থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী বছর আরও ভালো করব এই প্রতিশ্রুতি আমি আপনাদের দিচ্ছি।’

বিশেষ খাদ্যপণ্যে সিন্ডিকেটের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘সিন্ডিকেট নিয়ে যে আলোচনাটা হয়, অবশ্যই এটা ঠিক। তেল বা চিনির বাজারে মুষ্টিমেয় কিছু উৎপাদক বা আমদানিকারক এ ক্ষেত্রে কাজ করে। তার মধ্যে সর্ববৃহৎ যে, তিনি কিন্তু দেশে থেকে পালিয়েছেন। যিনি বাজারের বড় একটা অংশ ম্যানেজ করতেন। তিনি কিন্তু আট–দশটা ব্যাংকও মেনেজ করতেন। তিনি পালিয়ে যাওয়ার ফলে সরবরাহে এই যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে ওই তুলনায় বাজারে আপনারা রিঅ্যাকশন টের পাচ্ছেন না। কারণ আমরা দিনান্ত চেষ্টা করছি সরবরাহ ঠিক রাখতে। অবশ্যেই এ ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত ও বরকত পাচ্ছি।’

আবারও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যদি গতকাল তেলের দাম বাড়ানোর বাস্তবমুখী সিদ্ধান্তটা না নিতাম, তবে দীর্ঘ মেয়াদে এটা ক্ষতির কারণ হয়ে যেত।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি পাঁচজনের পরিবারে প্রতি মাসে ৫ লিটার তেল ব্যবহার হয়। দাম বাড়ানোর কারণে মাসে ৪০ টাকা খরচ বেড়েছে। অবশ্যই এটা কষ্টের। তবে আমরা চেষ্টা করছি অন্য কোনো পণ্যের মাধ্যমে এই খরচটা সমন্বয় করার। সেটা চিনি বা ডালের দাম কমিয়ে হতে পারে। তবে এটার জন্য আমাকে প্রচুর কাজ করতে হবে। যার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছি না, কারণ আমাকে অনেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকতে হয়।’

ইআরএফ–এর সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, কার্যনির্বাহী সদস্যগণ, অ্যাওয়ার্ডের বিচারকগণ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের আমন্ত্রিত সাংবাদিকেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সবা:স:জু- ২৯৮/২৪

সময় থাকতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন:মির্জা ফখরুল

অনলাইন ডেস্কঃ

সরকারের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখনো সময় আছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই আন্দোলনে আপনাদের পতন ঘটাবো, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো, কারাবন্দি সকল রাজবন্দিদের মুক্ত করব।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ। ঢাকা ছাড়াও অন্য ৯টি বিভাগীয় শহরেও একযোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এছাড়া সমমনা জোট ও দলগুলোও যুগপৎভাবে একই কর্মসূচি পালন করে।

সরকার পতনের আন্দোলনে তৃণমূলের জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সারা দেশে ইউনিয়নে ইউনিয়নে পদযাত্রা করবে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে পদযাত্রা শুরু করে ধীরে ধীরে উপজেলা-জেলা-মহানগর এবং তাদের যে ক্ষমতার মসনদ সেই মসনদ জনগণ দখল করে নেবে, জনগণের সরকার গঠন করবে।

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছি, আমরা মানুষের অধিকারকে রক্ষা করার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে চলছি। আপনারা দেখেছেন যে, ঢাকায় ইতোমধ্যে পদযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা সকল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছি এবং মানুষকে নিয়ে এগিয়ে চলার মধ্য দিয়ে যে লং মার্চ সেই লং মার্চের মধ্য দিয়ে আমরা এদের পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটা রাষ্ট্র বানাতে চাই।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না, এটা যেসব উপনির্বাচন হয়ে গেলো, সেই উপনির্বাচনগুলোতে আবার প্রমাণ হয়ে গেছে। আমি সে বিষয়ে যাবো না। আমি শুধু বলতে চাই, একটি কথা। হিরো আলম (বগুড়া উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী) সে একটি মাত্র কারণে আজকে প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ এই হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায় যে, তাকে (আওয়ামী লীগ) রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জিততে হয় ৬/৭‘শ ভোটে।

তিনি বলেন, আজকে প্রমাণিত হয়েছে যে, আবদুস সাত্তার (উকিল আবদুস সাত্তার) যিনি দল ত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাকে আওয়ামী লীগ নিজের লোক মনে করে তাকে জয়ী করতে বিরোধী প্রার্থীকে গুম করতে হয়। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, আপনারা ভোট দিতে পারবেন? এ সময় নেতাকর্মীরা সমস্বরে ‘না’ সূচক স্লোগান দেন।

বাজারের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বাজারের অবস্থা আপনারা জানেন। এক লাফে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ২৬৬ টাকা বেড়েছে। আজকে মা-বোনেরা এখানে আছেন। তারা জানেন, কী কষ্ট করে তাদের সংসার চালাতে হয়।

আইএমএফের ঋণের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে। তারা আজকে ঋণ গ্রহণ করছে। আপত্তি নাই। উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ঋণ নিতে হবে, ঋণ নিতে হয়। কিন্তু সেই ঋণের টাকা নিয়ে যদি পাচার করে কানাডার বেগমপাড়াতে গিয়ে বাড়ি তৈরি করেন, ঋণ এনে ফ্ল্যাট কেনেন, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি করেন তাহলে সেই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষ পরিশোধ করবে কেন? ঋণের টাকা আনবেন আর আমাদের জনগণের পকেট কেটে টাকা নিয়ে যাবেন। মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন মানুষ সরকারের পতন দেখতে চায়, পরিবর্তন দেখতে চায়।

তিনি বলেন, আমরা দেখছি যে, তারা (সরকার) মেগা প্রজেক্ট আবার শুরু করেছে। পাতাল রেলের প্রজেক্ট করেছে, সেই প্রজেক্টে ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আর আমার সাধারণ মানুষকে গরিব-দুস্থ ভাতা দিতো সেই ভাতার টাকা তারা (সরকার) চুরি করে লুট করতে শুরু করেছে এবং সেই ভাতার টাকাও বন্ধ করে দিচ্ছে। এই সরকার আজকে সাধারণ মানুষের দিকে তাকায় না। তারা (ক্ষমতাসীনরা) তিলে তিলে বড় হচ্ছে, ফুলে ফেঁপে উঠছে। পাকিস্তান আমলে এই আওয়ামী লীগ স্লোগান দিতো ২২ পরিবারকে দূর করতে হবে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজকে সেই আওয়ামী লীগ কয়েক হাজার পরিবার তৈরি করেছে, যে পরিবার বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে। আজকে এদেশে লুটেরাদের বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। এই লুটেরার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজুলল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুজ্জামান রিপন, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, বেনজীর আহম্মেদ টিটু, সাইফুল আলম নিরব, নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বক্তব্য দেন।

এছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপির তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্র দলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

১০ দফা দাবিতে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে এটি ছিল তার চতুর্থ কর্মসূচি। গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল, ১১ জানুয়ারি সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি এবং ২৫ জানুয়ারি সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো।

শনিবার ঢাকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টি আলাদা আলাদা সমাবেশ করে। তারাও ১১ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রার অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে।

এর আগে বেলা ১২টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। পরে সমাবেশের কার্যক্রম বেলা ২টায় শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল সাড়ে ৫টায়।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম